৩০ শ্রমিককে উদ্ধার করা চা-দোকানদারকে পুরস্কৃত করল সিএমপি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনায় আহত ৩০ শ্রমিককে দেয়ালের উপর দিয়ে বের করে আনা চা-দোকানি হানিফকে পুরস্কৃত করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর।

বুধবার (৮ জুন) নিজ কার্যালয়ে হানিফের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তিনি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) আসিফ মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহত ৩০ শ্রমিককে দেয়ালের উপর দিয়ে বের করে আনেন চা-দোকানি হানিফ। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যের জীবন বাঁচানোর চেষ্টার মাধ্যমে যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি, তা অনেকের জন্য হয়ে থাকবে অনুকরণীয়। হানিফের এই সাহসিকতা, জীবনমুখিতা, অসামান্য অবদানকে সম্মান ও স্বীকৃতি প্রদান করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর।

পুরস্কার দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (সিএসবি) মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ, সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুনসহ পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, শনিবার সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসময় বিএম কনটেইনার ডিপোর দক্ষিণ–পূর্ব কোণের দেয়াল ঘেঁষে থাকা চা-দোকানি মো. হানিফ (৫০) একাই ৩০ শ্রমিককে দেয়াল পার করে নিরাপদে নিয়ে এসেছেন। আর এই কাজটি তখনই তিনি করেছিলেন, বিস্ফোরণের পর সবাই যখন ছোটাছুটি করছেন, তখন বাঁচার আকুতি নিয়ে নিরাপত্তা দেয়াল টপকাতে চাওয়া ৩০ শ্রমিককে একাই দেয়াল পার করেছিলেন তিনি।

ঘটনার দিনের বর্ণনা করতে গিয়ে হানিফ বলেছিলেন, প্রতিদিনের মতো শনিবার রাতেও দোকানে করছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ। মানুষ চারদিকে ছোটাছুটি শুরু করে। বিস্ফোরণে আহত শ্রমিকরা তার দোকান ঘেঁষে থাকা উঁচু নিরাপত্তা দেয়াল টপকে পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পোড়া শরীর, ভাঙা হাত–পা আর রক্ত ঝরা শরীর নিয়ে পার হতে পারছিলেন না।

এমন অবস্থা দেখে নিজের বাড়ি না গিয়ে দোকানের চালায় উঠে পড়েন। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করা শুরু করেন। প্রথমে পাঁচ শ্রমিককে পার করে আনেন। এরপর স্ত্রী নাছিমা বেগম তার খোঁজ করতে দোকানে আসেন। তখন স্ত্রীকে দিয়ে বাড়ি থেকে একটি কাঠের মই আনান। মই পাওয়ার পর আরও ২৫ শ্রমিককে উদ্ধার করে প্রাণে বাঁচান হানিফ। পরে আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

হানিফ বলেন, এখানে দোকান থাকায় ডিপোতে কাজ করা বেশির ভাগ শ্রমিকই পরিচিত। তাদের বাঁচার আকুতি উপেক্ষা করতে পারিনি। তাই ভয়াবহ এমন পরিস্থিতিতে শুধু নিজে বাঁচার কথা না ভেবে শ্রমিকদের উদ্ধারে এগিয়ে যাই।

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর এলাকার মৃত নুরুল আহাদের ছেলে হানিফ। ছোটবেলা থেকেই তিনি সোনাইছড়ি ইউনিয়নের লালবেগ এলাকায় বসবাস করেন। দুই বছর আগে বিএম ডিপোর পাশে এই চা দোকান দেন আট সন্তানের জনক হানিফ।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *