প্রাণ গেল ছয় শিশুর

রাজধানীর রূপনগর শিয়ালবাড়ি বস্তিতে বেলুন ফোলানোর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সবশেষ নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয়জনে।

ঘটনাস্থলে চারজনের মৃত্যুর পর বুধবার সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের এবং রাত সাড়ে সাতটার দিকে পঙ্গু হাসপাতালে আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত ছয় শিশু হলো: রমজান (৮), নূপুর (১০), শাহীন (৭), জান্নাত (১৪), ফারজান(৭) ও রিয়া মনি (১০)। রিয়া মনি রাতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মারা যায়। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১৫ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন প্রাপ্তবয়স্ক, বাকি সবাই শিশু। আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা ভালো নয় বলে চিকিৎসক জানান।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঢামেক হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় ১৪ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলো: জুয়েল হোসেন (২৫), সোহেল রানা (২৬), জান্নাত বেগম (২৫), বোন তানিয়া (৮), ভাই বায়েজিদ (৫), জামেলা (৭), অজ্ঞাত পরিচয় শিশু (৫, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক), মীম (৮), ওজুফা (৯), মোস্তাকিম (৮), মোরসালিনা (৯), নিহাদ (৮), অর্নব ওরফে রাকিব (১০), জনি (১০) ও সিয়াম (১১)। এদের মধ্যে সিয়ামের চিকিৎসা চলছে বার্ন ইউনিটে।

নিহত ছয় শিশুর মধ্যে ফারজানার বাবার নাম আবু তালেব, মা নার্গিস বেগম। গ্রামের বাড়ি ভোলার বাপদার চেউয়াখালী। তার বোন মরিয়ম আহত হয়েছে। সে চিকিৎসাধীন। তারা পাঁচ বোন ও দুই ভাই। ফারজানা বস্তির ব্র্যাক স্কুলে পড়ত।
নূপুরের বাবার নাম নূর আলম, মা সুরমা বেগম। গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার দুলারহাটের নুরাবাদ। রুবেলের বাবার নাম নূর ইসলাম, মা পারভীন বেগম। গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাসনে। রমজানের বাবার নাম বদিউল আলম। বাড়ি কিশোরগঞ্জের ফুলবাড়িতে। সে মাদরাসায় পড়ত। শাহিনের (৯) বাবার নাম শাহজাহান। ঝিলপাড়া বস্তিতে পরিবারের সাথে থাকত সে।
রিয়া মনির বাবার নাম মো: মিলন। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া। নিহত এই ছয় শিশুই পরিবারের সাথে ফজর আলী মাতবর বস্তিতে থাকত।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভ্যানগাড়িতে করে এক ব্যক্তি মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে গ্যাস বেলুন বিক্রি করত। কয়েকদিন ধরেই রূপনগর আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সড়কে সে গ্যাস বেলুন ফুলিয়ে বিক্রি করে। গতকাল বিকালে রূপনগরে ওই সড়কের শেষ মাথায় ফজর মাতবরের বস্তির সামনে বেলুন বিক্রি করতে আসে সে। এ সময় বস্তির শিশুরা বেলুনওয়ালার চারপাশে দাঁড়িয়ে বেলুন ফোলানো দেখছিল। এ সময় সিলিন্ডারে কোনো কিছু করতে যায় বেলুন বিক্রেতা। আর তখনই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে থাকা ১৫ থেকে ২০ জন ছিটকে পড়ে। মুহূর্তেই ঘটনাস্থলে চার শিশুর শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এক শিশুর নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গেলেও সে এমন অবস্থায় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু অল্প কিছুদূর যেতেই লুটিয়ে পড়ে শিশুটি। কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায় সে।

রূপনগর থানার ওসি তদন্ত দীপক কুমার দাস বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। অনেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে এই ঘটনায় মামলা করবে।’

সতর্ক করলেও পাত্তা দেয়নি বেলুন বিক্রেতা : বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে বেলুন বিক্রেতাকে সতর্ক করেছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী। প্রথমে একটি সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হতে দেখে ওই নারী বিক্রেতাকে সতর্ক করেন। কিন্তু বিক্রেতা তেমন পাত্তা দেননি। বলেন, পানি দিলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সতর্ক করার পরই পরপর তিনটি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়।

ক্ষতিপূূরণের আশ্বাস তথ্য প্রতিমন্ত্রীর : ঘটনায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। গতকাল বিকেল ৫টায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হতাহতদের স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে এ কথা জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের সাথে আলোচনা করে হতাহতদের পরিবারকে কিভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়া যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে এ বিষয়ে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে একটা নীতিমালা আছে। সেটি কতটা কার্যকর তা মন্ত্রিপরিষদে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার কামরুল হাসান বলেন, ‘ঘটনার পর তিনটি ইউনিট সেখানে কাজ করে। এসময় পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় এবং নয়জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে সবশেষ মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। বিষয়টি এখন পুলিশ বলতে পারবে।’

সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ছয় শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় বেলুন বিক্রেতাকে আটক করেছে পুলিশ। তার নাম আবু সাইদ (৩০)।

বুধবার রাতে পুলিশ তাকে পঙ্গু হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটক করে। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছে পুলিশ।

এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রুপনগর থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত)।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *