Category: ধর্ম

  • প্রতিমা বিসর্জনে নেমেছে মানুষের ঢল, ভক্তদের আনন্দ-বিষাদ

    প্রতিমা বিসর্জনে নেমেছে মানুষের ঢল, ভক্তদের আনন্দ-বিষাদ

    ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। প্রতিমা বিসর্জনে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে নেমেছে মানুষের ঢল। নিজেদের ধর্মের রেওয়াজ মতে তেল-সিঁদুর পরিয়ে, পান-মিষ্টি মুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ভক্ত ও অনুসারীদের এই ভিড় ছিল লক্ষণীয়। দশমীবিহিত পূজা শেষে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয় সারা দেশে। প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে দেবী দুর্গা এই মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে ফিরছেন।

    বুধবার (৫ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। সকাল থেকেই চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে বিসর্জনের জন্য প্রতিমা নিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ভক্তরা জড়ো হতে শুরু করেন পতেঙ্গা সৈকতে। এরপর শুরু হয় বিসর্জনের পালা।

    হিন্দু সম্প্রদায়ের পঞ্জিকা অনুযায়ী, এ বছর দেবী দুর্গা মর্ত্যে এসেছেন গজে চড়ে। শাস্ত্রমতে গজ দেবীর উৎকৃষ্টতম বাহন। তাই দেবীর আগমন হাতিতে হলে মর্ত্যলোক ভরে ওঠে সুখ-শান্তি আর সমৃদ্ধিতে। পূর্ণ হয় ভক্তদের মনোবাঞ্ছা। পরিশ্রমের সুফল পায় মর্তলোকের অধিবাসীগণ। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি নয়, ঠিক যতটা প্রয়োজন ততটা বর্ষণ হয়।

    বাদ্যের ঘণ্টা বাজিয়ে ‘জয়, দুর্গা মায়ের জয়’ বলে একের পর এক প্রতিমা ভাসিয়ে দেয়া হয় সাগরে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রায় ৪০টির মতো প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজা। দুর্গার বিদায় উপলক্ষে সকাল থেকে বিদায়ের সুর বেজে উঠে বিভিন্ন মণ্ডপে।

    চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, এ বছর চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান পূজামণ্ডপ জেএম সেন হলসহ ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত, ঘটপূজাসহ ২৮২টি পূজামণ্ডপে পূজা উদযাপন হয়। পরিষদের পক্ষ থেকে সবাইকে বুধবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ধর্মীয় রীতি মেনে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, নেভাল-২, অভয়মিত্র ঘাট এবং কালুরঘাট সেতু এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে।

    পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুর রহমান জানান, শান্তিপূর্ণভাবে সাগরে প্রতিমা বিসর্জন দিচ্ছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। সমুদ্র সৈকতে এবং আশেপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে।

    এন-কে

  • শুভ বিজয়া দশমী আজ

    শুভ বিজয়া দশমী আজ

    শুভ বিজয়া দশমী আজ। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে আজ শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। বিসর্জনের এই দিনে সকালে শুরু হবে দেবী দুর্গার বিজয়া দশমী পূজা।

    দেবী দুর্গার বিজয়া দশমী বিহিত পূজার মাধ্যমে পালিত হবে দশমী। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এই দিনে আবেগ ও মন খারাপ মিশ্রিত একটি অনুভূতি সৃষ্টি হয়। দশমী এলেই তাদের মনে আসে মায়ের ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা। অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও একটি বছর।

    দশমী বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় শারদীয় দুর্গোৎসব। এর আগে ম‌ন্দি‌রে মন্দিরে ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে শুরু শারদীয় দুর্গোৎসব।

    মানিকগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপ‌তি বাসু‌দেব সাহা জানান, এ বছর সারাজেলায় ৫৫০টি মন্ডপে হচ্ছে দুর্গাপূজা। গত বছরের চেয়ে এবার পূজার সংখ্যা বেড়েছে ৪৩টি। প্র‌তি‌টি ম‌ন্দি‌রে করোনা অতিমারিসহ সব ধরনের অশুভ ও অমঙ্গল থেকে মুক্তি লাভই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এবারের চাওয়া।

    এন-কে

  • আজ মহানবমী, অসুর বধে বিজয়ের দিন

    আজ মহানবমী, অসুর বধে বিজয়ের দিন

    হিন্দু শাস্ত্রমতে মহানবমী বা দুর্গা নবমী হল আসুরিক শক্তি বধে বিজয়ের দিন। শ্রী শ্রী চণ্ডী থেকে জানা যায়, দুর্গা রুদ্ররূপ (মা কালী) ধারণ করে মহিষাসুর এবং তাঁর তিন যোদ্ধা চণ্ড, মুণ্ড এবং রক্তবিজকে হত্যা করেন। নবমী তিথি শুরুই হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। সন্ধিপূজা হয় অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর সূচনার প্রথম ২৪ মিনিট জুড়ে। মূলত দেবী চামুন্ডার পূজা হয় এই সময়ে। একশো আটটি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ও একশ আটটি পদ্মফুল নিবেদন করা হয় দেবীর চরণে। আর ঠিক এই কারণে পূজার মন্ত্রেও সেই বিশেষত্ব উল্লেখ করা হয়েছে ।

    নবমীর বিশেষত্ব যদি কিছু থাকে তা হল হোম-যজ্ঞ অনুষ্ঠানের মধ্যে। নবমীতেই মূলত হোম হয়ে থাকে, ব্যতিক্রমী নিয়মও থাকতে পারে। মূলত আটাশটা বা একশো আটটা নিখুঁত বেলপাতা লাগে। বালি দিয়ে যজ্ঞের মঞ্চ বানিয়ে বেলকাঠ ঠিকভাবে নিয়ম মতো সাজিয়ে পাটকাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে ঘি’তে চুবিয়ে বেলপাতাগুলো নিবেদন করা হয়। তারপর সবার শেষে একটি কলা চেলীতে বেঁধে পান নিয়ে সেটা ঘি’তে চুবিয়ে পূর্ণাহুতি দেওয়া হয়। তারপর তার মধ্যে দই দেওয়া হয় ও দুধ দিয়ে আগুন নেভানো হয়।

    অন্যদিকে, নবরাত্রির নবমীতে দুর্গার নয়টি রূপ হিসেবে মেয়েদের পূজা করে খাওয়ানোর রীতিও রয়েছে। হিন্দু ধর্মে দুর্গা নবমীর অনেক গুরুত্ব রয়েছে। মহা নবরাত্রিতে দেবী দুর্গার আরাধনার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। যদিও সারা বছর ধরে যে উৎসবের জন্য অপেক্ষা করা হয়, তার বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দেয় এই নবমী নিশি। তাই নবমী নিশিকে সবাই ধরে রাখতে আকুতি জানায়। বাজতে থাকে একটাই সুর- “ওরে নবমী-নিশি, না হইও রে অবসান”।

    মা‌নিকগ‌ঞ্জের ৫৫০টি পূজা মণ্ডপে পূজা অনু‌ষ্ঠিত হ‌চ্ছে, গতকাল বৃ‌ষ্টি উপেক্ষা ক‌রেই, মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল উপ‌চে পড়া ভিড় । গতরা‌তে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা পরিদর্শন করেন ও বিশেষ শুভেচ্ছা উপহার বিনিময় করেন । আজ দুপুরে নবমী পূজা শেষে সব মন্দিরেই অঞ্জলি প্রদান ও ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হবে। এছাড়াও সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে বিভিন্ন ভক্তিমূলক সংগীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা রকমের অনুষ্ঠান।

    এন-কে

  • লাখো টোপায় সেজেছে পূজামণ্ডপ

    লাখো টোপায় সেজেছে পূজামণ্ডপ

    আজ শনিবার মহাষষ্ঠী। দেবী দুর্গা এবার আসছেন হাতিতে চড়ে, আর কৈলাশে ফিরবেন নৌকায়। এর মধ্য দিয়ে শনিবার সকাল থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ শারদীয় দুর্গা উৎসবে বইছে খুশির আমেজ। মুন্সীগঞ্জ শহরের নয়াপাড়া এলাকার মাটির তৈরি লাখো টোপায় সাজানো পূজামণ্ডপকে ঘিরে চলছে উৎসব। স্বর্ণ ও রূপা গলাতে ব্যবহার হয়ে থাকে এই টোপা বা গইর‌্যা। শহরের নয়াপাড়া এলাকার ডা. দীনেশ মণ্ডলের বাড়ির আঙ্গিনায় মাটির টোপার কারুকাজে সাজানো পূজামণ্ডপে আসছেন নারী, পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সীরা। প্রতি বছর নয়াপাড়া পঞ্চায়েত পূজা কমিটি ওই বাড়ির আঙ্গিনায় শারদ উৎসবে এমন আয়োজন করে আসছে।

    ডা. দীনেশ মণ্ডলের ভগ্নিপতি নীলকমল দাস বলেন, ‘পূজামণ্ডপ সাজানোর প্রধান কারিগর কাজল দাস। এ ছাড়া আছেন স্বেচ্ছাসেবী লোকনাথ, শুভ দাস, অন্তু সূত্রধর, সুমন দাস, মুন্না চন্দ্র, তন্ময় শীল, সৌরভ দাস, দুর্জয় শীল আর সাধন দাস। তাঁদের মতো প্রায় ৪০ জন তরুণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পূজা মণ্ডপটি নজরকাড়া সৌন্দর্য পেয়েছে। এবার এক লাখ ২০ হাজার মাটির টোপা দিয়ে ওই তরুণরা মণ্ডপকে শোভিত করেছেন।’

    নয়াপাড়া পঞ্চায়েত পূজা কমিটির সভাপতি রনি দাসগুপ্ত বলেন, ‘প্রতি বছরই পঞ্চায়েত কমিটির তরুণদের মাথায় বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা আসে। মণ্ডপ সাজাতে তাদের নতুন ভাবনার অংশ হিসেবেই এবার মাটির তৈরি টোপা ব্যবহার করা হয়েছে। গত বছর মণ্ডপ সাজানো হয়েছিল কাঁচা বাদামের খোসা দিয়ে।’

    রনি দাস বলেন, ‘পঞ্চায়েত কমিটির স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা বিভিন্ন স্বর্ণের দোকান থেকে মাটির টোপা সংগ্রহ করে মণ্ডপ সাজাতে কাজে লাগিয়েছেন।

    স্বেচ্ছাসেবী লোকনাথ বলেন, ‘আমরা প্রায় ৪০ জন তরুণ নিজেরা চিন্তাভাবনা করি। পরে সবার মতামতের ভিত্তিতে মণ্ডপ সাজানোর পরিকল্পনা নিই। এবার আমরা মণ্ডপ সাজাতে দেড়মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রায় ৩৫ দিন সময় নিয়ে মাটির টোপায় মণ্ডপ সাজাতে সক্ষম হয়েছি।

    এন-কে

  • ৯ অক্টোবর ঈদে মিলাদুন্নবী

    ৯ অক্টোবর ঈদে মিলাদুন্নবী

    বাংলাদেশের আকাশে আজ সোমবার কোথাও পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। তাই আগামী বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হবে। আর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা: পালিত হবে আগামী ৯ অক্টোবর (রোববার)।

    আজ সোমবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে ১৪৪৪ হিজরি সালের পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা এবং পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা:-এর তারিখ নির্ধারণের লক্ষ্যে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান।

    বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা শায়লা শারমিন।

    সর্বশেষ নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জন্ম ও ওফাত হয় ১২ রবিউল আউয়াল। সৌদি আরবের মক্কা নগরে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের একই দিনে তার ইন্তেকাল হয়। বাংলাদেশে কিছু মানুষ এ দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকেন।

    ২৪ঘণ্টা/বিআর

  • শুভ মহালয়া আজ

    শুভ মহালয়া আজ

    সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন, শুভ মহালয়া আজ। পুরাণমতে, এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এই দিন থেকেই শুরু দেবীপক্ষের।

    শাস্ত্রমতে, দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন ও গমন যে বাহনে, তার ওপর নির্ভর করে পৃথিবীবাসীর গোটা বছরটা কেমন কাটবে। এ বছর দেবী দুর্গার আগমন গজে, যার অর্থ শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা। আর উমা কৈলাসে ফিরবেন নৌকায় যার অর্থ শস্য বৃদ্ধি ও জল বৃদ্ধি।

    মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজার। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়।

    বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার এই সূচনার দিনটি সারা দেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন হচ্ছে। আজ (২৫ সেপ্টেম্বর) রোববার ভোর ৬টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহালয়ার বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি। দেশের অন্যান্য মন্দিরেও এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করার কথা রয়েছে।

    দেবী দুর্গার আগমন উপলক্ষে দিনটি উদযাপন করতে আজ (২৫ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টায় বনানী মাঠে দেবীবরণের আয়োজন করে গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সভাপতিত্ব করেন পান্না লাল দত্ত।

    মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দূর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস। পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে, দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বর অনুযায়ী কোন মানুষ বা দেবতা কখনও মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলত অসীম হ্মমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতারিত করে এবং বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়।

    মহালয়ার আরেকটি দিক হচ্ছে, এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপূরুষদের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে, এই দিনে প্রয়াতদের আত্মা মর্ত্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রয়াতদের আত্মার এই সমাবেশকে মহালয়া বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষেরও শেষদিন এটি।

    এন-কে

  • শুভ জন্মাষ্টমী আজ

    শুভ জন্মাষ্টমী আজ

    সনাতন ধর্মের প্রাণপুরুষ মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি শুভ জন্মাষ্টমী আজ বৃহস্পতিবার। দ্বাপর যুগের শেষ দিকে এই মহাপুণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দি দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।

    সনাতন ধর্মানুসারে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতেই এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শান্তিহীন পৃথিবীতে শান্তি আনতেই শান্তিদাতা শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব।

    ধর্মানুসারে, ঈশ্বরতত্ত্বের মহান প্রতীক হলেন শ্রীকৃষ্ণ। বেদে তিনি ঋষিকৃষ্ণ, দেবতাকৃষ্ণ। মহাভারতে রাজর্ষিকৃষ্ণ, শাসক ও প্রজাপালক কৃষ্ণ, অত্যাচারী দমনে যোদ্ধাকৃষ্ণ। ইতিহাসে যাদবকৃষ্ণ, দর্শনশাস্ত্রে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণ। শ্রীমদ্ভগবদ গীতায় অবতারকৃষ্ণ, দার্শনিক কৃষ্ণ, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ, ঈশ্বরায়িত কৃষ্ণ।

    ঐতিহাসিকদের বিবেচনায় খ্রিস্টপূর্ব ৯০০-১০০০ সালে সনাতম ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের অবির্ভাব ঘটে। তার জন্মের সময় এই বিশ্বব্রহ্মা পাপ ও অরাজকতায় পরিপূর্ণ ছিল। তাই, মানব জাতিকে রক্ষার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ মানব জাতির কাছে জীবন ধারণের অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন।

    শ্রীকৃষ্ণের বাণী সমগ্র বিশ্বকে আলোড়িত করছে হাজার হাজার বছর ধরে। শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা হলো—সংঘর্ষ ও অন্যায়কে পরাভূত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই পবিত্র দিনে সব অকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে অন্তর আত্মাকে জাগ্রত করার শপথ নিতে হবে।

    দেশব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় আড়ম্বর-আনুষ্ঠানিকতায় আজ উদযাপন করা হবে মহাবতার শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি।

    এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সরকার আজ বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সম্প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠান।

    শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

    শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয়ভাবে তিনদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়। আগামীকাল শুক্রবার সকালে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ, বিকেলে ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা ও রাতে তিথি অনুযায়ি কৃষ্ণ পূজা। তৃতীয় দিন শনিবার বিকেলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

    আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে স্বামীবাগ আশ্রমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।

    এ ছাড়া রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন, স্বামী ভোলানন্দ গিরি আশ্রম, প্রভু জগদবন্ধু মহাপ্রকাশ মঠ, রাধামাধব জিও দেব বিগ্রহ মন্দির, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, রাধা গোবিন্দ জিও ঠাকুর মন্দির, শিব মন্দির, রামসীতা মন্দির ও মাধব গৌড়ীয় মঠসহ বিভিন্ন মন্দির, পূজামন্ডপ ও ধর্মীয় সংগঠন জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে।

    এন-কে

  • পবিত্র আশুরা আজ

    পবিত্র আশুরা আজ

    আজ ১০ মহররম। পবিত্র আশুরার দিন। সৃষ্টির শুরু থেকে দিনটি অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী। সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর জন্য তাই ১০ মহররম অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একইসঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ ও শোকাবহ।

    আরবি ‘আশারা’ থেকে আশুরা শব্দটি এসেছে। এর অর্থ দশ। মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। ইসরামের আগে জাহেলি যুগেও এই দিনকে মর্যাদা ও সম্মানের চোখে দেখা হতো। এমনকি, মহররম মাসের পবিত্রতা ও মর্যাদার কথা বিবেচনা করে যুদ্ধপ্রিয় আরবরা মহররম মাসে সব ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত।

    আশুরার দিনে মুসলিম ইতিহাসে অন্যতম মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা হলো—কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের শাহাদাতবরণ। ৬১ হিজরির ১০ মহররম কারবালার প্রান্তরে সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিল। ঘটনাটি এতই রোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক যে, মুসলিম বিশ্ব কোনো দিনই তা ভুলতে পারবে না।

    যদিও আশুরা মানেই কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা না। হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি, ইবরাহিম (আ.)-এর জন্ম, আইয়ুব (আ.)-এর আরোগ্য লাভ, ৪০ বছর পর ইউসুফ (আ.) ও তাঁর বাবা ইয়াকুব (আ.)-এর সাক্ষাৎ, মুসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তিসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনা আশুরার দিনে সংঘটিত হয়েছে।

    পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে সাম্য, ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পবিত্র আশুরা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

    আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল রোজা, নামাজ, দান-খয়রাত, জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে আশুরার দিনটি পালন করবেন। দিনটিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর কাছে বর্তমান বৈশ্বিক সংকট থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করবেন।

    আশুরার তাৎপর্য নিয়ে জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেল আজ বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

    করোনা পরিস্থিতির কারণে গতবার আশুরায় তাজিয়া মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এবার সে নিষেধাজ্ঞা থাকছে না। তবে, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আঁতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

    এন-কে

  • সৌদি থেকে ফিরল দুটি হজ ফ্লাইট

    সৌদি থেকে ফিরল দুটি হজ ফ্লাইট

    হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট দেশে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাত ১০টা ৩০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম ফ্লাইট জেদ্দা থেকে ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ফ্লাইটে মোট ৪১৬ জন হজযাত্রী ছিলেন।

    এর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৩৫০২ ফ্লাইটটি সৌদি আরবের স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় ঢাকার উদ্দেশে জেদ্দা থেকে রওয়ানা হয়। হজযাত্রীদের নিয়ে দ্বিতীয় ফ্লাইটটি মধ্যরাত (১৫ জুলাই) ২টা ৩০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছে।

    বিমান ছাড়াও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের (সাউদিয়া) ফ্লাইটে আগামী ৪ আগস্ট পর্যন্ত হজযাত্রীরা দেশে ফিরবেন।

    এবার বাংলাদেশ থেকে প্রথম দফায় ৫৭ হাজার ৫৮৫ জনকে হজে যাওয়ার সুযোগ দেয় সৌদি সরকার। জুলাইয়ে দ্বিতীয় দফায় অতিরিক্ত ২ হাজার ৪১৫ জনকে পাঠানোর কোটা মঞ্জুর করে কর্তৃপক্ষ। হজ ব্যবস্থাপনা ও হজ প্রতিনিধি দলসহ এবার ১৬৫টি ফ্লাইটে হজে যান মোট ৬০ হাজার ১৪৬ জন।

    এন-কে

  • আরও ২ বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু সৌদি আরবে

    আরও ২ বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু সৌদি আরবে

    ২৪ ঘণ্টা নিউজ ডেস্ক :
    সৌদি আরবে আরও দুই বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর বাংলাদেশি হাজীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হলো।

    সর্বশেষ মারা যাওয়া দুই হজযাত্রীর মধ্যে একজনের তথ্য জানিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইটি হেল্পডেস্ক। আইটি হেল্পডেস্ক ৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার)’র হজের বুলেটিনে জানিয়েছে, ৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিরিনা আক্তার (৫৯) মক্কায় মারা যান। তার পাসপোর্ট নম্বর- ইএফ০৮৫২৮৩৯। এর আগে সৌদিতে যে ১৩ জন বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে পুরুষ নয় জন এবং নারী চার জন।

    মন্ত্রণালয়ের আইটি হেল্পডেস্ক আরও জানিয়েছে, সারা বিশ্ব হতে আসা হজযাত্রীদের মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। মিনায় আসা সব হজযাত্রী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছেন।

    আজ ৮জুলাই (শুক্রবার) অর্থাৎ ৯ জিলহজ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পবিত্র হজের দিন। হজযাত্রীরা মধ্যরাত থেকেই মিনা হতে আরাফার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন। তাদের কণ্ঠে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠবে পুরো আরাফাতের ময়দান। সেখানে তারা এক আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকবেন এবং সারাদিন অবস্থান শেষে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফা ত্যাগ করবেন।

    মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন শেষে ১০ জিলহজ ফজর নামাজ আদায় করে মিনায় ফিরে আসবেন এবং বড় জামারায় পাথর নিক্ষেপ করবেন বলে বলে টেনে জানিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

    গত ৫ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত গত ৩২ দিনে ১’শ ৬৫টি ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গেছেন ৬০ হাজার ১’শ ৪৬ জন হজযাত্রী। হজ শেষে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে আগামী ১৪ জুলাই, ফিরতি ফ্লাইট শেষ হবে ৪ আগস্ট।

  • আজ পবিত্র হজ

    আজ পবিত্র হজ

    আজ পবিত্র আরাফাত দিবস। আজ পবিত্র হজ। এদিন প্রখর রোদকে উপেক্ষা করে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্বের ১০ লাখ হজযাত্রী সমবেত হচ্ছেন ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে।

    কণ্ঠে তাঁদের সমস্বরে উচ্চারণ হচ্ছে- ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়ালমুক’। অর্থাৎ- ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’

    সাদা দুই টুকরা কাপড়ে শরীর ঢেকে তাঁরা ফজরের নামাজের পর থেকেই রওনা দিয়েছেন পবিত্র আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে। এই সেই আরাফাতের ময়দান, যেখানে দাঁড়িয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুসলিমরা সমবেত হচ্ছেন এই মরুর প্রান্তরে।

    গতকাল বৃহস্পতিবার মক্কায় তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই প্রখর রোদে হজযাত্রীরা অবস্থান করেন মিনায়। সেখানে রোদ আর গরমের তীব্রতাকে উপেক্ষা করে ইবাদত বন্দেগিতে দিন ও রাত পার করেছেন।

    সেখান থেকে আজ ভোরে তাঁরা আল্লাহকে কাছে পাওয়ার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষায় ছুটে যাচ্ছেন আরাফাতের ময়দানে। মুখে মুহুর্মুহু উচ্চারণ করছেন- লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।

    দীর্ঘ দুই বছর পরে আবার পূর্ণোদ্যমে শুরু হয়েছে পবিত্র হজ। আগের দুই বছর করোনা মহামারির কারণে সীমিত আয়োজনে পালিত হয়েছে এই ইসলামিক রীতি। তবে এবার সৌদি আরব সরকার ১০ লাখ হজযাত্রীকে হজ করার অনুমতি দিয়েছে। বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পর এই হজ নিয়ে উচ্ছ্বসিত হজযাত্রীরা।

    এর আগে পবিত্র কাবাঘরকে তাওয়াফ করে বুধবার থেকে হজযাত্রীরা মিনায় সমবেত হতে শুরু করেন। গতকাল বৃহস্পতিবারও ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে তুচ্ছ করে হজযাত্রীরা পবিত্র কাবাকে তাওয়াফ করেছেন। এরপর প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে মিনায় ছুটে যান। সেখানে দিনের বাকি অংশ ও রাত অতিবাহিত করেন।

    অনলাইন আরব নিউজ বলছে, হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। পবিত্র মক্কা নগরীতে এবং মদিনায় হজযাত্রীদের সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৩টি হাসপাতাল ও ১৪৭টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র। মিনায় হজযাত্রীদের চিকিৎসা সুবিধা দিতে প্রস্তুত রাখা হয় ৪টি হাসপাতাল ও ২৬টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র।

    হজযাত্রীদের আইসিইউ সেবা দেওয়ার জন্য কমপক্ষে এক হাজার বেড প্রস্তুত। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাদেরকে সেবা দেওয়ার জন্য কমপক্ষে ২০০ বেড প্রস্তুত আছে। হজযাত্রীদের সেবা দিচ্ছেন কমপক্ষে ২৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী।

    এবার অনুমোদিত টিকার পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন এমন ১০ লাখ মানুষকে হজ পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮ লাখ ৫০ হাজার বিদেশি। বাকিরা সৌদি আরবের। এর আগে ২০১৯ সালে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ২৫ লাখ মুসলিম হজ পালন করেছেন। কিন্তু করোনার কারণে এই সংখ্যা পরের দুই বছর কমিয়ে আনতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

    ২০২১ সালে টিকা নিয়েছেন এমন শুধু ৬০ হাজার সৌদি অধিবাসীকে হজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। ২০২০ সালে হজ পালন করেন হাতেগোনা কয়েক হাজার মুসলিম। পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা চলে পাঁচ দিন ধরে। তার মধ্যে আরাফাতের দিবসকে ধরা হয় মূল হজ হিসেবে। মিনা থেকে এদিন ভোর থেকেই হজযাত্রীরা লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক ধনিতে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হচ্ছেন। তাঁদের সমস্বরে উচ্চারিত লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে আরাফাতের আকাশ-বাতাস। এদিন পুরোদিন তাঁরা ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। দুপুরে হজের খুৎবা শুনবেন। তারপর এক আযানে হবে জুমা ও আসরের নামাজ।

    সূর্যাস্তের পর হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করে যাত্রা করবেন মুজদালিফার উদ্দেশ্যে। সেখানে আবার তাঁরা এক আযানে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ। তারপর পাথর সংগ্রহ করবেন জামারায় প্রতীকী শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য। এদিন রাতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন তাঁরা। তারপর শনিবার সকালে সূর্যোদয়ের পর পাথর নিক্ষেপ করবেন হজযাত্রীরা। এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করবেন। কোরবানি করে মাথা মুণ্ডন করবেন। এহরাম খুলে পরবেন সাধারণ পোশাক। আবার কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। সাফা-মারওয়ায় সাতবার চক্কর দেবেন। আবার ফিরে যাবেন মিনায়।

    এন-কে

  • হজ সম্পাদনের পূর্ণাঙ্গ সহায়িকা

    হজ সম্পাদনের পূর্ণাঙ্গ সহায়িকা

    হজ ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির অন্যতম। পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে-‘আল্লাহর পক্ষ থেকে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ করে দেওয়া হয়েছে, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখেন।’ এ বছর প্রায় ৫৭ হাজার ৫৮৫ বাংলাদেশি পবিত্র হজে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ৮ জুলাই শুরু হবে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। মরহুম আলহাজ শেখ গোলাম মুহীউদ্দীন (রহ.) রচিত ‘কিতাবুল হজ্জ’ অবলম্বনে হজের মাসয়ালা-মাসায়িল ও বিধিবিধান নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন-মাওলানা তোফায়েল গাজালি

    তালবিয়া

    ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা, লাকা ওয়াল্ মুল্ক, লা-শারিকা লাক।’ অর্থ : আমি হাজির, হে আল্লাহ্! আমি হাজির, আমি হাজির, কোনো শরিক নেই তোমার, আমি হাজির, নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই, আর সব সাম্রাজ্যও তোমার, কোনো শরিক নেই তোমার।

    হজের ফজিলত

    আল্লাহতায়ালা বলেন, নিশ্চয় মানবজাতির জন্য প্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত, তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী। তাতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে, যেমন মাকামে ইবরাহিম। আর যে কেউ সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই গৃহের হজ করা তার অবশ্যই কর্তব্য। এবং কেউ প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক, নিশ্চয় আল্লাহ্ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আলে-ইমরান আয়াত : ৯৬-৯৭)।

    হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল (সা.)কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘কোন আমল সবচেয়ে উত্তম?’ তিনি বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ইমান। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোন কাজটি সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোন কাজটি সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, ‘হজে মাবরুর’ অর্থাৎ ত্রুটিমুক্ত হজ। (বুখারি ও মুসলিম)।

    প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র

    ১. দুই সেট ইহরামের কাপড় সঙ্গে রাখুন

    ২. নরমাল স্যান্ডেল নিন

    (ইহরাম অবস্থায় পরার জন্য)

    ৩. কাঁধে ঝুলিয়ে রাখার ব্যাগ

    ৪. লুঙ্গি, পায়জামা, পাঞ্জাবি প্রয়োজন মতো

    ৫. গেঞ্জি, টুপি, রুমাল ও জুতা প্রয়োজন মতো

    ৬. গামছা বা তোয়ালে ও ফোল্ডিং ছাতা

    ৭. টুথপেস্ট, ব্রাস, মিসওয়াক, নোট বই ও কলম

    ৮. মহিলাদের আবশ্যকীয় অন্যান্য জিনিসপত্র ৯. জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র।

    ১০. লাগেজ বা সুটকেস।

    ইহরাম

    তালবিয়া পাঠসহ হজ-উমরাহর নিয়ত করাকে ইহরাম বলা হয়। বাংলাদেশি হাজিদের মিকাত বা ইহারম বাঁধার নির্ধারিত স্থান হলো ‘ইয়ালামলাম’। যারা প্রথমে মক্কা শরিফ যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে রওনা হচ্ছেন, তাদের বিমানে আরোহণের আগেই ইহরাম বেঁধে নেওয়া ভালো। কারণ বিমান এ স্থানটি কখন অতিক্রম করে তা আপনার জন্য অনুধাবন করা কঠিন হতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, উমরাহ বা হজ আদায়কারীকে অবশ্যই জেদ্দা পৌঁছার আগেই ইহরাম বাঁধতে হবে। তবে যারা মদিনা শরিফে প্রথমে যাওয়ার ইচ্ছা করেন, তারা ইহরাম ছাড়া রওনা হবেন এবং জেদ্দা পৌঁছে সরাসরি মদিনা শরিফে চলে যাবেন। মদিনা শরিফ থেকে মক্কা শরিফে আসার পথে জুল-হুলাইফা (বর্তমান ‘বীরে আলী’ নামে পরিচিত) থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কা শরিফে পৌঁছবেন।

    মনে রাখতে হবে, ইহরাম বাঁধার সময় লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে আপনি কোন ধরনের হজ করবেন। হজে তামাত্তু, নাকি কিরান নাকি ইফরাদ? বাংলাদেশ থেকে যারা যান, তারা সাধারণত তামাত্তু তথা প্রথমে ওমরাহ, তারপর হজ করেন। আপনিও যদি হজে তামাত্তু করতে চান, তাহলে আপনাকে ইহরাম বাঁধতে হবে ওমরাহর। মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ পালন শেষে ৮ জিলহজ হারাম শরিফ থেকে ফের যে ইহরাম করবেন-সেটি হবে আপনার হজের ইহরাম।

    পুরুষের ইহরাম

    ১. ইহরাম বাঁধার আগে গোঁফ, চুল, নখ, ইত্যাদি কেটে যথারীতি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে সাবান দিয়ে খুব ভালোভাবে গোসল করে আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করে তৈরি হয়ে থাকা উচিত। ২. ইহরাম বাঁধার সময় ইহরামের নিয়তে গোসল করা সুন্নাত। অসুবিধা থাকলে ওজু করলেও চলবে। ৩. সেলাই করা কাপড় খুলে একটা সাদা চাদর নাভির ওপর থেকে লুঙ্গির মতো পরে নিন। আর একখানা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিন। যেন দুই কাঁধ ও পিঠ ঢাকা থাকে। ইহরামের লেবাস সাদা এবং নতুন হওয়া ভালো। ৪. নিয়তের সঙ্গে সঙ্গে তিনবার তালবিয়া (লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…) উচ্চস্বরে পড়ুন। যদি কেউ পড়তে না পারেন তবে অন্য কেউ তাকে পড়িয়ে দিন। তারপর দরুদ শরিফ পড়ুন এবং মোনাজাত করুন। ৫. দুই ফিতার স্যান্ডেল ব্যবহার করুন যেন পায়ের ওপরের মাঝখানের উঁচু হাড় এবং গোড়ালি খোলা থাকে।

    মহিলার ইহরাম

    ১. মহিলাদের জন্য ইহরামের কোনো নির্দিষ্ট পোশাক নেই। মহিলারা সেলাইযুক্ত ওইসব কাপড়-চোপড় পরিধান করবেন, যেগুলো তারা স্বাভাবিকভাবে পরিধান করেন। যেমন : শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ, ম্যাক্সি, বোরখা ইত্যাদি। যে কোনো ধরনের আরামদায়ক জুতাও ব্যবহার করতে পারবেন। ২. ইহরাম বাঁধার আগে গোসল করে নিন। গোসল করতে অসুবিধা থাকলে শুধু ওজু করে নিন। চিরুনি দিয়ে খুব ভালোভাবে চুল আছড়িয়ে নিন। ৩. এই গোসল শুধু পরিচ্ছন্নতার জন্য। এ কারণে ঋতুবতী মহিলা এবং শিশুদের জন্যও তা সুন্নাত। এর পরিবর্তে তায়াম্মুম করা শরিয়তসিদ্ধ নয়। ৪. যদি মাকরুহ ওয়াক্ত না হয়, তবে ইহরামের নিয়তে সাধারণ নফল নামাজের মতো দুরাকাত নফল নামাজ পড়ুন। আর যদি মাকরুহ ওয়াক্ত হয় তবে ওই দুরাকাত নফল নামাজ ছাড়াই ইহরামের নিয়ত করুন। ৫. নিয়তের সঙ্গে সঙ্গে তিনবার তালবিয়া (লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…) নিুস্বরে পড়ুন। যদি কোনো মহিলা পড়তে না পারেন তবে অন্য কোনো মহিলা তাকে পড়িয়ে দিন। তারপর দরুদ শরিফ পড়ুন এবং মোনাজাত করুন।

    ইহরাম অবস্থায় যে কাজগুলো নিষিদ্ধ

    ১. সেলাইযুক্ত কাপড় যেমন কোর্তা, পায়জামা, টুপি, গেঞ্জি, মোজা ইত্যাদি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। কিন্তু মহিলারা সেলাইযুক্ত স্বাভাবিক কাপড় পরিধান করবেন। ২. পুরুষের জন্য মাথা ও মুখমণ্ডল আবৃত করা নিষিদ্ধ, জাগ্রত বা ঘুমন্ত উভয় অবস্থায় খোলা রাখতে হবে। ৩. যে কোনো ধরনের সুগন্ধি, আতর, সুগন্ধি তেল বা সুগন্ধি সাবান ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। ৪. ক্ষৌরকার্য করা যেমন : চুল, দাড়ি, গোঁফ ইত্যাদি কামানো বা নখ কাটা বা ছিঁড়ে ফেলা নিষিদ্ধ। ৫. বন্য পশুপাখি শিকার করা বা কাউকে শিকারে কোনোরূপ সাহায্য-সহযোগিতা করা নিষিদ্ধ। ৬. এমন জুতা পরিধান করা নিষিদ্ধ যার ফলে পায়ের ওপরের মাঝখানে উঁচু হাড় ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ নয়। ৭. স্বামী-স্ত্রী দৈহিক সম্পর্ক, এমনকি ওই সম্পর্কে কোনোরূপ আলাপ-আলোচনা ইত্যাদি নিষিদ্ধ। ৮. ঝগড়া-বিবাদ করা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা এমনিতেও নিষিদ্ধ, ইহরামের অবস্থায় আরও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

    তাওয়াফ

    হজের উদ্দেশে কাবা শরিফের চতুর্দিকে ঘোরাকে তাওয়াফ বলা হয়। তাওয়াফের ওয়াজিবগুলো : ১. তাহারাত অর্থাৎ গোসল ফরজ থাকলে তা করে নেওয়া এবং ওজু না থাকলে ওজু করে নেওয়া (২) শরীর ঢাকা (৩) কোনো কিছুতে আরোহণ না করে তাওয়াফ করা (মাযুর অর্থাৎ বৃদ্ধ, অসুস্থ ও রুগ্ণ অক্ষম ব্যক্তির জন্য অবশ্য আরোহণ করে তাওয়াফ করা জায়েজ) (৪) ডান দিক থেকে তাওয়াফ করা (৫) হাতিমসহ (বাইতুল্লাহর উত্তর দিকে বাইতুল্লাহ সংলগ্ন অর্ধচক্রাকৃতি দেওয়াল ঘেরা জায়গা) তাওয়াফ করা (৬) সবকটি চক্কর পূর্ণ করা (৭) তাওয়াফের শেষে দুই রাকাত নামাজ পড়া। তাওয়াফের সুন্নাতগুলো : (১) হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করা (২) ইজতিবা করা (অর্থাৎ ইহরামের চাদর ডান বগলের নিচ দিয়ে এনে বাম কাঁধে জড়ানো) (৩) হাজরে আসওয়াদে চুমু প্রদান করা বা হাতে ইশারা করে তাতে চুমু দেওয়া (৪) প্রথম তিন চক্করে রমল করা (অর্থাৎ বীরদর্পে হাত দুলিয়ে দ্রুত পায়ে চলা) (৫) বাকি চক্করগুলোতে রমল না করা (৬) সায়ী ও তাওয়াফের মাঝে ইস্তিলাম (হাজরে আসওয়াদে চুমু প্রদান বা হাত কিংবা ছড়ি দিয়ে ইশারা করে তাতে চুমু প্রদান করা (৭) হাজরে আসওয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো (৮) তাওয়াফের শুরুতে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করা (৯) চক্করগুলো বিরতি না দিয়ে পরপর করা।

    সায়ী

    সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানোকে ‘সায়ী’ বলে। বর্তমানে এ স্থানটুকুর কিছু অংশ সবুজ পিলার দ্বারা চিহ্নিত আছে। সেখানে এসে দ্রুত দৌড়াতে হয়। সায়ী করা ওয়াজিব এবং তাওয়াফ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই এটা করা সুন্নাত। সায়ীর ওয়াজিবগুলো : (১) পায়ে চলে সায়ী করা (২) সাত চক্কর পূর্ণ করা (৩) সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থান পরিপূর্ণভাবে অতিক্রম করা। সায়ীর সুন্নাতগুলো : (১) হাজরে আসওয়াদে চুমু দিয়ে সায়ীর জন্য বের হওয়া (২) তাওয়াফ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সায়ী করা (৩) সাফা ও মারওয়ায় আরোহণ করা (৪) সাফা ও মারওয়ায় আরোহণ করে কেবলামুখী হওয়া (৫) সায়ীর চক্করগুলো একটির পর একটি আদায় করা (৬) সবুজ স্তম্ভ দুটির মধ্যবর্তী স্থানটি একটু দৌড়ে অতিক্রম করা।

    ওমরাহ

    নিয়ত : ‘হে আল্লাহ! আমি উমরাহ পালন করার নিয়ত করছি, আমার জন্য তা সহজ করে দিন ও কবুল করুন।

    ওমরাহর ফরজ দুটি। যথা-১. ইহরাম বাঁধা। ২. তাওয়াফ করা। ওমরাহর ওয়াজিব দুটি। যথা-১. সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানে সাতবার সায়ী করা। ২. মাথার চুল মুণ্ডন করা।

    হজ তিন প্রকার

    হজে তামাত্তু : হজের মাসগুলোয় উমরাহর ইহরাম বেঁধে প্রথমে উমরাহ পালন করে ইহরাম খুলে ফেলা, অতঃপর হজের জন্য আবার ইহরাম বেঁধে হজ সমাপন করাকে ‘তামাত্তু হজ’ বলে। তামাত্তু হজে দমে শোকর বা হজের শোকরিয়া স্বরূপ কুরবানি করা ওয়াজিব।

    হজে কিরান : হজের মাসগুলোয় উমরাহ ও হজ একসঙ্গে উভয়টির ইহরাম বেঁধে প্রথমে উমরাহ পালন করে ইহরাম না খুলে ওই একই ইহরামে হজ সমাপন করাকে ‘হজে কিরান’ বলে। কিরান হজে দমে শোকর বা হজের শোকরিয়া স্বরূপ কুরবানি করা ওয়াজিব।

    হজে ইফরাদ : হজের মাসগুলোয় শুধু হজের ইহরাম বেঁধে হজ সমাপন করাকে ‘হজে ইফরাদ’ বলে। এতে কোনো উমরাহ পালন করা হয় না। ইফরাদ হজে দমে শোকর বা হজের শোকরিয়া স্বরূপ কুরবানি করা মুস্তাহাব।

    ফকিহদের মতে, এই তিন ধরনের হজের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে হজে কিরান, তারপর হজে তামাত্তু, তারপর হজে ইফরাদ।

    হজের ফরজ

    ১. ইহরাম বাঁধা। ২. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা অর্থাৎ ৯ জিলহজের সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে কোনো সময় এক মুহূর্তের জন্য হলেও আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। ৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা অর্থাৎ ১০ জিলহজের ভোর থেকে ১২ জিলহজের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাইতুল্লাহ শরিফের তাওয়াফ করা।

    হজের ওয়াজিব

    (১) নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ইহরাম বাঁধা (২) সায়ী অর্থাৎ সাফা ও মারওয়ার মধ্যে দৌড়ানো। (৩) সাফা থেকে সায়ী শুরু করা। (৪) তাওয়াফের পর সায়ী করা (৫) সূর্যাস্ত পর্যন্ত উকুফে আরাফা করা। (৬) মুজদালিফায় উকুফ বা অবস্থান করা। (৭) মাগরিব এবং এশার নামাজ মুজদালিফায় এসে একত্রে এশার সময় পড়া। (৮) দশ তারিখ শুধু জামরাতুল আকাবায় এবং ১১ ও ১২ তারিখে তিন জামরায় রামি-পাথর নিক্ষেপ করা। (৯) জামরাতুল আকবার ‘রামি’ বা পাথর নিক্ষেপ দশ তারিখে হলক অর্থাৎ মস্তক মুণ্ডনের আগে করা (১০) কুরবানির পর মাথা কামানো কিংবা চুল ছাঁটা (১১) কিরান এবং তামাত্তু হজ পালনকারীর জন্য কুরবানি করা (১২) তাওয়াফ হাতিমের বাইরে দিয়ে করা (১৩) তাওয়াফ ডান দিক থেকে করা (১৪) কঠিন অসুবিধা না থাকলে হেঁটে তাওয়াফ করা (১৫) ওজুর সঙ্গে তাওয়াফ করা (১৬) তাওয়াফের পর দুরাকাত নামাজ পড়া (১৭) তাওয়াফের সময় সতর ঢাকা থাকা (১৮) পাথর নিক্ষেপ করা ও কুরবানি করা, মাথা মুণ্ডানো এবং তাওয়াফ করার মধ্যে তারতিব বা ক্রম বজায় রাখা (১৯) মিকাতের বাইরে অবস্থানকারীদের বিদায়ী তাওয়াফ করা (২০) ইহরামের নিষিদ্ধ কাজগুলো না করা।