Category: বিশেষ খবর

  • পরকিয়ার বলি স্বামী ও শিশু সন্তান! স্ত্রী ও শ্রমিকনেতাসহ আটক ৫

    পরকিয়ার বলি স্বামী ও শিশু সন্তান! স্ত্রী ও শ্রমিকনেতাসহ আটক ৫

    চট্টগ্রাম নগরীর নিমতলায় ৩ তলা ভবনের নিচ তলার একটি কক্ষ থেকে বাবা ও মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের একদিন না পেরুতেই খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। স্ত্রী হাছিনা আক্তারের পরকিয়ার বলি হলেন দিনমজুর স্বামী মো. আবু তাহের ও চার বছরের শিশু কণ্যা বিবি ফাতেমা।

    পুলিশ জানিয়েছে, নিহত আবু তাহেরের স্ত্রী হাছিনা আক্তারের সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের সময় তাহেরের মেয়ে বিবি ফাতেমা সব দেখে ফেলে। এসময় ঘটনাটি তার বাবা বাড়ি ফিরলে তাকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বললে কথিত প্রেমিক মাইনুদ্দিন ও হাছিনা মিলে শিশুটিকে গলায় ছুরি বসিয়ে হত্যা করে।

    কিছুক্ষন পর আবু তাহের বাড়িতে ফিরলে তাকেও দুজনে জোরপূর্বক আটকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে প্রেমিক মাইনুদ্দিন ও স্ত্রী হাছিনা বেগম।

    শনিবার স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নগরীর বন্দর থানার নিমতলা এলাকায় স্থানীয় বুচুইক্যা কলোনীর ওই বাসা থেকে বাবা মেয়ের লাশ উদ্ধারের পর স্ত্রী হাছিনা, শ্যালিকা ও ভায়রাসহ ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

    পুলিশের অভিযানে নাছিমার পরকিয়া প্রেমিক ও শ্রমিক নেতা মাইনুদ্দিন নোয়াখালি থেকে গ্রেফতার

    হাছিনার দেওয়া তথ্যে তার কথিত প্রেমিক মাহিন উদ্দিনের অবস্থান শনাক্ত করে নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতেই তাকে গ্রেফতার করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

    এর আগে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত আবু তাহেরের ভাই নুরুল আলম বাদি হয়ে তাহেরের স্ত্রী হাছিনা আক্তার ও প্রতিবেশী মাইনুদ্দীনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

    প্রেমিকাকে নিয়ে স্বামী সন্তানকে নিজ হাতে হত্যার পর শোকের আহাজারি নাটক স্ত্রী হাছিনা আত্কারের।

    জানা যায়, এলাকাবাসীর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে পরকিয়ার বিষয়টি মাথায় নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। প্রথম থেকেই তাদের ধারণা ছিলো পরকিয়ার কারণে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী হাছিনা আক্তার পরিকল্পিতভাবে স্বামী ও শিশু সন্তানকে হত্যা করেছে।

    শনিবার বিকালে একাধিক প্রতিবেশীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, হত্যাকান্ডটির মাত্র ৩দিন আগেও স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তুলুম ঝগড়া হয়েছে। স্ত্রী হাছিনা আক্তারের পরনে একটি লাল শাড়িকে গিরে স্বামী মো. আবু তাহেরের মনে সন্দেহ জাগে। এই লাল শাড়ি কে দিয়েছে, কেন দিয়েছে? এসব নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হলে স্ত্রী হাছিনার সাথে স্বামী তাহেরের তুমুল ঝগড়া শুরু হয়।

    প্রতিবেশিরা জানিয়েছে, হাছিনা মানুষের বাসায় বুয়ার কাজ করতেন। আর স্বামী আবু তাহের গুদাম শ্রমিকের কাজ করতেন। যে গুদামে তাহের শ্রমিকের কাজ করতেন সেই গুদামের শ্রমিকনেতা ছিলেন নোয়াখালির সুবর্ণচর এলাকার বাসিন্দা মাইনুদ্দিন। তার বাসাও তাহেরের পাশাপাশি হওয়ার সুবাধে মাইনুদ্দিনের সাথে হাছিনার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো।

    গত ১৭ আগস্ট হাছিনাকে একটি লাল রঙের শাড়ি উপহার দেন মাইনুদ্দিন। এ শাড়ির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়দিন ধরে আবু তাহেরের সাথে তার স্ত্রীর ঝগড়া ও পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়।

    প্রতিবেশী বিলকিস বেগম জানিয়েছে, গত ১৭ অক্টোবর ওই লাল শাড়িটি পড়ে হাছিনা বাইরে বের হতে চাইলে স্ত্রীর পড়নে নতুন লাল শাড়ি দেখে মাথা খারাপ হয়ে যায় আবু তাহেরের।

    তাহেরের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে হাছিনা এক পর্যায়ে বলেন সে যে বাসায় বুয়ার কাজ করে ওই বাসার মালিকের বউ তাকে ভালবেসে কাপড়টি উপহার দিয়েছে। কিন্তু আরিফ কথাটি বিশ্বস করতে নারাজ, সে হাছিনাকে বলে তার কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধু শাড়িটি দিয়েছে। এধরনের কথাবার্তায় দুজনের তুমুল ঝগড়া হয়। হাছিনাকে মারধরও করে তাহের।

    অপর প্রতিবেশীরা জানিয়েছে, গুদাম শ্রমিক নেতা মাইনুদ্দিন মাঝে মাঝে হাছিনার ঘরে আসতো। মাইনুদ্দিনের সাথে অনৈতিক কিছু দেখে ফেলার কারণে তাহের ও তার শিশু কন্যা খুনের শিকার হয়েছে বলে তাদের ধারণা।

    এদিকে ঘটনার পর থেকে গুদাম শ্রমিক নেতা মাইনুদ্দিন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও থানায় নিয়ে স্ত্রী হাছিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে পুলিশ মাহিনউদ্দিনের অবস্থান নিশ্চিত হয়। নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

    সিএমপির বন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. কামরুল ইসলাম শনিবার রাতে জানিয়েছেন, লাশ উদ্ধারের পর গলায় ছুরিকাঘাতের দাগ ও রক্তমাখা ছুরি উদ্ধারে প্রথম থেকেই এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ধরে নিয়েই পুলিশ এ হত্যাকান্ডের তদন্ত শুরু করে। তাই স্ত্রী হাছিনা আক্তারসহ চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।

    আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী হাছিনা আক্তার একেক সময় একেরকম তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এতে পুলিশের আরো সন্দেহ হলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পরকিয়াকে কেন্দ্র করে অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। এছাড়া স্ত্রী হাছিনা আক্তারের মোবাইল ফোনে খুনের দিন এবং এর দুইদিন আগে পর্যন্ত কাদের সাথে বেশি কথা হয়েছে তা চিহ্ণিত করে খুনের কারণ এবং খুনের অবস্থান অনেকটা নিশ্চিত হয় পুলিশ।

    বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী রবিবার সকালে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত হাছিনা আক্তারের কথিত প্রেমিক মাহিনুদ্দিনকে নোয়াখালি থেকে আটক করার তথ্যটি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রাথমিকভাকে পরকিয়ার জেরে হত্যাকান্ডটি ঘটেছে বললেও দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানায়।

    জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানা নিমতলা এলাকায় বুচুইক্যা কলোনির জনৈক শাহআলমের মালিকানাধীন ৩ তলা ভবনের নিচতলার একটি ঘরে স্ত্রী হাছিনা আক্তার ও মেয়ে বিবি ফাতেমাকে নিয়ে ভাড়ায় থাকতেন আবু তাহের। তিনি দিন মজুরের কাজ করতেন। নোয়াখালী জেলার চরপার্বতী এলাকার মো মোস্তফার ছেলে তাহেরের স্ত্রী হাছিনা আক্তার বুয়ার কাজ করতেন।

    শনিবার (১৯ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বন্দর থানাা পুলিশ ওই ভাড়া বাসা থেকে দিনমজুর আবু তাহের ও মেয়ে বিবি ফাতেমার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। দুজনের গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পায় পুলিশ। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ধারালো রক্তমাখা একটি ছুরিও উদ্ধার করে।

    এসময় স্ত্রী হাছিনা আক্তার দাবি করেন, ঘটনার দিন সকাল ৮ টার দিকে কাজে গিয়ে ৯টার দিকে এসে মেয়ে ফাতেমার লাশ খাটের উপর এবং স্বামী আবু তাহেরের লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের মাধ্যমে সে পুলিশকে খবর দেন। ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধারের পরপর হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের সাথে সিআইডির ফরেনসিক টিম, ডিবি ও পিবিআই যৌথভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করে।

  • চাঞ্চল্যকর ফখরুল হত্যার একবছর : মুল ২ আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

    চাঞ্চল্যকর ফখরুল হত্যার একবছর : মুল ২ আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

    রাউজান পৌরসভার গহিরায় প্রবাসী ফখরুল ইসলামকে শ্বশুর বাড়িতে জবাই করার আলোচিত-চাঞ্চল্যকর ঘটনার একবছর পূর্ণ হয়েছে গত ১৮ অক্টোবর। কিন্তু এই এক বছরেও এ ঘটনার মূল দুই আসামিকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

    সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই হত্যা মামলার আসামি ফখরুল ইসলামের স্ত্রী ও শাশুড়ি ধরা পড়ে দীর্ঘদিন জেল খেটে সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন। তবে এ ঘটনার দুই আসামি ধরা না পড়ায় এ মামলার মূল রহস্য এখনো রয়ে গেছে অজানা। নিহতের পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, অধরা আসামিরা ধরা পড়লেই ফখরুল হত্যার আসল রহস্য উদঘাটন হতো।

    সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় গহিরা চৌমুহনীর উত্তর পাশে জনতা ব্যাংকের পেছনের ৪ তলা বিশিষ্ট আমেরিকা প্রবাসী আবু তাহেরের বাসার ৩য় তলার ভাড়াটিয়া ঘর থেকে আগুনের ধোঁয়া বের হতে দেখলে স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত আগুন নেভাতে যান।

    স্থানীয় লোকজন আগুন নেভাতে গিয়ে বাসাটির সিঁড়িসহ ফ্লোরে রক্তের দাগ দেখে বাসার ছাদে উঠে দেখেন, গলাকাটা অবস্থায় পড়ে ছিল উম্মে হাবিবা মায়ার স্বামী ফখরুল ইসলামের রক্তাক্ত দেহ। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গহিরা জে.কে মেমোরিয়াল হাসপাতালে, পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

    চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনদিন চিকিৎসকের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ২০ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ফখরুল। ফখরুল হত্যার ঘটনায় পুলিশ তার স্ত্রী উম্মে হাবিবা মায়া ও শাশুড়ি রাশেদা আকতারকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় ফখরুল ইসলামের ছোট ভাই নুরুল ইসলাম বাদি হয়ে রাউজান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ফখরুলের স্ত্রী উম্মে হাবিবা মায়া, মা রাশেদা আকতার, খালাতো ভাই খোরশেদ (৩১), বাসার দারোয়ান মো. হালিম (৩৬)এবং আরো ৫-৬ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।

    মামলার বাদি নুরুল ইসলাম ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, ‘ভাইয়ের শাশুড়ি ও স্ত্রী গত সেপ্টেম্বর মাসে জেল থেকে জামিন নিলেও তাদের কাছ থেকে পুলিশ কোন ক্লু বের করতে পারেনি। বাকি দুই আসামি ধরা না পড়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। ভাইয়ের হত্যাকারীদের ব্যাপারে পুলিশ কোন তথ্য দিতে পারছে না। অধরা দুই আসামি ধরা পড়লে মূল রহস্য উদঘাটন হতো’।

    তিনি আরো বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে মায়ার ছাড়াছাড়ি হয় আগেই। কাবিননামার জন্য তারা ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলাও করে। পরে পৌরসভার প্যানেল মেয়র বশির উদ্দিন খানের মধ্যেস্থতায় কাবিনের টাকা নির্ধারণ করা হয় এবং আমার ভাই ফখরুলের পাসপোর্ট শাশুড়ির জিন্মায় ছিল।

    সেদিন পাসপোর্ট নিতে এবং কোর্টের কাবিননামার মামলা তুলে নেয়ার কথা বলে ভাইয়ের শাশুড়ি তাকে বাসায় ডেকে নেয় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে। এরপর ফখরুলের স্ত্রী মায়া, তার মা রাশেদা বেগম এবং বাসার দারোয়ানসহ তাদের লোকজন মিলে আমার ভাইকে জবাই করে হত্যা করে।

    নিহতের ছোট ভাই রেজাউল করিম ও নজরুল ইসলাম ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন ‘আমরা এখনো ভাই হত্যার ন্যায় বিচার পাইনি। আর কোন বাবা, মায়ের বুক যাতে খালি না হয়, সেজন্য আমাদের ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যার বিচার চাই। এজন্য প্রশাসন, এমপি ও সংশ্লিষ্ট সবার হস্তক্ষেপ কামনা করছি’।

    এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এস.আই সাইমুল ইসলাম ইভান ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, ‘ফখরুলকে কারা হত্যা করেছে, সে বিষয়টি আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। তারপরও এ ঘটনার চার্জশিট দাখিল করবো শীঘ্রই’।

    উল্লেখ্য, নিহত ফখরুল ইসলাম রাউজান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোবারকখীল এলাকার তাজুল ইসলামের পুত্র। তিনি বিয়ে করে ছিলেন গহিরা দলইনগর এলাকার প্রবাসী আবু বক্কর ওরফে বাবুলের মেয়ে উম্মে হাবিবা প্রকাশ মায়াকে।

  • অর্থ পাচারের ভয়ংকর মাধ্যম হুন্ডি! বাড়ছে পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে

    অর্থ পাচারের ভয়ংকর মাধ্যম হুন্ডি! বাড়ছে পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে

    সাম্প্রতিক সময়ে দেশে হুন্ডি ও অবৈধ পথে ডলার পাচারের ঘটনা বাড়ছে। আর এই হুন্ডি অর্থ পাচারের একটি ভয়ংকর মাধ্যম। যে মাধ্যমে অবৈধ পথে দেশের টাকা পাচার হচ্ছে। হুন্ডিতে মূলত এজেন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেন হয়। এটি পুরোপুরি চলে বিশ্বাসের ওপর। এখানে কোনো কাগজপত্রের লেনদেন হয় না।

    এ প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হওয়ায় পাচারকারীদের শনাক্ত করা খুবই কঠিন কাজ। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে টাকা স্থানান্তরে খরচও আবার তুলনামূলক কম। এ কারণেই পাচারকারীরা হুন্ডিকেই পছন্দ করে বেশি। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারে রয়েছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতিবছর টাকা পাচার হচ্ছে। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও গড়ে উঠেছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।

    বিদেশ গমন, চিকিৎসা ব্যয় মেটানো, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, বৈদেশিক কেনাকাটা থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার নানাক্ষেত্র এখন হুন্ডি ও অবৈধ ডলার পাচারের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পড়েছে। এসব টাকা হুন্ডি ব্যবসায়ীরা সোনাসহ বিভিন্ন চোরাচালানে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

    গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বেশিরভাগ মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানকে সোনা চোরাচালানে অর্থের জোগানদাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে তারা ডলার পাচার করছে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের একটি অংশ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায় হুন্ডির মাধ্যমে।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, চট্টপ্রামে বছরে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা আসে হুন্ডির মাধ্যমে। হুন্ডির ইতিহাস সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তাতে দেখা যায়, মুঘল অর্থনীতির অধীনে বিকশিত হওয়া একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থ লেনদেনপত্র হলো হুন্ডি। এটি ব্যক্তিপর্যায়ে অর্থ প্রেরণের একটি কৌশল হলেও মুঘল সাম্রাজ্যের রাজস্ব কর্মকর্তারা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে অর্থ প্রেরণের জন্য প্রায়ই হুন্ডি ব্যবহার করতেন। সে সময় মুঘল সাম্রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই হুন্ডি ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।

    হুন্ডি বলতে সাধারণত বাণিজ্য ও ঋণ লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত আর্থিক দলিলগুলোকে বোঝানো হতো। কৌশলগতভাবে বলা হয়ে থাকে, হুন্ডি বলতে এমন একটি লিখিত শর্তহীন আদেশকে বোঝানো হয়ে থাকে, যা এক ব্যক্তির নির্দেশ অনুযায়ী অন্য এক ব্যক্তি লিপিবদ্ধ করে থাকেন এবং নির্দেশনামায় উল্লেখিত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত কিছু অসৎ ব্যবসায়ী হুন্ডির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করে চলেছে।

    এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, বিশ্বের নামিদামি সব জুয়ার আসরেও দেশ থেকে টাকা যাচ্ছে হুন্ডিতে। শীর্ষস্থানীয় জুয়াড়িরা হংকং, লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্যাসিনোয় দুই হাতে টাকা ব্যয় করে যাচ্ছেন। তথ্যপ্রযুক্তি মাধ্যম ছাড়াও হুন্ডিতেও বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার করে নিচ্ছে তারা বিদেশের ক্যাসিনোয়।

    সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদ মতে, লন্ডনের গ্রসভেনর ভিক্টোরিয়া ক্যাসিনো, পাম বিচ ক্যাসিনো, ক্রকফোর্ডস, গোল্ডেন নাগেট, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো হংকংয়ের ভেনটিয়ান ম্যাকাওসহ উইন ম্যাকাও, গ্রান্ড লিসবোয়া ও স্যান্ডস ম্যাকাওয়ে জুয়াড়িদের উপস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও হতবাক হন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের দামি ক্যাসিনো লাস ভেগাসের নাভেদা, নিউজার্সির আটলান্টিক সিটি, শিকাগোর ইলিয়নস, মিশিগানের ডেটরয়েটেও বাংলাদেশি জুয়াড়িরা পাল্টা দিয়ে বড় বড় দানে জুয়া খেলেন। আর জুয়াড়িরা জুয়ার এসব টাকা নিচ্ছেন হুন্ডিতে।

    এছাড়া বিদেশি নিয়োগের নামেও দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে টাকা পাচার হচ্ছে। মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৮.৮ শতাংশ অর্থ পাচার হয়ে যায়। যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিবেচনাতে ভয়ঙ্কর।

    জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিবিদদের নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে তাদের পরামর্শক্রমে ১৯৭৪ সালে ‘ওয়েজ আর্নার্স স্কিম’ চালু করা হয় এবং তখন থেকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসার প্রবণতা বাড়তে থাকে।

    ১৯৭৪-৭৫ সালে বিদেশ থেকে প্রবাসীদের প্রেরিত মোট অর্থ ছিল ১১.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার আস্তে আস্তে সমৃদ্ধ হতে থাকে। নিজেদের বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে এবং আয়ের উৎস বের করতে বিপুলসংখ্যক মানুষ কুয়েত, মালয়েশিয়া, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, মালদ্বীপ, লিবিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতে আরম্ভ করেন। তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফলে দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসতে শুরু হয়।

    তখন কিছু বৈধ লাইসেন্সধারী বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের মাধ্যমে ব্যাংকে নিলাম পদ্ধতি চালু ছিল। প্রতিদিন নিলামে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারদর ওঠানামা করত। এতে একদিকে যেমন প্রবাসীদের বেনিফিশিয়ারিরা তাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকে নিজের হিসাবে জমা রেখে সুবিধামতো সময় বিক্রি করতে পারতেন, অন্যদিকে ব্যাংক ফ্লোরে নিলামেও বিক্রি করার সুবিধা ভোগ করতেন। এভাবে বেশি করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসার ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সমৃদ্ধ হতে থাকে।

    দেশের উন্নয়নমূলক কাজে এ মুদ্রার ব্যবহার হতো। এছাড়া বেশকিছু শিক্ষিত যুবক এ ব্যবসার মাধ্যমে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে-শান্তিতে দিন কাটাতে পারতেন। এভাবে দেখা যায়, সরকার প্রবর্তিত ‘ওয়েজ আর্নার্স স্কিম’ দেশ-বিদেশে জনপ্রিয়তা লাভ করে। মানুষের আগ্রহও ক্রমে এ স্কিমে বাড়তে থাকে। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে এক অশুভ চক্র এ সহজ প্রথার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসা কমতে থাকে। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়ে ওঠে। দেশ বঞ্চিত হতে থাকে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে।

    এক সমীক্ষা অনুযায়ী, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা দেশের ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে বিদেশে তাদের কার্যক্রম চালাতে থাকে। সহজে বাড়িতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে থাকে প্রবাসীদের। বিদেশের যেসব শহরে বাংলাদেশিদের অবস্থান বেশি, সেসব স্থানে তারা ব্যাংকের মতোই বুথ খুলে বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশিদের কাছ থেকে নিয়ে তার বিপরীতে সাংকেতিক চিহ্নসংবলিত ‘টুকা’ ইস্যু করার কাজ করে। এ টুকাই বাংলাদেশে তাদের টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদানের নিদর্শন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশিদের বেতন, ফি বাবদ প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে হুন্ডিতে পাচার হয়ে যাচ্ছে অনেক টাকা।

    দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ব্যবসায়ীর কারণে বাংলাদেশ প্রতি বছর অনেক রাজস্ব হারাচ্ছে। এ ব্যবসা দীর্ঘদিন থেকে দেশের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে চলেছে।

    হুন্ডি ও ডলার পাচারের ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত আছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়, তাদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের একান্ত প্রত্যাশা। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচারের এটি হলো খণ্ডচিত্র। এমন অসংখ্য পদ্ধতিতে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হুন্ডির মাধ্যমে যেমন পাচার হচ্ছে টাকা, তেমনি বিদেশি নাগরিকদের চাকরি দেওয়া বা কনসালটেন্ট নিয়োগের নামেও অর্থ পাচার হচ্ছে। সেকেন্ড হোমের সুবিধা নিয়েও দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। আর এসব অর্থ পাচারকারীকে দেখানো হচ্ছে ঋণখেলাপি হিসেবে।

    জানা গেছে, দেশের অন্যতম আর্থিক কেলেঙ্কারিগুলোর মধ্যে একটি হলো শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি। এর পরে রয়েছে, একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট। হলমার্ক, বেসিক ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংগুলোতে একের পর এক কেলেঙ্কারি। দেশ থেকে অর্থ পাচার ও সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভের অর্থ চুরি।

    রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যারা অর্থসম্পদ গড়েন, তারাই মূলত এ টাকা পাচার করেন। পাশাপাশি দেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ নিজেদের পরিবার এবং সন্তানদের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় দেশে না পাঠিয়ে বিদেশেই সেগুলো রেখে দিয়ে দেশ থেকে টাকা পরিশোধের মাধ্যমে, পণ্যের চোরাচালানের মাধ্যমে, নগদ আকারে বৈদেশিক মুদ্রা বা টাকা স্থানান্তর করার মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। যখন প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মীদের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। যখন প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মীদের পাঠানো অর্থে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, অর্থনীতির চাকা ঘুরছে, তখন অন্য এক শ্রেণির লোক ব্যাংক লোপাট করে, দুর্নীতি ও লুটপাট করে অর্থ পাচার করছেন, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, আমলা যারাই অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকুন না কেন, তারা দেশের অর্থনীতিকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তাদের প্রতি সদয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

    বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ পাচারকারীদের চরম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন, অনিয়ম দুর্নীতি, নৈরাজ্য বিশৃঙ্খলা দূর করে সুশাসন নিশ্চিত করণের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

    অর্থনীতিতে যে শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বিদেশে লাগামহীন অর্থ পাচারের মাধ্যমে তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে বাংলাদেশের অগ্রগতির যে ধারা সৃষ্টি হয়েছে তা মাঝ পথে থেমে যেতে পারে। দেশের টাকা দেশে থাকবে, বিনিয়োগ হবে, অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে, গতিশীল হবে অগ্রগতির চাকা, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

    এভাবে নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাচারের প্রধান একটি উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয় হুন্ডি। তাই হুন্ডি ব্যবসা বন্ধ করতে জনসাধারণের সচেতনতা বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন। পাশাপশি হুন্ডির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

    নুর মোহাম্মদ রানা

    প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, সাংবাদিক।

  • দেড়শো বছরের পুরনো হাতে লেখা পবিত্র কোরআন

    দেড়শো বছরের পুরনো হাতে লেখা পবিত্র কোরআন

    চট্টগ্রামের রাউজানে দেড়শো বছরের পুরনো হাতে লেখা পবিত্র কোরআন শরীফ সংগ্রহে রেখেছেন সৈয়দ নেছার উদ্দিন নামের এক যুবক। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের সৈয়দ আওলিয়ার বাড়ীতে।

    যুবক নেছার ২৪ ঘন্টা ডট নিউজের প্রতিনিধির সাথে আলাপচারিতায় বলেন, রাউজানের আধারমানিক গ্রামের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সাধক সৈয়দ জমির উদ্দিন ১৮৫৭ সালে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার সৈয়দ আশরাফ শাহ এবং পিতামহ হলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক সৈয়দ আহমদ আলী ওরফে সৈয়দ আউলিয়া।

    সৈয়দ জমির উদ্দিন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা হতে কোরআন, হাদিস, ফিকাহ প্রভৃতি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন শেষে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য ভারতের ইউপি রাজ্যের বেরিলি শরীফের আল্লামা শাহ আহমদ রেজা খানের পবিত্র হাতে বায়াত হয়ে কঠোর ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আলা হযরত আল্লামা শাহ আহমদ রেখা খান বেরলবীর নিকট থেকে কাদেরিয়া তরিকায় খেলাফত অর্জন করে তাঁর পীরের নির্দেশে ১৮৮০ সালের দিকে নিজ দেশে ফিরে এসে মানুষকে আধ্যাত্মিকতা শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে সৈয়দ বাড়ি জামে মসজিদ ও মসজিদ সংলগ্ন খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তৎসময়ে ছাপাখানা না থাকায় নিজহাতে পবিত্র কোরআন শরীফ লিখে এলাকার মানুষের কাছে বিতরণ করে কোরআনের শিক্ষা দিতেন।

    তার হাতের লেখা ছিল মুক্তোর মতো সুন্দর। হুবহু ছাপাখানার কোরআন শরীফের মতো দেখতে সৈয়্যদ জমির উদ্দিনের হাতে লেখা কোরআন শরীফ। এই আধ্যাত্মিক সাধক ১৭ জানুয়ারী ১৯৩০ সালে নিজগ্রামে ইন্তিকাল করেন। তার মৃত্যুর পর হাতে লেখা দুইটি কোরআন শরীফ পরিবারের কাছে সংরক্ষিত ছিলো। পরবর্তীতে হাতে লেখা একটি কোরআন শরীফ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষণের জন্য নিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ।

    সম্পর্কে আধ্যাত্মিক সাধক সৈয়দ জমির উদ্দিনের প্রপৌত্র সৈয়দ নেছার উদ্দিন ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, সৈয়দ জমির উদ্দিনের হাতে লেখা দেড়শো বছরের কাছাকাছি সময়কালের পুরনো কোরআন শরীফের মধ্যে একটি মাত্র কোরআন শরীফ তিনি সংরক্ষণ করে রেখেছেন। তার পূর্বে সৈয়্যদ সিরাজুল হক নামের বংশের একজনের কাছে এটি রক্ষিত ছিলো। পরবর্তীতে সৈয়দ নেছার এটি যত্ন করে তার কাছে রেখেছেন।

    তিনি বলেন, অনেকেই পবিত্র কোরআন শরীফটি দেখতে এসে মুক্তোর দানার মতো হাতের লেখা দেখে বিস্মিত হন। একদম অবিকল ছাপাখানার কোরআনের মতো দেখতে। তিনি বলেন, আমৃত্যু এই কোরআন শরীফটি আমার সংগ্রহে রাখার ইচ্ছে আছে। পরবর্তীতে আমার বংশের কেউ এটি সংরক্ষণ করবে।

  • এদেশে কোন বিশৃঙ্খলাকারী, সন্ত্রাসী-জঙ্গীর ঠাই হবে না-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

    এদেশে কোন বিশৃঙ্খলাকারী, সন্ত্রাসী-জঙ্গীর ঠাই হবে না-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

    সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবাজদের কোন ছাড় নেই মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, এদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর আর্দশের সু-শৃঙ্খল সোনার বাংলাদেশ। এদেশে কোন বিশৃঙ্খলাকারী,সন্ত্রাসী-জঙ্গীর ঠাই হবে না। অপরাধী সে যেই হোক তাকে ছাড় দেওয়া হবেনা বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

    বুধবার দুপুরে রামগড় নবনির্মিত থানা ও ৪তলা বিশিষ্ট ব্যারাক ভবন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও পরবর্তী জেলা পুলিশ আয়োজিত মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গাইড লাইন তৈরীর কাজ চলছে। পার্বত্য জেলায় শান্তি বজায় রাখাসহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সে সাথে জনপ্রতিনিধি,সুশীল সমাজ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের নিয়ে বৈঠকের মাধ্যকে পুলিশ ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বৃদ্ধির কাজ অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

    সে সাথে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আরো জানান, পাহাড়েও দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সমতলের মতো অভিযান অব্যাহত থাকবে। সরকার পাহাড় ও সমতলে সমান্তরাল ভাবে উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

    খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মোহা আহমার উজ্জামানের সভাপতিত্বে সমাবেশে খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সংরক্ষিত সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা ও বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম ও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকুল আলম, রামগড় পৌর মেয়র কাজী রিপন, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী,যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু,শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার,পাজেপ সদস্য পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল,জুয়েল চাকমা,শতরূপা চাকমাসহ দলীয় নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেয়।

  • পেঁয়াজের বাজারে সিন্ডিকেট কাজ করছে-ম্যাজিস্ট্রেট

    পেঁয়াজের বাজারে সিন্ডিকেট কাজ করছে-ম্যাজিস্ট্রেট

    চট্টগ্রামের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্বিতীয় দিনের মত খুচরা বাজারে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। বুধবার ১৬ অক্টোবর সকাল ১১ টায় নগরীর চৌহমুনী বাজারে অভিযান পরিচালিত হয়।

    জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরীণ আক্তার ও মাসুদ রানা দ্বিতীয় দিনের অভিযানের নের্তৃত্ব দেন। এ সময় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করার অপরাধে ৫টি দোকানকে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি বিক্রি করায় তাদের জরিমানা করা হয়।

    অভিযান শেষে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল করতে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে ম্যাজিট্রেট। পরে সেখানকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নগরীর পাহাড়তলি বাজারে অভিযান চালানো হয়।

    এর আগে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার দেশের বৃহৎ পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জে অভিযানে যায় ভ্রাম্যমান আদালত।

    অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে পেঁয়াজের বিপুল সরবরাহ রয়েছে। এরপরও আমদানি ক্রয়ের চাইতেও বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় ২টি আড়তকে চল্লিশ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়াও বিভিন্ন আড়তে পেঁয়াজ বিক্রির দর নির্ধারণ করে দেন জেলা প্রশাসন।

    নির্ধারিত দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে বুধবার ২য় দিনে খুচরা বাজারে অভিযানে নামে ভ্রাম্যমান আদালতের টিম।

    অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, ২য় দিনের অভিযানে খুচরা বাজারেও পেঁয়াজের কোন ঘাটতি দেখা যায়নি। পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে।

    বাজার মনিটরিংয়ে গিয়ে দেখা যায় সাধারণ ক্রেতাদের ঠকানোর জন্য একটি অসাধু চক্র সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। পাইকারী বাজার এবং খুচড়া বাজারে মনিটরিংয়ের পর বিষয়টি স্পষ্ট।

    তিনি বলেন, এর আগের দিন খাতুনগঞ্জে পাইকারী আড়াতদারদের মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ভারতের পেঁয়াজ কেজিতে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দর নির্ধারণ করে দিলেও খুচরা বাজারে তার কোন প্রভাবও দেখা যায়নি। বরং বাজারের বিভিন্ন দোকানে মঙ্গলবারের মূল্য তালিকায় ভারতীয় পেঁয়াজ ৮২ থেকে ৮৩ টাকা কেজি দরে এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায়।

    নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করার অপরাধে ৫টি দোকানকে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। খুচরা বাজারের প্রতিটি দোকানের পাইকারি রশিদ সংগ্রহ করে ছবি তুলে নিয়েছি।

    এছাড়া খুচরা বাজারে বিভিন্ন ব্যবসায়িদের কাছ থেকে পাওয়া তত্য সূত্র ধরেই পাইকারী বাজাওে ফের অভিযানে যাবে বললেন এ ম্যাজিস্ট্রেট।

  • কক্সবাজারে যমুনা টিভির অনুসন্ধানী টিমের উপর সন্ত্রাসী হামলা

    কক্সবাজারে যমুনা টিভির অনুসন্ধানী টিমের উপর সন্ত্রাসী হামলা

    কক্সবাজারে যমুনা টিভির অনুসন্ধানী টিম ৩৬০ ডিগ্রির সদস্যদের উপর সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার রাতে কক্সবাজারের মেয়র মুজিবুর রহমানের নতুন বাহারছড়াস্থ বাসায় স্বাক্ষাৎকার নিতে গেলে হামলার ঘটনাটি ঘটে।

    সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়েছে ৩৬০’র ক্যামেরাম্যান শাহিনুর আলম সাইফুল ও সিনিয়র প্রতিবেদক সাজ্জাদ পারভেজ। আহত টিভি সাংবাদিক শাহিনুরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক।

    মেয়রের ব্যাক্তিগত সহকারী এবি সিদ্দিক খোকন

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মেয়রের ব্যাক্তিগত সহকারী এবি সিদ্দিক খোকনের নেতৃত্বে কয়েকজন সন্ত্রাসী যমুনা টিভির সাংবাদিকদের উপর হামলা করে। তারা জানায় শুরুতে ক্যামেরম্যানকে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। পরে প্রতিবেদক সাজ্জাদ পারভেজ ঘটনাস্থলে পৌছালে তাকেও আটকে রেখে লাঞ্চিত করে সন্ত্রাসীরা।

    হামলার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে যমুনা টিভির অনুসন্ধানী টিম ৩৬০ ডিগ্রির সিনিয়র প্রতিবেদক সাজ্জাদ পারভেজ ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, রবিবার রাতে কক্সবাজারের মেয়র মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকার নিতে গেলে মেয়রের ব্যাক্তিগত সহকারী এবি সিদ্দিক খোকনের নেতৃত্বে কয়েকজন লোক তাদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায়। এক পর্যায়ে চিত্রগ্রাহক শাহিনুর ও আমার উপরে হামলা চালায়। শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করে রুমে আটকে রাখে।

    পরে বিষয়টি যমুনা টিভির অনুসন্ধানী টিম ৩৬০ ডিগ্রির গাড়ি চালক বুঝতে পারলে তিনি স্থানীয়দের সহায়তায় সেখান থেকে আহতাবস্থায় আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

    এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। ঢাকা থেকে যমুনা টিভির রেসকিউ টিম আসছে বলে জানান সিনিয়র প্রতিবেদক সাজ্জাদ পারভেজ।

  • কুমিল্লায় ব্যবসায়ী হত্যা : ৯ জনের ফাঁসি, ৪ জনের যাবজ্জীবন

    কুমিল্লায় ব্যবসায়ী হত্যা : ৯ জনের ফাঁসি, ৪ জনের যাবজ্জীবন

    কুমিল্লায় এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় নয়জনকে মৃত্যুদণ্ড, চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আদালত। সোমবার ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. আবদুল হালিম এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

    মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতরা হলেন-সজীব, হারুণ, রাজিব, শাওন, আমিন, রবু, মমিন, আবু তাহের ও মহসিন। এদের মধ্যে বর্তমানে গ্রেফতার আছেন মহসিন ও আবু তাহের। বাকি সাতজন এখনো পলাতক রয়েছে।

    একই রায়ে মতিন, শাহ পরান, শামিম ও খোকন মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এদের মধ্যে ঘটনার পর থেকেই পলাতক আছেন শামীম। এছাড়া নয়ন মিয়া, মোছলেম মিয়া ও বিলালকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। এদের মধ্যেও মামলা চলাকালীন সময়ে নয়ন মিয়া পলাতক ছিলেন।

    রায়ের বিষয়ে ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন আদালতের পিপি আইয়ুব খান। তিনি বলেন, কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ছয় বছর আগে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলার রায়ে এ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডের আদেশ দেন। অনাদায়ে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। একই রায়ে ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়ে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় আদালত তিনজনকে খালাস দিয়েছেন বলে তথ্য নিশ্চিত করেছেন পিপি।

    পিপি আইয়ুব খান ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর গ্রামে মৎস্য প্রকল্পের অংশদারীত্ব এবং ‘সমাজ’ নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের জের ধরে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে হত্যা করা হয়।

    আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর রাতে জাহাঙ্গীর আলম ওয়াজ শুনে ফেরার পথে গৌরিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া গ্রামের আবু ইউসুফের বাড়ির সামনে আসামিরা কুপিয়ে ও পিটিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা জাহাঙ্গীরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় গৌরিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

    ওই ঘটনায় জাহাঙ্গীরের বাবা ফজর আলী বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ এ মামলায় ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বও অভিযোগ গঠন করা হয়।

    দুই বছর পর মামলাটি বিচারের জন্য চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসে। ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত সোমবার এ রায় ঘোষণা করেন।

    এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মামলার বাদী ও নিহতের বাবা ফজর আলী ‘উচ্চ আদালতেও যেন এ রায়টি বহাল থাকে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।

  • বোয়ালখালীর কধুরখীল ইউপি নির্বাচন কাল, সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ

    বোয়ালখালীর কধুরখীল ইউপি নির্বাচন কাল, সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ

    চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এক টানা ভোট গ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

    আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে। নির্বাচনী এলাকায় মোটর সাইকেল ও বহিরাগতদের চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে প্রার্থী প্রচার প্রচারণা শেষ হয়েছে।

    ভোট গ্রহণের জন্য ব্যালেট পেপার, বাক্স ও নির্বাচনী সরঞ্জাম আজ রবিবার সন্ধ্যার মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছানো হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম। তিনি জানান, চেয়ারম্যান পদে ৩জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১১জন ও সদস্য পদে ৫৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

    দীর্ঘদিন পর এ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় এলাকার ভোটারদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসাহ উদ্দীপনা। তবে সংঘাত সংঘর্ষের আশংকা করছেন ভোটাররা।

    নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকে অংশ নিয়েছেন শফিউল আজম শেফু ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রেজাউল করিম খোকন এবং মোটর সাইকেল প্রতীকে আবু জাফর মোহাম্মদ মুছা।

    দলীয় প্রার্থী শফিউল আজম শেফুকে বিজয়ী করতে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে গণ সংযোগ করেছেন জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় উন্নয়নের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তারা।

    দীর্ঘদিন এ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন বিএনপি সর্মথিত মো. ইদ্রিচ। ফলে এলাকার তেমন কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি বরং অবহেলিত ছিল এ এলাকা- অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের। নৌকা বিজয়ী হলে এ এলাকার দৃশ্যপট পরিবর্তন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

    দক্ষিণজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বোরহান উদ্দীন মোহাম্মদ এমরান ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে  বলেন, আওয়ামী লীগ এক জন পরিশ্রমি সৎ প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। আশাকরি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করবে। সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এতে শঙ্কার অবকাশ নেই। এলাকার ভোটররা দীর্ঘদিনের বঞ্চনাকে মাথায় রেখে নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন।

    এদিকে গত শুক্রবার বিকেলে চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম খোকন সাংবাদিক সম্মেলনে অবাধ সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি এ সময় বলেন, নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগত লোকজন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এলাকার সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

    উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছিয়া খাতুন ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, কধুরখীল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী ৯টি কেন্দ্রেকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর ও সুষ্ঠু রাখতে কাজ করছে। ১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ও ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নির্বাচনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন।

    উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে এ ইউনিয়নে ভোটার রয়েছেন ১০,৮৪৩ জন। এরমধ্যে ৫,৫৯০ জন পুরুষ ও ৫,২৫৩ জন মহিলা ভোটার। ৯টি কেন্দ্রে ও ৩৫টি বুথে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

  • কর্ণফুলীর বর্তমান চিত্র ভয়াবহ-আর ক্ষতি হতে দেওয়ার সুযোগ নেই

    কর্ণফুলীর বর্তমান চিত্র ভয়াবহ-আর ক্ষতি হতে দেওয়ার সুযোগ নেই

    দেশের লাইফ লাইন, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ কর্ণফুলীর অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে উল্লেখ করে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, কর্ণফুলীর বর্তমান চিত্র ভয়াবহ। এভাবে যদি চলতে থাকে অদূর ভবিষ্যতে এ নদী থাকবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। এখন যে অবস্থায় আছে তা আর ক্ষতি করতে দেওয়ার সুযোগ নেই।

    শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে নগরের ফিরিঙ্গিবাজারে অভয়মিত্র ঘাটে চ্যানেল আইয়ের ২১ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে ‘দেশের অর্থনীতির হার্ট কর্ণফুলীর দখল-দূষণমুক্তসহ ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে পূর্বেও অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

    চ্যানেল আইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান চৌধুরী ফরিদের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে নদীপাড়ের দখল, পানি দূষণ, বিভিন্ন জলজ প্রাণী ও মাছের বিলুপ্তি, ভরাট, লাইটারেজ জাহাজের অলস বসে থাকা, সিলট্রেশন, নব্যতা সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানে সুপারিশ উঠে আসে।

    ভূমিমন্ত্রী আরো বলেন, সবই সরকার করে দেবে এমন নয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭-৮ শতাংশে থাকছে। রিজার্ভ বেড়েছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে ব্যাপক। এর সঙ্গে যদি আমাদের মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে না পারি তাহলে সাসটেইবেল হবে না।

    কর্ণফুলীর বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বেশি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের মধ্যে একমাত্র গড গিফটেড পোর্ট চট্টগ্রাম বন্দর। ২ হাজার ১০০ বছরের বেশি এ বন্দরের বয়স। কর্ণফুলী নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে ঘিরে সরকারের অনেক পরিকল্পনা আছে। কর্ণফুলী নদী বন্দরের ব্যবহারের বিষয় আছে।

    বন্দর চেয়ারম্যানের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, নদী রক্ষায় দ্রুত যা যা করার করতে হবে। ড্রেজিং ভেরি ইমপর্টেন্টে। এগ্রেসিভলি কাজ করেন। আমরা তো আছি। আমি চাই আপনি থাকাবস্থায় একটি ম্যানুয়াল তৈরি করে যান। যাতে সাসটেইবেল হয়। দরকার হলে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসতে হবে। বন্দরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

    বালু এখন গোল্ডের মতো হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বালুর দাম বেশি। অনেকে নানা ভাবে নদীর বালু নিয়ে যাচ্ছে। বন্দরকে দায়িত্ব নিতে হবে কর্ণফুলী নদী রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে।

    তিনি বলেন, নিজেদের ইচ্ছেমতো চলা আর ঠিক হবে না। সবাই মিলে কর্ণফুলীকে রক্ষা করতে হবে। এটি আমাদের অহংকার, আমাদের প্রাণ। এটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কর্ণফুলীর দুই পাড়ের শিল্পকারখানা সরাতে হবে। সিরিয়াসলি চিন্তা করতে হবে। না হলে হবে না। শিল্পকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

    লাইটারেজ জাহাজের যত্রতত্র পার্কিং বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সাগরের সঙ্গে এ নদীর লিংক আছে। আমাদের বাণিজ্য বাড়ছে। লাইটারেজ জাহাজ বাড়ছে। আজ থেকে ১০ বছর আগেও এত জাহাজ ছিল না নদীতে। কেন? হতে পারে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে জাহাজ আসবে নদীতে। কিন্তু পার্কিংয়ের জন্য এ নদী নয়। নেভিগেশনে সমস্যা হচ্ছে। সিলট্রেশন হচ্ছে। দূষণ হচ্ছে। বন্দর চেয়ারম্যানকে বিষয়টি কড়াভাবে দেখতে হবে। প্রয়োজনে কোস্টগার্ডের সহযোগিতা নিন।

    তিনি বলেন, হালদা নদী একটি বিস্ময়। মৌসুমে মাছ ডিম ছাড়তে আসে। আবার চলে যায়। এটা প্রাকৃতিক বিষয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে শুনেছি।

    পলিথিনের কারণে কর্ণফুলীতে ড্রেজার মেশিন অকার্যকর হয়ে যাওয়ার ছবি দেখিয়ে মন্ত্রী বলেন, পলিথিনের এই যদি অবস্থা হয়। এটা কার দায়িত্বে পড়ে। যত বেশি পারি সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

    সমন্বয়ের অভাব আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সবার সঙ্গে সবাই কথা বলে ধাপে ধাপে কাজ করলে সময় বাঁচবে, টাকা বাঁচবে। সিটি করপোরেশন বলেন সিডিএ বলেন সবাই কিন্তু সরকারের টাকা খরচ করছে। আলটিমেটলি জনগণের টাকা যাচ্ছে। প্রপার সমন্বয় থাকলে শুধু কর্ণফুলী নয়, সাসটেইনেবল সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। কর্ণফুলী নদী রক্ষায় ড্রেজিংসহ যা যা করা দরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবেন বলে জানান মন্ত্রী।

    বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, কর্ণফুলী আমাদের অস্তিত্ব। কর্ণফুলীকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। কর্ণফুলী নদী কেন, কী কারণে, কী জন্য দূষণ হচ্ছে এটি কমবেশি সবাই জানি। সবাই বুঝি। সবাই যদি যার যার অবস্থান থেকে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করলে দখল-দূষণ থেকে নদী রক্ষা পাবে।

    তিনি বলেন, আমাদের প্রতিজ্ঞা করা উচিত, নাগরিক দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করবো। তাহলে বাসযোগ্য, সাসটেইবেল সিটি ফিরে পাবো। চার বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনের তিক্ত ও ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা হচ্ছে নগরবাসীর সম্পৃক্ততা-সহযোগিতায় অনেক ঘাটতি আছে। কর্ণফুলীর জন্য বন্দরকে দায়ী করা হয়। ক্যাপিটাল ড্রেজিংতো করতে পারছে না। পলিথিনের লেয়ার জমে গেছে। কোনো মেকানিজম কাজ করছে না। তাই নাগরিকদের ভূমিকা বেশি। জনসচেতনতা প্রয়োজন।

    চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, বন্দর ও কর্ণফুলী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নদী না থাকলে বন্দর থাকবে না। ১ নম্বর জেটির নিচের দিকে নব্যতা বেড়েছে। আগে জাহাজ আসতো ৮ দশমিক ৭ মিটার ড্রাফটের। এখন জাহাজ আসে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের। কারণ আমরা ড্রেজিং করে নব্যতা বাড়িয়েছি। উপর দিকে নব্যতা বাড়াতে অনেক প্রতিবন্ধকতা। কারণ এখানে মাটিটা মাটি না, গার্বেজ। পলিথিনের উৎস বাসাবাড়ি। এটি ড্রেজিংয়ে বড় বাধা।

    তিনি বলেন, সরকারের সদিচ্ছা আছে। মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। যেখানে ৫৬টি রিকমন্ডেশন আছে। একটি চসিক, সিডিএ, ওয়াসা, ডিসি অফিস ও বন্দর মিলে মনিটরিং করবে। মূল কথা ড্রেজিং লাগবে। আমরা বিদেশি ফার্মকে দিয়ে একটি স্টাডি করাচ্ছি। কতটা সোজা করা যায় নদীকে। নদীকে সুন্দর করতে হলে কিছুটা ভাঙা লাগবে।

    সীমানার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা আছে। এখানে যেসব বিজনেস ও শিল্প আছে সেগুলো কোথায় রিলোকেটেড হবে সেই স্টাডি আমি পাইনি। তারাও আমাদের অর্থনীতির অংশ।

    দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক বলেন, পলিথিন সরকার নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু আসছে কোথা থেকে। পলিথিনের উৎস কারখানা। সেখানে বোমা মারলে উড়ে চলে যাবে। কারখানায় তালা মারলে হবে না। একেবারে উচ্ছেদ করতে হবে। আমরা আসলে উৎসটা ধরি না।

    তিনি আরো বলেন কর্ণফুলী হচ্ছে বাংলাদেশের ফুসফুস, কর্ণফুলী বাঁচাতে হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবাই মিলে এটা করবো। নিজেদের বাঁচতে হবে। নিজেদের বাঁচাতে হলে পারিপার্শ্বিক সব কিছুতে লক্ষ্য রাখতে হবে। সচেতন হতে হবে। তাহলে দেশ ও জাতি বাঁচবে।

    চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, কর্ণফুলী নদী দিয়ে দেশের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। ৪০০-৫০০ বছর আগে কর্ণফুলী ছিল কোর্ট বিল্ডিংয়ের নিচে। ক্রমে দক্ষিণে সরে এসেছে। সরকারের টাকা আছে। কর্ণফুলী বাঁচাতে যদি ৬ মিটার খনন করতে হয় তবে উন্নত ড্রেজার আনতে হবে। দেশের মানুষের মধ্যে আইন না মানা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে যাতে আইন মানে।

    চট্টগ্রাম চেম্বারের সহ-সভাপতি ও সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, বাকলিয়ায় ২০ ইঞ্চি ড্রেজার লাগানোর পর আধ ঘণ্টা পর পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। শুধু পলিথিন নয়, ফিশিং নেট, গৃহস্থালি বর্জ্যে ড্রেজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরপর চীন থেকে আনা হলো ৩২ ইঞ্চি ড্রেজার। সেটিও ব্যর্থ হলো। এরপর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জরিপ করে দেখা গেলো ৪২টি খাল দিয়ে প্রতিদিন ৮-৯ হাজার মেট্রিকটন বর্জ্য নদীতে পড়ছে।

    জোয়ার-ভাটার নদী হলে এখানে নৌযান চালানো যেত না। সিটি করপোরেশনের পানি যাচ্ছে বর্জ্যসহ। খালের মুখে বর্জ্য সার্ক করে পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থা বিশ্বের সব জায়গায় আছে। কর্ণফুলী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। কর্ণফুলী মরে গেলে পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

    অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ভূমিমন্ত্রীর বদান্যতায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার মধ্যে ২০ লাখ টাকা পেয়েছি। আরএস মূলে অবৈধ স্থাপনা আছে ২ হাজার ১১২টি, বিএস মূলে ৭৫টি। আদালতের রায়ে আরএস মূলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। ৫ দিনে ২৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ১০ একর জমি উদ্ধার করেছি। নিম্নআদালতে একটি মামলা রয়েছে। এখনো ১২টি মামলা রয়েছে। বর্তমান অর্থবছরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে ২৫ কোটি টাকা চেয়ে রেখেছি। কর্ণফুলী আপনাদের নদী। দখলদারদের তালিকা নদী কমিশনের ও জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে রয়েছে। বন্দর চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বলবো, উচ্ছেদ করা জায়গা মাস্টারপ্ল্যান করে দ্রুত শাসনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

    ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, কর্ণফুলীর সঙ্গে কাপ্তাই হ্রদের সম্পর্ক আছে। হ্রদটির নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে, সে ব্যাপারে কেউ নজর দিচ্ছি না। স্যুয়ারেজ সিস্টেম না থাকায় নগরের ৫০ হাজার স্যানিটারি ল্যাট্রিনের আড়াই হাজার টন বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এর বাইরে হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কসাইখানা, লাইটার জাহাজের বর্জ্য, পাহাড়ি বালু নদীতে পড়ছে। কর্ণফুলী ও হালদা এখনো বেঁচে আছে জোয়ার-ভাটার কারণে। কিছু দিন পর এ নদী খালে পরিণত হবে। দুর্বিষহ অবস্থা নেমে আসবে।

    বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি এমএ সালাম বলেন, কর্ণফুলী সুন্দর রাখতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। পাহাড় খেয়ে ফেলেছি আমরা। কর্ণফুলী খেয়ে ফেললে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিল্প বাড়বে, এটা বন্ধ করা যাবে না। শিল্পকে সবুজ করার জন্য ব্যবসায়ীদের কমিটমেন্ট থাকতে হবে।

    হালদা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, কর্ণফুলীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দূষণ বন্ধে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সমন্বয় জরুরি। চসিক, সিইউএফএল, কেপিএম ও ওয়াসা দূষণ বন্ধে উদ্যোগী হতে হবে। কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফেরি সার্ভিস চালু করলে নগরের অর্ধেক যানবাহন কমে যাবে।

    কর্ণফুলী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, নদীকে ব্যবসার উপাদানে পরিণত করা হয়েছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং বন্ধ মানে হচ্ছে অপারেশন থিয়েটারে রোগীর অর্ধেক অপারেশন করে ডাক্তারের চলে যাওয়ার মতো।

    আইবিএফবি’র সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব বলেন, মানুষের শরীরের নার্ভ ঠিক না থাকলে ব্যথা অনুভব হয়। পৃথিবীর নার্ভ হচ্ছে নদী, খাল, জলাশয়। কর্ণফুলী নামের সঙ্গে একটি মেয়ের কানের দুল হারানোর লোকগাথা আছে, কিন্তু এখন আমরা কর্ণফুলী নদীই হারাতে বসেছি।

    স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, কঠোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে কর্ণফুলীর দখল ও দূষণ বন্ধে। সরকার র‌্যাংগস ভবন ভেঙে সড়ক করেছে, হাতির ঝিল করেছে, নদীপাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছে। কর্ণফুলীও বাঁচাতে পারবে।

    কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, কর্ণফুলী চট্টগ্রামের নাভি। ভূমিমন্ত্রীর ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। তিনি বলেছিলেন, দখলদারদের চেয়ে সরকারের হাত অনেক বেশি লম্বা।

    মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সম্পাদক- সাংবাদিক আলীউর রাহমান। সেসময় চ্যানেল আইএর দর্শক ফোরামের সদস্য জাহেদুর রহমান সোহেল, মোহাম্মদ এনাম, আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাপক আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক এম এ মালেক, কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুখ, কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রণি, কর্ণফুলী সাম্পান মাঝি কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি পেয়ার আলী, সহ সভাপতি জাফর আহম্মদ, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, চর পাথরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান সাবের আহম্মদ, সাংস্কৃতিক সংগঠক আব্দুল হালিম দোভাষ উপস্থিত ছিলেন।

  • ফুলে-ফলে টইটুম্বুর রাউজানের প্রবাসী রানার ছাদ বাগান

    ফুলে-ফলে টইটুম্বুর রাউজানের প্রবাসী রানার ছাদ বাগান

    চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাটের পিচঢালা সড়কপথ হয়ে হাজী মীর হোসেন সওদাগর বাড়ির সংযোগ সড়ক।

    নিভৃত এই পল্লীর সরু রাস্তা দিয়ে হেঁটে কিছুদূর গেলেই চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজসমৃদ্ধ একটি নতুন দ্বি-তলবিশিষ্ট দালান। প্রধান ফটক অতিক্রম করে ভেতরে প্রবেশ করতেই আপনার মনে প্রশান্তি এনে দেবে দৃষ্টিনন্দন বাড়িটির আঙিনার চারপাশের শাকসজ্বির সবুজ দৃশ্য। শুধু সব্জির ফলন নয়, এই বাড়িটিই যেন একফালি সবুজের সমারোহে বেষ্টিত।

    ভবনটির চারপাশের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে লাগানো হয়েছে নানান জাতের ফলদ বৃক্ষ। পড়ন্ত বিকেলে বাড়িটির আশপাশ দিয়ে হেঁটে গেলে কানে ভেসে আসে পাখির কিচির-মিচির শব্দ। বাগানের গাছ আর ফলের সাথেই যেন পাখ-পাখালির গভীর মিতালি জড়িয়ে আছে। গ্রামের নিভৃত এক পল্লীতে স্বপ্নের এই ছাদবাগানটি গড়ে তোলেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী যুবক সরোয়ার রানা।

    ছাদ বাগানটি যার হাত ধরেই গড়ে উঠা মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী যুবক সরোয়ার রানা ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, আঙিনার চারপাশটা দেখলেন ঠিক আছে, চমক আরো বাকী আছে, উপরে উঠলেই বুঝতে পারবেন এদেশে ছাদ কৃষির ছোঁয়া নগর থেকে গ্রামে বিস্তৃত হয়েছে কতখানি!

    দ্বিতল ভবনের সিঁড়ি অতিক্রম করে ছাদে উঠতেই সত্যিই অবাক হতেই হলো। তিনহাজার বর্গফুটের এই বাড়িটার বিশাল ছাদজুড়ে টবে লাগানো শতাধিক ফলদ ও ঔষধী বৃক্ষ। স্ট্রবেরি চারায় থোকা থোকা স্ট্রবেরি ঝুলছে, বড় ড্রামে লাগানো আনারস চারায় সরু পাতাগুলি বিকশিত করে দিনদিন বড় হচ্ছে আনারসটি, টবে লাগানো পেস্তাবাদাম গাছে হলদে বর্ণের ফুলে মিষ্টি একটা হাসি যেন ছড়িয়ে আছে বাড়িটির ছাদজুড়ে। এ যেন বৃক্ষমেলার আদলে গড়ো উঠা এক নির্মল পরিবেশ।

    উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের হাজী মীর হোসেন সওদাগর বাড়ির হাজী জামাল উদ্দিনের নতুন বাড়ি এটি। এখনো বাড়ির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এই বাড়ির কর্তা থাকেন শহরে। পরিবারে এক ভাই-তিনবোনের মধ্যে মধ্যে একমাত্র ভাই সরোয়ার রানার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গ্রামের নিভৃত পল্লীর মাঝে দ্বিতল ভবনের বিশাল ছাদজুড়ে গড়ে উঠেছে এই দৃষ্টি নন্দন ছাদবাগান।

    ছাদবাগানটির স্বপ্নদ্রষ্টা যুবক সরোয়ার রানা আলাপকালে ২৪ ঘন্টা ডট নিউজের প্রতিনিধিকে বলেন, ২০০৪ সাল থেকে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী। তবে নিজের ব্যাবসার সুবাদে প্রবাস-আর দেশে আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকেন।

    তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি তার নিবিড় একটা টান। তখনকার সময়ে বিটিভিতে প্রচারিত শাইখ সিরাজের উপস্থাপনা ও পরিকল্পনায় কৃষি বিষয়ক ম্যাগাজিন কৃষি-দিবানিশি, পরবর্তীতে চ্যানেল আই’র পর্দায় হৃদয়ে মাঠি ও মানুষ দেখে ছাদ কৃষির প্রতি তাকে এক অদম্য নেশা পেয়ে বসে। পরবর্তীতে সেই চিন্তা মাথায় সর্বক্ষণ ঘুরপাক খেতো।

    ২০১৬ সালে এসে তিনি তার স্বপ্নপূরণে কাজ শুরু করেন। নিজের নির্মিত নতুন ভবনের ছাদকেই বেছে নেন ছাদকৃষির জন্য। প্রথমেই ছাদ কৃষি সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা না থাকায় বেশী দামে চারাগাছ কিনে তা অল্পদিনেই পরিচর্যার অভাবে চারা গাছগুলো নষ্ট হয়ে যেতো। কিন্তু ধীরে ধীনে ইন্টারনেটে সময় দিয়ে ছাদ কৃষি সম্পর্কে ধারণা নেন তিনি। এরপর শুরু হয় নব উদ্যোমে পথচলা।

    তিনি আরো বলেন, ছাদ বাগান গড়ে তোলার জন্য তিনি দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন জাতের চারাগাছ সংগ্রহ করে সেগুলো নিজের ছাদবাগানে লাগিয়েছেন। ঢাকা জাতীয় বৃক্ষমেলা থেকে শুরু করে পার্বত্য এলাকার চন্দ্রঘোনার রাইখালি, টাঙ্গাইল, হাটহাজারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তিনি চারাগাছ কিনে এনে তা নিজের বাগানে লাগিয়েছেন।

    বর্তমানে এই ছাদ বাগানের জন্য তিনি পাঁচ লক্ষ টাকার অধিক ব্যয় করেছেন। চট্টগ্রাম বাগান পরিবারসহ বিভিন্ন কৃষি বিষয়ক অনলাইন থেকে পরামর্শ নিয়ে বাগানের পরিচর্যা করেন। বর্তমানে বড়, ছোট এবং মাঝারি সাইজের ড্রাম,টবে লাগানো শতাধিক জাতের চারাগাছ ফুলে-ফলে টইটুম্বুর তার বাগানে।

    সরোয়ার রানা আরো বলেন, ছাদবাগানের ফুল আর ফলকে ঘিরে পাখির আনাগোনা বেড়েছে বাড়ির আশপাশে। ছাদবাগানে দাঁড়িয়ে পাখির কিচির-মিচির ডাক শুনে মনটা ভরে যায়। সরোয়ার রানার ছাদ বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনও ছুটে আসেন। তারা এই ছাদ বাগান দেখে নিজেরাই উৎসাহিত হয়ে তার কাছে ছাদবাগান সৃজন করার বিষয়ে পরামর্শ নেন। এখন তার দেখাদেখি এলাকা ও পাশ্ববর্তী এলাকার অনেকেই বাসা-বাড়ির ছাদে বাগান গড়ে তোলেছেন।

    তিনি বলেন, আমি আমার সাধ্যমতো সবাইকে ছাদ বাগানের বিষয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি যাতে করে ছাদ বাগানে সবাই এগিয়ে আসে।

    রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে সারোয়ার রানা নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন ছাদবাগান

    সরোয়ার রানার গড়ে তোলা ছাদ বাগান ঘুরে দেখা গেছে, তার বাগানে ফলদ গাছের মধ্যে পেঁপে, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, আঙ্গুর পেয়ারা, ভেরিকেটেড পেয়ারা, চায়না পেয়ারা, বারি-২, বারি-৩ পেয়ারা, পলি, মাধবী ও থাই পেয়ারা, আপেল কুল, নারিকেল, ডালিম, পাকিস্তানি কমলা, বেরিকেটেড কমলা,কেকোগাছ, মিষ্টি করমচা, দেশী করমচা, মিষ্টি তেঁতুল,সপেদা, আঁশফল, থাই সরিপা, আলু বুকরা, পেঁপে, থাই জামরুল,কলাগাছ, দেশী জামরুল, গোলাফজাম, থাই জাম্বুরা, জাম, বারমাসি আমড়া, কাঁটাল, আনারস, মিষ্টি কামরাঙ্গা, বারমাসি কামরাঙ্গা, জবটিকা, বারমাসি লেবু, কাগুজে লেবু, ফ্যাশন ফ্রুট, লটকন, থাই কালো জাম, দেশী জাম, আমলকি, মিষ্টি জলপাই, ইকো, মোছাম্বি, বিভিন্ন জাতের আম গাছের মধ্যে ডগমাই, এলপেনসো, ব্রুনাইকিং, হারিভাঙ্গা, সুবর্ণরেখা, বারমাসি, আম্রপালি।

    ফুলের মধ্যে বকুল, শেফালি, চম্পা, হাসনাহেনা, গোলাফ, নয়নতারা, গন্ধরাজ, কামিনী, পাতাবাহার, ক্রিসমাস ট্রিসহ আরো বেশ কিছু জাতের ফুলের চারা রয়েছে।

    সব্জির মধ্যে টমেটো, ভুট্টা, মরিচ, বেগুন, বিদেশী স্কোয়াশ, থানকুনি, রাইশাখ, বাংলা লাউ, কারিপাতা, পুদিনাপাতা, বাহারপাতা, ঔষধী গাছের মধ্যে স্বর্পগন্ধা, গাইনুরা (ডায়াবেটিকস রোগের জন্য এই গাছটি উপকারী), ক্রুসল, ক্যান্সার গাছ, বাসক, ঘৃতকুমারী, এলোবেরা, উলট কম্বল, চিরতা, তুঁত গাছসহ আরো বেশ কয়েকটি জাতের ঔষধী গাছ রয়েছে।

    সরোয়ার রানা বলেন, ছাদ বাগানটি নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। এটিকে দিনদিন কিভাবে আরো বিস্তৃত করা যায় সেটি ভাবনায় আছে তার।

    সম্পর্কে সরোয়ার রানা স্কুল জীবনের বন্ধু, বর্তমানে চাঁন্দপুরের হাইমচর থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ আলমগীর ছুটিতে ছুটে এসেছেন বন্ধু সরোয়ার রানার ছাদ বাগান দেখতে।

    এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে তিনিও বলেন, সত্যি নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হতোনা নিভৃত পল্লীতে শতাধিক জাতের বৃক্ষনিয়ে বড় ছাদ বাগান গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, সরোয়ারের এই ছাদবাগান এলাকার মানুষের মাঝে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। সরোয়ার রানার দেখাদেখি এখন অনেকেই ছাদ বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

    রাউজানে ছাদ বাগান সম্পর্কে জানতে চাইলে রাউজান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, নোয়াপাড়া গ্রামে যুবকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ছাদ বাগান গড়ে উঠেছে এটি অবশ্যই ভালো একটি উদ্যোগ। দিনদিন কৃষি জমি যেহারে হ্রাস পাচ্ছে তাতে নিজেদের বাসা-বাড়ির ছাদে সবাই যদি সাধ্যমতো ছাদ বাগান গড়ে তোলে তাহলে শাক-সব্জির চাহিদার অনেকটা যোগান সেখান থেকেই আসবে।

    তিনি আরো বলেন, ছাদবাগান আসলেই কিছুটা ব্যয়বহুল হওয়ায় গ্রামের মানুষের মাঝে এখনো তেমন একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছেনা। তবে আমরা চেষ্টা করছি, ছাদ বাগান সম্পর্কে মানুষতে উদ্বুদ্ধ করতে। এতে করে একদিকে বিষমুক্ত টাটকা সব্জির যেমন যোগান হবে তেমনি সবুজে ভরে উঠবে আমাদের চারপাশ।

  • টাকার বিনিময়ে নিজ সন্তানকে বিক্রি করলো পিতা

    টাকার বিনিময়ে নিজ সন্তানকে বিক্রি করলো পিতা

    মাথার উপর ঋনের বোঝা। ঋণ পরিশোধের চাপের মাঝেই ৫২ হাজার টাকার লোভনীয় প্রস্তাব। তাই ঋণ থেকে মুক্তি পেতে নিজের বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে কিছু টাকার জন্য নিজের ঔরসজাত সন্তানকে বিক্রী করে দিয়ে জন্মদাতা পিতা।

    সন্তানকে বিক্রি করে ক্লান্ত হননি পিতা, কখনো কখনো অভিনয়ের ছলে সন্তানের জন্য ফেলেছেন চোখের পানিও। সামাজিকতা রক্ষায় সাজিয়েছেন ছেলে নিখোঁজের নাটক। কখনো সন্তানের জন্য নিজের বউকে পাঠিয়েছেন বৈদ্য বাড়িতে। ওঝার তাবিজ দোয়ায় সন্তানের খোঁজ মেলে এই আশাতেই মা দৌঁড়ঝাঁপ করেছেন এখান থেকে ওখানে। এভাবেই কেটে গেছে টানা তিনমাস। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার সমাপ্তি ঘটে তিনমাস পর পুলিশ ছেলেটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে।

    আজ ২ অক্টোবর বুধবার দুপুরে রাউজান থানা কার্যালয়ে সাত বছরের শিশু সন্তান রাব্বিকে যখন তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তখন সেখানে আনন্দ অশ্রুতে ছলছল করে উঠে মায়ের চোখ। সিনেমার গল্পকেও হার মানানো এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে তিনমাস পূর্বে।

    শিশু রাব্বীর নিকট আত্মীয় রহিম বিন হোসেন জানান, শিশু রাব্বির পিতা কুমিল্লা নিবাসী আহসান উল্ল্যাহ পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর চাক্তাই এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। রাব্বির নানার বাড়ি মহেশখালী শাপলাপুর মিঠাখালী গ্রামে। সেখান থেকে পেশায় দিনমজুর আহসান উল্লাহর পরিচয় ঘটে রাউজানের কচুখাইন এলাকার জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তির সাথে।

    পরিচয়ের সূত্র ধরে জাকির হোসেন তার বউয়ের বড় বোন বাচু আকতারের জন্য একটি ছেলে সন্তান কেনার আগ্রহ দেখালে টাকার লোভে পড়ে আহসান উল্ল্যাহ নিজ সন্তানকে ৫২ হাজার টাকায় বিক্রী করেন। এর মাঝে পরিবারে আহসান উল্ল্যাহ তার মেয়ে নিখোঁজের কল্পকাহিনী সাজান। বাচু আকতারের সংসারে চারটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।

    টানা তিনমাস সন্তানের জন্য হণ্যে হয়ে এখানে সেখানে ছুটে বেরিয়েছেন তার মা নাছিমা আকতার। দিনে দৌঁড়ঝাপ শেষে রাতে অশ্রুচোখে নিন্দ্রাহীন চোখে তাকিয়ে থাকতেন কখন কোলে ফিরে আসবে বুকের মানিকধন। এভাবে তিনমাস অতিক্রম হওয়ার পর জাকির হোসেন রাব্বির মায়ের কাছে তার সন্তানের খবর জানিয়ে সন্তান ফেরত নিলে ৯০ হাজার টাকা দাবী করেন।

    হত-দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া নাসিমা আকতার উপায়ান্তর না দেখে অবশেষে পুলিশের শরণাপন্ন হন। নিজে স্বশরীরে রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ কেফায়েত উল্লাহর কার্যালয়ে গিয়ে ঘটনার আদোপ্যন্ত খুলে বললে ওসি বিষয়টি দেখার জন্য নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ জাভেদ মিয়াকে নির্দেশ দেন।

    ১ অক্টোবর মঙ্গলবার ফোর্স নিয়ে রাতে নগরীর দিদার মার্কেট এলাকা থেকে শিশুকে উদ্ধার করে রাউজান থানা কার্যালয়ে নাছিমা আকতারের হাতে তার সন্তানকে তুলে দেওয়া হয়। এ সময় পিতা আহসান উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। মায়ের কাছে সন্তান ফিরিয়ে দেওয়ার সময় থানা চত্বরে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

    টাকার জন্য সন্তান বিক্রীর বিষয়ে পিতা আহসান উল্ল্যাহ বলেন, ঋণের দায়ে তিনি এই কাজটি করেছেন।

    রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ কেফায়েত উল্লাহ বলেন, শিশু রাব্বিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।