সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে চট্টগ্রামে বায়ু দুষণ বাড়ছে, নিয়ন্ত্রণের দাবি ক্যাবের

বায়ু দুষণ

২৪ ঘন্টা ডট নিউজ। চট্টগ্রাম ডেস্ক : বর্তমানে পৃথিবীতে বসবাসের অযোগ্য নগরীর ৩নং স্থানে আছে ঢাকা। বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম নগরী, শীতকালে ধুলাবালি, শিল্প বজ্য, পাহাড় কাটার মাঠি ক্ষয়, কলকারখানার কালো ধোঁয়ায় ক্রমাগত বায়ু দুষণের কারনে বাতাসে সীসা ছড়িয়ে বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ছে দেশের বানিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম নগরীও।

বিশেষজ্ঞরা বায়ু দূষণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা স্তুপ, সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মকান্ড, উন্নয়ন কর্মকান্ডে পরিবেশ সংরক্ষনের জন্য পৃথক বরাদ্ধ থাকলেও তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত না করা, বিভিন্ন শিল্প কারখানা, যানবাহনের কালো ধুয়া নির্মগন, শিল্প বজ্য, পাহাড় কাটা ও ইট ভাটার কালো ধোঁয়া।

অন্যদিকে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) চট্টগ্রাম দাবি করছে, যে কোন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র অত্যাবশ্যক এবং পরিবেশ সংরক্ষনের জন্য পৃথক বরাদ্ধ রাখার বিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে যথাযথ তদারকি করছে না।

উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন মানছে না খোদ সরকারী সেবা সংস্থা, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, টিএন্ডটি, কর্নফুলী গ্যাস ও সিটি কর্পোরেশন এর উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত ঠিকাদারগন।

যার খেসারত দিতে হচ্ছে পুরো নগরবাসীকে। চট্টগ্রামের বায়ুুর গুণগত মান ক্রমাগত অবগতি ও বায়ু দুষণের ফলে বসবাস অযোগ্য নগরীর মধ্যে অন্যতম হিসাবে চট্টগ্রামের নাম উঠে এসেছে।

এ অবস্থায় বায়ু দূষণ রোধে দ্রুত এ দূষণের সাথে জড়িত সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়গুলি কঠোর ভাবে মেনে চলতে বাধ্য করা ও আইন অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবি জানিয়েছে ক্যাব চট্টগ্রাম।

গতকাল নগরীর জামালখানস্থ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) চট্টগ্রাম ও আমেরিকান কর্নারের যৌথ উদ্যোগে “পেতে হলে সুস্থ জীবন-রুখতে হবে বায়ু দুষণ” এর দাবিতে মানববন্ধন এ বিভিন্ন বক্তাগন এ দাবি জানান।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামের বায়ুর গুণগত মান ক্রমাগত দ্রুত অবনতির কারনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ক্লিন ও গ্রীন সিটি নির্মাণের অঙ্গীকার যেমন অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে, তেমনি মানুষের নির্মল বায়ু প্রাপ্তি ও বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় সাময়িক ভাবে মাক্স ব্যবহারে সুবিধা মিললেও দীর্ঘ মেয়াদে বায়ুর দূষণ থেকে বাঁচতে বায়ু দুষনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর হস্তে দমনের বিকল্প নাই।

বক্তাগন নগরীতে চলমান অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মকান্ড, নগরীর রাস্তা খুড়ে বছরের পর পর ফেলে রেখে দুর্ভোগ সৃষ্ঠিকারী সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানান।

যত্রতত্র ময়লা ফেলে রাখা, নালা-নর্দমার ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় তুলে রাখা, উন্নয়ন প্রকল্পের পরিবেশ সংরক্ষনের তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে তদারিক নিশ্চিত করা, রাস্তার উপর ইট, সুরকি, বালি রাখা বন্ধ, বৃহৎ এপাটমেন্ট-বাড়ী নির্মানে পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ধুলাবালি না ছড়াতে রাস্তা ও উন্নয়ন প্রকল্প এলাকায় প্রতিনিয়ত পর্যাপ্ত পানি ছিটানো, ক্যামিকেল বর্জ্য-কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা, পাহাড় কাটা বন্ধ, ইট ভাটার কালো ধোয়া নির্গমন বন্ধ, পলিথিন ফেলে পরিবশে বিপর্যয় রোধে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়।

এদিকে ক্যাব নেতারা জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের মতে একজন ধুমপায়ী নিজে তামাক সেবনের মাধ্যমে তার নিজের যে পরিমান ক্ষতি করেন, ধুমপানের ক্ষতিকর বায়ু ছড়িয়ে তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি করেন শিশু ও গর্ভবতী মা’দের।

ঠিক একই ভাবে বায়ু ধুষণের কারনে শিশু ও মা’দের হাপানী, এ্যাজমা, ক্যান্সার, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, শিশুর মেধা বিকাশে প্রতিবন্ধকতা, জন্ডিসসহ নানা জঠিল রোগ ভয়াবহ আকার ধারন করছে।

ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে ও ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক শাহাব উদ্দীন, বিএড কলেজের অধ্যাপক শামশুদ্দিন শিশির, লেডিস ক্লাবের জিনাত আজম, ইনার হুইল ক্লাবের রেবেকা নাহরিন, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের খালেদা আওয়াল, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব খুলসীর লায়ন প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান, ক্যাব সদর ঘাটের শাহীন চৌধুরী, ক্যাব জামাল খানের নবুয়াত আরা সিদ্দিকী, হেলাল চৌধুরী, সালাহ উদ্দীন আহমদ, অ্যাডভোকেট সুচিত্রা গুহ, ক্যাব হালিশহরের উপদেষ্ঠা লায়ন এম আজিজ, ক্যাব চান্দগাঁও এর জানে আলম, অধ্যক্ষ মনিরুজ্জমান, আবু ইউনুচ, সেলিম সাজ্জাদ, ক্যাব পাঁচলাইশের মোঃ সেলিম জাহাঙ্গীর, রেশমী আকতার, মুক্তা শেখ মুক্তি, অধিকার ফোরামের কায়সার আলী, ক্যাব হালিশহরের লায়ন এম আজিজ, বিবিএফ’র উৎফল বড়ুয়া, বিজয় একাত্তরের জসিম উদ্দীন, নারী যোগাযোগ কেন্দ্রের সালমা জাহান, ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের জিয়া, ক্যাব আকবর শাহ থানার সাধারন সম্পাদক দিদারুল আলম প্রধান, ক্যাব পশ্চিম ষোলশহরের ইমতিয়াজ মোরশেদ খান, প্রশিকার শাহাদত হোসেন, নারী নেত্রী রেবা বড়ুয়া, মানবাধিকার ফোরামের জসিম উদ্দীন ও আমেরিকান কর্নারের পরিচালক রুমা দাস প্রমুখ।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহনকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম ইন্ডিপেডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইনার হুইল ক্লাব, বেল্টা, ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাব, বিবিএফ, নারী যোগাযোগ কেন্দ্র, চাটগাইয়া নওজোয়ান, ভলান্টিয়ার্স ফর বাংলাদেশ, শপটোক, ব্রিটো, ইউপিওএল, ১/২৪, সামাজিক আন্দোলন, সিনেমা তারুন্য, টেকসই উন্নয়নের জন্য গ্লোবাল এইড, চট্টগ্রাম ব্লাড ব্যাংক, সিএসডিএফ, আইএসডিই বাংলাদেশ, প্রশিকা, ক্যাব যুব গ্রুপ প্রমুখ।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *