লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : গত কিছুদিন পূর্বে অনুষ্টিত তিনটি ইউপি নির্বাচনে লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল নৌকার ভরাডুবির জন্য সব ধরনের ষড়যন্ত্র করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত ৮টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বীর বিক্রম পিএসসি’র প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চুনতিবাসীর উদ্যোগে চুনতিস্থ আবেদীন সাহেবের গ্রামের বাড়ীতে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রফেসর ড. নদভী এমপি বলেন, মেজর জেনারেল আবেদীন মামা সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে প্রসারিত করার জন্য কিছু কিছু লোককে দলে আনার চেষ্টা করেছেন। তাদেরকে বিভিন্নভাবে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে স্টাবলিষ্ট করেছেন। কিন্তু উনারা হলেন বড় ধরণের মুনাফেক আর বেঈমান। আবেদীন মামার ইন্তেকালের পর ওনারা মোনাফেক আর বেঈমান হয়ে গেছে।
এ সময় ড. নদভী এমপি লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলের দিকে সরাসরি ইঙ্গিত করে বলেন, আবেদীন মামা ও আমার সহযোগীতায় বাবুল আওয়ামী লীগের মাধ্যমে আজীবন উপকৃত হয়েছে। আমাদের মাধ্যমে হয়েছে, এক নাম্বার উপকৃত হয়েছে আবেদীন মামার মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ থেকে সবকিছু খেয়েছে। আওয়ামী লীগের মধু খেয়ে তার পেট অনেক বড় হয়েছে। খেয়ে হজমও হয়ে গেছে। আবেদীন মামার মৃত্যুর পর বেঈমান হয়ে গেছ । গত ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত লোহাগাড়ার তিন ইউপি নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবির জন্য সব ধরনের ষড়যন্ত্র করেছে এই বাবুল চেয়ারম্যান। তাকে আমরা ছাড় দেবো না। আবেদীন মামার জন্য আজীবন মাগফিরাত কামনা করবো কিন্তু এই মুনাফিকদেরকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আর জায়গা দেবো না। আমি কিন্তু কঠোর মানুষ। আওয়ামী লীগের প্রশ্নে কোন আপোষ নেই।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দলের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করবেন। অসহায় ও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করবেন। তাদের পাশে থাকবেন। কোন মোনাফিকদের সাথে থাকবেন না এবং কাজ করবেন না।
প্রয়াত সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবেদীনের গুণাবলী তুলে ধরতে গিয়ে ড. নদভী এমপি বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির অগ্রযাত্রা ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অভিযাত্রায় ধ্রুবতারা হয়ে বেঁচে থাকবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদীর্ঘকালীন সামরিক সচিবের দায়িত্ব পালনকারী মেধাবী সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন।
কিংবদন্তীতুল্য সামরিক সচিবের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছিল অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস এবং তাঁকে পরিবারের একজন সদস্য মনে করতেন।
তিনি বলেন, সৎ, নীতিবান ও বড়মাপের এই দেশপ্রেমিক সামরিক কর্মকর্তার গৌরবময় কীর্তিগাঁথা এবং নেতৃত্ব বাহিনীতে চির অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। আত্মীয়তার সূত্রে এবং নিজের বাবার কাছের ছাত্র হিসেবে তাঁর সান্নিধ্যে এসে পাওয়া অকৃত্রিম স্নেহ ও ভালোবাসার কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে ড.আবু রেজা নদভী এমপি বলেন, বহুমুখী প্রতিভাধর সাদামনের অসাধারন ব্যক্তিত্বের অধিকারী মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ন।
ইসলাম ধর্ম ও আরবী ভাষায় তাঁর ছিল অগাধ পান্ডিত্য। সরকার ও আলেম সমাজের মধ্যকার ভুল বুঝাবুঝি নিরসন করে সম্পর্কের সেতুবন্ধন রচনায় এবং কওমী মাদ্রাসার সনদের সরকারী স্বীকৃতি আদায়ে তাঁর সাথে দীর্ঘদিন কাজ করার স্মৃতিচারণ করে ড. আবু রেজা নদভী এমপি বলেন, এই দুই ইস্যুতে তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধ, দুর্দর্শী চিন্তা-ভাবনা দেখে বিমোহিত-বিমুগ্ধ হতাম বারবার।
প্রধানমন্ত্রীর প্রায়াত সামরিক সচিবের বড় ভাই মিয়া মোহাম্মদ ইসমাইল মানিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্য্যনির্বাহী সদস্য আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন হিরু, লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসাইন মাহমুদ, লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুচ্ছাফা চৌধুরী, চুনতি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জনু, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ফজলে এলাহী আরজু ও উপজেলা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান প্রমুখ।
সভায় উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লোহাগাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইব্রাহিম কবির, শাহ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, আধুনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন, লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি একেএম আসিফুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এরশাদুর রহমান রিয়াদসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের জনসাধারণ।
২৪ ঘণ্টা/এ. কে. আজাদ
Leave a Reply