জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টির অভাবে চট্টগ্রামে আমনের ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির অভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মরে যাচ্ছে আমন ধানের চারা। আগের মৌসুমের তুলনায় ১ হাজার ৬’শ ৫৩ হেক্টর জমিতে আমন চাষ কম হয়েছে। ইতোমধ্যেই গত মৌসুমের তুলনায় এ বছর মাত্র ৭৫ শতাংশ জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। কৃত্তিম উপায়ে সেচ দিতে গিয়ে কৃষকের খরচ বেড়েছে তিনগুন। এ ছাড়া কমেছে আমন চাষের পরিমাণও। এতে করে চট্টগ্রাম বিভাবে খাদ্য সংকটে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
অনাবৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কৃষকরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। ধান চাষে এবার বর্ষায় অনাবৃষ্টির কারণে বীজতলা তৈরির সময় থেকেই নানা সংকটে পড়তে হয়েছে কৃষকদের। একইসঙ্গে ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা সংকটকে ঘনীভূত করেছে। এর বাইরে রয়েছে শ্রমিকের বাড়তি মজুরি।
এসব কারণে চলতি মৌসুমে আমন আবাদের পাশাপাশি উৎপাদনও কমে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। খরচ বেড়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ। একইসঙ্গে কমেছে আমনের আবাদ।
ফটিকছড়ির চাষী সোলাইমান আকাশ জানান, প্রাকৃতিক সমস্যার কারণে এ বছর জমি থেকে ফসল তোলা প্রায় অনিশ্চিত। পাওয়ার টিলার বাবদ প্রতি কানিতে আড়াই হাজার টাকা, আগামসহ আনুসাংগিক ব্যয় প্রতি ৪০ শতকে প্রায় ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
চট্টগ্রাম কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের আওতাধীন পাঁচ জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, ল²ীপুর ও নোয়াখালী জেলায় গত মৌসুমে আমন আবাদ হয়েছিল মোট পাঁচ লাখ ৭২ হাজার ৮’শ ২০ হেক্টর জমিতে ।
এরমধ্যে লাখ ৮৮ হাজার ২’শ ২৯ উফশী জাতের, স্থানীয় ৭৩ হাজার এবং ১১ হাজার ৫’শ ১৬ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের আমন ধান আবাদ করা হয়েছিল। এরমধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় তিন জাতের আমনের আবাদ হয়েছিল এক লাখ ৮২ হাজার ৬’শ ৭১ হেক্টর।
তার আগের বছর এ জেলায় আমন আবাদ হয়েছিল এক লাখ ৮৫ হাজার ৩’শ ১৯ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে শুধু চট্টগ্রাম জেলায় আমনের আবাদ কমেছিল ২ হাজার ৬’শ ৪৮ হেক্টর জমিতে।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১ লাখ ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই ৭৫ শতাংশ জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে জোয়ারের চাপ থাকায় আমন আবাদে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। বর্তমানে আমন চারা রোপণের শেষ সময় চলছে।
কৃষি বিভাগের হিসাবে গেল ৩১ আগস্টের মধ্যে আমনের চারা রোপণ শেষ করার কথা। শুধু রোপণ নয়, ধানের চারা বেড়ে ওঠার সময় চলতি সেপ্টেম্বর নাগাদও জমিতে পর্যাপ্ত পানি থাকতে হবে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় পর্যাপ্ত পানি নেই জমিতে।
আমনের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময় জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে এবার কাক্সিক্ষত বৃষ্টির দেখা মিলেনি। সেচ পাম্প দিয়ে বীজতলা তৈরির কাজে এখন বড় বাঁধা লোডশেডিং। বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষি-শ্রমিকরাও বাড়তি মজুরি দাবি করে।
দেশের ‘শস্যভান্ডার’ হিসেবে পরিচিত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল, বোয়ালখালীর বগাচরা ও মইঘ্যার বিলে আমন আবাদ কম হয়েছে। এরমধ্যে বগাচরার ৩’শ একর জমির মধ্যে আমনের চাষ হয়েছে মাত্র ৫০ একর জমিতে।
একইভাবে মইঘ্যার বিলে ১’শ একর জমির মধ্যে ৫০ একর জমিতে চাষ হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে দৈনিক আট-নয়শ’ টাকা মজুরি দিয়েও কৃষি শ্রমিক মিলছে না।
জে-আর
Leave a Reply