মুজিববর্ষে লালদিয়া চরবাসীকে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করবেন না: সুজন

ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষে লালদিয়া চরবাসীকে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা না করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদায়ী প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

আজ শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ইং) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ আহবান জানান।

এ সময় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার। এ বন্দর থেকেই দেশের শতকরা ৮০ ভাগ রাজস্বের যোগান দেওয়া হয়। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বন্দরকে ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশ লাভবান হলেও চট্টগ্রামবাসী বন্দর থেকে প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দীর্ঘকাল ধরেই। এ যেন চেরাগের নীচে অন্ধকারের মতো। এক শ্রেণীর লোভী বণিক সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে আজ চট্টগ্রাম বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দরের আশেপাশের বিশাল জায়গা জমি এবং স্থাপনা উন্নয়নের নামে লুটেপুটে খাচ্ছে তারা। অথচ যাদের জায়গা জমির উপর চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিষ্টিত তারা আজ অবহেলিত। চট্টগ্রাম বন্দরে তাদের উত্তরাধিকারদের জন্য না আছে চিকিৎসা সুবিধা, না আছে লেখাপড়ার সুযোগ সুবিধা। আর চাকুরি সে যেন সোনার হরিণ, সে কখনো চট্টগ্রামবাসীর কাছে ধরা দেয় না। চট্টগ্রাম বন্দরের চাকুরি এবং ব্যবসা বাণিজ্য সেই সিন্ডিকেটের নিকট জিম্মি। চট্টগ্রামের আপামর জনগণ বন্দরের রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি চায়। সম্প্রতি লালদিয়ার চর এলাকার বিশাল জায়গা উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। উচ্ছেদের পূর্বে তাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির লাইনও বিচ্ছিন্ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এক নিদারুন যন্ত্রণার মরুভূমিতে বসবাস করছে ঐ এলাকার হাজার হাজার অধিবাসী। যা পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতাকেও হার মানিয়েছে। উচ্ছেদ আতংকে লালদিয়া চরবাসীর চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ইতিপূর্বে লালদিয়া চরের একাংশকে উচ্ছেদ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্টানের নিকট লীজ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানেও সে রকম কিছু করার পায়তারা করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যা চট্টগ্রামবাসীর মুখে মুখে। ইতোমধ্যে তাদের মুখোশ চট্টগ্রামবাসীর নিকট উন্মোচিত হয়েছে। এসব ষড়যন্ত্রকারী লোভী বণিক সিন্ডিকেটের তালিকা প্রস্তুত করছে জনগন। আমরা সুস্পষ্ট ভাবে বলে দিতে চাই কোন প্রকার পুনর্বাসন ছাড়া লালদিয়া চরবাসীকে উচ্ছেদ শুধু অমানবিকই নয়, এটা স্বাধীনতার মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

আমরা চট্টগ্রামবাসী বন্দর কর্তৃপক্ষের এ ধরনের কাজের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপণ করছি। আমরা পরিস্কারভাবে বলে দিতে চাই উচ্ছেদ করতে গিয়ে যদি কোন রক্তক্ষয় কিংবা কোন মানুষের জীবনহানি হয় তার পরিপূর্ণ দায়দায়িত্ব চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। সেজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ অনুশোচনারও সুযোগ পাবে না। বন্দরের অভ্যন্তরে বসে কারা এসব কাজে উস্কানি দিচ্ছে তার তালিকাও চট্টগ্রামবাসীর কাছে আছে।

এছাড়া ওয়ান ইলেভেনের সময় দূর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হওয়া কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী এ কাজের সাথে যুক্ত। চট্টগ্রাম বন্দরে বসে যারা জনগনের জমি কেড়ে নিচ্ছে, আশ্রয় কেড়ে নিচ্ছে তাদেরও তালিকা করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সারাদেশে গৃহহীনদের মাঝে ঘর তৈরী করে দিচ্ছেন, আশ্রয় দিচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রীর এ কর্মকান্ড যখন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ঠিক তখনই চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা বিএনপি জামাত চক্র প্রধানমন্ত্রীর এ কর্মকান্ডকে ধুলিস্যাৎ করে দিতে চায়। তারা চায় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিএনপি জামাতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য।

তিনি আরো বলেন, কর্ণফুলী নদী সারা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হলেও ধীরে ধীরে কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রামবাসীর জন্য অভিশাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে কারণ কর্ণফুলী নদীকে ঘিরে যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে সেটাকে গ্রাস করে কর্ণফুলীর আশেপাশের জীবনধারাকে ধ্বংস করতে চায় ঐ লোপুপ দুষ্টু সিন্ডিকেট চক্রটি। বন্দর কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযানে কোন প্রকার সহযোগিতা না করার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকটও অনুরোধ জানান তিনি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *