অর্থপূর্ণ বৈশ্বিক অংশীদারিত্বে পাঁচ অগ্রাধিকার তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব অবশ্যই অর্থবহ হতে হবে যাতে কোনো চ্যালেঞ্জ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনে এসব দেশের অগ্রগতি ব্যাহত করতে না পারে। ‘সাসটেইনেবল এন্ড স্মুথ ট্রান্সলেশন ফর দ্য গ্র্যাজুয়েটিং কোহোর্ট অব ২০২১’ শীর্ষক সম্মেলনে রোববার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা, এলডিসি গ্রাজুয়েট দেশগুলো নিশ্চিত করতে চাই যে, কোনো চ্যালেঞ্জ যেন আমাদের গ্রাজুয়েটিং-এর গতিকে আরও কমিয়ে দিতে না পারে।’ একটি অর্থপূর্ণ বৈশ্বিক অংশীদারিত্বে পাঁচটি অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও আমাদের সাফল্যের জন্য, একটি অর্থপূর্ণ বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের কোনো বিকল্প নেই। এই প্রসঙ্গে পাঁচটি অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রথমত, জরুরি আন্তর্জাতিক সহায়তার ব্যবস্থার জন্য এলডিসি গ্রুপগুলোর জমা দেওয়া আবেদন ডব্লিউটিও সদস্যদের ক্রমাগত যথাযথ বিবেচনা করা উচিত। দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আরও বেশি এফডিআই এবং উপযুক্ত প্রযুক্তি নিয়ে এলডিসি গ্র্যাজুয়েট করায় এগিয়ে আসতে হবে। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হঠাৎ করে ঋণের ব্যয় বৃদ্ধি এড়াতে উদ্ভাবনী অর্থায়ন ব্যবস্থার ধারণা রূপান্তরে সাহায্য করতে পারে। চতুর্থ অগ্রাধিকার হিসেবে তিনি বলেন, এলডিসি সমন্বিত গ্র্যাজুয়েট করার জন্য জলবায়ু অর্থায়নকে নমনীয় শর্তে উপলব্ধ করা দরকার এবং পঞ্চমত, অভিবাসন এবং রেমিট্যান্স খরচ কমাতে গন্তব্য দেশগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতা প্রয়োাজন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের গ্রাজুয়েশন গত ১৪ বছরে সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল।

বাংলাদেশের মতো স্নাতক দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতার মাধ্যমে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্ভাব্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) লাও পিডিআর এবং নেপালের সাথে যৌথভাবে বাংলাদেশ জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের (এলডিসি ৫: সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) এর পাশে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ত্বরান্বিতকরণ, মানব পুঁজির উন্নয়ন, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, প্রতিষ্ঠান নির্মাণে বিনিয়োগ, ইউটিলিটি সেবা ডিজিটালাইজ করা এবং আমাদের প্রবৃদ্ধির লভ্যাংশের জন্য ইক্যুইটি নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছি। আমরা দোহা কর্মপরিকল্পনার মতো আমাদের ভূমিকা পালন করার আশা করি।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ‘ভিশন ২০২১’ এর ভিত্তিতে ২০০৯ সালে সরকারের দায়িত্ব নিয়েছি। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছিলাম। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা প্রতিটি খাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপির আকার এখন ৪৬০ বিলিয় মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, অথচ ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে এর আকার ছিল কেবলমাত্র ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তিনি বলেন, জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন ৩৫তম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ এবং এ দেশের মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলারের বিপরীতে ২০২২ সালে ২,৪২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি গত এক দশকে গড়ে ৬.৫ শতাংশের অধিক হারে টানা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির ঠিক আগে আমাদের জিডিপির হার ছিল ৮.১৫ শতাংশ এবং এমনকি এই মহামারিকালে ২০২০-২১ অর্থ বছরে এদেশের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ঘটেছে ৬.৯৪ শতাংশ।

তিনি উল্লেখ করেন, কেবল এক দশকেই দারিদ্র্যের হার ৩১. ৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশ। শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে কমে ২১ এ দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে এবং শিক্ষার হার দাঁড়িয়েছে ৭৫.২ শতাংশে।

সরকার প্রধান বলেন, অন্যান্য দেশের মতো আমাদের অর্থনীতিও মহামারির কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা এই রোগের বিস্তার রোধে যথাসময়ে বাস্তব ভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে সমর্থ হয়েছি এবং মানুষের প্রায় স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করেছি।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ২০ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। এতে প্রায় ৭৩.২ মিলিয়ন মানুষ ও ২,১৩৫০০ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান সরাসরি উপকৃত হয়েছে। সরকার দরিদ্র, অনগ্রসর ও প্রান্তিক লোকদের সম্প্রসারিত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসে।

তিনি বলেন, ১০.৭ মিলিয়ন দুস্থ মানুষ এখন এসব কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করছে। তাছাড়া স্বল্প আয়ের পরিবারসমূহের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে নিত্যপণ্য। আমাদের সরকার এমন একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।

 

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *