‘বিসিক শিল্প নগরী রাউজান প্রকল্প’ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হওয়ার পথে। স্বপ্নছোঁয়া কর্মযজ্ঞে রাউজানের বিসিক নগরীর প্লটগুলোতে গ্যাসে উৎপাদন নিশ্চিত করা হচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে। কারণ বিদ্যুতের মাধ্যমে সব ধরনের উৎপাদন সম্ভব নয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা এ প্রকল্প রাউজানকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে তুলবে এমন ধারনা সরকারের।
সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন(বিসিক) এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে। সরকার কর্মসংস্থান বাড়াতে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ৯৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলছে রাউজান বিসিক শিল্প নগরী।
এ পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। যদিও ২০২২ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন শতভাগ শেষ না হওয়ায় সময় বাড়িয়ে তা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
এদিকে, বরাদ্দকৃত ভূমির ৩৫ একরের মধ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী মাটি ভরাট কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রকল্প পরিচালনার জন্য অবকাঠামো নিমার্ণও প্রায় শেষ। প্রথম ধাপে ১৭ একরের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে। এরপর থেকে ১৮ একরের মাটি ভরাট কাজ শেষ হয়েছে।
আগামী বছরের জুনে ছোট বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রকল্পের ভেতরে কর্মসংস্থান হবে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কর্মজীবির। আর বাহিরেও এ প্রকল্পকে ঘিরে আরো প্রায় ৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পটি ৩৫ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত করার অনুমতি পেয়েছে। প্রতি একর ভূমির মূল্য পড়েছে প্রায় ৬৭ লাখ ৫২ হাজার ৫’শ ৪২ টাকা।
৩৫ একর ভূমির মোট মূল্য প্রায় ২৩ কোটি ৬৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯’শ ৭১ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন হতে ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এবং শিল্প মন্ত্রনালয় হতে একই বছরের ৪ মার্চ প্রথম সংশোধনীর অনুমতি পেয়েছিল। ১৮৪টি শিল্প প্লটের মধ্যে ১৪৮টি শিল্প ই্উনিট তৈরী করা হবে।
প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক প্রাক্কলন ব্যয় হচ্ছে রাজস্ব খাতে ১৬৩ দশমিক ৯৮ লাখ টাকা, মূলধন খাতে ৮ হাজার ৮’শ ৪৫ দশমিক ৪২ লাখ ফটাকা, প্রাইস কন্টিজেন্সি খাতে ১৭৯ দশমিক ৯০ লাখ টাকা, ফিজিক্যাল কন্টিজেন্সি খাতে ১৭৬ দশমিক ৭০ লাখ টাকাসহ মোট ৯ হাজার ৩৬৬ লাখ টাকা এ প্রকল্পের মোট ব্যয়।
এ ব্যাপারে বিসিকের চট্টগ্রামস্থ জেলা কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল উদ্যোক্তাদের শিল্প প্লটের বর্ধিত চাহিদা পূরণ করা। এক্ষেত্রে ১৪৮টি এসএমই ইউনিট স্থাপনের জন্য ১৮৪টি শিল্প প্লটের জন্য অবকাঠামোগত সুবিধাগুলো তৈরী এখন প্রায় শেষ পযার্য়ে।
প্রকল্পের ভেতরে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনসহ দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে জিডিপি বৃদ্ধি করা যাবে। প্রকল্পের প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ আরো এক বছর বৃদ্ধি করে তা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
আরো জানা গেছে, প্রকল্পে বিদ্যমান খালের উভয়দিকে প্রায় সাতশ’ ফুট দীর্ঘ রিটেইনিং ওয়াল দেয়া হয়েছে মাটি ভাঙ্গন রোধে। পুরো প্রকল্প জুড়ে দেয়া হচ্ছে সীমানা প্রচীর। বিদ্যুত সংযোগের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) প্রায় এক কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।
গ্যাস লাইনের জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডকে (কেজিডিসিএল)। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। সীমানা প্রাচীর ও বিসিকের একটি প্রশাসনিক ভবনের কাজও চলছে।
প্রশাসনিক ভবনে একজন কর্মকতার্র অধীনে ৮জন কর্মচারী কাজ করবে। এ প্রকল্পে ‘এ’ ক্লাস প্লট ৩২ হাজার বর্গফুটের ১৮টি, ‘বি’ ক্লাস ১৭ হাজার ৬০০ বর্গফুট পরিমাপের ২টি, ‘সি’ ক্লাস প্লটগুলো ১১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ১৭টি এবং স্পেশাল ক্যাটাগরির আওতায় রয়েছে ৬ হাজার ৪২৩ বর্গফুট থেকে ১৫ হাজার ৬৪৪ বর্গফুট পরিমাপের ২৮টি প্লট।
২০১৯ সালে যদিও এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ভূমি অধিগ্রহন নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ার কারনে এই প্রকল্পের মেয়াদ আরো দুই বছর বৃদ্ধি করে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত নেয়া হয়েছিল এখন তা বর্ধিত করে ২০২৩ সালের জুনে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে প্রবেশের জন্য ৪০ ফুট প্রশস্থ এপ্রোস সড়ক তৈরী করাসহ প্রত্যেকটি প্লটের সামনে ৩০ ফুট প্রশস্থ রাস্তা থাকবে।
২৪ ঘণ্টা / জেআর
Leave a Reply