Category: বিশেষ খবর

  • অবহেলিত ফটিকছড়ির ২০ শয্যা হাসপাতাল, ২ চিকিৎসক দিয়ে চলছে দায়সারা চিকিৎসা!

    অবহেলিত ফটিকছড়ির ২০ শয্যা হাসপাতাল, ২ চিকিৎসক দিয়ে চলছে দায়সারা চিকিৎসা!

    এম জুনায়েদ, ফটিকছড়ি প্রতিনিধি : অপূর্ণতা ও দুরাবস্থায় চলছে ফটিকছড়ি উপজেলা ২০ শয্যা হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার মান। নানা অবহেলায় মাত্র ২জন চিকিৎসক দিয়ে দায়সারা ভাবে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। এতে এলাকার সাধারণ মানুষ অসুখ বিসুখেও সরকারী হাসপাতাল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

    বাধ্য হয়েই পাশ্ববর্তী প্রাইভেট ক্লিনিক ও জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যেতে হয় তাদের। আর এ কারণেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক। জনগনের টাকায় কেনা উন্নতমানের মেশিনসহ কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হতে চলেছে ফটিকছড়ির ২০শয্যা এ হাসপাতালের। জনবল ও রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে মেশিনগুলো অকেজো হয়ে পরে রয়েছে।

    উপজেলার পৌরসভাসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের ২ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় “ফটিকছড়ি সদর ২০ শয্যা এ হাসপাতাল। কিন্তু প্রতিষ্ঠার এক যুগ পরেও সেবাদানে এখনো পূর্ণতা পায়নি হাসপাতালটি। ২০০৬ সালে তত্ববধায়ক সরকারের সময় নির্মিত হাসপাতালটি চিকিৎসকের অভাবে এখন জনগণের কোন কাজে আসছেনা। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষ।

    কাগজে কলমে হাসপাতালটিতে একজন গাইনিসহ মোট ৭ জন ডাক্তারের অনুমোদিত পদ থাকলেও ২ জনের বেশি ডাক্তার নিয়মিত কর্মস্থলে থাকে না। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিন আউটডোর চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন মাত্র ২ জন ডাক্তার। অথচ প্রান্থিক জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হলেও এটি এখন অনেকটা রোগীবিহীন ফাঁকা পড়ে আছে। স্থায়ী ডাক্তার নিয়োগ দিলেও তারা কেউ সেখানে উপস্থিত থাকেন না বলে স্থানীয়রা জানান।

    সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩ তলা ভবনের ২য় ও ৩য় তলায় রোগীদের ওয়ার্ডের বেডে, কবুতরের বিস্টাসহ ধুলা-বালিতে আচ্ছাদিত হয়ে আছে। এলোমেলো ভাবে পড়ে রয়েছে চিকিৎসা উপকরণগুলো। তবে ভবনের নিচ তলায় একজন ডাক্তার কিছু রোগীকে আউটডোর চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

    হাসপাতালে আসা রোগীদের সাথে কথা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এতো বছর হয়ে গেল এখানো আমাদের হাসপাতালটি চালু হয়নি। তারা আরও জানান, কোন রকমে চিকিৎসা পেলেও ঔষধ মিলে না।

    ফটিকছড়ি পৌর মেয়র ইসমাইল হোসেন ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে জানান, ফটিকছড়ি সদর ২০ শয্যা হাসপাতালটিতে পর্যাপ্ত ডাক্তারসহ চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার সরঞ্জাম বরাদ্ধ না থাকায় এটি জনগণের কোনো উপকারে আসছে না। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

    এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইলিয়াছ চৌধুরীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, ‘হাসপাতালটির জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি খুব সহসা এটিকে পূর্ণাঙ্গ সেবাদানের জন্য গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

  • ওরা ১৫ জন প্রশিক্ষিত ছিনতাইকারী : পুলিশকে দেখালো ৩০ সেকেন্ডে ছিনতাইয়ের কৌশল!

    ওরা ১৫ জন প্রশিক্ষিত ছিনতাইকারী : পুলিশকে দেখালো ৩০ সেকেন্ডে ছিনতাইয়ের কৌশল!

    রাজীব সেন প্রিন্স : ওরা ১৫ জন, অধিকাংশই পথশিশু তবে এরা সবাই সংঘবদ্ধ প্রশিক্ষিত ছিনতাইকারী। ১৫ সদস্যের সংঘবদ্ধ এ ছিনতাইকারী গ্রুপের মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় রয়েছে একাধিক চুরি ও ছিনতাই মামলা।

    মূলত হাত খরচের টাকা ও যাদের বয়স কম তাদের মাঝে পড়ালেখার আগ্রহ সৃষ্টি করে পড়াশুনার খরচ বাবদ সামান্য কিছু অর্থ প্রদান করে এদেরকে মোবাইল ছিনতাই কাজে উৎসাহ প্রদান করছে নগরীর চট্টগ্রাম রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ভাসমান কয়েকজন মোবাইল বিক্রেতা।

    রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর পুরাতন রেলস্টেশনসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ এ ছিনতাইকারী চক্রটির ১৫ সদস্যকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ১২টি চোরাই মোবাইল সেট ও ৪টি ছোড়া উদ্ধার করা হয়।

    পুলিশ জানায়, ছিনতাইকারী গ্রুপটির হাতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন এমন অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি শেয়ার করেছে। এমন কয়েকটি ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে ছিনতাইকারী চক্রটির গ্রুপ লিডার রাব্বি আল আহম্মদ (২০)সহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

    এ গ্রুপের গ্রেফতার অপর সদস্যরা হলেন, মো. মামুন (২৯), মো. সোহাগ (২৬), জয় বড়ুয়া প্রকাশ আব্দুল (১৮), মো. আজিম প্রকাশ আজম (২২), দেলোয়ার হোসেন প্রকাশ দেলু (৩৭), মো. মামুন (১৮), মো. আল আমিন শেখ (২১), মো. রুবেল (৩০), মো. বশির (২৫), মো. মিন্টু (৩০), মো. শাহাদাত হোসেন বাবু (২৮), জয়নাল আবেদীন (১৯), মো. জহির (২৮) ও লেদু প্রকাশ আলাউদ্দিন প্রকাশ হাসান (৩০)।

    গ্রেফতারের পর সোমবার সকালে নগরীর মোমিন রোডে সিএমপির দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান।

    তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতরা ছিনতাইকাজে প্রশিক্ষিত। যাত্রীবাহি বাসে উঠে যাত্রীর গা ঘেঁষে দাড়িয়ে মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিটের মধ্যেই তার পকেট থেকে মোবাইল হাওয়া করে দেওয়ার মতো যাদুকরী কৌশল এরা রপ্ত করেছে। তাছাড়া কোন নারী পথচারীকে একা পেলে মুহুর্ত্বের মধ্যে ওই নারীর আশে পাশে জটলা পাঁকিয়ে এক মিনিটের মধ্যেই তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল ছিনতাই চম্পট দিতেও এরা বেশ পারদর্শী।

    নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান মোবাইল ছিনতাইয়ের শিকার ব্যাক্তিদের উদ্দ্যেশে বলেন, ফেসবুকে স্ট্যাটাস না দিয়ে মোবাইল চুরির অভিযোগে সরাসরি থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করলে মোবাইলটি উদ্ধারে এবং ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করতে সহজ হয়।

    সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফসহ অভিযান পরিচালনাকারী টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে গ্রেফতারকৃত ছিনতাইকারীরা দেখালেন কি কি পন্থায় তারা মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ছিনতাই করে থাকেন।

    চলন্ত বাস বা মার্কেটে কৃত্রিম ভিড় তৈরি করে পকেট থেকে মোবাইল সরিয়ে নেয়া, ছোঁ মেরে মোবাইল বা ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়া এবং ছোঁরার ভয় দেখিয়ে খুব কম সময়ে ছিনতাইয়ের কয়েকটি কৌশল তারা উপস্তিত পুলিশ কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মী দেখান।

    গ্রেফতার ছিনতাইকারী চক্রটির কয়েকজন সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুরাতন রেলস্টেশন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, কাইয়ুম, বদি ও বদির বোন লাকি, আব্দুল জলিল এবং আব্দুস শুক্কুরের মতো আরো বেশ কয়েকজন ভাসমান মোবাইল বিক্রেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব ছিনতাইকারীরা ছিনতাই করে থাকে।

    তারা নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ৪-৫ জন করে গ্রুপ ভিত্তিক ভাগ হয়ে যাত্রী ও সাধারণ পথচারীকে টার্গেট করে তাদের শিকারে পরিণত করে। পরে ছিনতাইকৃত মোবাইলগুলো তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা ভাসমান মোবাইল বিক্রেতাদের হাতে তুলে দেন। বিনিময়ে তারা সামান্য ৩ থেকে ৫শ টাকা হাত খরচ হিসেবে তুলে দেন। তাছাড়া যারা খুব অল্প বয়সী তাদেরকে পড়াশুনার জন্য কিছু টাকা দেন ছিনতাইয়ের নির্দেশদাতারা।

    কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, রবিবার রাতে গ্রেফতার ছিনতাইকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ৩-৪ গ্রুপে ভাগ হয়ে চুরি-ছিনতাই কাজে জড়িয়ে পড়ে। প্রত্যেকটা গ্রুপের টার্গেট থাকে দিনে অন্তত একটি করে মোবাইল ছিনতাই্ করা। সে টার্গেট নিয়ে তারা জনাকীর্ণ স্থান ও জনগণের ভিড় যে এলাকায় বেশি সেই স্থানকেই তারা বেঁচে নেন।

    বিশেষ করে এই নগরীর ইপিজেড, কাস্টমস, বন্দর, দেওয়ানহাট, লালখান বাজার, জিইসি মোড় ২নং গেইট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, আন্দরকিল্লা, টেরিবাজার, নিউমার্কেট ও নতুন রেল স্টেশনসহ নগরের জনহুল স্থানগুলোতে সুযোগ বুঝে মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে ১-২ মিনিটের মধ্যেই তারা পথচারী ও যাত্রীর মোবাইল ছিনতাই করে সটকে পড়েন।

    ওসি বলেন, রেলস্টেশনের আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠা ভাসমান মোবাইল দোকানদারদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে তারা ছিনতাইকাজে জড়িয়ে পড়েন। কয়েকটি মোবাইল চুরির ঘটনার সূত্র ধরে রবিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

    ওসি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রাব্বি আল আহম্মদের বিরুদ্ধে ৫টি, মামুনের বিরুদ্ধে তিনটি, সোহাগের বিরুদ্ধে দুইটি, জয় বড়ুয়ার বিরুদ্ধে চারটি, আজিমের বিরুদ্ধে ১০টি, দেলোয়ারের বিরুদ্ধে আটটি, আল আমিনের বিরুদ্ধে একটি ও বশিরের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা রয়েছে।

    তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে এ ছিনতাইকারী চক্রের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতাসহ সকলকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

  • মা হতে এসে জীবন বিপন্ন কাছিমের

    মা হতে এসে জীবন বিপন্ন কাছিমের

    সোনাদিয়া, সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতে আসে বৃহদাকার সামুদ্রিক মা’কাছিম। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের সাগর সৈকতে দু’একটি কাছিম চোখে পড়লেও কক্সবাজার, হিমছড়ি, পেঁচার দ্বীপ, ইনানির সাগর সৈকতে সামুদ্রিক কাছিম আর ডিম দিতে আসে না। অপরিকল্পিত আবাসন, সৈকতে আলোর ঝিলিক ও পর্যটকের অনিয়ন্ত্রিত পদচারনায় কাছিমের ডিম দেবার পরিবেশ গত পাঁচ বছরে পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে।

    কক্সবাজার, সোনাদিয়া, সন্দীপ, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন উপকূল থেকে প্রায় বিশ হাজার ট্রলার মাছ শিকার করছে গভীর সমুদ্রে। জেলেরা ট্রলার থেকে ভাসাজাল, ডুবাজাল অনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রচালিত ট্রলারসহ প্রায় ৪০ থেকে ৬০ ফুট লম্বা বিহুন্দী ও লাক্ষ্যা জাল পেতে রাখে সাগরতলে। অপরদিকে হাজার কিলোমিটিার পথ পেড়িয়ে সামুদ্রিক কাছিম মা’ হবার তাড়নায় ছুটে আসে এদেশের সাগর সৈকতে। কাছিমগুলো যখন সৈকতে এসে পৌঁছায় তখন তারা এক একটি মস্তকবিহীন লাশ। নিথর দেহ নিয়ে ভেসে আসে জোয়ারের পানিতে। শরীরে তাদের আঘাতের দাগ।

    বর্তমানে কমপক্ষে ৫০ হাজার বেহুন্দী জাল রয়েছে জেলেদের কাছে। গভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে কাছিম আটকা পড়ে। জেলেরা ঝামেলা এড়াতে তাদের বৈঠা, বাঁশ, কাঠ ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে। সামুদ্রিক কাছিম গবেষক জহিরুল ইসলামের গবেষনায় প্রতি বছর উপকূলবর্তী এলাকাতে ছয়’শ থেকে আট’শ মৃত কাছিম সৈকতে ভেসে আসে। আগত পর্যটকরা জানতেও পারেনা, কেন তারা মারা পড়ে? অথচ উপকূলীয় এলাকায় উন্নয়ন, হোটেল-মোটেলের আলোর ঝলক, প্রবাল ধ্বংস, সৈকত দূষন কাছিমের বংশ বিস্তারে বড় প্রতিবন্ধকতা। সৈকতে আলো জ্বালালে এরা সহজে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ডিম না দিয়ে ফিরে চলে যায়। কখনও আবার বালুচরে উঠতে না পেরে পানিতে ডিম দিয়ে দেয়। তবে সে ডিমগুলো থেকে কখনও বাচ্চা ফুটে না। মা হবার আকাঙ্খা অপূরণ রেখে ফিরে যেতে হয় অন্য জায়গায়।

    প্রাচীনকালে মানুষ যখন থেকে সমুদ্রে যাতায়াত ও তীরে বসবাস শুরু করে তখন থেকে সামুদ্রিক কাছিমের সাথে পরিচয়। এরা সরীসৃপ ও অতি প্রাচীন সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা ১০-১৫ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে টিকে আছে। এদের জীবন চক্র বড় জটিল ও রহস্যপূর্ণ। খাদ্য গ্রহণ এক জায়গায় আবার প্রজনন ক্ষেত্র আরেক জায়গায়। এমন দূরত্ব প্রায় বারো হাজার কি:মি ব্যবধানে হতে পারে। জীবন চক্রে তারা বিভিন্ন সাগর মহাসাগরে বিচরণ করে, নানাভাবে সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষা করে আসছে।

    এখন পর্যন্ত সর্বমোট সাতটি প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম বিশেজ্ঞরা সনাক্ত করেছে। এরা হলো অলিভ রিডলে, সবুজ কাছিম, হকসবিল, লগারহেড, লেদারব্যাক, ফ্লাটব্যাক ও ক্যাম্প রিডলে কাছিম। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় এখন পর্যন্ত ৫ প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিমের উপস্থিতি রয়েছে। তবে সামুদ্রিক কাছিম গবেষনা প্রতিষ্ঠান ‘মেরিন লাইফ এ্যালাইন্স’ জানায় এ সংখ্যা কমে বর্তমানে শুধু ‘অলিভ রিডলে’ বালুচরে আসছে।

    সামুদ্রিক কাছিমের সাথে স্থলভাগের কাছিমের অনেক অমিল রয়েছে। যেমন এরা মাথা লুকাতে পাড়ে না। এদের পা’গুলো সমুদ্রে চলার জন্য সাঁতার উপযোগী। অনেকটা নৌকাতে ব্যবহৃত বৈঠার আকৃতির। একটি সামুদ্রিক কাছিম প্রাপ্তবয়স্ক হতে ২০ থেকে ২৫ বছর সময় লাগে। ওজন চল্লিশ থেকে ষাট কেজি হয়।

    স্ত্রী কাছিম প্রজাতিভেদে বছরে তিন থেকে সাতবার ডিম পেড়ে থাকে। শুকনো বালু সরিয়ে ৫০-৬০ সে:মি বা ১০০-১১০ সে:মি গভীর কলসী আকারের গর্ত করে ১০০ থেকে ১৫০টি গোলাকার সাদা ডিম দেয়। সামুদ্রিক কাছিমের বাচ্চা প্রাকৃতিক নিয়মে ডিম ফুটে বের হয়ে সমুদ্রে চলে যায়। জীবন বাচাঁতে সাগরে নেমেই টানা ৪৮ ঘন্টার মতো সাঁতরে গভীর সাগরে যায়। বাচ্চা কাছিম যে সৈকতে জন্মেছিল বয়:প্রাপ্তির পর সে বালুচরেই তারা আবার ডিম দিতে আসে। বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন কিভাবে সাগরের কাছিম নির্দিষ্ট সৈকত খুঁজে নিতে পারে। খাদ্য তালিকায় কাকড়া, শামুক-ঝিনুক, জেলিফিশ, সাগর শসা, চিংড়ি, লবষ্টার, শেওলা ও সামুদ্রিক ঘাস খেয়ে থাকে।

    সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে সারা বিশ্বে হুমকীসমূহ কমানোর চেষ্টা চলছে। পরিযায়ী বলে কাছিম সংরক্ষনে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক সমন্বয় প্রয়োজন। ২০০১ সালে দক্ষিন পূর্ব এশিয়া, ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলি সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষনের জন্য একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে IOSEA ‘Marine Turtle MoU’ হিসেবে পরিচিত। মূলত সাগরের কাছিম বিষয়ে শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৪ সালে IOSEA সামুদ্রিক কাছিম সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং দক্ষিন পূর্ব এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় এলাকতে সামুদ্রিক কাছিম রক্ষার জন্য অঙ্গিকারবদ্ধ হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত নেই কোন পর্যবেক্ষন।

    বর্তমানে সাগর সৈকতে মেরিন লাইফ এ্যালাইন্স নামের একটি সংস্থা সাগরের কাছিম নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু করেছে। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় তারা কাছিমের ডিম সংরক্ষণ সহ কাছিমের জীবন বৃত্তান্ত আরও রহস্য উদঘাটন করছে।

  • সীতাকুণ্ডে জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ১৫ লক্ষ টাকা দামের একটি রাজ কাঁকড়া

    সীতাকুণ্ডে জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ১৫ লক্ষ টাকা দামের একটি রাজ কাঁকড়া

    কামরুল ইসলাম দুলু, সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি :
    সীতাকুণ্ডে সাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা দামের একটি রাজ কাঁকড়া।

    বৃহস্পতিবার সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুরের মদনহাট এলাকার তপন জল দাশের জালে টি. গিগাস (T.Gigas) প্রজাতির এই রাজ কাঁকড়াটি ধরা পড়ে।

    পরে বঙ্গোপসাগরের একমাত্র ‘লিভিং ফসিল’ বা জীবন্ত জীবাশ্ম নামে পরিচিত রাজ কাঁকড়াটি সাগরে অবমুক্ত করা হয়।

    তপন জলদাশ বলেন, আমার মাছ ধরার জালে বিলুপ্তপ্রায় মহামূল্যবান রাজ কাঁকড়াটি ধরার পর উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি। কাঁকড়াটি যে মহামূল্যবান তা আমি আগে থেকে জানতামনা। কয়েকদিন আগে এই কাঁকড়া বিষয়ে চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই খবর পড়ে আমি বিলুপ্তপ্রায় এই রাজ কাঁকড়া সম্পর্কে জানতে পারি। এরপর ঐ পত্রিকার কক্সবাজার প্রতিনিধি সাংবাদিক আহমেদ গিয়াসকে আমার জালে কাঁকড়া আটকের বিষয়টি জানালে তিনি আমাকে এই কাঁকড়া সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন এবং কাঁকড়াটি সাগরে অবমুক্ত করার অনুরোধ করলে আমি সেটি সাগরে ছেড়ে দেই। এটি রাজ কাঁকড়া নামে পরিচিত হলেও স্থানীয় জেলেদের ভাষায় বলা হয় দৈত্য কাঁকড়া।

    উল্লেখ্য যে, বঙ্গোপসাগরের একমাত্র ‘লিভিং ফসিল’ বা জীবন্ত জীবাশ্ম নামে পরিচিত রাজ কাঁকড়া দেশের সমুদ্র উপকূল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। অলৌকিক ওষুধী গুণের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এই প্রাণিটির রক্ত ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অত্যন্ত দামী। প্রাণীটি ডাইনোসর যুগেরও আগের বা ৪৫ কোটি বছর পুরনো আদি প্রাণী বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু কিছু শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই প্রাণীটির রক্ত ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করে দিচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

    চিকিৎসা শাস্ত্রে রাজ কাঁকড়ার নীল রক্ত এক যাদুকরী ক্ষমতা সম্পন্ন। মানুষের শরীরের দ্রত রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এবং মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করতে কাঁকড়ার নীল রক্ত অতুলনীয়। এছাড়া এর শরীরের পেছনে থাকা ছোট্ট লেজটি দিয়ে তৈরি করা হয় ক্যান্সারের মহা ওষুধ। এখন চিকিৎসা শাস্ত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা একেকটি রাজ কাঁকড়ার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে পনের লক্ষ টাকা এবং প্রতি গ্যালন রক্তের দাম ৬০ হাজার মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশী মূদ্রায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাময়িকী ও গবেষণাপত্রের বরাত দিয়ে জানান কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল হক।

    আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএন এর পর্যবেক্ষণেও বাংলাদেশে প্রাণিটির অবস্থান লাল তালিকায়।

    সমুদ্র বিজ্ঞানী আশরাফুল হক বলেন, ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পরেও প্রাণিটিকে বিস্তীর্ণ উপকূলজুড়ে সচরাচর দেখা যেত। এমনকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের একদল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সীতাকুণ্ডের কুমিরা উপকুলে প্রাণিটিকে দেখেছেন। কিন্তু দামী এই প্রাণিটি সাম্প্রতিককালে প্রকৃতি থেকে এভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সন্দেহজনক ও উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

    সমুদ্র বিজ্ঞানী আশরাফুল হক বলেন, ওষুধ শিল্পের জন্য প্রতি বছর কয়েক কোটি করে রাজ কাঁকড়া শিকারের কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চল থেকেই এই জীবন্ত ফসিলটি হারিয়ে গেছে। অনেক স্থানে এই প্রাণিটির বিলুপ্তির সাথে সাথে এর উপর নির্ভরশীল ওষূধ শিল্প কারখানাও বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, এখনও আমাদের বঙ্গোপসাগরের কিছু এলাকায় রাজ কাঁকড়ার আবাসস্থল টিকে আছে। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রজাতি ভেদে ভারত, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্র উপকুল, ইন্দো-প্যাসিফিক, ইন্দোনেশিয়ান, আমেরিকান আটলান্টিক উপকূল এবং মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চলে হর্সশো ক্র্যাব পাওয়া যায়। তবে পুরো বিশ্বেই এটি বিপন্ন।

  • ৬ মাস পর আসল মায়ের কোলে শুভ, লালিত মায়ের চোখে স্বপ্নভঙ্গের জল

    ৬ মাস পর আসল মায়ের কোলে শুভ, লালিত মায়ের চোখে স্বপ্নভঙ্গের জল

    ২৪ ঘন্টা স্পেশাল : দীর্ঘ ৬ মাস পর ভিক্ষুক মায়ের কোলে ফিরেছে শিশু শুভ। ভিক্ষুক মায়ের অভিযোগের সূত্র ধরে দীর্ঘ ৬ মাসের পুলিশের নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্ঠায় চুরি হওয়া ৬ মাসের শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। সে সাথে শিশু পাচারকারী চক্রের মুলহোতাসহ এ চক্রের ২ নারী সদস্যসহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

    শিশু পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্যদের গ্রেফতারের পর তাদের দেয়া তথ্যমতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানার কাশেম আলী টেন্ডল বাড়ির দুবাই প্রবাসী সাইফুল্লার নিঃসন্তান স্ত্রী তাসমিনা আক্তার জেলীর হেফাজত থেকে শিশু শুভকে উদ্ধার করে পুলিশ।

    শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে সংবাদ সম্মেলনে শিশু পাচারকারী চক্রকে গ্রেফতার এবং শিশুটিকে উদ্ধারের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) আমেনা বেগম।

    চট্টগ্রামে আর কারো সন্তান এভাবে চুরি বা অপহরণ হয়ে থাকলে পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ জানিয়ে আমেনা বেগম বলেন যদি কারো সন্তান অপহরণ বা চুরি হয়ে থাকে তবে এই চক্রের সদস্যদের আবার রিমান্ডে এনে প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তারা আর কোন শিশু অপহরণের সাথে জড়িত কি-না তা খুঁজে বের করা হবে জানিয়েছে আমেনা বেগম।

    শনিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘটনার বিবরণে আমেনা বেগম বলেন, শিশু শুভর মা শিরিন বেগম (২৫)’র স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করার পর থেকে ৬ মাস বয়সী শুভ এবং তার সাত বছর বয়সী এক কন্যা সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দিতে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেচে নন। গত ১৫ মার্চ বিকেলে তিনি চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানাধীন নেভী কলোনী সংলগ্ন ফুটপাতে শিশু শুভকে নিয়ে ভিক্ষা করছিলেন।

    শিশু পাচারকারী ২ সদস্য

    সেদিন শিরিন বেগমের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কথার ছলে তাকে জুস খাওয়ান দুজন পথচারী। জুস খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর শিরিন বেগমকে আগ্রাবাদস্থ মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করে আত্মীয় পরিচয়ে শুভকে চুরি করে নিয়ে যায় পাচারকারীরা।

    ঘটনার ২দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গত ১৮ মার্চ ভিক্ষুক মা শিরিন বেগম নগরীর ইপিজেড থানায় তার শিশু পুত্র শুভ অপহরণ হয়েছে উল্লেখ করে এজাহার দায়ের করেন।

    মামলা দায়েরের পর থেকেই পুলিশ শিশু উদ্ধারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এবং বন্দর থানার ওসি মীর নুরুল হুদা সার্বক্ষণিকভাবে ভিক্ষুক শিরিনের অপহরণ হওয়া শিশু উদ্ধারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেন। বন্দর থানার এস আই কামাল হোসেন পায় মামলার তদন্তভার।

    শিশু শুভর মায়ের কথামতো পুলিশ চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সেদিনকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে শিশু পাচারকারীচক্রটিকে শনাক্ত করে। গত ২৮ জুলাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এ চক্রের অন্যতম সদস্য ইকবাল হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এ চক্রের অন্যতম সদস্য জাফর সাদেকের তথ্য প্রকাশ করে ইকবাল।

    তার দেয়া তথ্যমতে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে গত ৩ নভেম্বর এ চক্রের মুল মাস্টার মাইন্ড জাফর সাদেককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর শিশুটির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পায় পুলিশ। তার তথ্যের সূত্র ধরে একই দিন এ চক্রের নারী সদস্য পারভিন আক্তারকেও গ্রেফতার করা হয়। গত ২১ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচলাইশ থানার শূলকবহর এলাকা থেকে এ চক্রের আরেক নারী সদস্য সালেহা আলেয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

    তিনি জানান, পাচারকারী চক্রের তিন হাত বদল হয়ে শিশুটি পৌছে যায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানার কাশেম আলী টেন্ডল বাড়ির দুবাই প্রবাসী সাইফুল্লার নিঃসন্তান স্ত্রী তাসমিনা আক্তার জেলীর হাতে। তিনি পাচারকারী চক্রের কাছ থেকে মাত্র দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে শুভকে কিনে নিয়েছিলো। শুক্রবার তার হেফাজত থেকে শিশু শুভকে উদ্ধার করে পুলিশ।

    শিশুটি জেলীর হাতে কিভাবে গেলো সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে গ্রেফতার জাফর সাদেকের বরাতে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) আমেনা বেগম বলেন, শিশুটিকে চুরি করে প্রথমে রাখা হয়েছিলো নগরীর মেহেদীবাগস্থ ন্যাশনাল হাসপাতাল ও সিগমা ল্যাবের টেকনোলজিস্ট পারভিন আক্তারের হেফাজতে। সেখান থেকে পাচারকারী চক্রের অপর সদস্য সালেহা বেগম আলেয়ার (৫২) মাধ্যমে শিশুটিকে ফটিকছড়ির এক নিঃসন্তান দম্পত্তির কাছে বিক্রি করে দেন।

    নিঃসন্তান গৃহবধু শিশু শুভর লালিত মা তাসমিনা আক্তার জানান, পাচারকারী চক্রের সদস্য আলেয়া তাকে জানায়, শিশুটির মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর শিশুটিকে দেখাশুনার জন্য কেউ না থাকায় শিশু শুভর পিতা তাকে দত্তক দিতে চাই। এ কথা শুনে শিশুটিকে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করলে আলেয়ার এক খালার মাধ্যমে প্রথমে আড়াই লক্ষ টাকা প্রদানের প্রস্তাব করে।

    পরে অনেক দেন দরবারে দেড় লক্ষ টাকায় রাজি হলে স্ট্যাম্প করে শিশুটিকে কিনে নেন এবং সন্তানের অভাব পুরণে নিজ সন্তানের মতোই শিশু শুভকে ৬ মাস ধরে লালন পালন করে আসছেন।

    তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, দীর্ঘ ৬ মাস ধরে লালন পালন করার পর পুলিশের কাছ থেকেই জানতে পারি শিশুটি চুরি করা হয়েছে। শিশুটির আসল মায়ের কাছে তাকে তুলে দিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন জেলী। পুলিশের প্রেস ব্রিফিং-চলাকালীন শুভকে কোলে নিয়ে সারাক্ষণই নিরবে চোখের পানি ফেলছিলেন জেলী।

    অপরদিকে দীর্ঘ ৬ মাস পর নিজে হারিয়ে ফেলা সন্তান কোলে পেয়ে আনন্দিত ভিক্ষুক শিরিন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রশাসনের প্রতি।

    রাজীব সেন প্রিন্স

  • মহেশখালীর চিহ্নিত অস্ত্রের কারিগর ও কূখ্যাত জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ শনিবার

    মহেশখালীর চিহ্নিত অস্ত্রের কারিগর ও কূখ্যাত জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ শনিবার

    রাজীব সেন প্রিন্স : কক্সবাজার জেলার সবচেয়ে বেশী অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিত মহেশখালী উপজেলার কালামারছরা ইউনিয়ন। খুন, রাহাজানি, দস্যুতা, অপহরণসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা এখানে ঘটছে না। তবে এসব জগণ্য অপরাধের সাথে জড়িত অনেকেই এখন ফিরতে চাই স্বাভাবিক জীবনে।

    সরকারের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব হলে এরা জগন্য অপরাধকর্ম থেকে নিজেদের শুধরে সাধারণ মানুষের মতোই জীবিকা নির্বাহ করতে আগ্রহী। আর তাদের এ আগ্রহকে পুঁজি করে ভয়ংকর এসব অপরাধীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে, এদের একাংশকে সরকারি সহায়তার আশ্বাস দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে রাজি করিয়েছেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আনন্দ টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি ও কক্সবাজারের পেকুয়ার উজানটিয়ার বাসিন্দা এম.এম আকরাম হোসাইন।

    তার মধ্যস্থতায় এর আগেও ২ দফায় বহু অপরাধী অস্ত্রসস্ত্র সরকারি কোষাগারে জমা করে আত্মসমর্পণ করেছেন। আগামী শনিবার ২৩ নভেম্বর ফের শতাধিক অস্ত্রের কারিগর ও জলদস্যু তাদের অপরাধকর্মে ব্যবহৃত প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, ধারালো ভয়ংকর অস্ত্র, অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছেন আকরামের মধ্যস্থতায়।

    ইতিমধ্যে আত্মসমর্পণের স্থানটিও নির্ধারণ করেছে প্রশাসন। মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠেই অনুষ্ঠিত হবে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। স্থানটি পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকতারা।

    গত সোমবার মাঠ পরিদর্শনকালে এসপি এ. বি.এম মাসুদ হোসেন আগত অতিথিদের নিরাপত্তা, অভ্যর্থনা, প্রটোকল, জলদস্যুদের জমায়েত, তাদের অস্ত্র জমা করা, যাতায়াত সুবিধা, প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরি, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান ইত্যাদি সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে রেকি ও ম্যাপ তৈরি করে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক ব্যবস্থাসমেত পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ২০ নভেম্বর বুধবার থেকে প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরি সহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরু হয়েছে।

    আনন্দ টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি এম.এম আকরাম হোসাইন ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, সমাজের নানা অপরাধকর্ম থেকে অপরাধীদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তিনি এ ঝুকিপূর্ণ কাজে তিনি হাত দিয়েছেন। সরকারের প্রশাসনের আশ্বাসে তা অনেকটা এগিয়ে নিয়েছে।

    মহেশখালীর চিহ্নিত অস্ত্রের কারিগর ও কূখ্যাত বেশ ক’টি জলদস্যু বাহিনীর সর্দার ও বাহিনীর সদস্যরা স্বদলবলে আত্মসমর্পণ করার সম্মতি জ্ঞাপন করেন। প্রাথমিক অবস্থায় আগ্রহী শতাধিক হলেও অনেকে এখনো আত্মসমর্পণের জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করছে বলে জানিয়েছেন এ সংবাদকর্মী।

    সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) বিশেষ অতিথি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, স্থানীয় অন্যান্য সংসদ সদস্যগণ, কোস্টগার্ডের প্রতিনিধিসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতারা আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।

    আনন্দ টিভি চট্টগ্রাম ব্যুরোর ক্যামেরা পারসন রিটন মজুমদার ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে জানান, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান সফল করতে ও জলদস্যু ও অস্ত্রের কারিগরদের তাদের আস্তানা থেকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আনতে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যস্থতাকারী আনন্দ টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি এম.এম আকরাম হোসাইন বিরাট ঝুঁকি নিয়ে এখনও দিনরাত মহেশখালী উপকূল ও সাগরে অবস্থান করছেন।

    প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা যায়, আত্মসমর্পণকারীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তাদেরকে প্রনোদনা দেওয়া হবে। আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হবে। তবে এ মামলা থেকে আত্মসমর্পণকারীরা সহজে মুক্তি পেতে মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্রপক্ষ তাদেরকে সহযোগিতা করবে।

    উল্লেখ্য, মহেশখালীতে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের ঘটনাটি হবে কক্সবাজারের জন্য ২য় পদক্ষেপ। এর আগে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে অনুরূপভাবে ৪৩ জন সশস্ত্র জলদস্যু আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিলো। সেখানে ৪৩ জনের মধ্যে বর্তমান আনন্দ টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি এম.এম আকরাম হোসাইনের একক মধ্যস্থতায় ৩৭ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছিলো।

    এছাড়া চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারী ১০২ জন ইয়াবাকারবারী টেকনাফে চ্যানেল ২৪ টিভি’র তৎকালীন সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার এম.এম আকরাম হোসাইনের একক মধ্যস্থতায় দেশে প্রথম মাদক কারবারি আত্মসমর্পণ করেছিলো। সেদিনের মাদক কারবারী আত্মসমর্পণ করা ছিলো এ দেশের জন্য একটা রেকর্ড।

  • লবণ : শুনেছি দাম বাড়ছে তাই আমিও বাড়াই দিছি!

    লবণ : শুনেছি দাম বাড়ছে তাই আমিও বাড়াই দিছি!

    ২৪ ঘন্টা চট্টগ্রাম ডেস্ক : চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা পৌরসদরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে দুই মুদি দোকানির কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।

    গুজবে কান দিয়ে লবনের প্যাকেটের গায়ে লেখা দামের তুলনায় অধিক মুল্য নেয়ার অপরাধে তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করে নির্বার্হী ম্যাজিস্ট্রেট।

    মঙ্গলবার রাত ৮ টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপী এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন।

    জরিমানা আদায়ের পর রুহুল আমিন দোকানিকে হঠাৎ করে লবণের দাম বাড়তি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে দোকানি সহজ সরল উত্তর দেন, ‘শুনছি দাম বাড়ছে তাই আমিও দাম বাড়াই দিছি’।

    রুহুল আমিন ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে জানান, হঠাৎ করে সারাদেশে লবণ সংকট ও লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ার আগেই সাধারণ ব্যবসায়িদের সতর্ক করতে মঙ্গলবার রাতেই উপজেলা পৌরসদরের বিভিন্ন মুদি দোকানে অভিযান চালায়।

    এসময় ক্রেতাদের কাছ থেকে লবণের প্যাকেটের গায়ে লেখার চাইতেও বেশি দাম নেওয়ার অপরাধে পৌরসভার দুই মুদি দোকানিকে জরিমানা করা হয়।

    প্রথম দিনের অভিযানে মেসার্স মেঝবাহ স্টোরকে ৫শ এবং মেসার্স খোরশেদ স্টোরকে ৫শ টাকা জরিমানা করে সকল ব্যবসায়িকে প্রথমবারের মত সতর্ক করে দেওয়া হয়।

    তবে ভবিষ্যতে একই অপরাধ ধরা পড়লে প্রশাসন আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে তিনি সকল ব্যবসায়িদের হুশিয়ার করে দেন।

  • অপহরণ নয়, দুই সন্তানসহ প্রেমিকের সাথেই পালিয়েছে গৃহবধু!

    অপহরণ নয়, দুই সন্তানসহ প্রেমিকের সাথেই পালিয়েছে গৃহবধু!

    ২৪ ঘন্টা চট্টগ্রাম ডেস্ক : দুই সন্তান নিয়ে উধাও হয়ে সাতদিন পর ফিরে এসেছে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর কুয়েত প্রবাসী ফখরুদ্দিন রুবেলের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার নিপা।

    এর আগে পরিবারের সন্দেহ ছিলো সন্তানসহ তাকে অপহরণ করা হয়েছে। ওই সন্দেহের জেরে তাদের উদ্ধারে নেমেছিলো পুলিশ। কিন্তু সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তৎপরতায় ওই নারী সাতদিন পর ফিরে এসেছে।

    মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে ওই নারী দুই সন্তান নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে ফিরে আসার পর কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তাদের হেফাজতে নেয়। এরপর তাদের জিডিমূলে নগরীর চান্দগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়।

    হেফাজতে পুলিশের কাছে ওই নারী জানিয়েছে তাকে অপহরণ করা হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় তার আট বছরের প্রেমিক সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারির বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী বাবুর সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো। পুলিশ জানায়, তার ছেলে আদনান সাইদ অয়ন (৪) ও মেয়ে ফাহমিদা জাহান রিমিকে (২) সাথে নিয়ে প্রেমিক বাবুর সাথে ঢাকায় পালিয়ে গিয়েছিলো। নিপার বাবার বাড়ি এবং শ্বশুর বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলায়।

    জানা যায়, গত ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর আমান বাজার থেকে সিএনজি অটো রিকশা নিয়ে বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরায় নিজ বাড়িতে যাওয়ার উদ্দ্যেশে রওনা হয়েছিলেন। অটোরিকশাটি কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় গেলে দুই সন্তানসহ উধাও হয়ে যান ওই গৃহবধু।

    পরে তাদেরকে অপহরণ করা হয়েছে ভেবে গৃহবধুর মা নগরীর চান্দগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন কাপ্তাই রাস্তার মাথায় তিনি অটো রিকশা দাঁড় করিয়ে কাপড় কিনতে নামলে মাত্র দশমিনিটের মধ্যে সিএনজিসহ তার মেয়ে ও নাতনিরা উধাও হয়ে গেছে।

    কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মঈনুল ইসলাম বলেন, দুই শিশু সন্তানসহ গৃহবধু উধাও হওয়ার ঘটনাটি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও পত্রিকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলে চান্দগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরির উপর ভিত্তি করে মামলাটির তদন্তভার নেয় চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

    তিনি বলেন, অপহরণ ধরেই তদন্ত করতে গিয়ে বাস্তবে ঘটনার চিত্র উঠে আসে ভিন্ন। উধাও হওয়ার ঘটনাস্থলের বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে নিশ্চিত হয়েছি ওই গৃহবধূ অপহৃত হয়নি।

    ঘটনাটি তদন্তে ইউনিটের বিভিন্ন সদস্যরা যখন ওই নারীকে উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে এবং তার প্রেমিক বাবুর সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছিল তখন মঙ্গলবার সকালে সে দুই সন্তানসহ চট্টগ্রামে ফিরে আসে। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নিলে সে স্বীকার করেন তার দুই সন্তানসহ তার প্রেমিকের সাথেই সে ঢাকায় পালিয়েছিলো। পুলিশ জানায়, সাত বছর আগে বিয়ে হওয়ার এক বছর আগে থেকেই বাবুর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল গৃহবধুর ফাতেমা আক্তার নিপা (২৫)র।

  • লাল রঙ্গে সড়ক রাঙ্গিয়ে চিরবিদায় নিলেন রঙমিস্ত্রি নুরুল ইসলাম

    লাল রঙ্গে সড়ক রাঙ্গিয়ে চিরবিদায় নিলেন রঙমিস্ত্রি নুরুল ইসলাম

    ২৪ ঘন্টা স্পেশাল : অন্যের বাসা বাড়ির বিভিন্ন আঙ্গিনা প্রতিদিন রাঙ্গিয়ে দিতে ব্যস্থ থাকতেন রঙমিস্ত্রি নুরুল ইসলাম (৩০)। তবে ১৭ নভেম্বর রবিবার ছিলো তার জন্য বিশেষ একটি দিন। নিজ শরীরের লাল রঙ্গে সড়ক রাঙ্গিয়ে স্ত্রী ও মাত্র এক বছর বয়সী শিশু কণ্যাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।

    রবিবার সকালে চট্টগ্রামের পাথরঘাটা ব্রিক ফিল্ড রোডের বড়ুয়া বিল্ডিংয়ে গ্যাস লাইনে লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণের পর সড়কের উপর ধ্বসে পড়া দেয়ালের চাপায় শেষ হয় রঙ মিস্ত্রি নুরুল ইসলামের জীবন।

    জানা যায়, রঙ মিস্ত্রি নূরুল ইসলাম কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুবের খিল এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে। দুবছর আগেই বিয়ে করেন নুরুল ইসলাম। বিয়ের পর এক শিশু কণ্যা জন্ম হয়। স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা ও শিশু কণ্যাকে নিয়ে নগরীর শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন বাস্তুুহারা কলোনিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন নিহত নুরুল ইসলাম।

    চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত নুরুল ইসলামের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে হাসপাতালের পরিবেশ। নিহতের স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা অকালে স্বামী হারিয়ে পাগল প্রায়। তিনি বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছে বারবার। এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় পুরো হাসপাতাল জুড়ে।

    নিহত রঙমিস্ত্রি নুরুল ইসলামের রঙ্রের কাজে অন্যতম সহযোগী ছিলেন তার ভাগ্নে মেহেদী হাসান। ঘটনার দিন তিনিও ছিলেন ঘটনাস্থলে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, দুর্ঘটনার আগের দিন রাত থেকেই তার মামার সাথে ওই ভবনে রঙ্ এর কাজ নেন তারা। ওইদিন কাজের অর্ধেক শেষ করতেই তাদের রাত পেরিয়ে যায়।

    সকালে আমি ভবনের ছাদে রঙ্রে কাজ করছিলাম আর মামা ঘুমঘুম চোখে ভবন থেকে নেমে বড়ুয়া ভবনের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন বাসার উদ্দ্যেশে। তার আর বাসায় ফিরে এক বছরের শিশু কণ্যাকে আদর করা হলনা। এর মধ্যেই হঠাৎ বিকট শব্দে সড়কের পাশের দেয়ালটি ধ্বসে পড়ে। এতে চাপা পড়ে মামা। দ্রুত নেমে এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সব শেষ হয়ে যায়।

    নিহত মামার সংসারের কথা বলতে গিয়েই অজোর নয়নে অশ্রু ঝরে পড়ছিলো মেহেদির। কান্না জড়িত কণ্ঠে সে বলছেন, তার অবুঝ শিশুটিকে কিভাবে সে বোঝাবে তার বাবা আর ফিরবে না?

    উল্লেখ্য : আজ ১৭ নভেম্বর রবিবার সকাল ৯টার দিকে পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের বড়ুয়া ভবনে গ্যাস লাইন লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের পর দু’টি ভবনের দেয়ালের একাংশ ধসে পড়ে। এ ঘটনায় ৪ জন পুরুষ ২ জন মহিলাসহ ৭ জন নিহত হয়। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন আছে আরো ১০ জন। এরমধ্যে তিন জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।

    হতাহতের ঘটনার পর চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও সিএমপির উদ্ধতন কর্মকর্তা, সিডিএ কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন।

    এ ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত টিমের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া নিহতদের প্রত্যেককে ২০ হাজার এবং আহতদের চিকিৎসা সেবার ভার নিয়েছেন চসিক ও জেলা প্রশাসন।

  • দেয়ালের নিচেই চিরতরে ঘুমালেন শিক্ষিকা অ্যানি বড়ুয়া!

    দেয়ালের নিচেই চিরতরে ঘুমালেন শিক্ষিকা অ্যানি বড়ুয়া!

    ২৪ ঘন্টা স্পেশাল : পটিয়ার মেহেরআটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অ্যানি বড়ুয়া (৩৮)। পিএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করতে বাসা থেকে বের হয়ে পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের সামনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন সহকর্মীর জন্য।

    তার এ অপেক্ষার পালা হয়তো শেষ তবে তিনি আর কখনো শিক্ষার্থীদের পড়াবেন না, চিরতরে হারিয়ে গেছেন ঘুমের রাজ্যে। সকাল ৯টার সময় হঠাৎ একটি বিকট শব্দ আর তার গায়ের উপর ধ্বসে পড়া দেয়াল তাকে নিয়ে গেছে অচেনা রাজ্যে।

    ঘটনাস্থলেই দেয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয় তার। চিরতরে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। রবিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা ব্রিক ফিল্ড রোডে বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের নিচতলায় গ্যাস লাইনে লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ৭ জনের একজন হলেন অ্যানি বড়ুয়া।

    নিহত অ্যানি পটিয়া উপজেলার উনাইনপুরার পলাশ বড়ুয়ার স্ত্রী। তার স্বামী ও দুই ছেলে অভিষেক-অভিজিৎকে নিয়ে পাথরঘাটার দুর্ঘটনা কবলিত ভবনের পাশের একটি বিল্ডিংয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন অ্যানি। স্বামী পলাশ বড়ুয়া শিকলবাহা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্র প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। বড় ছেলে অভিষেক চলতি বছরে জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এবং ছোট ছেলে অভিজিৎ ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশুনা করছেন বলে নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন।

    চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যানির ছোট ভাই অনিক বড়ুয়া জানিয়েছেন তার দিদি অ্যানি বড়ুয়া রবিবার সকালে পাথরঘাটার একটি বাসায় বিস্ফোরণের পর সড়কের পাশের দেয়াল ধ্বসে চাপা পড়ে মারা গেছেন। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার দুই ছোট ছোট ভাগ্নের কি হবে? তাদের যে আমি কোন ভাবেই বোঝাতে পারছিনা, কে থামাবে তাদের কান্না?

    অ্যানির স্বামী পলাশ হাসপাতালে স্বজনদের জড়িয়ে ধরে বিলাপ করতে করতে সংবাদ কর্মীদের বলছেন, আমার স্ত্রী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করতে সকাল থেকেই ব্যস্থতায় ছিলেন। আজ প্রথম পরীক্ষা তাই তার পড়নের শাড়িটিও আমি পছন্দ করে দিয়েছি। কিন্তু তখনও যদি জানতাম পড়নের এ শাড়িটি পড়েই আমাদের ফাঁকি দেবে তবে আমি পছন্দ করতাম না, স্কুলে পাঠাতাম না।

    পলাশ বড়ুয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরো বলেন, অন্যান্য দিনের চাইতেও আরো আগে আজ দ্রুত বাসার কাজ শেষ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার উদ্দ্যেশে ঘর থেকে বের হয়েছেন অ্যনি। পাশের ভবন বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের সামনে সহকর্মীর জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। আমিও একটু পরে বের হচ্ছিলাম। এরমধ্যে শুনি স্কুলে পৌঁছানোর আগেই গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণে বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের দেয়াল ধ্বসে সেখানেই চাপা পড়েছেন অ্যানি। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সব শেষ!

    তিনি স্বজনদের জড়িয়ে ধরে বলছেন, কে দেখবে এখন আমাদের মানিক জোরদের। কি সান্তনা দিবো আমি তাদের? এতো তাড়াতাড়ি তো তোমার চলে যাওয়ার কথা ছিলো না অ্যনি, তবে কেন কিসের এতো তাড়া ছিলো তোমার?

    উল্লেখ্য : আজ ১৭ নভেম্বর রবিবার সকাল ৯টার দিকে পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের বড়ুয়া ভবনে গ্যাস লাইন লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের পর দু’টি ভবনের দেয়ালের একাংশ ধসে পড়ে। এ ঘটনায় ৪ জন পুরুষ ২ জন মহিলাসহ ৭ জন নিহত হয়। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন আছে আরো ১০ জন। এরমধ্যে তিন জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।

    হতাহতের ঘটনার পর চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও সিএমপির উদ্ধতন কর্মকর্তা, সিডিএ কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন।

    এ ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত টিমের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া নিহতদের প্রত্যেককে ২০ হাজার এবং আহতদের চিকিৎসা সেবার ভার নিয়েছেন চসিক ও জেলা প্রশাসন।

  • সড়ক দুর্ঘটনা : ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দেওয়া হল না এএসআই রিংকনের

    সড়ক দুর্ঘটনা : ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দেওয়া হল না এএসআই রিংকনের

    নেজাম উদ্দিন রানা, রাউজান প্রতিনিধি : কর্মস্থল থেকে গত ১১ নভেম্বর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানের পূর্ব গুজরা ইউনিয়নে ছুটে এসেছিল পুলিশের সহকারি উপ পরিদর্শক (এএসআই) রিংকন বড়ুয়া। তিনদিন পরিবারের সাথে মেতেছিলেন চঞ্চলতায়।

    তিনদিনের ছুটি শেষে গত ১৩ নভেম্বর বুধবার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন নিজ কর্মস্থল কুমিল্লার চাঁন্দপুরের কচুয়া থানায়। কিন্ত বিধিবাম! কর্মস্থলে পৌঁছার পূর্বেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন টগবগে এই তরুণ পুলিশ কর্মকর্তার।

    নিহত রিংকন রাউজান উপজেলার ১০ নং পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বৃহত্তর হোঁয়ারাপাড়ার ছাদাংগরখীল গ্রামের মাহালদরের বাড়ির মৃত আশুতোষ বড়ুয়ার কনিষ্ট পুত্র। বড় ভাই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আবুধাবি প্রবাসী। ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে আসেন ভাই মিটু বড়ুয়া।

    নিহতের প্রতিবেশী বাপ্পী কুমার বড়ুয়া ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, ছুটি শেষে বুধবার নিজ কর্মস্থলে যোগদানের উদ্দেশ্যে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেন রিংকন। কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার পূর্বেই এক বন্ধুর বাসায় উঠেছিল সে।

    সেখান থেকে বন্ধুর মোটর বাইকে করে যাওয়ার পথেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় মোটরসাইকেলটিকে একটি ট্রাক লরি পেছন থেকে ধাক্কা দিলেই ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান রিংকন। তবে এই দূর্ঘটনায় রিংকনের বন্ধুটি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। রাতেই তার মৃত্যু সংবাদটি পরিবারের সদস্যদের ফোনে জানান নিজ কর্মস্থল থেকে কেউ একজন।

    এ সময় ছেলে হারানোর শোকে মা কাকলি বড়ুয়ার বিলাপে বাড়িতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতাড়না হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে স্বজনদের কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। বিকেল তিনটার দিকে স্থানীয় পূর্বরাম বিহারের মাঠ প্রাঙ্গনে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান শেষে তার লাশের সৎকার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

    স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রিংকন ছোট বেলা থেকেই ছিল সাদাসিধে স্বভাবের। ভালো ছেলে হিসেবে এলাকায় ডাকনাম ছিল তার। এস.এস সি পাশ করার পর ২০১০ সালেই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিণীতে কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। ২০১৭ সালে সহকারি উপ-পরিদর্শক পদে পদোন্নতির পর কুমিল্লার চাঁন্দপুর থানায় দায়িত্বরত ছিলেন।

  • কৃষকের মুখে হাসি : বোয়ালখালীতে আমন ধান কাটার ধুম

    কৃষকের মুখে হাসি : বোয়ালখালীতে আমন ধান কাটার ধুম

    পূজন সেন, বোয়ালখালী প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় আমন ধান কাটার ধুম পড়েছে। সোনালী ধানের ডগায় জমা শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীত আসন্ন। সন্ধ্যা হতেই চারদিকে জমাট হয়ে নামছে কুয়াশা। সারারাত ঝরা কুয়াশায় সিক্ত পাকা ধান।

    ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে দল বেঁধে কৃষকেরা কাচি নিয়ে নামছে ধান ক্ষেতে। কৃষকের পরিশ্রম আর অনুকূল আবহাওয়ায় আমনের ফলনের সম্ভাবনাকে করেছে উজ্জ্বল। কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। ঘরের গোলাভরা নতুন ধানে হবে নানান পিঠাপুলি।

    বাতাসে এখন শীতের আমেজ। গত ক’দিন ধরে বইছে উত্তুরে হাওয়া। শীতের এই ছোঁয়া কৃষকের মন-প্রাণেও দিয়েছে খুশির জোয়ার। শীতের কুয়াশা জমা শিশির বিন্দু ধানকে হৃষ্টপুষ্ট হতে সহায়তা করছে। রোপা আমনের যেসব ধান একটু বিলম্বে আসে শীতের এই কুয়াশায় ধানেও প্রাণ এনে দিয়েছে।

    ধানের ভেতরের চাল শক্ত হতে সাহায্য করছে আর পোকামাকড়ের শঙ্কাও কেটে গেছে বলে জানায় কৃষকরা। তবে গেলবার আমনের ভালো দাম না পাওয়ায় এবারও কৃষকরা কিছুটা শংকিত ন্যায মূল্য নিয়ে।

    উপজেলার কয়েকটি বিল ঘুরে দেখা গেছে, পুরোদমে কৃষকরা আমন ধান কাটায় লেগেছেন। কষ্টের ফসল ঘরে তোলার আনন্দে মাতোয়ারা। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ আমন ঘরে তুলেছে কৃষকরা। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আমন পুরোপুরি ঘরে উঠবে বলে ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে জানিয়েছেন উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গৌতম চৌধুরী।

    তিনি বলেন, আমন চাষে কৃষকদের সব ধরণের পরামর্শ সহোযোগিতা দিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। ফলে আমরা আশা অনুরূপ ফসল ঘরে তুলতে পারছি।

    শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি কফিল উদ্দীন ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, আমন চাষে কৃষকের আগ্রহ থাকলেও ধান বিক্রিতে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অনেকে চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সরকারী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি যাতে কৃষকরা চাষাবাদে আগ্রহ না হারান।

    আইপিএম সভাপতি মো. সেকান্দর ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে জানান, এবার প্রায় ৫ একর জমিতে আমন চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। তবে চাষাবাদে খরচের সাথে ফলনের সমন্বয় হচ্ছে না। সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। একই কথা জানিয়েছেন আইপিএম সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিচ বিকম, কৃষক রায়হান, আবদুল কাদের ও মো. শামসুল আলম।

    বোয়ালখালী উপজেলায় এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৫শত হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৪শত ৮০হেক্টর। প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগ না হওয়ায় এবারের আমন ধান ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ।

    তিনি ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে জানান, অতিবৃষ্টি, খরা, রোগ-বালাই তেমন একটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি কৃষকের সামনে, প্রাকৃতিক দূর্যোগ তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। এ বছর আমন চাষে ভালো ফলন হয়েছে।