জীবনবাজি রেখে সন্ত্রাসী পাকরাও করলেন ওসি

রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : রাউজান উপজেলার পূর্ব রাউজানের রাবার বাগান সংলগ্ন ঘোড়া সামশু টিলা নামক দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্র কারখানায় অভিযান চালিয়ে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ডাকাত আলমগীর প্রকাশ আলমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এই ঘটনায় ২০ টি অস্ত্রসহ অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে এই অভিযানে আরেকটু হলে রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ কেফায়েত উল্লাহ’র জীবন সংকটে পড়তে যাচ্ছিল। সৌভাগ্যক্রমে ডান হাতে ছুরিকাঘাত হলেও বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পান তিনি। তবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সন্ত্রাসী আলমকে পাকরাও করেছেন তিনি।

অভিযানে থাকা রাউজান থানার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গোপন সূত্র ধরে ২০ নভেম্বর বুধবার ২.৪৫ মিনিটের সময় অস্ত্র তৈরির কারখানাটিতে অভিযান চালানোর সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আলমসহ তার অনুসারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ১৫ রাউন্ডের মতো গুলি ছোঁড়ে। এ সময় জীবনের মায়া ত্যাগ করে ঝুঁকি নিয়ে রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ কেফায়েত উল্লাহ সন্ত্রাসী আলকে জাপটে ধরেন। সাথে সাথে সন্ত্রাসী আলম তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে ওসিকে আঘাত করার চেষ্ট করলে সৌভাগ্যক্রমে ছুরির আঘাতটি ডানহাতে তর্জনীতে লাগে। আঘাতে ওসির হাতের দুইটি রগ এবং হাড়ের কিছু অংশ কেটে যায়।

এ সময় অন্যান্য কর্মকর্তাগণ আসামীকে পাকড়াও করেন। হাতে রক্তক্ষরন হওয়ায় ওসিকে প্রথমে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থানায় ফেরেন ওসি।

ওসি কেফায়েত উল্লাহ রাউজান থানায় নিজ অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, আমার সৌভাগ্য ছুরির আঘাতটি পেটে লাগেনি। লাগলে বড় ধরনের বিপদও হতে পারতো। অস্ত্র কারখানায় অভিযানের সময় ওসিসহ এসআই সাইমুল ইসলাম, কনস্টেবল কামাল, কনস্টেবল হামিদ হোসাইন আহত হয়।

ওসির এই সাহসিকতায় প্রেরণা খুঁজছেন তার সহকর্মীরা। জীবনবাজি রেখে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করে প্রশংসায় ভাসছেন ওসি। অনেকে ওসির হাতে ব্যান্ডেজ থাকা ছবি প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট দেন।

সংগঠক মঈনুদ্দিন জামাল চিশতি লিখেছেন, রাউজানের মানুষকে শান্তিতে রাখার জন্য, রাতে নির্ভয়ে-নিরাপদে ঘুমানোর জন্য, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে গতকাল রাতে নিজের জীবন বাজি রেখে সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের প্রিয় রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব কেফায়েত উল্লাহ স্যার। সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে স্যারের হাতে মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে। সবাই দোয়া করবেন। রাউজানবাসী স্যারের এই সাহসিকতার কথা ভুলবে না কখনো।

রাউজানের আলোকিত সংগঠন সেন্ট্রাল বয়েজ অব রাউজানের সভাপতি সাইদুল ইসলাম লেখেন, রাউজানকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য স্যারের যে ত্যাগ এবং অধ্যাবসার তার জন্য স্যারের প্রতি রাউজানের একজন বাসিন্দা হয়ে কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

রাউজানের নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ পরিদর্শক শেখ জাবেদ মিয়া লিখেন, আমি সহ আরো অফিসার ও ফোর্স অভিযানে অংশ নিলেও ওসি স্যারের একক দক্ষতা ও সাহসিকতায় শীর্ষ সন্ত্রাসী আলম ডাকাতকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।

শুধু থানা পুলিশের সহকর্মীরা নয় এমন সাহসিকতা অভিযানের জন্য প্রশংসায় সিক্ত হচ্ছেন ওসি কেফায়েত উল্লাহ।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *