পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের আয়োজনে জশনে জুলুসে জনতার ঢল নেমেছিল।
রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল ১০ টার নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়াম মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা থেকে ৪৮ তম জশনে জুলুস শুরু হয়।
রাহনুমায়ে শরিয়ত ও ত্বরিকত, আওলাদে রাসূল, হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী, মেহমানে আলা শাহ্জাদা আল্লামা সৈয়্যদ হামেদ শাহ ও মুহাম্মদ কাসেম শাহ মাদ্দাজিল্লুহুল আলীর নেতৃত্বে এই জসনে জুলুসে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
এদিকে সকাল থেকেই নগরের মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, দেওয়ানবাজার, সিরাজদ্দৌলা রোড, আন্দরকিল্লা, মোমিন রোড়, চেরাগি পাহাড়, জামালখানসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে জড়ো থাকে লাখো মানুষ। তারা রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন হুজুর কেবলাকে শুভেচ্ছা জানাতে।
জুলুস শুরুর আগে খানকায়ে কাদেরীয়ায় মুসলিম উম্মার শান্তি কামনায় দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী।
জশনে জুলুস বিবিরহাট, মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, কাপাসগোলা, চকবাজার, প্যারেডের উত্তর পাশ হয়ে সিরাদ্দৌল্লা, আন্দরকিল্লা, জামালখান, কাজির দেউড়ি, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট পুনরায় মুরাদপুর হয়ে জামেয়া মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
এ ছাড়া কাজির দেউড়ি এলাকায় একটি অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্য দেন আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী। সেখানে তিনি দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করেন।
জামেয়া মাঠে তাহের শাহের ইমামতিতে জোহরের নামাজ আদায় করেন লাখ লাখ মুসলিম জনতা। এরপর মুসলিম উম্মার শান্তি কামনায় দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে এ কার্যক্রমেরর সফল সমাপ্তি হয়।
জুলুসের বিশেষ গাড়িতে হুজুর কেবলার সঙ্গে ছিলেন শাহজাদা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ ও আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ হামেদ শাহ (মজিআ), আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের উপদেষ্টা, পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক সুফি মিজানুর রহমান, আনজুমানের ভিপি মোহাম্মদ মহসিন, সেক্রেটারি জেনারেল মো. আনোয়ার হোসেন, এডিশনাল সেক্রেটারি মো. সামশুদ্দিন, জয়েন্ট সেক্রেটারি সিরাজুল হক প্রমুখ।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় কর্মকর্তা সৈয়দ আনোয়ার হোসেন জানান এবারের জুলুসে বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ধর্মপ্রাণ লোক অংশ গ্রহণ করেছে।
আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের উপদেষ্টা ও পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক সুফি মিজানুর রহমান বলেন, ১৯৭৪ সাল থেকে চট্টগ্রামে জুলুস হচ্ছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুলুস। বিশ্বের অনেক দেশে জুলুস ছড়িয়ে পড়েছে। মিশরে রাষ্ট্রীয়ভাবে জুলুস বের করা হয়। আমরা আশা করবো, নবীজীর শানে আয়োজিত চট্টগ্রামের জুলুস গিনেস বুকে স্থান পাবে এবং ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পাবে।
লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে আয়োজিত জুলুসের নিরাপত্তা নিয়ে সচেষ্ট ছিল আয়োজকরা। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে টহল পুলিশের পাশাপাশি জুলুসের মিছিল যেসব সড়ক প্রদক্ষিণ করেছিল সেই সব সড়কে পাশ্ববর্তী বিভিন্ন ভবনের ছাদে পুলিশের পাহারা ছিল। এছাড়াও নিরাপত্তায় আঞ্জুমান সিকিউরিটি ফোর্সের (এএসএফ) পোশাকধারী সদস্য ছিল তিন শতাধিক। সাদা পোশাকে নিয়োজিত ছিল আরও চারশ। স্বেচ্ছাসেবক ছিল আরও তিন হাজার লোক। জুলুস উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। পোশাকধারী পুলিশের সঙ্গে সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।
জুলুসের আয়োজন উপলক্ষে মূলত দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুরিদ, ভক্ত, অনুরক্ত, স্বেচ্ছাসেবক, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও জুলুসের কাজে নিয়োজিতদের জন্য খাবার ব্যবস্থা ছিল। তবরুকের ব্যবস্থা বিতরণ করা হয়েছিল। এছাড়াও গাউসিয়া কমিটির বিভিন্ন শাখার পক্ষ থেকেও তবরুক বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য জশনে জুলুসের মতো একটি নির্মল ইসলামী সংস্কৃতির প্রবর্তন করেন আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ। ১৯৭৪ সাল থেকে তার নির্দেশেই এ দেশে জশনে জুলুস নামে একটি গতিশীল ইসলামী সংস্কৃতি সর্বপ্রথম চালু হয়। এর পর থেকে ১২ রবিউল আউয়াল চট্টগ্রামে ও ৯ রবিউল আউয়াল ঢাকায় জুলুস বের হচ্ছে।
Leave a Reply