Category: বিশেষ খবর

  • রাজধানীর উত্তরায় গার্ডারে চাপা : হাসপাতাল থেকে আহত নবদম্পতি ছাড়া পেয়েছেন

    রাজধানীর উত্তরায় গার্ডারে চাপা : হাসপাতাল থেকে আহত নবদম্পতি ছাড়া পেয়েছেন

    উত্তরায় বিআরটি’র নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের গার্ডারে চাপায় নিহতদের মরদেহ এখনও ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রয়েছে। একই গাড়িতে গার্ডার পড়ায় আহত নববধূ রিয়া মনি ও হৃদয়কে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া মামলার আসামি পলাতক ক্রেন চালককে ধরতে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

    তবে রিয়া মনি ও হৃদয় দুজনেই ডান পায়ে ব্যথা পেয়েছেন। তাদের কোনো ধরনের কোনো কাটাছেঁড়া বা জখম নেই বলে জানান চিকিৎসক।

    এদিকে, হৃদয়ের বাবার মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরে নেয়া হবে বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। যাদের উদাসীনতায় এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে, তাদের শাস্তি প্রার্থনা করেছেন স্বজনরা।

    গতকাল ১৫ আগস্ট (সোমবার) বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে প্রাইভেট কারের ওপর গার্ডার পড়ায় তাদের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় বের করা হয় নিহতদের মরদেহ। আহত নবদম্পতিকে নেয়া হয় হাসপাতালে। অবশ্য রাতেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তারা।

    ফায়ার সার্ভিস জানান, ত্রুটিপূর্ণ ক্রেন দিয়ে লিফটিং করা হচ্ছিল গার্ডারটি। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, উত্তরা রোডে বিআরটি প্রকল্পের উদাসীনতায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, দুর্ঘটনা তদন্তে কাজ শুরু করেছে বিআরটি থেকে করা তদন্ত দল। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন তারা।

    যেভাবে উদ্ধার হলো দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি ও পাঁচ মরদেহ :
    উত্তরার জসীম উদ্দীন সড়কে বিআরটি প্রকল্পের একটি গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের ৫ যাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন শিশু ও একজন নারী।

    এ দুর্ঘটনায় আহত হন আরও দুজন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার ৩ ঘণ্টা পর দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া প্রাইভেটকারটির ওপর থেকে সরানো হয় গার্ডারটি।

    গতকাল ১৫ আগস্ট (সোমবার) সন্ধ্যা ৭টার পর গার্ডার সরিয়ে লাশগুলো বের করে দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে।

    প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে প্রাইভেট কারের ৫ যাত্রী নিহত হন।

    তাদের মধ্যে রয়েছে দুই শিশু ও দুই নারী। এ সময় আহত হন নবদম্পতি রেজাউল করিম হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১)। তাদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

    দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন হৃদয়ের বাবা রুবেল হাসান (৫০), রিয়ার মা ফাহিমা (৪০), রিয়ার খালা ঝর্না (২৮), ঝর্নার মেয়ে জান্নাত (৬) ও ছেলে জাকারিয়া (৩)।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিআরটি প্রকল্পের জন্য নির্মিত ওই গার্ডার একটি ক্রেন দিয়ে সরানো হচ্ছিল। এ সময় গার্ডারটি হঠাৎ করেই রাস্তায় চলমান ওই প্রাইভেট কারটির ওপর পড়ে যায়।

    গার্ডারটি ক্রেন থেকে ছুটে যায়নি, বরং ক্রেনের একপাশ উল্টে যায়। ঘটনার তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে চাপাপড়া গাড়িটির ওপর থেকে সরানো হয় গার্ডারটি। এরপর গাড়ির ভেতরে থাকা লাশগুলো একে একে বের করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, দুর্ঘটনার পর গার্ডারের নিচে প্রাইভেটকারটি চাপা পড়ে থাকায় কিছুতেই মরদেহগুলো বের করতে পারছিলেন না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পরে এক্সক্যাভেটর দিয়ে গার্ডার সরিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।

    ফায়ার সার্ভিসের (ঢাকা জোন-৩) উপ-সহকারী পরিচালক সাইফুজ্জামান জানান, ১৫০ টন ওজনের গার্ডার হওয়ায় প্রথমে উদ্ধার কাজ শুরু করা যায়নি।

    পরে এক্সক্যাভেটর আনা হয়। এক্সক্যাভেটর আনতে দেরি হওয়ায় উদ্ধার কাজ বিলম্বে শুরু হয়। তিন ঘণ্টা পর এক্সক্যাভেটর দিয়ে গার্ডারটি একটু উঁচু করে প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

    এ দুর্ঘটনায় আহত হৃদয়ের চাচাতো ভাই রাকিব (১৯) জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা দুর্ঘটনার খবর পান। কিন্তু এতো সময় পরও গাড়ি থেকে মরদেহগুলো বের করতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। ভেতরে যদি কেউ বেঁচে থেকেও থাকেন তাহলে এতোক্ষণে মারা গেছেন।

    রাকিব ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, সরকার কীভাবে এভাবে এতো অব্যবস্থাপনার মধ্যে কাজ করছে? আমরা কার কাছে বিচার দিবো! আমাদের অন্তত লাশগুলো বের করে দিক। কিন্তু এখানে তো কোনো উন্নত যন্ত্রপাতিও নেই।

    ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন
    এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আক্তারকে।

    এছাড়াও কমিটিতে আরও আছেন, মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দীন খান ও ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মঞ্জুর মোরশেদ।

    ১৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) সকাল নয়টার ভেতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

    জে-আর

  • কর্ণফুলীতে জোয়ার এলেই চট্টগ্রাম মহানগরী তলিয়ে যায়

    কর্ণফুলীতে জোয়ার এলেই চট্টগ্রাম মহানগরী তলিয়ে যায়

    বন্দর নগরী চট্টগ্রামে কর্ণফুলীতে জোয়ার এলেই দিনে দুই দফা কয়েক ঘণ্টার জন্য তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর নিচু এলাকা। বৃষ্টি না হলেও বাসাবাড়ির নিচতলা, দোকানপাট ও সড়ক ডুবে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন বাসিন্দারা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বলছে, ১৭টি স্লুইচগেট নির্মাণ শেষ হলে সংকট নিরসন হবে।

    চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সিডিএ, বাকলিয়া, চাকতাই ও খাতুনগঞ্জের বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে এভাবেই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সড়কসহ সবকিছু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্কুল ও অফিসগামীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয় প্রতিনিয়ত।

    জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম খালের মুখে ৬টি স্লুইচগেট নির্মিত হচ্ছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে দুর্ভোগ কমবে বলে দাবি সিডিএ’র।

    সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, নেদারল্যান্ড থেকে আমাদের নতুন একটি স্লুইচগেট আসার কথা। ওটার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।

    সরকার যদি সেটিকে অনুমোদন দেয়, তাহলে আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই আমরা তা লাগিয়ে ফেলতে পারবো।

    জে-আর

  • গৃহিণীর গরুর খামারে সাফল্য

    গৃহিণীর গরুর খামারে সাফল্য

    পূজন সেন, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
    চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের গৃহিণী মনোয়ারা বেগম। ২০১৬ সালে ৩টি গরু নিয়ে শুরু করেন খামার। খামারে এখন ৩১টি গরু রয়েছে। উৎপাদিত হচ্ছে দৈনিক ১২০-১৩০ লিটার দুধ। প্রতি লিটার ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন মনোয়ারা। প্রতি কোরবানের ঈদে বিক্রি করেন গরু। এবারের ঈদ উপলক্ষেও বিক্রির জন্য ৬টি গরু করেছেন মোটাতাজা।

    শুরুটা হয়েছিল বাড়ির অল্প কিছু জায়গায়। এখন ৮০ শতক জায়গায় দাঁড়িয়েছে খামার। খামারের দেখাশোনার জন্য রয়েছে ৫জন কর্মচারী। গরুর খামারের সাথে সবজি চাষ, হাঁস, দেশি মুরগি ও ছাগল পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। পুকুরে করেছেন মাছের চাষ। এ খামারের নিরাপত্তায় ও সার্বক্ষণিক তদারকিতে লাগানো হয়েছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। গরুর পরিচর্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্র ও প্রযুক্তি। এ খামারের গো-খাদ্যের যোগানের জন্য আলাদা করে ৬০ শতক জমিতে লাগানো হয়েছে জার্মান ঘাস। খামারের গোবর সবজি চাষে সার হিসেবে ব্যবহার করেছে। পরিকল্পনা রয়েছে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করার।
    মনোয়ারার এ সাফল্যের পেছনে পরিবারের সদস্যদের ছিল বড় ধরণের সহযোগিতা। বিশেষ করে সরকারি চাকুরিজীবী স্বামীর অনুপ্রেরণায় তাকে এগিয়ে যেতে সাহস যুগিয়েছে।

    ৫ বছর আগে পরিবারে খাঁটি দুধের চাহিদা মেটাতে ৩টি উন্নত জাতের গাভী কিনেছিলেন মনোয়ারা। সেই থেকেই মূলত খামার গড়ার স্বপ্ন সত্যিই হতে থাকে মনোয়ারার।

    তিনি বলেন, বাড়ির আঙিনায় গোয়ালে গাভী পালন শুরু করেছিলাম। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত দুধ এলাকার মানুষজন কিনে নেন। এভাবেই বাড়তে থাকে খামারের পরিধি। পুষ্টিকর, খাঁটি ও মান সম্পন্ন খাদ্য উৎপাদনে লক্ষ্যে গড়া বলেই এ খামারের নাম দিয়েছি ‘পিওর ডেইরী ফার্ম’।

    উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে কর্মরত চিকিৎসকদের সার্বিক পরামর্শ পেয়ে আসছেন জানিয়ে মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে ও গো-খাদ্যের দাম বাড়তি থাকায় কিছুটা বিপাকে পড়তে হয়েছিল। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকার সম্প্রতি ২০ হাজার টাকা প্রণোদনা দিয়েছেন।’

    উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারী সার্জন ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন সাগর বলেন, ‘এসব উদ্যোক্তারা দেশে দুধ ও মাংসের চাহিদার এক বিশাল যোগানদাতা। ফলে দেশের চাহিদা মিঠাতে বিদেশ নির্ভর হতে হচ্ছে না।’

    মনোয়ারা বেগমের খামার দেখে এলাকার অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছেন গবাধিপশু পালনে। বোয়ালখালীতে অনেক নতুন তরুণ উদ্যোক্তা গবাধিপশুর খামার গড়তে পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

  • বোয়ালখালীতে প্রস্তুত খামারীরা, দাম নিয়ে শঙ্কা

    বোয়ালখালীতে প্রস্তুত খামারীরা, দাম নিয়ে শঙ্কা

    পূজন সেন, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :
    কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে গবাদিপশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছেন খামারীরা। তবে করোনা পরিস্থিতিতে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। ঈদের বাকি মাত্র ১৬-১৭দিন। অথচ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার গবাদিপশুর হাটগুলো শূন্য পড়ে রয়েছে।

    করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক দূরাবস্থার কারণে পশুখাদ্য ও লালনপালনে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তা পশু বিক্রি করে উঠবে কি না সেই চিন্তা জেঁকে বসেছে খামারীদের মাথায়।

    উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের গরুর খামারী মুহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘গোখাদ্যের মূল্য বেড়েছে। বাজারে ভূসি কেজি প্রতি ৪০ টাকা, সয়াবিন কেজি প্রতি ৫২ টাকা, মটরের ছোলা কেজি প্রতি ৬৫ টাকা, খৈল ৪৫ টাকা। এছাড়া প্রায় সব রকমের গোখাদ্যের দাম বাড়তি।’

    তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন ঘনিয়ে এসেছে। অথচ ক্রেতার দেখা নেই। যাও কয়েকজন এসেছে তারা যে দাম বলছেন তাতে খরচও উঠে আসবে না। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ঋণ নিয়ে ৪টি গরু মোটাতাজা করেছি। ভালো দাম না পেলে লোকসান গুণতে হবে।

    খরণদ্বীপ এলাকার মৌসুমে গরু ব্যবসায়ী মো. মিজান জানান, উত্তরবঙ্গ থেকে বোয়ালখালীতে এবার ২১টি গরু এনেছেন। আরো গরু আনার জন্য রংপুরে তার লোক অবস্থান করছে। গরুর দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও লকডাউন চলায় হাট না মিলছে না। এতে অন্যান্য খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

    বোয়ালখালীতে ৬টি গবাদিপশুর বড় হাট বসে। উপজেলার মুরাদ মুন্সির হাট, নুরুল্লাহ মুন্সির হাট, হাজীর হাট, কালাইয়ার হাট, চৌধুরী হাট ও শাকপুরা চৌমুহনী বাজার ঘুরে দেখা গেছে কোরবান উপলক্ষে গবাদিপশু বিক্রির প্রস্তুতি নেই। অনেকটাই ফাঁকা পড়ে আছে। অথচ ঈদের বাকি আর বেশিদিন নেই।

    বোয়ালখালী পৌরসভার কাউন্সিলর শেখ আরিফ উদ্দিন জুয়েল বলেন, ‘পৌরসভার মুরাদ মুন্সির হাটে পশু বিক্রি বিষয়ে এখনো প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। তবে বাজার বসানোর জন্য পৌরসভার সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। বিগত অন্যান্য বছর এ সময়ে হাটে গবাদিপশু নিয়ে আসতেন বিক্রেতারা। ক্রেতা বিক্রেতায় জমজমাট থাকতো হাট। এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।’

    উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন সাগর বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে খামারীদের সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে সরকার। তাদেরকে ইতিমধ্যে গোখাদ্য ও ১ম পর্যায়ের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো কয়েকটি ধাপে প্রণোদনা দেওয়া হবে।

    উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাশ বলেন, এবারের কোরবানির জন্য বোয়ালখালীতে ৩৮ হাজার ২৯০টি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ২৬হাজার ১০০টি, মহিষ ৪৪৫৬টি, ছাগল ৬হাজার ১২৯টি, ভেড়া ১হাজার ৬০৮টি। এছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকা থেকেও বোয়ালখালীর হাটগুলোতে এক তৃতীয়াংশ গরু নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা।

  • ১২৩ মামলায় কারাগারে ১৮৩ মাদক কারবারী : লোহাগাড়ায় ৫ মাসে ১৬ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ও ৪৩ গাড়ী উদ্ধার

    ১২৩ মামলায় কারাগারে ১৮৩ মাদক কারবারী : লোহাগাড়ায় ৫ মাসে ১৬ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ও ৪৩ গাড়ী উদ্ধার

    এ. কে. আজাদ, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) : করোনা মহামারীতেও বসে নেই মাদক কারবারীরা। নিত্য নতুন কৌশলে মাদকের চালান পাচার করে যাচ্ছে তারা। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে টেকনাফের নাফ নদী সীমান্ত পেরিয়ে সীমান্তরক্ষী ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে ঢুকে পড়ছে এসব ইয়াবার চালান। বিভিন্ন কৌশলে খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে যাচ্ছে এসব ইয়াবা। কখনো গাড়িতে, কখনো গাড়ীর বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ভেতরে, আবার কখনো মানুষের পেটে করে পাচার করা হচ্ছে ইয়াবা। চলমান প্রাণঘাতী করোনা মহামারিও থামাতে পারেনি তাদের এই পাচারকাজ।

    লোহাগাড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকের হোসাইন মাহমুদ জানান, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানা পুলিশ করোনাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মাদক উদ্ধার কার্যক্রমও অব্যাহত রেখেছে সমানতালে। এরই অংশ হিসেবে মাদক উদ্ধারে গঠিত লোহাগাড়া থানার চৌকস পুলিশ টিম অভিযান চালিয়ে চলতি ২০২১ সনের জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী, মার্চ, এপ্রিল ও মে সহ গেল ৫ মাসে ৫ লাখ ১৯ হাজার ৪৮০ পিস ইয়াবা ট্যবলেট, ১৩৪.৫০ লিটার ছোলাইমদ, ৪০০ গ্রাম গাজা উদ্ধার করেছে। পরিচালিত এসব অভিযানে ১৮৩ জন মাদক কারবারী, পাচারকারী ও সেবনকারীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে ১২৩টি। এ সময় মাদক পাচারকাজে ব্যবহার করা ৭টি মালবাহী ট্রাক, ১২টি প্রাইভেট কার, ৫টি মাইক্রোবাস, ৬টি কাভার্ডভ্যান, ১২টি মোটরসাইকেল ও ১টি পিকআপ সহ মোট ৪৩টি গাড়ী,১টি মোবাইল সেট ও নগদ ৫ হাজার ৫৪০ টাকা জব্দ করেছে।

    এছাড়াও গত ১০ মে রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পরিচালিত অভিযানে মাদক উদ্ধার করতে গিয়ে দুইটি দেশীয় তৈরী ওয়ান শুর্টার গানসহ তিন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করেছে উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন থানা পুলিশের একটি টিম।

    ওসি জাকের হোসাইন মাহমুদ আরো জানান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের নির্দেশে চলমান করোনার সংকটময় মুহূর্তেও থানা এলাকার নানা অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ, মামলা তদন্ত, নানা অভিযোগ তদন্ত, বিভিন্ন মামলার আসামী গ্রেফতার সহ নিয়মিত দায়িত্বপালনের পাশাপাশি লোহাগাড়া থানা পুলিশ মাদক পাচাররোধে কাজ করে যাচ্ছে।

    জানতে চাইলে লোহাগাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম জানান, অভিযানে গ্রেফতারকৃত মাদক কারবারী ও মাদকসেবীদের দেয়া তথ্যমতে, প্রতি পিস ইয়াবা ৩শ’ টাকা, প্রতি লিটার ছোলাইমদ ৪৫৬ টাকা ও প্রতি পুরিয়া গাজা ১শ’ টাকায় বিক্রি করা হয় বলে জানা গেছে। সে হিসাব অনুযায়ী চলতি ২০২১ সনের গেল ৫ মাসে লোহাগাড়া থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করা ৫ লাখ ১৯ হাজার ৪৮০ পিস ইয়াবার অনুমান মূল্য দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৫৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, ১৩৪.৫০ লিটার ছোলাইমদের অনুমান মূল্য দাঁড়ায় ৬১ হাজার ১০৪ টাকা এবং ৪০০ গ্রাম গাজার অনুমান মূল্য দাঁড়ায় ১২ হাজার টাকা। এছাড়াও উদ্ধার করা নগদ ৫ হাজার ৫৪০ টাকাসহ সর্ব মোট ১৫ কোটি ৫৯ লাখ ২২ হাজার ৬শ’ ৪৪ টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।

    এ প্রসঙ্গে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু বলেন, মাদক প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশ। চট্টগ্রাম দক্ষিণে লোহাগাড়া থানা পুলিশ টিম মাদক উদ্ধারে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলছেন। চলতি বছরের গেল ৫ মাসে লোহাগাড়া থানা পুলিশ বেশ ক’টি বড় চালানসহ সাড়ে ৫ লাখেরও অধিক ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারসহ ১৮৩ জন মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করেছে। তাই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে লোহাগাড়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম কিবরিয়াকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের শ্রেষ্ট মাদক উদ্ধারকারী কর্মকর্তার সম্মাননা প্রদান করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মো : আনোয়ার হোসেন বিপিএম (বার) পিপিএম (বার)। মাদকের ব্যাপারে পুলিশের জিরো টলারেন্স অবস্থান। মাদকসেবী, কারবারী ও পাচারকারী যতই প্রভাবশালী হউক কোন ছাড় নেই।

  • ফারাজ করিমের উদ্যোগ ; বিকাশ একাউন্ট খুললো ফিলিস্তিন দূতাবাস

    ফারাজ করিমের উদ্যোগ ; বিকাশ একাউন্ট খুললো ফিলিস্তিন দূতাবাস

    নেজাম উদ্দিন রানা, রাউজান প্রতিনিধি : ফিলিস্তিন জুড়ে ইসরাইলি আগ্রাসনের ফলে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিতে নিরীহ মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন তরুণ রাজনীতিবিদ ফারাজ করিম চৌধুরী। এরই প্রেক্ষিতে রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত ফিলিস্তিন দূতাবাস ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূতের সাথে যোগাযোগ করে সহযোগিতার ব্যাপারে আলোচনা করেন তিনি।

    এসময় ফিলিস্তিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী সরবরাহ করার আহবান জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে ফারাজ করিম চৌধুরী তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে সকলের সহযোগিতা কামনা করে স্ট্যাটাস দেন। তার সেই স্ট্যাটাসে নিরীহ ফিলিস্তিনি জনগণকে সাহায্য করার জন্য অসংখ্য মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রবাসী সহ অনেকেই বিকাশ নাম্বারের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জন্য মতামত দেয়। তাদের এই মতামত সম্পর্কে ফিলিস্তিন দূতাবাসকে অবহিত করেন ফারাজ করিম চৌধুরী।

    তারা বিষয়টি বিবেচনা করে সম্মতি প্রদান করেন এবং ফিলিস্তিন দূতাবাসের দুটি ফোন নাম্বারে (৪১০৮১৩৮২, ৪০১৮০৮৪১) যোগাযোগ করে বিকাশ নাম্বার সংগ্রহ করে সহযোগিতা পাঠানোর অনুরোধ জানান।

  • আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল, উপকূলবাসী ৩০ বছর পরও ভুলতে পারেনি সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি

    আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল, উপকূলবাসী ৩০ বছর পরও ভুলতে পারেনি সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি

    কামরুল ইসলাম দুলু : আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এদিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে নিহত হয় দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার জন, সর্বস্ব হারিয়েছেন এক কোটি মানুষ। চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়টি প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়।

    এতে নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের মহেশখালী ও হাতিয়া অঞ্চলের। এছাড়া আনোয়ারা, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড, চকরিয়া ও পেকুয়ার অনেক লোকজন নিহত হন। সীতাকুণ্ডে মারা যায় তিন হাজারের বেশি মানুষ। প্রায় ১০ লাখ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও কয়েক লাখ গবাদি পশুর মৃত্যু হয়।

    ‘ম্যারি এন’ নামে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় আর এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পূরো উপকূল। স্মরণকালের ভয়াবহ এ ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার। ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা আরো বেশি। মারা যায় ২০ লাখ গবাদিপশু। গৃহহারা হয় হাজার হাজার পরিবার। ক্ষতি হয়েছিল ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ। উপকূলবাসী আজও ভুলতে পারেনি সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি। শতাব্দীর প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বৃহত্তর চট্টগ্রাম এবং দেশের উপকূলীয় অঞ্চল মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয় কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। প্রলয়ঙ্করি এই ধ্বংসযজ্ঞের ৩০ বছর পার হতে চলেছে। এখনো স্বজন হারাদের আর্তনাদ থামেনি। ঘরবাড়ি হারা অনেকে মানুষ এখনো মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিতে পারেনি।ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ৩০ বছর অতিবাহিত হলেও উপকূলীয় মানুষের সুরক্ষায় নেয়া হয়নি কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। সাগরে কোনো লঘুচাপ, নিম্নচাপ কিংবা মেঘ দেখলেই আতঙ্কে চমকে ওঠেন উপকূলবাসী।

    সীতাকুণ্ড নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব লায়ন মোঃ গিয়াস উদ্দিন সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন,১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল ইতিহাসের ধ্বংসযজ্ঞ। ঘূর্ণিঝড়ের পরদিন লাশের স্তূপ জমে গিয়েছিল। শুধু মানুষ নয়, গরু-ছাগল-মহিষ আর মানুষের মৃতদেহে একাকার হয়ে গিয়েছিল সেদিন। চারিদিকে লাশ আর লাশ। কোনও রকম ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া মানুষ ও পশু মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল সেদিন। ৩০ বছর পরও সেইদিনের স্নৃতি চোখে জ্বল জ্বল করছে। এদিকে প্রতিবছরের মতো বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি স্মরণ এবং নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় নানা কর্মসূচি পালন করছে।

  • বোয়ালখালীতে নলকূপে উঠছে না পানি

    বোয়ালখালীতে নলকূপে উঠছে না পানি

    বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বেশিরভাগ নলকূপে উঠছে না পানি। ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অকেজো হয়ে পড়ছে কয়েক হাজার নলকূপ।

    নলকুপের পানি না পাওয়ায় চরম দূর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। প্রচন্ড তাপদাহে উপজেলার প্রায় এলাকার পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। পানি সংকটে অসহনীয় দূর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

    জানা গেছে উপজেলার কধুরখীল, পূর্ব গোমদন্ডী, পশ্চিম গোমদন্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী, চরণদ্বীপ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের নলকূপে পানি না উঠায় পুুকুরের পানি দিয়ে চলছে দৈনন্দিন কার্যক্রম। দুই-একটি বাড়িতে ভ্যাটিক্যাল ও সাব-মারসিবল পাম্পের মাধ্যমে পানি তোলা হচ্ছে। সেই সব বাড়ীতে সুপেয় পানির জন্য লম্বা লাইন দিচ্ছেন এলাকাবাসী।

    বোয়ালখালী পৌর এলাকার মো. শফিউল আলম, আবু সৈয়দ, তন্ময় চক্রবর্তী জানান, গত ডিসেম্বর মাস থেকে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওই সময় নলকূপে পানি দিয়ে পানি তোলা যেতো। এখন একেবারে অকেজো হয়ে পড়েছে নলকূপগুলো। আমাদের গভীর নলকূপ বসানোর অর্থ নেই।

    সারোয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, নলকূপে পানি না পাওয়ায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে অহসনীয় দূর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী।

    বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র বলেন, নিজের ঘরেও পানি নেই। পৌর এলাকার পশ্চিম গোমদ-ী ও পূর্ব গোমদ-ীর কিছু অংশে পানি সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করে বলেন, বিভিন্ন মিল কারখানায় গভীর নলকূপ স্থাপন করায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে পৌরসভা থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা মিল কারখানা কর্তৃপক্ষ মানছেন না।

    উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সুদর্শী দেওয়ান জানান, বোয়ালখালীতে বেশিরভাগ এলাকায় গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। এ বছর ২২৬টি নলকূপ বরাদ্দ এসেছে। এর মধ্যে ২০০টি নলকূপ বসানো হয়েছে। আরো বরাদ্দ আসবে। পর্যায়ক্রমে তাও বসানো হবে। এ মূহুর্তে করণীয় সর্ম্পকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

    ২৪ ঘণ্টা/পূজন

  • বোয়ালখালীতে পোপাদিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ফাটল, ঝুঁকিতে চিকিৎসা সেবা

    বোয়ালখালীতে পোপাদিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ফাটল, ঝুঁকিতে চিকিৎসা সেবা

    বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে পোপাদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

    গতকাল মঙ্গলবার সরজমিনে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভবনে অসংখ্য ফাটল। পলেস্তার খসে পড়েছে সিলিংয়ের। দরজা-জানালার ভেঙে পড়েছে। এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা প্রদান কার্যক্রম।

    জানা গেছে, অত্র এলাকার জনসাধারণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পোপাদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভবনটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। পরবর্তী সময় ২০০৪ সালে ৫লাখ টাকা ব্যয়ে তা সংস্কার করা হয়। বর্তমানে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে ব্যবহার অনুপোযোগী।

    ভবনটিতে ৭টি কক্ষ থাকলেও ১টি কক্ষে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে । এ কেন্দ্রে চিকিৎসকসহ ৬টি পদ রয়েছে। এরমধ্যে চিকিৎসকের পদে নিযুক্ত ডা. নাবিলা তাসনীম যোগদানের পর থেকেই প্রেষণে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া ১জন কমিউনিটি উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার ও ১জন আয়া দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। বাকি তিনটি পদ শূণ্য রয়েছে।

    এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত কমিউনিটি উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার সঞ্জয় কুমার শিকদার। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা না আসায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। ’

    স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভবনের পাশাপাশি আবাসিক ভবনটিরও অবস্থা নাজুক। আবাসিক ভবনটিতে বর্ষা মৌসুমে ছাদ দিয়ে কক্ষে পানি প্রবেশ করে বলে জানান তিনি।

    স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা সেবা গ্রহীতা রওনক জাহান বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। ঘরে দুয়ারের এই হাসপাতালে চিকিৎসা পাই। কিন্তু সেবা নিতে এসে ভয়ে থাকতে হয় ভবনটির ফাটল দেখে। মনে হয় যেকোনো মূর্হুতে ভেঙে পড়বে বাতাসে।’

    উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হোসেন আল মামুন বলেন, পোপাদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, বিষয়টি সর্ম্পকে অবগত নই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    ২৪ ঘণ্টা/পূজন

  • পটিয়ায় সেতু নির্মাণ কাজে দুর্ণীতির আভাস! ৩৫ লাখ টাকার গার্ডারে ফাটল

    পটিয়ায় সেতু নির্মাণ কাজে দুর্ণীতির আভাস! ৩৫ লাখ টাকার গার্ডারে ফাটল

    ২৪ ঘন্টা স্পেশাল : পঞ্চাশ কোটি ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাই পাস সংলগ্ন দ্বিতীয় ইন্দ্রপুল সেতু। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় যাতায়াতের সহজতম যোগাযোগের লক্ষ্যে পুরনো একটি ব্রিজ থাকা অবস্থায় নতুন সেতুটি নির্মিত হচ্ছে।

    তবে এ সেতুটি মানুষের উপকারে আসবে নাকি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হবে তাই নিয়ে এখন থেকেই চিন্তিত স্থানীয় এলাকাবাসী। সেতুর নির্মাণ কাজ চলমান অবস্থায় ব্রিজের জন্য নির্মিত ৭ টি গার্ডারের মধ্যে ১ টি গার্ডারে ফাটল দেখা দিয়েছে।

    প্রয়োজনের তুলনায় কম এবং নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করায় নির্মাণ কাজ চলমান অবস্থায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত গার্ডারটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।

    তাছাড়া ব্রীজ নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি ও ঠিকাদারের দুর্নীতি হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারী বাড়ানোর দাবী জানান স্থানীয়রা।

    মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সরেজমিনে ইন্দ্রপুল ব্রীজের নির্মাণ কাজের সর্বশেষ অবস্থান জানতে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন একটি ব্রিজের পাশে নতুন ব্রিজটির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

    নির্মাণকাজে নিয়োজিত একাধিক শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায় ব্রিজটির নির্মাণ কাজে মোট ২৪টি গার্ডার তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যে ৭টি গার্ডারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।

    তাছাড়া ব্রিজটির জন্য বর্তমানে তিনটি পিলার নির্মাণ কাজও শেষ। আর ৫টি গার্ডার তৈরি শেষ হলে মোট ১২টি গার্ডার বসানো হবে এ তিন পিলারের উপর। কিন্তু সোমবার সকাল ১০ টার দিকে একটি গার্ডারের লোহা টাইট দিতে গিয়ে সেটি ভেঙ্গে যায়।

    গার্ডারের ফাটল মারাত্মক জানিয়ে সেটি আর কোন কাজে আসবে না বলে জানালেন এ প্রকল্পের প্রকৌশলী তানভীর হাসান খান। ফাটল দেয়া গার্ডারটির নির্মাণে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে জানিয়ে সেটি পুনরায় নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।

    এদিয়ে এ ঘটনায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে। বিষয়টি নিয়ে নানান আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।

    অনেকেই বলেন, নির্মান কাজ চলমান থাকতেই গার্ডারের ফাটল দেখেই বুঝা যায় এখানে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া ঠিকাদারের দুর্ণীতির পাশাপাশি গাফিলতি হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।

    তবে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি করে কাজ শতভাগ ভালো হয়েছে দাবি করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রার পরিচালক জিয়াউল হক জিয়া।

    নির্মাণ কাজে কোনো ধরনের অনিয়ম কিংবা গাফিলতি হয়নি জানিয়ে গার্ডারে ফাটলের বিষয়টি তিনি অবগত নয় বললেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক। অন্যদিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।

    জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের জাইকার যৌথ অর্থায়নে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রায় ৭শ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি সেতু নির্মাণের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা-সিআর ২৪বি জয়েন্ট ভেনচার।

    এর মধ্যে পটিয়া ইন্দ্রপুল সেতুটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। যা ২০২৩ সালের নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। একই প্রকল্পের বাকি সেতুগুলো হচ্ছে চন্দনাইশ উপজেলার বরগুনি সেতু, দোহাজারী সাঙ্গু সেতু ও কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহরী সেতু।

    ২৪ ঘন্টা/রাজীব সেন প্রিন্স

  • পাল্টে যাচ্ছে উত্তর চট্টগ্রামের চিত্র; দৃশ্যমান হচ্ছে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক

    পাল্টে যাচ্ছে উত্তর চট্টগ্রামের চিত্র; দৃশ্যমান হচ্ছে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক

    ফটিকছড়ি প্রতিনিধি: আধুনিক পেপার মেশিন ঢেলে যাচ্ছে বিটুমিনযুক্ত কাচামাল। সেই মেশিন আবার চেপেও যাচ্ছে। ইট-বালির সড়ক মুহুর্তেই কালো কার্পেটিং এ পাল্টে যাচ্ছে। এমন দৃশ্য দেখা গেছে ফটিকছড়ি পৌর সদরের বিবিরহাট এলাকায়। এভাবে পাল্টে যাচ্ছে উত্তর চট্টগ্রামের চিত্র। দৃশ্যমান হচ্ছে সম্প্রসারিত হাটহাজারী-ফটিকছড়ি খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের ৩২.৫ কিলোমিটার সড়ক।

    ২০১৯ সালে শুরু হওয়া মহা সড়কের উন্নয়ন কাজটি চলতি অর্থ বছরেই শেষ হবে বলে আশা করছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

    সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ইবিবিআইপি)-এর আওতায় সড়কটির উন্নয়ন কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ও র‌্যাব আরসি লিঃ এই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করছে। প্রকল্পের অধীনে বিদ্যমান ১৮ ফুট প্রস্থের সড়কটি সম্প্রসারিত হয়ে ৩৪ ফুটে উন্নীত হচ্ছে। হাটহাজারী বাসস্টেশন জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে নাজিরহাট-ফটিকছড়ি শেষ সীমান্তে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি সীমান্ত আর্মি ক্যাম্প পর্যন্ত ৩২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কটি তিন লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। নির্মিত হচ্ছে ৩০৮ মিটারের ৩৮টি আরসিসি কালভার্ট। মোট ৪টি প্যাকেজে এ কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ এর আওতায় হাটহাজারী থেকে সরকারহাট বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়ক ও ৯টি কালভার্টের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১.৮৭ কোটি টাকা। প্যাকেজ-২ এর আওতায় সরকারহাট থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত ৮ কি. মি সড়ক ও ১৩টি কালভার্টের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭.৯৩ কোটি টাকা।

    প্যাকেজ-৩ এর আওতায় নাজিরহাট-বিবিরহাট পর্যন্ত ৮ কি. মি সড়ক ও ১১টি কালভার্টের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭.৩৬ কোটি টাকা।
    প্যাকেজ-৪ এর আওতায় বিবিরহাট-আর্মি ক্যাম্প চেকপোস্ট নয়া বাজার পর্যন্ত ৮.৫ কি.মি সড়ক ও ৫টি কালভার্টের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৩.৩১ কোটি টাকা। সড়ক-বাঁধ প্রশস্ত করতে ব্যবহার হচ্ছে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৫০৫ দশমিক ৬ ঘনমিটার মাটি।

    হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে উত্তর চট্টগ্রামের মানুষের যাতায়ত ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাগব হবে বলে মনে করছেন ফটিকছড়ি পৌরসভার মেয়র মো. ইছমাইল হোসেন।

    তিনি আরো বলেন, উত্তর চট্টগ্রামে হাটহাজারী-ফটিকছড়ি সড়কটি দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। বর্তমান সরকার সড়কটি উন্নয়ন করে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে যানজট হলে বিকল্প সড়ক হিসেবে হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি হয়ে ঢাকা এবং একই ভাবে কম সময়ের মধ্যে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি-ফটিকছড়ি-হাটহাজারী হয়ে চট্টগ্রাম যাতায়াত করা সম্ভব হবে।

    নাজিরহাট পৌরসভার মেয়র মো. সিরাজ উদ দৌল্লা বলেন, এই সড়কের উন্নয়নের ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে ফটিকছড়ি- খাগড়াছড়ির যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, মানিকছড়ি এলাকায় কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। কৃষি পণ্য পরিবহনও বাজারজাতকরণ সজহ হবে।

    ঠিকাদারী প্রতিষ্টান র‌্যাব আরসি লিঃ এর প্রকল্প ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান জানান, চারটি প্যাকেজের মধ্যে তিনটি আমাদের প্রতিষ্টান বাস্তবায়ন করছে। আমরা প্রকল্পের হিংস ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছি। কিন্তু করোনা ও লক ডাউনের কারণর আমাদের তুলনামুলক বিল দিতে পারেনি সওজ। তাই আমরা এখন জ্বরুরী অংশগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করছি।

    এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার কামাল বলেন, প্রকল্পের সব কালভার্ট শেষ হয়েছে। এখন সড়কে কার্পেটিং এর কাজ চলছে। নয়া বাজার আর্মি ক্যাম্প থেকে কার্পেটিং সম্পন্ন হয়ে এখন ফটিকছড়ি বিবিরহাট সদরে চলছে। প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ গুলো দ্রুত সম্পন্ন হলে আশা করি এই অর্থ বছরেই আমরা সড়কের কাজ শেষ করতে পারবো।

  • অনন্ত বিহারী খীসা ও জাতির পিতার সাথে তাঁর সম্পর্ক

    অনন্ত বিহারী খীসা ও জাতির পিতার সাথে তাঁর সম্পর্ক

    প্রদীপ চৌধুরী : অনন্ত বিহারী খীসা (এবি খীসা) পাহাড়ের এক নিভৃতচারী শিক্ষাবিদ। তিনযুগের অধিক শিক্ষকতার জীবন শেষ করেছেন ১৯৯৫ সনে। ১৯৩৭ সালের ৫ নভেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়ি নামক দুর্গম এক পাহাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শতাব্দী প্রাচীন খবংপর্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর পাঠশালা জীবন শুরু। পাহাড়ের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তিনি এক নেপথ্যের প্রতিভূ। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতি’র গঠন প্রক্রিয়ায় তিনি তরুণ বয়সেই শামিল হয়েছিলেন। প্রয়াত কামিনী মোহন দেওয়ান জনসমিতির নেতৃত্ব দিলেও অনন্ত বিহারী খীসার প্রণোদনায় একঝাঁক তরুণ এই প্রক্রিয়ায় রাজনীতির পাঠ নেন। একই সাথে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম ছাত্র সংগঠন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।

    অনন্ত বিহারী খীসা জানান, আমি যখন ১৯৫৩ সালে রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হই তখন কাপ্তাই বাঁধ দেয়ার জন্য পাকিস্তান সরকার গোপনে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। চট্টগ্রামের ‘কানুনগোপাড়া সরকারি স্যার আশুতোষ কলেজ’-এ পড়ার সময় পাশ্ববর্তী শ্রীপুর গ্রামে পাহাড়ি ছেলেদের একটি মেস ছিল।

    এখানে উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ কীর্তিমান মানুষ এই কলেজেই পড়তেন। ছাত্র সমিতির নেতৃত্বেই তৎকালীন সরকারের কাছে শিক্ষা সংক্রান্ত দাবি দাওয়া নিয়ে অনেকগুলি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। এই কথা স্বীকার করতেই হয়, পাকিস্তান সরকার এই সকল দাবি দাওয়ার খোঁজ খবর নিতেন না। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান ‘মার্শাল-ল’ জারি করলে এই সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ন দলিলপত্র হারিয়ে যায়। যখন কাপ্তাই বাঁধ হয় সেই ১৯৬০ সালেই অনন্ত বিহারী খীসা খাগড়াছড়ি হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। যদিওবা ১৯৫৮ সালেই বিপুলেশ্বর চাকমার (পন্ডিত স্যার) নেতৃত্বে স্কুল যাত্রা শুরু করে। এই সময় অশোক কুমার দেওয়ান, নবীন কুমার ত্রিপুরা এই স্কুলে শিক্ষক ছিলেন।

    কাপ্তাই বাঁধ প্রসঙ্গে অনন্ত বিহারী খীসা বলেন, এটি একটি জীবন্ত মরণ ফাঁদ। আজকের এই দিনে পৃথিবীর যেকোন জায়গায় এরকম একটি বাঁধ হলে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন দানা বাঁধতো। আবেগ আপ্লুত হয়ে তিনি জানান, কাপ্তাই বাঁধের ফলে এক লক্ষ চাকমা উদ্ধাস্তু হয়ে ভারত পালিয়েছে। চুয়ান্ন হাজার একর উর্বর ভূমি পানির নিচে ডুবে গেছে। সে সময় সবচেয়ে ভাল জমির একর প্রতি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল মাত্র ৬’শ টাকা। এ যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানায়।

    অনন্ত বিহারী খীসা কাপ্তাই বাঁধ চলাকালীন সময়ের জেলা প্রশাসক ছিদ্দিকুর রহমানের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন – তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কাছে আঠাশ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলাম। কিন্তু সরকার দিয়েছিল মাত্র এক কোটি ছিয়ানব্বই লক্ষ টাকা।

    ছিদ্দিকুর রহমান লিখেন, জনচাপে আমি সরকারের কাছে আরও কিছু টাকা বরাদ্দের আবেদন জানালে সরকারের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয় “ওরা জঙ্গলী লোক। জঙ্গলের ঘাস, লতা-পাতা আর আলু খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারবে।”

    অনন্ত বিহারী খীসা সত্তরোর্ধ্ব বয়সেও কাপ্তাই বাঁধের বেদনাময় স্মৃতি ভুলতে পারেননি। তিনি স্বীকার করেন, কাপ্তাই বাঁধের ফলে অনেক দুর্গম এলাকায় রাতারাতি নৌ যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সর্বহারা চাকমাদের মাঝে শিক্ষার প্রতি অদম্য এক স্পৃহা জেগে উঠে। এই সময় পাকিস্তান সরকার বাঁধে ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বরাদ্দ দেন।

    অনন্ত বিহারী খীসা কাপ্তাই বাঁধের পরিবেশগত বিপর্যয় সম্পর্কে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ন একটি প্রাকৃতিক সূতিকাগার ছিল। রাতারাতি বাঁধ দিয়ে এই অঞ্চলের হাজার বছরের ভৌগলিক-প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিনষ্ট করে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হল। তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের কত শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছে। যাদের চোখের লোনা জলে কাপ্তাই বাঁধ হয়েছে সেসব অবুঝ মানুষদের কয়জন বংশধর বিদ্যুৎ প্রকল্পে চাকরি পেয়েছে।

    এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যে প্রতিবাদ করিনি তা নয়। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (প্রয়াত সংসদ সদস্য এমএন লারমা) সেই সময় প্রতিবাদ করার কারণে গ্রেফতার হন। মূলত চাকমাদের সামন্ত শ্রেণী পরোক্ষভাবে পাকিস্তান সরকারের অনুকম্পাকামী হওয়ায় সাধারণ মানুষের সংগঠিত প্রতিবাদ সূচিত হতে পারেনি।

    তিনি বলেন, এখন সমতলের মানুষের যতবেশী পার্বত্য অঞ্চলের খোঁজ-খবর রাখেন তখন এটা কল্পনা করা যেতনা। আমাদের যাঁরা প্রবীণ মানুষ ছিলেন তাঁরা প্রস্তাব করেছিলেন বাঁধটি আরো নীচে দিলে ক্ষয়ক্ষতি কম হত। কিন্তু তা হয়নি। সে সময়ে পাহাড়িদের সচেতন অংশ এই বাঁধ দেয়ার উদ্যোগটিকে পাহাড়ি উচ্ছেদের অংশ বলেই ধরে নিয়েছিল।

    কাপ্তাই বাঁধ নির্মানে আমেরিকান দাতা সংস্থা ‘ইউএসএইড’-এর অর্থায়ন প্রসঙ্গে বলেন, তারা অবশ্যই পরোক্ষভাবে দায়ী। তবে মূলদোষী পাকিস্তান সরকারই। তিনি দৃঢ়তার সাথে মত ব্যক্ত করেন, কাপ্তাই বাঁধের মধ্য দিয়ে পাহাড়িদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার সম্পর্কে বড় রকমের জানান হয়েছে।

    অনন্ত বিহারী খীসা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে গ্রেফতার হন। এই সম্পর্কে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাহাড়ে বিশেষত চাকমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করার একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায়। দেশ স্বাধীনের আগে আগে মুক্তিবাহিনী পানছড়ি, জোরমরম, ভাইবোনছড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এবং পাকিস্তানপন্থি আখ্যা দিয়ে চাকমাদের উপর ব্যাপক গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যায় পৈশাচিকতার মাত্রা এত ভয়াবহ ছিল যে আহত লোকজন হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি হওয়ার সাহস করেনি। গোপনে এসকল মূমুর্ষ মানুষদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার অভিযোগে আমাকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটানো হয়েছে। অনেকটা জনপ্রতিক্রিয়ার চাপেই আমাকে মুক্তি দিতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন চাকমাদের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, চাকমাদের রাজনৈতিক সচেতন অংশ গোড়া থেকেই পাকিস্তান বিরোধী দলে ছিল। এমনকি ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময়ও রাঙামাটিতে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসমিতি ১৯৪৯-৫০ সালেও কামিনী মোহন দেওয়ান এবং স্নেহ কুমার চাকমা’র নেতৃত্বে পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন করেছিলেন। এখানে সবার জানা থাকার কথা যে চাকমা ও বোমাং রাজপরিবার পাকিস্তানমুখী ছিলেন। তখন সাধারণ পাহাড়িদের মাঝে রাজপরিবারগুলোর ব্যাপক প্রভাব ছিল। অনেকটা রূপকথার রাজার মত।

    চাকমাদের ব্যাপক অংশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী ছিলেন সাইদুর রহমান নামের এক পাহাড়ি বিদ্বেষী মানুষ। যদিওবা চারু কুমার চাকমা নামে মাত্র ঐ কমিটির সভাপতি ছিলেন। এই সময় রাঙ্গামাটির ডিসি ছিলেন হোসেন তৌফিক ইমাম প্রকাশ এইচ টি ইমাম। চাকমা তরুণদের বেশ কয়েকটি গ্রুপ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ট্রেনিংএ যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে সাইদুর রহমান এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বিদায় দেয়া হয়। এমনকি রাজা ত্রিদিব চন্দ্র রায়ের নাম ধরে বলেন, চাকমারা মুসলিম লীগের দালাল। প্রথম প্রথম রাজা ত্রিদিব রায়ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই ছিলেন বলে মত প্রকাশ করেন অনন্ত বিহারী খীসা। যথাযথ সম্মানবোধের অভাবেই এই দূরত্ব তৈরী হয়েছে।

    অনন্ত বিহারী খীসা উল্লেখ করেন, চাকমা সমাজের সামন্ত শ্রেণীর আত্ম-সম্মান তখন খুব প্রবল ছিল। এক পর্যায়ে পাকিস্তান আর্মিকে রাঙ্গামাটিতে রাজা ত্রিদিব রায় স্বাগত জানালে চাকমাদের বিপুল অংশ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি নিস্পৃহ হয়ে উঠে এবং রাজা নিজে ‘জাতিসংঘ মিশন’-এ পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন।

    মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতি দাবি জানান তৎকালীন সংসদ সদস্য এম এন লারমা। একই সাথে চারু কুমার চাকমার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে বেশ কিছু দাবি দাওয়া তুলে ধরা হয়। এরকম একটা প্রতিনিধি দলে আমিও (অনন্ত বিহারী খীসা) ছিলাম কিন্তু সংসদে এবং সংসদের বাইরে এইসব দাবিকে প্রত্যাখান করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের সামনেই এমএন লারমা ও চারু কুমার চাকমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘আমি কাউকে পৃথক করার চিন্তা করছি না। আমি পাহাড়ি-বাঙালি সকলকে সমানভাবে দেখার স্বপ্ন দেখছি’।

    অনন্ত বিহারী খীসা জানান, এই সময়ে আমরা একটি স্বতন্ত্র আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন বোধ করি। আমার বাসায় বেশ কয়েকটি বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আমরা জাতীয় রাজনীতিতেও সমানভাবে অংশ নেব। দেশ স্বাধীনের একটু আগে আমাকে সভাপতি এবং সন্তু লারমাকে সম্পাদক করে ‘ট্রাইবেল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন’ গঠনের পর সবাই দ্রুত দল গঠনে মনোযোগ দেন। ‘৭২ সালের কোন এক দিনের রাঙ্গামাটির ইন্দ্রপুরী সিনেমা হলে পাহাড়ের বিশিষ্টজনদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। সে সময় নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তরুণদের একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই গোপনে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল।

    অনন্ত বিহারী খীসা মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে পাহাড়িদের উপর পাহাড়ি রাজাকারদের অত্যাচার দমন ও পাড়ায় পাড়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সংগঠিত তরুণরাই পরবর্তীতে সময়ের প্রয়োজনে শান্তিবাহিনীরূপে আবির্ভূত হয়।

