কসবায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষ, নিহত ১৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলস্টেশনে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথার সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ দুর্ঘটনায় আরও হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সোমবার (১১ নভেম্বর) দিবাগত রাত ২টা ৫৬ মিনিটে এ সংঘর্ষ ঘটে।

আখাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কান্তি দাস দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর তুর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুটি ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। উদ্ধার কাচ চলাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

দুর্ঘটনা কবলিত আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেসে থাকা সিলেট রেলওয়ে থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. ইকবাল হোসেন জানান, উদয়ন ট্রেনটি তুর্ণা নিশীথা ট্রেনটিকে সাইড দিচ্ছিল। উদয়নের অর্ধেক বগি অন্য লাইনে ঢোকার পর বাকি বগিগুলোতে তুর্ণা নিশীথা ধাক্কা দিলে দুটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা জানান, এ পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে ৯ জন, কসবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৩ জন, বৃাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে দুই জন ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়।

মন্দবাগ স্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চোধুরী বলেন, তূর্ণার চালক তথা লোকো মাস্টারকে ট্রেন থামানোর জন্য আউটার ও হোম দুই স্থানেই লাল বাতি সংকেত দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত চালক ট্রেন দাঁড় করাননি বলেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

কর্মকর্তারা জানান, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বগির নিচে আরো মরদেহ থাকতে পারে। হতাহতদের উদ্ধার কাজ চলছে। অনেকের কাটা হাত-পা উদ্ধার হচ্ছে। এ দৃশ্য অসহনীয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিহত একটি শিশুর পরিচয় পাওয়া গেছে। মেয়েটির নাম সোহানা। বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায়। শিশুটির চার জন স্বজন গুরুতর আহত। নিহত অন্যদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স এ মুহূর্তে ঘটনাস্থলে রয়েছে। মসজিদ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে উদ্ধারে ও সেবায় এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসার জন্য।

আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কান্তি দাস দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। দুইটি ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।

তূর্ণার যাত্রী কাজী ফজলে রাব্বী বলেন, ২টা ৫৬ মিনিটে ভয়াবহ ঝাঁকুনির পর ট্রেন থেমে যায়। তারপর তিনি নেমে দেখেন ভয়াবহ দৃশ্য।

কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কায়সার ভুইয়া জীবন জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। হতাহতদের পরিচয় পেলেই জানানো হবে। আর আটকে পড়া যাত্রীদের খাবারের ব্য্যবস্থাও করেছে উপজেলা প্রশাসন।

চেয়ারম্যান আরো জানান, আইনমন্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন যাত্রীদের সুবিধামতো স্থানে পৌছে দেয়ার জন্য যেন পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। আইমন্ত্রীর বাড়ি এই কসবা উপজেলায়।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তিনি বলেন, পুলিশ সার্বিকভাবে চেষ্টা করছে উদ্ধারকাজে।

জেলা প্রশাসক জানান, এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হবে আপাতত, মরদেহ নেওয়ার সুবিধার্থে। এছাড়া আহতদের সেবায় জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধান থাকবে।

রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী শফিক তুহিন জানান, তিন থেকে চার ঘণ্টা লাগবে উদ্ধারকাজ শেষ করতে। জেলা প্রশাসক বলেছেন, রেলমন্ত্রী ঘটনাস্থলে আসবেন।

এদিকে দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *