মাথা ন্যাড়া করে শিক্ষিকার প্রতিবাদ, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ডিসির

চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকার এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কাবাডি খেলার জন্য মেয়েরা ফ্রেন্স বেণি করে চুল বাঁধায় প্রধান শিক্ষিকা তাদের মারধর ও বকাঝকা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে ওই স্কুলের এক সহকারী শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন নিজের চুল ন্যাড়া করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং স্কুল থেকে পদত্যাগও করেছেন। এ নিয়ে তিনি ফেসবুকে ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। শুক্রবার এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছেন জেলা প্রশাসক।

কয়েক দিন ধরে মেয়েদের সাফজয়ের পর আনন্দ বন্যায় ভাসছে পুরো দেশ। এমন সময় মেয়েদের চুল বাঁধা নিয়ে ঘটনাটি দাগ কেটেছে অনেকের মনে। তাই ফেসবুকে এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিও করছেন অনেকেই।

বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষিকা জাহিদা অপমান ও ক্ষোভ থেকেই এমন প্রতিবাদ করেছেন বলে জানান। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘স্কুলের মেয়েদের মাসখানেক কষ্ট করে খেলা শিখিয়ে মাঠে নিতে যাওয়ার আগের দিন তাদের চুল ফ্রেন্স বেণি করে ছবি তোলা হয়। তবে এভাবে খেলতে যাওয়ার কারণে আমার স্কুলের হেডমাস্টার মেয়েদের চুল ধরে মারে ও বকা দেন। এর প্রতিবাদে নিজের মাথার চুল ফেলে দিয়েছি। খুব কি খারাপ দেখা যাচ্ছে?’

এতে তিনি লিখেছেন, প্রধান শিক্ষিকার অসহযোগিতার কারণে মেয়েরা এক মাস প্রশিক্ষণ নিলেও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে জাহিদা জানান, ‘৪৯তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বিদ্যালয়ের ১২ জন মেয়ের একটি কাবাডি দল করেন তিনি। গত ৭ সেপ্টেম্বর ওই মেয়েদের চুলের ফ্রেন্স বেণি করে একটি ছবি তোলেন। তবে এতে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নীপা চৌধুরী খেপে গিয়ে ছাত্রীদের বকাঝকা এবং কয়েকজনের চুল ধরে টানাটানি করেন। এভাবে কেন বেণি করেছ- বলতে বলতে শিক্ষার্থীদের মারছিলেন তিনি। এতে অপমানিত হয়ে অনেক মেয়ে কান্নাকাটি করে। আমি দেখে সেখানে গিয়ে তাঁকে থামাই। বলি, আমিই তাদের এভাবে বেণি করত বলেছি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বলেন, এভাবে বেণি করতে পারবে না।’

এ ঘটনায় ছাত্রীদের মতো তিনিও অপমানিত বোধ করেন। ঘটনার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ঘটনার সাত দিন পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর নিজের চুল ন্যাড়া করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সেই ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে নিজের ও ছাত্রীদের ছবি সংবলিত একটি পোস্ট ফেসবুকে দেন জাহিদা।

জাহিদা জানান, খেলোয়াড়দের নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে স্কুলে মডেল টেস্ট থাকায় তাদের পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় খেলায় অংশ নিতে পারেনি তার কাবাডি দল। তাঁর অভিযোগ, খেলার দিন মাঠে যাওয়ার আগে নানা ছুতোয় প্রধান শিক্ষিকা আমাদের দেরি করিয়েছিলেন। এ কারণে কো-অর্ডিনেটর শিক্ষার্থীদের মাঠে নামতে দেননি।

ঘটনার এতদিন পর ফেসবুকে প্রতিবাদের কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাহিদা বলেন, ‘ঘটনার পরদিন অসুস্থ হয়ে আমি চমেক হাসপাতালে ভর্তি হই। ১২ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল থেকে বড় ভাইয়ের বাসায় ফিরি। সেখানে এক দিন বিশ্রামে ছিলাম। বিষয়টি নিয়ে আমার ভাই প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বললে তিনি ভাইকেও অপমান করেন।’

জাহিদা বলেন, ‘প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে স্বাধীনভাবে মেয়েদের নিয়ে কাজ করতে দেন না। খেলার জন্য মেয়েদের নিয়ে কোনো টিম করতে চাইলে বাধা দেন। ঠিকমতো স্কাউট করতেও দেওয়া হয় না এখানে।’ জাহিদা ২০১১ সাল থেকে এই স্কুলে কর্মরত আছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষিকা নীপা চৌধুরী বলেন, ‘এটা সম্পূূর্ণ মিথ্যা কথা। বেণি করে চুল বাঁধা নিয়ে আমি শিক্ষার্থীদের মারধর বা বকাবকি করিনি।’ এর থেকে আর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি শুক্রবার থেকেই কাজ শুরু করেছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান। তিনি জানান, তাদের দ্রুত সময়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় যেই দোষী হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই স্কুলের সভাপতি বর্তমানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন বলেন, ওই ঘটনার পর শিক্ষিকা জাহিদা পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরিচালনা কমিটির সভায় সেটি গ্রহণ করা হয়েছে।

১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এয়াকুব আলী দোভাষ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী পড়ে। শিক্ষক আছেন ১২জন।

২৪ঘণ্টা/এজে

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *