চট্টগ্রামে রং নাম্বারে মোবাইল কলের জের ধরে প্রেমের ফাঁদে পরে স্বর্বস্ব হারিয়েছে এক পোশাক কমীর্ অনামিকা। চট্টগ্রামে বিভিন্ন ভাবে প্রতারণা করে প্রতিকী নামের এই পোশাকমীর্কে ধর্ষণের পর আত্মগোপনে থাকতে সিকিউরিটির চাকরী নেয় যশোরের জাহিদ নামের এই প্রতারক। অবশেষে গত মঙ্গলবার নগরীর ইপিজেড এলাকায় নানা পরিচয়ে আত্মগোপনে থাকা আসামী জাহিদ হাসান প্রকাশ বোমা জাহিদকে গ্রেফতার করেছে র্যাব সেভেনের একটি টিম। তার বিরুদ্ধে যশোরে ও ঢাকায় ১০টি মামলা রয়েছে।
গত মঙ্গলবার র্যাব চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে বর্ণিত ধর্ষণ মামলা এবং যশোরের ৯ মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামী মো. জাহিদ হাসান প্রকাশ বোমা জাহিদ প্রকাশ নাহিদুল হাসান সজিব চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে।
এমন তথ্যের ভিত্তিতে ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে ইপিজেড থানাধীন এমজেডএম ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালায় র্যাব সেভেনের টিম। সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত অবস্থায় জাহিদকে আটক করে র্যাব সেভেনের দফতরে নিয়ে যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী স¦ীকার করে যে, সে ভিকটিমকে গত ২ আগস্ট বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় রমনা মডেল থানাধীন একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে গিয়ে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও জানায়, যশোরে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাসমূহ হতে গ্রেফতার এড়াতে সে চট্টগ্রাম এসে আত্মগোপন করেছিল।
সে বিভিন্ন ধর্ষণ মামলার ঘটনার সাথে জড়িত ছাড়াও একাধিক অস্ত্র, ডাকাতি, মাদক, প্রতারণা, বিস্ফোরক মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামী বলে স্বীকার করে।
র্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, পোশাক শিল্পের কমীর্ ধর্ষিতা অনামিকা এক প্রতারকের ফাঁদে পড়ে স্বর্বস্ব হারিয়েছে। এমন অভিযোগ র্যাবের দফতরে জমা দিয়েছে।
গত এক বছর পূর্বে আসামী মো. জাহিদ হাসান প্রকাশ বোমা জাহিদ এর সাথে রং নাম্বারে মোবাইলে কলের মাধ্যমে ভিকটিমের পরিচয় হয়। জাহিদ নিজেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য এবং র্যাব সদস্য বলে পরিচয় দেয় তখন।
প্রতারণার উদ্দেশ্যে সে ভিকটিমকে আরও জানিয়েছিল বর্তমানে সে এলপিআরএ আছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড এলাকায় এমজেডএম কোম্পানীতে কর্মরত রয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠে। আসামী জাহিদ ভিকটিমকে প্রায় সময়ই বিয়ের প্রলোভন দেখাতো এমনকি মোবাইলে তার মা ভাই, বোন এর সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিত।
একপর্যায়ে গত ২ আগস্ট আসামী জাহিদ ভিকটিমকে তার বাড়ি যশোরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে বলে জানায়। এজন্য তার মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ভিকটিমকে ঢাকায় নিয়ে যায়।
পরবতীর্তে জাহিদ ভিকটিমকে ঢাকার রমনা মডেল থানাধীন একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায় এবং সেখানে ভিকটিমকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
ধর্ষণের পর আসামী জাহিদ ভিকটিমের কাছে থাকা তিন হাজার আটশত টাকা এবং একটি গলার চেইন ছিনিয়ে নিয়ে সেখান হতে পালিয়ে যায়।
পরবতীর্তে ভিকটিম হোটেল হতে বের হয়ে একজন ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় রমনা থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যান।
সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও মামলার আলামত দিয়ে আসামী জাহিদের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন অনামিকা (মামলা নং-৫, তারিখ ০২ আগস্ট ২০২২ইং)।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ এর ৯(১) তৎসহ ধারা ৪০৬/৪২০ পেনাল কোড এ মামলা রুজু হয়েছে।
কিন্তু প্রতারক জাহিদ ভিকটিমের কাছে তার আসল পরিচয় গোপন করায় রমনা থানায় দায়েরকৃত মামলার এফআইএর এ আসামীর নাম দেয়া হয় নাহিদুল হাসান সজিব।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী আসামীর নাম মো. জাহিদ হাসান। যশোরে মো. জাহিদ সরদার প্রকাশ বোমা জাহিদ নামে পরিচিত।
সে যশোর জেলার বাঘারাপাড়া এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। যশোর জেলার বাঘারপাড়া এবং কোতয়ালী থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতি, মাদক, প্রতারণা, বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন অপকর্মের ০৯ টি মামলা রয়েছে।
আরো জানা গেছে, এসব মামলায় গ্রেফতার এড়াতে সে যশোর হতে পালিয়ে চট্টগ্রামে চলে আসে। পরবতীর্তে সে চট্টগ্রামে এসে ইপিজেড এলাকায় এমজেডএম কোম্পানীতে নাইট গার্ড এর ছদ্মবেশে আত্মগোপন করে।
ব্যক্তি জীবনে সে ২টি বিয়ে করেছে। যশোরে তার এক স্ত্রী এবং দুটি সন্তান রয়েছে এবং চট্টগ্রামে তার আরেকটি স্ত্রী রয়েছে। দুটি স্ত্রী থাকা সত্তে¦ও সে আরেকটি পোশাক কমীর্র সর্বনাশ করতে দ্বিধা বোধ করেনি।
ক্রিমিনাল ডাটাবেস অনুযায়ী তথা সিডিএমএস পর্যালোচনা করে মো. জাহিদ হাসান প্রকাশ বোমা জাহিদ এর বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতি, মাদক, প্রতারনা, বিস্ফোরণ এবং ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্মের রেকর্ড রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।
জাহিদের বিরুদ্ধে যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানায় ৮টি, কোতয়ালী থানায় ১টি এবং ঢাকার রমনা থানায় ১টি মামলা সহ মোট ১০টি মামলার রেকর্ড পেয়েছে র্যাব সেভেনের আভিযানিক দল।
২৪ ঘণ্টা / জেআর