চট্টগ্রামে শতবর্ষী দবিরুল ইসলামের ‘মোমেন্ট অব সাইলেন্স’ কর্মসূচি পালিত

মহামারি করোনাভাইরাস সঙ্কটে দুর্গত মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহ করার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বৃটিশ বাংলাদেশী শতবর্ষী দবিরুল ইসলামের ‘মোমেন্ট অব সাইলেন্স’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে।

শনিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর দুইটা এক মিনিটে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে একশো দুই সেকেন্ড নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে করোনায় বিশ্বব্যাপী মৃত্যুবরণ করা মানুষদের স্মরণ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, তুরস্ক,সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবের একশোর বেশি শহরে একযোগে পালন করা হয়েছে ‘ মোমেন্ট অব সাইলেন্স ‘।

এসময় চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ রিটন, এশিয়ান টেলিভিশন চট্টগ্রামের বার্তা প্রধান ওয়াহিদ জামান, সরকারি সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি রাজিব হাসান রাজন, দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা মহিলা দলের সভাপতি জান্নাতুন নাইম রিকু, জিটিভির সাংবাদিক তৌহিদুল আলম, এটিএন নিউজের সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম পারভেজ, কাজী মাহফুজুল হক, পার্থ প্রতীম নন্দী, রানা নাহা, মেজবা উদ্দিন, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা তাইফুল খান, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি কাজী রাসেলসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কবি নজরুল একাডেমির প্রাঙ্গণে একশো দুই সেকেন্ড নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শতবর্ষী দবিরুল ইসলামের মানবিক কার্যক্রমের সঙ্গী হয়েছেন একাডেমির ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন শহরের সাথে মিল রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীও এই কর্মসূচি পালন করেছেন।

দবিরুল ইসলাম গ্লোবাল ক্যাম্পেইন বাংলাদেশের সমন্বয়ক সাংবাদিক ওয়াহিদ জামান জানান, বয়সের বাধা অতিক্রম করে মানবিকতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করার কারনে ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের জন্মদিনে দেওয়া অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) খেতাব পেয়েছিলেন শতবর্ষী ব্রিটিশ বাংলাদেশি দবিরুল ইসলাম চৌধুরী। গত রমজানে করোনা সঙ্কটে দুর্গত মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহ করার স্বীকৃতি হিসেবে রানি এলিজাবেথের জন্মদিনে দেওয়া অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) খেতাব পেয়েছিলেন তিনি। এমনকি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন।

দবিরুল ইসলামের এমন মানবিক উদ্দ্যেগের সাথে ঢাকা, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহ শহরের সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছেন। এবার দেশের ২৩ টি স্থানে দবিরুল ইসলামের ‘মোমেন্ট অব সাইলেন্স ‘ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ‘

জানা যায়, লন্ডনের বো এলাকায় দবিরুল গেল বছরের রমজানে তার বাড়ির সামনের বাগানে পুরো রমজান মাস ৯৭০ দফা হেঁটে চ্যারিটির জন্য ৪ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা) তহবিল সংগ্রহ করেন। রামাদান ফ্যামিলি কমিটম্যান্ট নামের একটি চ্যারিটির জন্য তোলা এই অর্থ থেকে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (এনএইচএস) দান করা হয় ১১৬ হাজার পাউন্ড। বাকি অর্থ আরও ২৬টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে বিতরণ করা হয়।

এবছর ‘মোমেন্ট অব সাইলেন্স’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহ করবেন দবিরুল ইসলাম। দবিরুল ইসলামের আহবানে এবার বিশ্বের বিভিন্ন শহরে একযোগে ১০২ সেকেন্ড নিরবতা পালন করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে।

লন্ডন থেকে দবিরুল ইসলাম জানান , ব্রিটেনের আরেক শতবর্ষী ব্রিটিশ সেনা টম মুরের নিজের বাড়ির আঙিনায় হেঁটে এনএইচএস অর্থাৎ ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের জন্য ৩৩ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহের খবর দেখে অনুপ্রাণিত হন। এরপর তিনি তার লন্ডনের ফ্ল্যাটের সামনের আঙিনায় হেঁটে মাত্র এক হাজার পাউন্ড তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্য নিধার্রণ করেছিলেন। তবে ব্যাপক সাড়া পড়ায় তা লক্ষ্যকে ছাড়িয়ে যায়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও বিরোধী দলের নেতা লেবার পার্টির কিয়ার স্টারমার দবিরুল ইসলামের তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।

দবিরুল ইসলাম চৌধুরী তার জন্মস্থান সিলেটের দিরাইয়ে বাংলা ফিমেল অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি চ্যারিটির সাথে যুক্ত। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দরিদ্র, অসহায় ও অনাথ মেয়েদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ভরণপোষণ ও শিক্ষার ব্যবস্থা করে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে মোট ৩২০ জন মেয়ে রয়েছে। এদের উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে বলে বলে জানা যায়।

১৯২০ সালের ১ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার কুলঞ্জ গ্রামে জন্ম নেওয়া দবিরুল ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন ১৯৫৭ সালে। লেখাপড়ার পর সেখানে চাকরির পাশাপাশি কমিউনিটির কাজেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার স্ত্রী খালেদা দবীর চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুক্তরাজ্য শাখার একজন নেত্রী। বাঙালি কমিউনিটিতে সুপরিচিত পেনশনার দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে অনেকেই চেনেন কবি দবিরুল হিসাবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *