স্ক্যানার সংকটকে ঢাল বানিয়ে অবৈধভাবে পন্য খালাস বন্ধে এবার চট্টগ্রাম বন্দরের প্রত্যেক গেটে বসানো হবে স্ক্যানার। অবৈধ পন্য খালাস বন্ধসহ বন্দরের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতেই স্ক্যানার বসানোর কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। শুধু চট্টগ্রাম বন্দর নয় মোংলা বন্দরসহ সবগুলো স্থল বন্দরেও বসানো হবে স্ক্যানার। গতকাল রোববার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল পরিদর্শনের সময় নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদেও বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দীর্ঘদিন ধরে স্ক্যানার, জনবলসহ নানা সংকটে ধুঁকছে চট্টগ্রাম বন্দর। আর সেই সুযোগে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বারবার মিথ্যে ঘোষণায় পণ্য এনে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। গত এক বছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় বিপুল পরিমাণে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি সিগারেট ধরা পড়েছে।
স¤প্রতি টানা তিনদিনে পাঁচ কনটেইনার বিদেশি মদ জব্দ করে কাস্টমস কর্মকর্তারা। মন্ত্রী বলেন,চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন। এর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার জন্য স্ক্যানার বসানোর কার্যক্রম চলমান আছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে যাতে স্ক্যানার বসানো না হয়, এখানে যাতে ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া না লাগে সেজন্য সংঘবদ্ধ চক্র জোরালো ভূমিকা রাখছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্বমানের ডিজিটাল করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যা যা করণীয় তা করা হবে বলেও জানান নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের সাথে চুক্তি অনুসারে তাদের দেশের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারবে এবং সেখান থেকে সড়ক পথে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে মালামাল যেতে পারবে। এজন্য চট্টগ্রাম বন্দরে ভারতের জাহাজের ট্রায়াল রান হয়েছে এবং আরো ট্রায়াল হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরকে আরো আপগ্রেড করা হচ্ছে। পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, ওভারফ্লো ইয়ার্ড নির্মিত হয়েছে। অধিক জাহাজ বাড়ার চাপ সামাল দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর প্রস্তুত আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এস আর ও হয়ে গেলে নিয়মিতভাবে ভারতীয় জাহাজ আসা শুরু করবে।
ভারতের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করা এবং সেখান থেকে পণ্য ভারতের অন্যান্য রাজ্যে পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানবিক রাষ্ট্র। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ পেয়েছি। আমরা সবসময় মানবিক পদক্ষেপ নিয়েছি। বঙ্গবন্ধুর বিদেশ নীতি হলো-সকলের সাথে বন্ধুত্ব। সে অনুযায়ী আমরা মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান, সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো: জাফর আলম, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মো: মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন ভৌগলিক কারণে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম বন্দর।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সিএন্ডএফ এজেন্ট, অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় অবৈধভাবে আমদানি করা পণ্য আনতে চট্টগ্রাম বন্দরকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর হাতিয়ার বানিয়েছেন ‘স্ক্যানার’ সংকটকে।
অসাধু ব্যবসায়ীরা কেন চট্টগ্রাম বন্দরকে নিরাপদ রুট মনে করছে বা বন্দর দিয়ে কিভাবে বারবার অবৈধভাবে আমদানিকরা পণ্য ছাড় হচ্ছে সেটি বের করে আনতে পিবিআই বা র্যাবকে তদন্তভার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন খোদ সিএন্ডএফ এজেন্ট নেতারা।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে ১২টি গেটের মধ্যে স্ক্যানার রয়েছে ৭টিতে। এরমধ্যে বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ১ নম্বর গেট, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ৩ নম্বর গেট, চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ২, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে আছে একটি করে ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। পাশাপাশি সিসিটি-২ ও জিসিবি-২ নম্বর গেটে একটি করে মোবাইল কনটেইনার রয়েছে।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বন্দরে প্রতিনিয়ত মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য বা চোরাচালান জব্দ করে কাস্টমস। চট্টগ্রাম বন্দরে স্ক্যানারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই অসাধু সিএন্ডএফ এজেন্ট ও কিছু কাস্টমস কর্মকর্তা
আমদানিকারকদের সাথে হাত মিলিয়ে অবৈধভাবে আনা পণ্যগুলো জালিয়াতির মাধ্যমে খালাস করে নেন। পাশাপাশি এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে মাঝে মাঝে ত্রæটি দেখা দেয়। তাই এসব জালিয়াতি রোধ করতে হলে স্ক্যানার মেশিন বসানোর বিকল্প নেই। নতুন স্ক্যানার মেশিন বসালে জালিয়াতি কমে আসবে বলে মনে করছেন তারা।
বন্দরের প্রত্যেক গেটে স্ক্যানার বসানোর সরকারী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, বন্দরের স্ক্যানার মেশিন সংকট একটা বড় ধরনের দুর্বলতা। শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালান বন্ধে স্ক্যানার বসানোর বিকল্প নেই।
এছাড়া অনেক সময় একটি সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কর্মচারী বা কাছের কেউ প্রাতিষ্ঠানিক পাসওয়ার্ড জানা থাকলে লোভের বশবর্তী হয়ে এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। কাজেই এ অপরাধটি আসলে কে করেছে তা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন।
জে-আর
Leave a Reply