বিদেশে কর্মী পাঠানোর নামে প্রতারণা করলে কঠোর ব্যবস্থা: প্রধানমন্ত্রী

বিদেশে কর্মী পাঠানোর নামে প্রতারণা করলে সেসব রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে অযথা কর্মীদের বিদেশে পাঠাবেন না। নারীকর্মীসহ অভিবাসী কর্মীরা বিদেশে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হলে দায়ী রিক্রুটিং এজেন্সির সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বিদেশি কর্মীদের জন্য প্রবর্তিত জীবন বীমা কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিমানবন্দরে ফেরত আসা অভিবাসীদের হয়রানি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশে রিক্রুটিং এজেন্সির যারা বিদেশগামীদের হয়রানি করবে সেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদেশেও অনুরোধ করবো এ ধরনের এজেন্সির জন্য ব্যবস্থা নিতে।’

বিদেশে যাওয়ার আগে সবকিছু যাচাই-বাছাইয়ের আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমাদের গ্রাম-বাংলার মানুষ অনেক সময় দালালের খপ্পরে পড়ে সোনার হরিণের খোঁজে সব কিছু বিক্রি করে বিদেশে চলে যায়। যেহেতু এখন চাকরি থেকে শুরু করে সব কিছু যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ আছে, তাই দালালের খপ্পরে না পড়ে বিদেশে যাওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে দেখবেন।’

নারীকর্মীদের উপর নির্যাতন প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘নারীরা যাতে বিদেশে গিয়ে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছি। তারা যেন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ‍নিয়ে বিদেশ যেতে পারে; সেজন্য তাদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করেছি। কারণ সঠিক প্রশিক্ষণ না নিয়ে গেলে নানারকম নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাদের।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন থেকে বিদেশ যেতে হলে প্রশিক্ষণ নিয়ে যেতে হবে। এদিকে আমরা ব্যাপক নজরদারি করছি। এর আগে আমরা লক্ষ্য করেছি, অনেকেই প্রশিক্ষণ না নিয়ে প্রশিক্ষণের কথা বলে বিদেশে যেত। কিন্তু এখন থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ছাড়া আর যাওয়া যাবে না। প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক। এজন্য আমি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বলবো আরও বেশি গভীরভাবে নজর দিতে, যেন সবাই সঠিক প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে যায়।’

যুব সমাজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যুব সমাজ আমাদের সম্পদ। এই যুব সমাজকে দক্ষ যুব সমাজে রূপান্তর করতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করছি। দক্ষ যুব সমাজকে বিদেশে পাঠিয়ে তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে ৮২ থেকে ৮৩ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। সারা বিশ্বে আমাদের দেশের মানুষ যাতে নিরাপদে থাকতে পারেন সে ব্যবস্থাও চালু করে গেছেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে। আমরা প্রবাসীদের জন্য আইন, নীতিমালা করেছি। এ সেক্টরকে ফাস্ট সেক্টর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থকে আমরা খুবই গুরুত্ব দেই। আমাদের দেশ থেকে প্রশিক্ষিত কর্মী পাঠাতে চাই। ঘরবাড়ি জমি বিক্রি করে কেউ যেন দালালের খপ্পরে না পড়ে, কেউ যেন নিঃস্ব না হয়।

এ সময় দেশের প্রতিটি উপজেলা থেকে গড়ে এক হাজার তরুণ-তরুণীকে বিদেশে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বায়রা সভাপতি বেনজির আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *