প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামবাসীর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছেনঃ ডিসি

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অনাকাঙ্খিত অগ্নিদুর্ঘটনায় হতাহত ৬৯টি পরিবারের মাঝে ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করা হয়েছে।

আজ সোমবার (২০ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে বিএম কনটেইনার ডিপো লিমিটেডের পক্ষে এসব চেক তুলে দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

গত ৪ জুন রাতে স্মার্ট গ্রুপের বিএম কনটেইনার ডিপোতে সংঘটিত অগ্নিদুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের নিহত ১০ কর্মীর প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা, নিখোঁজ ৩ জনের প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা, গুরুতর আহত ৯ জনের প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা, সাধারণ আহত ৫ জনের প্রত্যেক পরিবারকে ৬ লাখ টাকা, বিএম ডিপোতে কর্মরত অবস্থায় নিহত ৯ জনের প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ও আহতদের ধরণ অনুয়ায়ী পরিবার প্রতি ২ থেকে ৬ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেয়া হয়।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ মাহমুদ উল্লাহ মারূফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) কবীর আহমেদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, বিএম কনটেইনার ডিপোর জি.এম মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী, পরিচালক মোঃ শফিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফর আলী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাত। চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে স্মাট গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের পর দলমত নির্বিশেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে হতাহতের পাশে দাঁড়াতে চট্টগ্রামবাসী যেভাবে ছুটে এসেছেন সেটি সারাদেশে নজির স্থাপন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চট্টগ্রামবাসীর এ আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি রাত দশটার দিকে এ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হন। খবর পেয়েই প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের সকল কর্মকর্তাকে হতাহতদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেন। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় যাতে কোনও ঘাটতি না হয় সেজন্য নির্দেশনা দেন। এ নির্দেশনা পেয়ে রাতেই সবাই ছুটে এসেছেন, হতাহতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যখন যা প্রয়োজন হয়েছে তার ব্যবস্থা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারে যদি কেউ কর্মক্ষম থাকে তাহলে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। যাদের পরিবারে কর্মক্ষম কেউ নেই তাদের জন্য অন্য কোনও ব্যবস্থা করা হবে, যাতে তারা চলতে পারেন। বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত যে কথাগুলো বলেছেন, সব কথা তারা রক্ষা করেছেন। বাকি কথাগুলোও আশা করি রক্ষা করবেন।

ডিসি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের মানুষ দল মত নির্বিশেষে সবাই ছুটে এসেছেন। আমি দেশের সাতটি জেলায় দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষের মতো এমন আন্তরিক কোথাও দেখিনি। দেশবাসী বীর চট্টলার আন্তরিকতা দেখেছে।

বিএম কনটেইনার ডিপোর ঘটনায় সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডেে ঘটনার পর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনারা সঠিক সংবাদটি প্রকাশ করেছেন। তার জন্য কৃতজ্ঞতা। আপনারা যদি সঠিক সংবাদ প্রকাশ না করতেন তাহলে কুচক্রীমহল এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার সুযোগ পেতো।

অনুষ্ঠানে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সবাই বিএম ডিপোতে ক্ষতিগ্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সসহ সেবা সংশ্লিষ্ট সবাই যে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন সেটি অতুলনীয়। যতদিন আপনারা ব্যবসা করবেন ততদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মরণ রাখবেন।

তিনি আরও বলেন, যারা হতাহত হয়েছেন তাদের পরিবারে যদি চাকরি করতে সক্ষম কেউ থাকে তাকে চাকরি দেন। আর্থিক অনুদান আপনারা পাচ্ছেন, সেগুলো কাজে লাগাবেন। কাউকে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় দিবেন না। রিকশা অথবা অন্যকিছু কিনে কাউকে চালাতে দেন। যাতে মূলধন ঠিক থাকে। বিএম কনটেইনার ডিপোর ঘটনায় যারা এগিয়ে এসেছেন, তাদের কাছে চট্টগ্রামের মানুষ কৃতজ্ঞ।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *