চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অবৈধভাবে খাল থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যের বিরুদ্ধে। আর এ বালু উত্তোলনে অনুমতি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন খোদ ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই। যদিও আইনগতভাবে একজন ইউপি চেয়ারম্যান এমন অনুমতি দিতে পারেন না। উপজেলার ১৫ নং ছদাহা ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান ও ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. আজহার উদ্দিনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের জিলানী নগর ও সিন্দুইপ্যা পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে এসব বালু। বালুগুলো পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বড় ট্রাক ও ড্যাম্পার। এতে রাস্তার দু’পাশে ভাঙন ধরেছে এবং মাঝখানে গর্ত তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, আজহার মেম্বারের নেতৃত্বে এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে ইউনিয়নের কিছু উন্নয়নের কাজের জন্য বালু উত্তোলন করার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা ভিন্ন। ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের কাজে এতগুলো বালু লাগার কথা না।
কয়েক ট্রাক দিয়ে কাজ সামাল দেয়া যায়। এখানে আজহার মেম্বার বালুগুলো এলাকার বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনা নির্মাণের কাজে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ইউনিয়নের কাজে যদি বালুর দরকার হয়, তবে ইউনিয়ন পরিষদেও ফান্ড আছে।
সরকারি ইজারাকৃত বালু কিনে উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। অন্যান্য ইউনিয়ন ও পৌরসভার কাজে আমরা এমনটি দেখে থাকি। তাহলে নিজ এলাকা থেকে বালু তোলে কি ইউনিয়নের টাকা চেয়ারম্যান ও মেম্বার মেরে দিচ্ছেন ?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বলেন, আজহার মেম্বার এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা ভয়ে মুখ খুলেন না। তবে বালু উত্তোলনের কারণে মেম্বার নিজে লাভবান হলেও স্থানীয়দের ক্ষতি হচ্ছে।
এ বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হবে খাল পাড়ের বাসিন্দাদের। বৃষ্টির পানি আসলে তাদের ভিটে জমি খালে তলিয়ে যাবে। এ বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হওয়া দরকার এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
তবে এসব বিষয় অস্বীকার করে মেম্বার আজহার উদ্দিন বলেন, আমি বালু উত্তোলন করছি না। রাস্তার কাজের জন্য চেয়ারম্যান বালু উত্তোলন করতে বলেছেন তাই করছি। আর কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় তাহলে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।
বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদুর রহমান বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়ে আমি অবগত আছি। কয়েকটি রাস্তা মেরামতের জন্য বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এবং এসব বালু ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, অনুমতি নিতে গেলে লিখিত দিতে হবে। এরপর সার্ভে হবে এবং নিলাম হবে। এভাবে হলে দেরি হবে এবং রাস্তার কাজ করা যাবেনা। তাই খাল থেকে বালু উত্তোলন করে সড়ক মেরামত করছি।
জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং চিংনু মারমা বলেন, ব্যক্তি কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ, বালু উত্তোলন করতে সবার লিখিত অনুমতি লাগবে।
ভূমি অফিসে লিখিত আবেদন দিলে আমরা যাচাই বাছাই করে যদি ওই স্থান বালু উত্তোলনের উপযুক্ত হয় তাহলে অনুমতি দিয়ে থাকি।
ছদাহা ইউপির পক্ষ থেকে কোন ধরনের বালু উত্তোলনের অনুমতি নেওয়া হয়নি। সুতরাং বেআইনিভাবে তারা বালু উত্তোলন করছেন। আমরা শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ বালু মহালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, সরকার রাজস্ব পায় এসব বালু মহাল ছাড়া অন্য কোন জায়গা থেকে কেউ বালু উত্তোলন করতে পারবেনা।
ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পরিষদের চেয়ারম্যান কারো নিজস্ব এখতিয়ার নেই। এটি সম্পূর্ণ আইন বহির্ভুত। শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২৪ ঘণ্টা / জেআর
Leave a Reply