জলদস্যু আতঙ্কে কুতুবদিয়ার বসতি

জলদস্যুদের আতঙ্কে বসতি রেখে শহরে আবাস গেড়েছে অনেক কুতুবদিয়াবাসী। জলদস্যু আতঙ্কে দিনের পর দিন কাটাচ্ছে অনেক নিরীহ মানুষ। অভিযোগ এতে প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই। পুলিশ বলছে দুএকটি ঘটনা ছাড়া আর তেমন কোন অভিযোগ থানায় নেই। কক্সবাজার শহর ছাড়াও যেকোন জায়গা থেকে কুতুবদিয়ায় যেতে হলে নৌ পরিবহন ব্যবহার করতে হয়। কিছুতেই নিরাপদ নয় সমুদ্র পাড়ি দেওয়া মানুষগুলো। প্রতিনিয়ত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে কুতুবদিয়ায় নিজের মাতৃভূমিতে যেতে হয়। জলদস্যু আতঙ্কের মধ্যদিয়েই স্পীডবোট বা ইঞ্জিন নৌকায় উঠতে হয়। প্রথিমধ্যেই যত বিপত্তি। আগে থেকেই খোঁজ খবর নিয়ে প্রবাসীদের টার্গেট করে জলদস্যুরা। এছাড়াও স্থানীয় বিত্তশালীরাও বাদ পড়ে না জলদস্যুদের হাত থেকে। এমনকি লবণ চাষীরাও বাদ পড়ছে না জলদস্যুদের মুক্তিপণ ও চাঁদা থেকে।

জলদস্যুদের আতঙ্কে কুতুবদিয়ার অনেকেই এখন শহরে থাকে এমন প্রশ্নের উত্তরে কুতুবদিয়া থানার ওসি(তদন্ত) কানন সরকার সময়ের কাগজ প্রতিনিধিকে বলেন, জলদস্যুদের বিরুদ্ধে তেমন কোন মামলা নেই। পিডিবির একটি ঘটনায় একটি সরকারী বাদী মামলা রয়েছে। সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার ঘটনায় আরেকটি মামলা রয়েছে। এছাড়া চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে কোন মামলা নেই।

সম্প্রতি র‌্যাব সেভেনের অভিযানে অস্ত্রসহ তিনজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। দ্বীপ এলাকায় কিভাবে এসব জলদস্যু অপরাধের সঙ্গে জড়িত তা নিজেরাই স্বীকার করেছে। কিভাবে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে লবণ চাষীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে আসছে। এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে চাঁদাবাজি করার লক্ষ্যে তাদের কাছে আরো অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে। স্বসজি¦ত এসব অপরাধীর আতঙ্কে কুতুবদিয়াবাসি ঘরকোণা হয়ে গেছে। এরপরও জীবিকার টানে বাড়ি থেকে বের হলেই সমুদ্রেই জলদস্যুদের কবলে পড়তে হয়। অনেকে আবার আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে কক্সবাজার শহরেই থাকে। আবার অনেকে ব্যবসা বাণিজ্য ও চাকুরী নিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতে থাকে।

র‌্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, আটককৃতদের সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া থানাধীন শিকদার পাড়া এলাকায় অভিযান চালায় টিমটি। সেখানে একটি ছাপড়া ঘরের ভেতর হতে আসামীদের দেখানো তথ্য মতে তল্লাশী অভিযান চালায়। এক অপরাধীর নিজ ঘরের খাটের নীচ থেকে একটি প্লাষ্টিকের বস্তার ভেতরে রাখা ৩টি এসবিবিএল, ৪টি এলজি এবং ২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে কুতুবদিয়া থানায়।

র‌্যাব সেভেন সূত্রে অভিযান সম্পর্কে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসী জলদস্যুর অবস্থান নিশ্চিত করে অভিযান টিমটি। কক্সবাজারের কুতুবদিয়াস্থ বড়খোপ এলাকায় মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন ঝাউ গাছের নিচে বেশ কয়েকজন জলদস্যু অবস্থান করছে। অস্ত্রধারী এসব সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র সহ একত্রিত হয়ে অপরাধ সংঘটন করার জন্য মিটিং করছিল। ডাকাতির সলাপরামর্শ ও প্রস্তুতিকালে গত ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১ টায় র‌্যাব-৭ অভিযান শুরু করে। এসময় আটক করা হয় কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার আব্দুল হাদি শিকদার পাড়ার শাহবুদ্দিনের ছেলে মোশারফ হোসেন(২৮) ও একই এলাকার জাবেদ আহম্মেদের ছেলে রবিউল হোসেন এবং সন্দ্বীপ পাড়া এলাকার নুরুল আবছারের ছেলে মোঃ আজিজ(২৩) কে আটক করে।

এসময় ঘটনাস্থলেই মোশারফ হোসেন এর কোমরে গোজানো অবস্থা থেকে দেশীয় তৈরী একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, জব্দকৃত অস্ত্র—সস্ত্র দ্বারা তারা এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে লবণ চাষীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় ও ডাকাতি করে আসছে। কুতুবদিয়া থানায় নেওয়ার পর আটককৃতদের ডাটাবেস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মোশারফ হোসেন শীর্ষ জলদস্যু । তার নামে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া এবং চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ থানায় সরকারী সম্পত্তি আত্মসাৎ, সস্ত্রাসী, ডাকাতি, দুর্ধষ চাঁদাবাজী, হত্যাচেষ্টা এবং মাদক সংক্রান্তে ৬টি মামলা রয়েছে।

২৪ঘণ্টা.জেআর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *