Category: বিশেষ খবর

  • লক্ষ্মীপুরে শীতার্ত মানুষের খোঁজে ওসি

    লক্ষ্মীপুরে শীতার্ত মানুষের খোঁজে ওসি

    অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করে গভীর রাতে শীতার্ত মানুষকে খুঁজে কম্বল বিতরণ করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।

    লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে গভীর রাতে ছিন্নমূল ও শীতার্ত মানুষ খুঁজে তাদের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেন থানার ওসি আবদুল জলিল। রবিবার দিবাগত রাতে পৌর শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে শীতার্তদের মাঝে বেশকিছু কম্বল বিতরণ করেন তিনি।

    শীতে ছিন্নমূল ও শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ এবং কষ্টের কথা চিন্তা করে নিজ উদ্যোগে শহরের বাসষ্ট্যান্ড, মহিলা কলেজ মোড়, সরকারি হাসপাতাল এলাকা, মুড়ি হাটা, নতুন বাজার, পৌর কার্যালয়ের সামনে, পেট্রোলপাম্প এলাকায় ঘুরে ঘুরে ছিন্নমূল ও শীতার্ত মানুষের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেন রায়পুর থানার ওসি আবদুল জলিল। এ সময় তার সাথে থানার পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

    ওসি আবদুল জলিল বলেন-‘ছিন্নমূল ও শীতার্ত মানুষের দূর্ভোগ ও কষ্টের কথা চিন্তা করে বিবেকের তাড়নায় গত কয়েক রাতে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পথে ঘাটে শুয়ে থাকা বেশ কিছু মানুষকে কম্বল দিয়েছি।’

    এসময় তিনি সমাজের বিত্তবানদেরকেও অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

    এছাড়াও ওসি আবদুল জলিল রায়পুরে যোগদানের পর থেকে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন মানবিক কাজের জন্য ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন।

    এ প্রতিবেদককে সাথে আলাপকালে তিনি বলেন-‘আমি চাই কোন অসহায় মানুষ যেন এই শীতে কষ্ট না পায়। সাধ্য থাকলে আমি কম্বল বিতরণ এর কার্যক্রম অব্যাহত রাখতাম।’ তবে ভবিষ্যতে কিছু ভিন্নধর্মী চিন্তাভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন।

  • জনগণের ভরসাস্থলে পরিণত হচ্ছে কর্ণফুলীর তিন পুলিশ ফাঁড়ি

    জনগণের ভরসাস্থলে পরিণত হচ্ছে কর্ণফুলীর তিন পুলিশ ফাঁড়ি

    বিশেষ প্রতিনিধি : সঙ্কটে ‘জনগণের বন্ধু’ পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় কর্ণফুলী থানাধীন তেইশ স্পটের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে মানুষের সেবায় অবদান রাখছেন তিন পুলিশ ফাঁড়ি-শাহমীরপুর, শিকলবাহা ও বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি। থানা থেকে ২৩ কিলোমিটার দুরে বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি, ১২ কিলোমিটার দুরে শাহমীরপুর ও অদূরে ইন্ডাস্ট্রিল ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা শিকলবাহায় সীমিত লোকবল নিয়ে চলছে তিন পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম।

    যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ফাঁড়ি পুলিশকেও পালন করতে হয় চেকপোষ্টসহ আরো গুরু দায়িত্ব। কিন্তু দায়িত্ব ও সেবার বিবেচনায় ফাঁড়ি পুলিশের সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ট নয়। রয়েছে আবাসন সংকট, প্রশিক্ষণের অভাব, পরিবহন সমস্যাসহ নানা সমস্যায় ভুগলেও সেবা প্রদানে পিছিয়ে নেই কর্ণফুলী থানার তিন পুলিশ ফাঁড়ি।

    সাধারণত থানার আকার, জনবসতি ও অপরাধ প্রবণতার উপর ভিত্তি করে পুলিশি কার্যক্রম নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার জন্য ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। ফাঁড়ি মূলত, মূল পুলিশ স্টেশন থেকে আইন-শৃংখলা রক্ষা করা অসুবিধা হয় বলে, স্থানীয়ভাবে আইন-শৃংখলা রক্ষার জন্য ফাঁড়ি গঠন করা হয়।

    ফাঁড়ি থানার অন্তভুর্ক্ত এবং থানার অফিসার ইনচার্জের অধীনে থাকে। যেখানে থানার অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে পুলিশি কার্যক্রম চালাতে হয়। পুলিশ ফাঁড়িতে কোন মামলা রুজু করা যায় না, তবে জিডি করে থানায় প্রেরণ করা হয়। পুলিশ ফাঁড়ির সার্বিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন একজন এস.আই অথবা সার্জেন্ট।

    সম্প্রতি, কর্ণফুলী থানাধীন শিকলবাহা, শাহমীরপুর ও বন্দর তিন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ যথাক্রমে উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আলমগীর হোসেন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ নাছির উদ্দিন ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আব্দু রহিম মিয়া ফাঁড়ি এলাকার সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন কওে চলেছেন। বৃদ্ধি করেছেন পুলিশের সুনামও ভাবমূর্তি।

    কর্ণফুলী থানা পুলিশের পাশাপাশি অপরাধ দমনে ফাঁড়িগুলো প্রতি মাসে মাদক উদ্ধারের পাশাপাশি আয়োজন করেছেন মাদক বিরোধী সমাবেশ। তৃণমূল মানুষের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন বিট পুলিশিং কার্যক্রমে। সাধারণ মানুষকে অপরাধীদের তথ্য প্রদানে উৎসাহিত ও থানামুখী করতে সামাজিক অনুষ্ঠানেও বাড়িয়েছেন অফিসারদের অংশগ্রহণ।

    এছাড়াও বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার, ক্রাইম ও মাদক স্পটে অভিযান চালিয়ে অপরাধী আটক, নদীপথে অবৈধ তেলচোর দমন, মাদক পাচার রোধে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে শিকলবাহা, শাহমীরপুর ও বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির সদ্যসরা। এমনকি ফাঁড়ি এলাকার চিহ্নিত অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, ডাকাত ও সন্ত্রাস দমনের মতো একের পর এক দৃষ্টান্তমূলক কর্মকান্ড দেখিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছেন। পাহাড় জঙ্গল আর নদীঘেষা উপজেলা হলেও যথা-সম্ভব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কর্ণফুলী থানা পুলিশ সক্ষমতা দেখিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি শহরের দক্ষিণপাড় হলেও বাদ যায়নি সেবার পরিধিও।

    সিএমপি কমিশনার এর নির্দেশে সাধারণ মানুষ ও শীতার্তদের মাঝে ফাঁড়িতে শীতবস্ত্র বিতরণ, করোনাকালে খাদ্য উপহার, মাস্ক, স্যানিটাইজার ও করোনা রোগীর জন্য ঔষধ ও ফলমূল বিতরণ করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

    ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর সিএমপি’র কর্ণফুলী থানা পুলিশের পরিধি বাড়ে। নতুন করে পটিয়ার অধীনে থাকা শিকলবাহা ইউনিয়নের ৬টি ওর্য়াড, বড়উঠান ইউনিয়নের ৫টি ওর্য়াড মিলে মোট ১১টি ওর্য়াড যুক্ত হয় কর্ণফুলী থানায়। আনুষ্ঠানিকভাবে যা কার্যকরও শুরু হয়।

    ফলে শিকলবাহার পুলিশ ফাঁড়ির অধিক্ষেত্র দাঁড়ায় দ্বীপ কালার মোড়ল, বাংলা পাড়া, মাষ্টারহাট, সেভেন রিংস সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, সিডিএর টেক, ওয়াহেদিয়া পাড়া ও তালতলা টাওয়ারের গোরা। শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়ির অধীন ফকিরনিরহাট, কাঁচাবাজার, খাদ্য ফ্যাক্টরী, শাহমিরপুর মাজার, শাহমীরপুর বড় বাড়ি, কেইপিজেড গেইট ও দৌলতপুর ডাক পাড়া। এছাড়াও বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির নজর রাখতে হয় কেইপিজেডের বিভিন্ন অংশসহ জাগিরপাড়া, উত্তর বন্দর, ডিএসি ও ইসিএল এলাকা।

    এরমধ্যে শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির দৃষ্টিনন্দন একটি কাজ সাধারণ মানুষের নজর কাড়েন। বহু বছর আগের ঘেরাবেড়াহীন ফাঁড়ির সেমিপাকা ঘরটি ছিলো এক সময় জরাজীর্ণ। এখন চতুর্পাশে সুউচ্চ বাউন্ডারি দেয়াল তুলে সুরক্ষিত করে পুলিশী সেবাঘর হিসেবে তৈরি করেছেন। সংস্কার করেছেন ভেতরের অংশও। যদিও এর আগে বহু পুলিশ অফিসার ফাঁড়ির দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু কেউ সাহস করে কাজটি করতে আগাতে পারেননি আর্থিক বিবেচনায়। অথচ বর্তমান পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সেটি করে দেখিয়েছেন।

    এমনকি শিকলবাহায় মাদকের আস্তানায় হানা, ইছানগর এলাকায় জুয়ার আসর গুড়িয়ে দেয়া, একই গ্রামে জাগির হাজীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় বোয়ালখালি থেকে ডাকাত গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার করে প্রশংসায় ভাসেন শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোঃ আলমগীর হোসেন। জানা যায়, এই পুলিশ কর্মকর্তা অতীতে তিন সিএমপি কমিশনারের সময়কালে মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখায় শ্রেষ্ঠ উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) নির্বাচিত হয়েছিলেন।

    এ বিষয়ে এসআই মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ভাল কাজের স্বীকৃতি সব সময় আনন্দের। এ কৃতিত্ব আমার একার নয়। থানার অফিসার ইনচার্জ ও দায়িত্বরত সকল পুলিশ ফোর্সদের’। তবে ফাঁড়ির বাউন্ডারি কাজটির সৌন্দর্য বাড়াতে প্রথমে সাহস যুগিয়েছিলেন সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) এস এম মোস্তাক আহমেদ খাঁন স্যার। মূলত স্যারের সহযোগিতায় কাজে নেমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কিছু মানুষের সার্বিক সহযোগীতায় আজকের এ প্রাপ্তি বলে আমি মনে করি।’

    এরপরেও কিছু বহিরাগত লোক এসে এলাকায় নানা ঘটনা ঘটিয়ে যায়। যে সব ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশকেও হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু তিন পুলিশ ফাঁড়ির কিছু কাজ সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়িয়ে তুলেছে পুলিশের প্রতি।

    এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা তুলে ধরছি-গত ১৫ ডিসেম্বর কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে ফরিদা বেগম (২৮) নামক এক নারীকে গলাটিপে হত্যা করে স্বামী নুরুল ইসলাম (৩২) পালিয়ে যায়। পরে সহকারি পুলিশ কমিশনার মোঃ ইয়াসির আরাফাত এর সুকৌশলে ঘটনা সংগঠিত হওয়ার মাত্র দু’ঘন্টার মাথায় শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়ি টিম পলাতক স্বামীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।

    এরআগে গত আগষ্ট মাসে বড়উঠান ইউনিয়নের শাহমীরপুর এলাকার নুরুল আনোয়ারের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। গভীর রাতে চোরেরা লুটপাট চালিয়ে ২০ভরি স্বর্ণ অলংকার, টাকা পয়সা ও এলইডি টিভি নিয়ে যায়। পরে নাসরিন আক্তার বুলু বাদি হয়ে (অজ্ঞাতনামা আসামি করে) কর্ণফুলী থানায় জিআর ৪/২৭৭ মামলা দায়ের করেন। ক্লুলেজ এই মামলার দায়িত্ব দেয়া হয় শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়ির আইসি মোঃ নাছির উদ্দিন কে। পরে তিনি তথ্য উপাত্ত যাচাই করে পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোঃ শাহাজাহান (৩৪), মোঃ জাবেদ হোসেন প্রকাশ কালু (২৪) ও রতন সেন (৪২) গ্রেপ্তার করেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে চুরি হওয়া মালামাল ও স্বর্ণ উদ্ধার পুর্বক আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেন।

    একই রকম আরেকটি ঘটনা ঘটে গত ডিসেম্বর মাসে বন্দর ফাঁড়িধীন সাহাব উদ্দিনের দোকান চুরি হয়। চোর চক্র দোকানে থাকা মোবাইল ও সিএনজি নিয়ে যায়। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাৎক্ষনিক সকির আহমেদ নামে এক ড্রাইভারসহ (চট্টমেট্টো-ধ-১১-০০-২৩) সিএনজি আটক করেন। পরে তার স্বীকারোক্তিতে চুরির ঘটনায় জড়িত শুক্কুর ও রিয়াদ নামে দুজনকে আটক করা হয়। দুজনের দেওয়া তথ্যমতে আবার নগরীর বাকোলিয়া থেকে শওকত নামে আরো ১ জনকে আটক করেন। তথ্য দেন এ ঘটনায় আনোয়ারার গহিরা এলাকার মুনছুর আলম জড়িত। পরে পুলিশ তাকেও নিয়ন্ত্রণে নেন। ক্লুলেজ চুরির ঘটনা থেকে পুলিশ একে একে পাঁচ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে এবং মালামাল উদ্ধার করেন।

    পুলিশী সেবার বিষয়ে কথা হলে শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়ির উক্ত ইনচার্জ মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, করোনাকালে বাংলাদেশ পুলিশ নিজের জীবন বিপন্ন করে জনগণের সেবায় মাঠে ছিল। পুলিশের এ মানবিকতা শুধুমাত্র দেশের মানুষের জন্য। আমরা জানি দেশের মানুষকে নির্মোহভাবে ভালোবাসতে হবে। সব উপায়ে সর্বোতভাবে পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। সিনিয়র স্যারদের নির্দেশে সেটাই করতে চেষ্টা করছি মাত্র।’

    কর্ণফুলী জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার মোঃ ইয়াসির আরাফাত বলেন, সিএমপির কর্ণফুলী থানার অবস্থানটা মূলত একটু প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার ভেতরে। প্রশাসনের অবস্থান জনবহুল ও লোকচক্ষুর সামনে রাখা হলে অপরাধ প্রবণতা কমে আসে সেটা হয়তো সত্য। তবে জননিরাপত্তা নিশ্চিত ও নাগরিক ভোগান্তি কমাতেই তিন পুলিশ ফাঁড়ি ও ক্যাম্প ভালো কাজ করছেন। থানার পরিধি বাড়ায় ভবিষ্যতে আরো পুলিশ স্টেশন হবে। আশা করি জনগণ তাদের কাঙ্খিত সেবা পাবে।’

    প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে বন্দর, পটিয়া ও আনোয়ারা থানা ভেঙে গঠিত হয় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) আরেকটি স্টেশন কর্ণফুলী থানা। যেটি ২০০০ সালের ২৭ মে চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদ এর পুরাতন ভবনে কার্যক্রম শুরু করেন।

    ২৪ ঘণ্টা/জে জাহেদ

     

  • লক্ষীপুরের বিষাক্ত কাঁচা সুপারি যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বাজারে

    লক্ষীপুরের বিষাক্ত কাঁচা সুপারি যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বাজারে

    অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষীপুর জেলা সদরসহ রায়পুর রামগঞ্জ কমলনগর-রামগতি থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল নীলফামারী, সৈয়দপুর, রংপুর দিনাজপুর সিলেট নওগাঁসহ ১৬ টি বিভিন্ন জেলা-উপজেলার আড়তে প্রতি মৌসুমে ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার হাইড্রোজ মিশ্রিত বিষাক্ত কাঁচা সুপারি উত্তরের ১৬ জেলার বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে উত্তরাঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ এ বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত সুপারি খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সুপারি খেলে লিভার ও কিডনি বিকল বা ক্যানসারের মতো ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই এ বিষাক্ত সুপারির সরবরাহ বন্ধে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করে স্থানীয় সচেতন মহল।

    লক্ষ্মীপুর সদরের চররুহিতা ইউনিয়নের স্থানীয় কয়েকজন সুপারি ব্যাপারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারি সুপারির আড়ত হচ্ছে সৈয়দপুর। ওই আড়তের ব্যবসায়ীরা আমাদের লক্ষীপুর থেকে সিংহভাগ সুপারি ক্রয় করে থাকেন। এছাড়াও বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, পঞ্চগড়, চিলাহাটি থেকে পানিতে পঁচা সুপারি কিনে নেন ব্যবসায়ীরা।

    জানা গেছে এসব সুপারি আড়ত থেকে পাশের প্রায় ১৬টি জেলার ব্যবসায়ীরা এ পঁচা সুপারি কিনে নিজ নিজ এলাকায় সরবরাহ করেন।

    কয়েকজন পাইকারি সুপারি ব্যবসায়ী বলেন, এখানকার আড়তদারের কাঁচা সুপারিগুলো যায় উত্তরাঞ্চলের সব জেলার বাজারে। তুলনামূলক সস্তা দরের কারণে খুচরা ব্যবসায়ীদের এ সুপারির প্রতি আগ্রহ বেশি। শুকনা সুপারি তিন মাস পাওয়া যায়। এরপর পুরো বছরই কাঁচা সুপারির ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে হাইড্রোস মিশ্রিত করে বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা সুপারি পাঠালে পানি পঁচার বিকট গন্ধ থাকে না। রংটাও ভালো থাকে। পাশাপাশি এটি সহজে নষ্ট হয় না।

    আরিফ নামের এক পাইকারি সুপারি ব্যবসায়ী বলেন, এক বস্তা সুপারির দাম ১ হাজার ৮০০ টাকা। ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার সুপারি পুরো মৌসুমে আমদানি-রপ্তানি হয়।

    পানিতে পঁচা সুপারি নিয়ে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের এলাকার পান দোকানদার তৈয়ব আলী ও আকবর বলেন, ‘শতকরা ৮০ জন পানসেবী এ কাঁচা সুপারিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে কাঁচা সুপারি বিক্রয় করছি। তবে এতে ক্ষতির কথা না জানলেও হাইড্রোজ মিশানোর কথা স্বীকার করেন পান দোকানিরা।’

    এমন বিষাক্ত কেমিক্যাল, ক্ষতিকর রং ও হাইড্রোজ মিশিয়ে পঁচা সুপারীকে চকচকে লাল আকর্ষণীয় করে তোলার দৃশ্য লক্ষ্মীপুর জেলার আনাচে-কানাচে প্রতিদিনই দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করা হলেও তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে কয়েকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়।

    বিষাক্ত কেমিক্যাল, ক্ষতিকারক রং ও হাইড্রোজ মিশ্রনের সময় বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করানো হলে তিনি পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ডের ছিটন বাড়ির পাশে পঁচা সুপারির গুদামে ‘বারেক বেপারী’ নামের এক বড় ব্যবসায়ী ও তার লোকজনকে সুপারি রং করা অবস্থায় দেখতে পান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম ওই ব্যবসায়ীকে সুপারিতে বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জেলা সিভিল সার্জন বরাবর -‘এই রং, কেমিক্যাল ও হাইড্রোজ মানব দেহের কোন ক্ষতি করে কিনা’ এই মর্মে আবেদন করেছেন বলে একটি কাগজ দেখান। এখনো আবেদনের কোন রেজাল্ট হাতে না আসায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুম কোন বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি।

    তবে লক্ষ্মীপুরে দাদনে সুপারি পঁচানো বড় বড় ব্যাপারী হলো সদর পৌরসভা ১৫ নং ওয়ার্ডের ছিটন বাড়ির আব্দুল বারেক ও একই এলাকার করিম খাঁ ব্যাপারী, দালাল বাজার ইউনিয়নের চন্দন গাজী বাড়ীর সেলিম বেপারী, মিলগেট এলাকার হানিফ বেপারী, কাঞ্চনী বাজারের জহিরুল ইসলাম, দাসপাড়া এলাকার মানিক ব্যাপারী, জকসিন বাজারের শফিক ও সোহেল, মিয়ার রাস্তার মাথার মোমিন বেপারী, ভবানীগঞ্জের সেলিম বেপারী, সীতা ডাক্তার গোঁজার ছুট্টু বেপারী রামগঞ্জ উপজেলার মোরশেদ বেপারী, রফিক বেপারী ও রাশেদ বেপারী, রায়পুর উপজেলার হায়দারগঞ্জ বাজারের শাহ আলম মিজি, আলাউদ্দিন বেপারীসহ ছোটখাটো আরো সুপারি ব্যাপারীরা প্রতি মৌসুমে সুপারি পঁচিয়ে তা বিষাক্ত কেমিক্যাল, ক্ষতিকর রং ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারীকার হাইড্রোজ মিশিয়ে সুপারিকে চকচকে আকর্ষণীয় লাল রঙ কর তুলছে।

    এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মাসুম বলেন, খাদ্যে ভেজালের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাই ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    জেলা সিভিল সার্জন আব্দুল গফফার বলেন-‘হাইড্রোজ হচ্ছে একটি বিষাক্ত কেমিক্যাল। এর প্রভাবে কিডনি, লিভারের ক্ষতিসহ শরীরের যেকোনো স্থানে ক্যানসার হতে পারে। এ সুপারি খাওয়া লোকদের ঠোঁটের দুই কোণে সাদা ঘা দেখা যায়। তাই এ সুপারি বন্ধে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

    তিনি আরো বলেন- ‘কোনো ক্ষতিকারক কেমিক্যাল রং বা হাইড্রোজ মিশিয়ে সুপারি রং করা যাবে না। যদি কোনো অসাধু ব্যবসায়ী এ অবৈধ কাজ করে তাকে শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হবে।’

  • রামগড়ে দিনে-দুপুরে পাহাড় ও টপসয়েল কাটছে প্রভাবশালীরা, প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

    রামগড়ে দিনে-দুপুরে পাহাড় ও টপসয়েল কাটছে প্রভাবশালীরা, প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

    খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : প্রশাসনের পূর্বানুমতি ব্যতিত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড়ে অবাদে পাহাড় ও কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল। দিনে-দুপুরে পাহাড় কেটে ও কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে গাড়িতে করে অন্যত্র নিয়ে বাড়ি নির্মাণ, রাস্তা সংষ্কার এবং ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করলেও উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। দিনের আলোয় পাহাড় কাটার মহোৎসব চললেও প্রশাসন কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ কর্মীরাও।

    পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষিজমি ও টিলার মাটি কাটা দন্ডনীয় অপরাধ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২–এর ৬ ধারায়) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদন্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই কাজ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদন্ড হবে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

    গত কয়েক বছর ধরে খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে প্রাণহানী ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি। বিনা বাধায় পাহাড় খেকোরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পরিবেশ সুরক্ষা আইনের লঙ্ঘন করে খাগড়াছড়ির রামগড়েউপজেলার সোনাইআগা, কালাডেবা, খাগড়াবিল, বলিপাড়া, সদুকার্বারী পাড়া, বল্টুরাম টিলাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে স্কেভেটর ব্যবহার করে অবাদে পাহাড় ও কৃষি জমির টপসয়েল কেটে ট্রাকে করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে পাহাড় খেকোরা। কাটার আগে এসব পাহাড় ও কৃষি জমি স্বল্প দামে ক্রয় করে মাটি কেটে তা চড়া দামে বিক্রি করছে তারা।

    অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার অন্তত ৫-৭টি স্থানে অবাদে এসব পাহাড় ও জমির টপ সয়েল কাটা সিন্ডিকেটে জড়িত আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ছাড়াও একই দলের নির্বাচিত বর্তমান জনপ্রতিনিধি, সাবেক জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত রয়েছেন।

    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খাগড়াবিল জুনিয়র হাই স্কুলের পাশের পাহাড়, বল্টুরাম টিলা এনআরডিসি সমিতি ভবনের পাশের পাহাড় ও সোনাইআগাসহ উল্লেখিত স্থানে ‘বুলোডোজার দিয়ে পুরোটা পাহাড়ে উপরিভাগ কয়েকটি লেয়ারে কাটা হয়েছে। পাহাড়ে কোথাও সবুজের চিহ্ন মাত্র নেই। পাহাড়ের কাটা মাটি পড়ে আশপাশের জলাশয়ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েক লক্ষ ঘণফুট মাটি কাটা হয়েছে এসব স্থান থেকে। নতুন করে আরো এক লেয়ারে অর্ধেক কাটার কাজ শেষ। এসব মাটি বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়।’এর বাইরে উঁচু কিছু কৃষি জমিকে ফলন উপযোগী করার অজুহাতে স্কেভেটর দিয়ে জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) কেটে ট্রাক্টর ও পিক-আপে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উপজেলার বেশ কয়েকটি অবৈধ ইটভাটায়। এসব মাটি নিয়ে যেতে দিনে-দুপুরে খাগড়াবিল, কালাডেবা হয়ে সোনাইপুল ও রামগড়ের প্রধান সড়ক ব্যবহার করা হলেও অদৃশ্য কারণে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর প্রায় নিরব। পাশ্ববর্তী গুইমারা, মানিকছড়ি ও মাটিরাঙ্গা উপজেলায় নিয়মিত পাহাড়খেকো ও ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও দন্ড প্রদান করা হলেও রামগড়ে ঘটছে তার ঠিক উল্টো। গত কয়েকমানে উপজেলার কোথাও দৃশ্যমান অভিযানও পরিচালনা করেনি উপজেলা প্রশাসন।

    এছাড়া বিভিন্ন ড্রাম ট্রঠশ ও ট্রাক্টরে নিয়মিত মাটি পরিবহণ করায় খাগড়াছড়িল, কালাডেবাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার গ্রামীন সড়কগুলোতেও ব্যাপক ক্ষতিসাধান হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা বিষয়টি নিয়ে অতিষ্ট হলেও প্রভাবশালীদের দাপটের কাছে অসহায়, যার ফলে ভয়ে মুখ খুলতে চাইছে না কেউই।

    স্থানীয়রা জানান, ‘কম দামে পাহাড় কেটে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা পাহাড়ে থাকা গাছের গাছপালা কেটে মাটি বিক্রি শুরু করেছে। সকাল থেকেই বুলডোজার দিয়ে এখানে মাটি কাটা হয়। দিনেই পরিবহন করে। ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না। তবে কয়েকজন জানান পাহাড় কাটা ক্ষতি । কিন্তু আমরা কিছু বললে এলাকায় থাকতে পারব না।’

    নির্বিচারে পাহাড় ও কৃষি জমির টপ সয়েল কাটায় স্থানীয় এক ব্যক্তি এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে, খাগড়াছড়ির গুইমারা, মাটিরাঙ্গাসহ কয়েকটি উপজেলায় অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে দন্ড, জরিমানাসহ ভাটা গুড়িয়ে দিচ্ছে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন। অদৃশ্য কোন কারনে রামগড়ের ভাটাগুলো যেন দ্বিগুন শক্তি নিয়ে জ্বলে উঠেছে। এখানে উপজেলা কিংবা জেলা প্রশাসন নিরব, পরিবেশ অধিদপ্তরতো রামগড় চিনেই না। সবচেয়ে বড় কথা হলো রামগড়ে সব ইটভাটার মালিকই কোন না কোন জাতীয় রাজনৈতিক দলের হেডামধারী নেতা। বিএনপির এক নেতা এমনকি বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও এখানে কৃষি জমি ধ্বংস করে ভাটা চালাচ্ছেন, পোড়ানো হচ্ছে বনের চারা গাছ, কাটা হচ্ছে জমির টপ সয়েল, পাহাড়ের মাটি। আর দোহাই দেয়া হচ্ছে উন্নয়নের। আইন যেন প্রভাবশালী এসব নেতাদের পকেটের খুচরো পয়সা।’

    খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী জানান ‘অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ষায় পার্বত্য জেলায় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে। প্রশাসনিক ভাবে পাহাড় কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দেদারছে পাহাড় কাটা চলছে। অবিলম্বে তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা না গেলে ভয়াবহ পরিবেশ ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।’

    এই বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড় কাটা সিন্ডিকেটের একজন কাজী সেলিম পাহাড় কাটার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন ‘আমি ঠিকাদির কাজ করি। পাহাড় কাটা আমার কাজ নয়। এছাড়া রামগড় উপজেলার কোথাও আমি পাহাড় বা টপ সয়েল কাটি এটার কেউ প্রমান দিতে পারবে না বলেও জানান তিনি।’

    পাহাড় ও টপ সয়েল কাটা চক্রের অন্য আরেক সদস্য ও পৌর আওয়ামীলীগের এক নেতাকে এ বিষয়ে জানতে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

    এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. উল্লাহ মারুফকে মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি, তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সজীব কান্তি রুদ্র মুঠোফোনে পাহাড় ও টপ সয়েল কাটার বিষয়টি নিয়ে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান। দিনে-দুপুরে পাহাড় কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, দিনের বেলা পাহাড় কাটার বিষয়ে তার জানা নেই। তিনি আরো বলেন, অভিযান পরিচালনা করতে গেলে ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়না।

    উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ জানুয়ারি একই চক্র কর্তৃক উপজেলার ১ নম্বর রামগড় ইউনিয়নের খাগড়াবিল জুনিয়র স্কুলের পাশের একটি পাহাড় কেটে মাটি ড্রাম ট্রাকে লোড করার সময় হঠাৎ পাহাড় থেকে মাটির একটি বড় অংশ ধসে পড়ে সেখানে কর্মরত দুই শ্রমিকের উপর। এসময় জেলার মাটিরাঙ্গার তৈকাতাং হেডম্যান পাড়ার খেরত কুমার ত্রিপুরার ছেলে এতে খগেন্দ্র ত্রিপুরা (৩৫) মাটির নিচে সম্পূর্ণ চাপা পড়ে নিহত হন এবং একই এলাকার হেতেন্ত্র ত্রিপুরার দেহের অর্ধাংশ চাপা পড়ে তিনিও মারাত্নক আহত হন। এরপরও অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়নি সেখানে পাহাড় কাটার মহোৎসব।

    ২৪ ঘণ্টা/প্রদীপ

  • কুকুর খাচ্ছে নবজাতক শিশুর লাশ!

