লোহাগাড়া প্রতিনিধিঃ মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে, শিক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন, শিক্ষার্থীদেরকে বইমুখী করা এবং পড়াশুনায় মনোযোগী করতে বিভিন্ন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে সমগ্র উপজেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এরই মধ্যে ইউএনও শরীফ উল্যাহ গতকাল সন্ধ্যায় শুরু করেন ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে সশরীরে সরেজমিনে গিয়ে ‘সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিট’ কার্যক্রম।
গতকাল সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত প্রায় দশটা পর্যন্ত তিনি তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট এগারো জন শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়েছন।
এসময় তিনি দেখেছেন- শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার পর যথাসময়ে বাসায় প্রবেশ করেছে কি না, বাড়িতে পড়াশুনা করছে কি না ও পড়াশুনার সার্বিক খোঁজখবর নেন। অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন। কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করেন। এছাড়া প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের একটি করে ব্যাগ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেন।
জানা যায়, লোহাগাড়া সুখছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী অমিত দেবনাথ, জুবাইরুল ইসলাম, জাহেদুল ইসলাম, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবুল ইলহাম, সুখছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী অমি দাশ, দ্বীপ দাশ, রিদম দাশ, রক্তম দাশ পশ্চিম কলাউজান শাহ মজিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল, মাহাতির মোঃ ইয়াসিন ও দশম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ মাহিন এর বাড়িতে ‘সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিট’ করেছেন। জানা যায়, ভিজিটকালে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ ও একটি বইসহ প্রায় এক হাজার টাকার শিক্ষাসামগ্রী প্রদান করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সান্ধ্যকালীন এমন আকস্মিক ভিজিটে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। যেসব শিক্ষার্থীর বাড়িতে তিনি গিয়েছেন সেসব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিস্মিত, অভিভূত ও অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন। তারা ধারণাই করতে পারেননি, উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ অফিসার এভাবে সরাসরি ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে ভিজিট করতে চলে আসবেন। তারা মনে করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় এতটাই শিক্ষাবান্ধব যে তিনি একের পর এক নতুন নতুন ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে চমক সৃষ্টি করে যাচ্ছেন! যা শিক্ষার মানোন্নয়নে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। তারা বলেন, এমন কার্যক্রমে আমাদের সন্তানরা পড়াশুনায় আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে। প্রশাসনের এমন কঠোর মনিটরিং থাকলে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে উন্নতি অবশ্যম্ভাবী।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ উল্যাহ জানান, শিক্ষার্থীদেরকে ক্লোজ মনিটরিং এ নিয়ে আসা, তারা যাতে সন্ধ্যার পরে অহেতুক বাসার বাইরে না থাকে, আড্ডা না দেয়, খারাপ সঙ্গে জড়িয়ে না পরে, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি না করে, মাদকাসক্তি ও অসামাজিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ত না থাকে এবং তাদেরকে পড়াশুনায় মনোযোগী করা ও উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগটি হাতে নিয়েছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা বইমুখী হলে, পড়াশুনায় মনোযোগ দিলে সামগ্রিক অর্থে শিক্ষা জীবনে তাদের সাফল্য ও উন্নতি হবে এবং জীবনে তারা অনেক উপরে উঠতে পারবে। একার্যক্রম ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে। আশা করি, এতে আমাদের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে।
তিনি আরও বলেন, এই উদ্যোগের প্রথম ধাপে আমরা গরীব মেধাবী ছাত্রদেরকে প্রাধান্য দিয়েছি। আমরা সন্ধ্যার পরপরই তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। প্রথমদিন আমরা মোট এগারো জন শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়েছি। এর মধ্যে নয়জন ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী আর দুইজন দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। এছাড়া গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কিছু প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ দিয়েও সহায়তা করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এমন আকস্মিক ‘সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিটের’ বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী, সচেতন সমাজ, অভিভাবক ও শিক্ষকমহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়। তাদের মতে, এটি সম্পূর্ণরূপে নতুন একটি বিষয়, যা অতীতে আমরা কখনোই দেখিনি। এই প্রথম এমন উদ্যোগ দেখলাম। শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে। শিক্ষাসচেতনতা বৃদ্ধিতে ও শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এমন উদ্যোগ অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন। একইসাথে তারা চান, শিক্ষা ক্ষেত্রে মানসম্মত পরিবর্তন আনয়নে ও আমাদের আগামীর প্রজন্মকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে গড়ে তুলতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অন্যান্য ব্যতিক্রমী কার্যক্রমের পাশাপাশি এই কার্যক্রমও যাতে চলমান থাকে।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অফিসার জনাব নুরুল ইসলাম জানান, আমার দীর্ঘ চাকুরি জীবনে ইউএনও কর্তৃক ‘সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিট’ অতীতে কখনই দেখিনি। আসলে আমাদের ইউএনও মহোদয় সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমকে বেগবান ও কার্যকর করার লক্ষ্যে এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, বিভিন্ন নতুন নতুন বিষয় সংযোজন করছেন ইতোমধ্যেই সর্বমহলে সেগুলো খুবই প্রশংসিত হয়েছে। আশা করি, অচিরেই আমরা লোহাগাড়ার শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ‘সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিটে’ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাওন ভূঁইয়া, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল ইসলাম, সুখছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেবাশীষ আচার্য্য ও মাস্টার মোবারক হোসেন সাথে ছিলেন।
Leave a Reply