কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে সাবেক চসিক প্রশাসক সুজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার অভূতপূর্ব উন্নয়নে অবদান রাখায় মন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
শুধু ফসলের মাঠে নয়, ছাদ কৃষিতেও ব্যাপক আগ্রহ ও সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আর এ সফলতা এসেছে কৃষিমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণে। একজন সফল কৃষিবিদ এবং কৃষি গবেষক হওয়ায় কৃষিমন্ত্রী সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পেরেছেন বলেই কৃষিখাতে বাংলাদেশের এ উন্নতি। এমনকি করোনা মহামারীকালীন সময়ে বিশ্বে যখন অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে, খাদ্য সংকটের কবলে যখন সারাবিশ্ব, সেই কঠিন মূহুর্তে বাংলাদেশ ছিল ব্যতিক্রম। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য লকডাউন দেওয়া হলেও কৃষি উৎপাদন একদিনের জন্যও বন্ধ রাখা হয়নি। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে করোনাকালেও দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গেছেন কৃষিমন্ত্রী।
কৃষিতে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির উদ্ভাবন, শ্রমিক সংকট মোকাবেলা করে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আর এ কারণেই করোনা মোকাবেলা শেষে অদ্যাবধি খাদ্য সংকটে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে।
সুজন আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশবাসীকে অধিক পরিমাণে খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান জানিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর আহবান, দুর্দিনকে রুখে দাড়ান, মুষ্টিচালের সঞ্চয়ে, অভাবে যাবে নির্বাসনে শীর্ষক প্রস্তাবনাটি কৃষিমন্ত্রীর নিকট পেশ করেন সুজন।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এর সাথে তাঁর হেয়ার রোডস্থ বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মুষ্টিচাল সঞ্চয়ের ধারণাটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সুজন।
প্রস্তবনাটি নিম্নরূপ-প্রথমত: বাংলাদেশের জনসংখ্যা যদি ১৬ কোটি ধরা হয় এবং প্রতি পরিবারে সর্বোচ্চ ৫ জন সদস্য হলে প্রায় ৩ কোটি ২০ লক্ষ পরিবার হবে। প্রতি পরিবার যদি একবেলা আহার থেকে ১ মুষ্টি চাল সঞ্চয় করে তাহলে ৩ কোটি ২০ লক্ষ মুষ্টি চাল হবে এবং দুইবেলায় তা হবে ৬ কোটি ৪০ লক্ষ মুষ্টি চাল। যদি ২৫ মুষ্টিতে ১ কেজি চাল ধরা হয় তাহলে ৬ কোটি ৪০ লক্ষ মুষ্টিতে হবে ২৫ লাখ ৬০ হাজার কেজি চাল প্রতিদিন। আর টন হিসেবে তা হবে দৈনিক ২,৫৬০ মেট্রিক টন চাল। মাসে যার পরিমাণ হবে ৭৬,৮০০ মেট্রিক টন চাল। এভাবে যদি সঞ্চয় অব্যাহত থাকে তাহলে বছরে হবে ৯,২১,৬০০ মেট্রিক টন চাল। অর্থাৎ মুষ্টি চাল সঞ্চয়ের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১০ লক্ষ মেট্রিক টন চাল সঞ্চয় করা সম্ভব হবে।
দ্বিতীয়ত: আমরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অতিমাত্রায় খাবারের অপচয় করে থাকি। এ অপচয় রোধে সরকার যদি একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলে এবং সাথে আইনের কঠোর প্রয়োগ করে তাহলে সারা দেশে শুধু খাবারের অপচয় রোধ করে আরো ১০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য সঞ্চয় করা সম্ভব হতে পারে।
তৃতীয়ত: বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী, দেশে পতিত জমির মোট পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার শতক বা ৪৩ লাখ ৯৩৩১ হেক্টর। পতিত জমি সাধারনত দুই ধরনের, অস্থায়ী পতিত এবং স্থায়ী পতিত জমি। দেশে স্থায়ী পতিত জমির সংখ্যাই বেশি। আবার দেখা যাচ্ছে যে চাষাবাদ যোগ্য জমিতে বেশি লাভের আশায় চাষাবাদ বহির্ভূত চাষ হচ্ছে। এসব চাষও আগামী ২ বছরের জন্য বন্ধ রেখে শুধু খাদ্য উৎপাদনের জন্য এসব অস্থায়ী এবং স্থায়ী পতিত জমিকে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসলে সেসব জমি থেকে আরো ১০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য অতিরিক্ত উৎপাদন করা অসম্ভব কিছু নয়। এভাবে যদি আমরা ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য অতিরিক্ত সঞ্চয় করতে পারি তাহলে কোন অবস্থাতেই দুর্ভিক্ষ কিংবা খাদ্য সংকট দেশের মানুষকে গ্রাস করতে পারবে না।
কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে গুরুত্বের সাথে সুজনের প্রস্তাবনাসমূহ শ্রবণ করেন এবং প্রস্তাবনাটি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত বলে উল্লেখ করেন। তিনি সুজনের উপস্থাপিত মুষ্টিচাল সঞ্চয়ের ধারণাটি সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। এভাবে সবাই এগিয়ে আসলে বাংলাদেশ সম্ভব্য খাদ্য সংকট মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ কৃষিমন্ত্রীর।
Leave a Reply