    বাকশাল- এ যোগদান প্রসঙ্গে অনন্ত বিহারী খীসা বলেন, ‘বাংলাদেশের তৎকালীন বাস্তবতায় বাকশালের প্রয়োজনীয়তা ছিল’। হঠাৎ খবর এলো এনএম লারমা বাকশালে যোগ দিয়েছেন। তিনিই আমাকে বাকশালে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান- ‘শেখ মুজিব আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন, আমি আগে তোমাদের সম্পর্কে ভুল জেনেছি। আমি তোমাদের জন্য কিছু করতে চাই।’

    অনন্ত বিহারী খীসা আরও বলেন, একদিন হঠাৎ করেই খবর এলো মং রাজা মং প্রু সাইন খাগড়াছড়ির গভর্নর আর আমি বাকশালের সেক্রেটারি মনোনীত হয়েছি। তার একদিন পরেই খাগড়াছড়ির এসডিও স্কুলেই আমাকে সংবর্ধিত করলেন। এই সময়ে ছাত্ররা বাধ সাধল আমি যেন স্কুল ছেড়ে না যাই। তখন আমি ছাত্রদের আশ^স্ত করে বলি, যদি শিক্ষকতা ছেড়ে দিতে হয় তাহলে আমি বাকশাল ছেড়ে দেব। অনন্ত বিহারী খীসা পঁচাত্তর পরবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, এটি একটি রক্তাক্ত সময়। বিপুল পরিমাণ সমতলের দরিদ্র বাংলাভাষিকে পাহাড়ে পুর্নবাসন করা হয়। যা এখনও পর্যন্ত অব্যাহত আছে।

    তিনি প্রখ্যাত সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, জনসংখ্যা দিয়ে স্বল্প জনসংখ্যাকে নিঃশেষ করার এমন জঘন্য ঘটনা একমাত্র বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামেই ঘটেছে। পৃথিবীতে ঈসরাইল ছাড়া আর কোথাও এর নজির পাওয়া যাবেনা। অনন্ত বিহারী খীসা মিজোরামসহ ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে চলমান বিদ্রোহ দমনেও এরকম ‘এথেনটিক ক্লিনজিং পলিসি’ নেওয়া হয়নি বলে মত দেন।

    তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসা বাংলা ভাষীদের প্রসঙ্গে বলেন, বিভিন্ন প্রলোভণ দেখিয়ে সরকার তাঁদের নিয়ে আসলেও তাঁদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। তাঁরা এখনও অসহায়। শুধুমাত্র রেশন দিয়ে এত দীর্ঘ সময় এরকম জনগোষ্ঠীকে পালনের উদাহরণও একমাত্র বাংলাদেশেই হয়েছে। তিনি মনে করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার দরিদ্র পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সাথে দরিদ্র বাংলাভাষীদের সংঘাত লাগিয়ে দিয়ে প্রকৃত সমস্যাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।

    তিনি ১৯৮৯ সালে গঠিত ‘স্থানীয় সরকার পরিষদ (বর্তমানে পার্বত্য জেলা পরিষদ) প্রসঙ্গে বলেন, পরিষদ গঠন প্রক্রিয়ায় আমি প্রথম দিকে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম, এই পরিষদ গঠন প্রক্রিয়ায় কোন স্বাধীন মতামত দেওয়া যাচ্ছিলনা তখন আমি নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ি। অন্য এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৎকালীন ব্রিগেড কমান্ডার সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম আমার উপর খুবই রুষ্ট হয়েছিলেন।

    পার্বত্য চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চুক্তির পরে অনেক কিছুই হওয়ার কথা ছিল। আশা করেছিলাম অনেক সমস্যার উত্তরণ ঘটবে। চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় একযুগপূর্তি হলেও মনে হচ্ছে যেন, পরিস্থিতি এখন চুক্তির আগের চেয়েও খারাপ। আশাবাদী হওয়ার মত কিছুইতো ঘটেইনি বরং যারা জীবনের মূল্যবান সময়গুলো যুদ্ধে অতিবাহিত করেছেন তাঁদের অনেকেই আজ হতাশ। তবে পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন হলে তিনি খারাপ কিছু দেখেন না বলে মত ব্যক্ত করেন।

    পার্বত্য অঞ্চলের দুই আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ-এর মধ্যকার রক্তাক্ত হানাহানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অস্ত্রের ভাষায় কোন রাজনীতি হতে পারে না। আমি গোড়া থেকেই আত্মঘাতী সংঘাতের বিপক্ষে। মূলত সরকার পাহাড়ে সশস্ত্র সংঘাত দমনের সূত্র ধরেই সমতলের মানুষদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পাহাড়ে নিয়ে এসেছেন।

    তিনি এখনও মনে করেন, যেকোন ধরনের অস্ত্র নির্ভর রাজনীতি পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ-এর ঐক্য কামনা করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ হানাহানির ফলে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। গত দশ বছরে পাঁচ শতাধিক মানুষ একে অপরের হাতে নিহত হয়েছে। প্রতিবন্ধী হয়েছে অনেকেই। ঘর-বাড়ি পোড়ানো, উদ্ধাস্তু হওয়া আর জীবনের অনিশ্চয়তা পাহাড়িদের জীবন আজ বিপর্যস্ত।

    তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকেই ঐক্যের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সে প্রক্রিয়ায় প্রয়াত এমপি উপেন্দ্র লাল চাকমা ও প্রয়াত শিক্ষাবিদ নবীন কুমার ত্রিপুরাও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অন্তত দুটি রাজনৈতিক দল ইস্যুভিত্তিক ঐক্য ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে এক হলে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ উপকৃত হবে।

    বাংলাদেশের সার্বিক রাজনীতি ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভালো মানুষরা এখন রাজনীতিতে অসহায়। এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে সৎ, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল মানুষদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য এখন জরুরী। তিনি সর্বশেষ মন্তব্য করেন, জীবন আমাদের নয়। সাংবাদিক কুররাতুল আইন তাহমিনার একটা উদ্ধৃতিই পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য সময় উপযোগী মনে করেন অনন্ত বিহারী খীসা। আর সেই প্রিয় উক্তিটি তিনি উচ্চারণ করেন এভাবে, “বলির পাঁঠা যার- তাঁকে লেজে কাটা আর মুড়োই কাটার সার্বিক অধিকার তারই আছে।”

    (সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়েছে বিগত ২০০৮ সালের মাঝামাঝি। এটি কিছু অংশ ওই সময়ে মঈনুল আহসান সাহেবের সম্পাদিত জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ২০০০ নামক পত্রিকায় আংশিক প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস ও সমকালীন বাস্তবতায় সাক্ষাৎকারটি গুরুত্ব এখানে বিদ্যমান। পাঠমনস্ক পাঠকদের কথা মাথায় রেখে কিছু অপ্রিয় সত্য উহ্য রেখে এটি আবারও পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশ করা হলো। আশা করি এটি ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠবে।)

    প্রদীপ চৌধুরী: সভাপতি, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে/ রেজি: নং- চট্ট ২৮০৮)