    কুকুর খাচ্ছে নবজাতক শিশুর লাশ!

    অ আ আবীর আকাশ,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : সমাজ সামাজিকতার চরম অবক্ষয়ের নিদারুণ চিত্র ফুটে উঠেছে লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলায়। গত কয়েকদিন আগেও সেখানে কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য প্রবাসীর স্ত্রীকে রাতভর আটকে রেখে পৈশাচিক নির্যাতন করে। যা দেশেবিদেশে নিন্দার ঝড় তুলেছিল। সেই নিন্দা ঘৃণা-ধিক্কার মানুষের মন থেকে না মুছতেই গতকাল আরেকটি ন্যক্কারজনক ঘটনা সূত্রপাত হয়।

    লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে রাস্তার পাশে এক মৃত নবজাতককে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় কুকুরকে টানাহেঁচড়া করতে দেখা গেছে। ওই নবজাতকের মাথা ছাড়া কোনো অংশ দেখা যাচ্ছিল না। কুকুরের কামড়ের কারণে শুধু হাড়গুলো দৃশ্যমান। কে বা কারা শিশুটিকে রেখে গেছে তা জানা যায়নি।

    বুধবার সকালে কুকুরের টানাহেঁচড়া দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। উপজেলার উত্তর চরলরেঞ্চ পূর্ব মুজিবনগর মতিরহাট-তোরাবগঞ্জ সড়কের পাশে ওড়না কম্বল মোড়ানো অবস্থায় নবজাতকের মরদেহটি পড়ে থাকতে দেখা যায়।

    স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয়রা দেখেন একটি কালো ব্যাগ থেকে কম্বল, ওড়না ও লুঙ্গী মোড়ানো নবজাতককে কুকুর টেনেহেঁচড়ে বের করেছে। এটি দেখে স্থানীয়রা কাছে গিয়ে কুকুরকে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু নবজাতকের শরীরটি ক্ষতবিক্ষত দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, কুকুরের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে নবজাতকের দেহ।

    চরলরেন্স ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, একটি ব্যাগ থেকে কুকুর টেনেহেঁচড়ে নবজাতকের দেহটি বের করেছে। দূর থেকে এটি দেখে কাছে এসে কুকুরকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরমধ্যেই শিশুটির পুরো দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়। ঘটনাটি মর্মান্তিক।

    এ বিষয়ে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমাদের এক অফিসারকে পাঠিয়েছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, এটি কোনো নবজাতকের লাশ নয়। এটি ৩-৪ মাসের ভ্রুন। আমরা ডিএনএ আলামত সংগ্রহসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

  • বেলুন বিক্রি করে সাতসদস্যের সংসার চলে

    বেলুন বিক্রি করে সাতসদস্যের সংসার চলে

    অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : বেল্লাল হোসেন ছয় বছর ধরে বেলুন বিক্রি করে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় সে। বাবা আজগর হোসেন কৃষিকাজ করেন, মা গৃহিনী। স্কুল বন্ধ থাকায় ছোট আরো দুই ভাই তার সাথে বেলুন বিক্রি করে। প্রতিটি বেলুন ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়।

    জনবহুল স্থানে ঘুরে ফিরে বেলুন বিক্রি করে বেল্লাল। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হলে একটু ভালো বিক্রি হয়। ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেমেয়েদের টার্গেট করে সে স্থানে ঘুরঘুর করে মনোহারী বেলুন নিয়ে। কোন অনুষ্ঠান বা সভা-সেমিনার না থাকলে হাসপাতাল এলাকায় বেলুন নিয়ে যায়। সেখানে রোগী ও দর্শনার্থীদের সাথে ছোট ছোট বাচ্চাছেলেমেয়েরা আকৃষ্ট হয় নানা রঙের, নানা ডিজাইনের বেলুন দেখে। হাতি, ঘোড়া, মাছ, বিমান, পাখি ও কুকুরসহ নানা বন্য পশু পাখির অবয়বে তৈরি হয় বেলুন। হাওয়া ও গ্যাস দুই ধরনের বেলুন হয়, তবে গ্যাসভর্তি উড়ন্ত বেলুনের চাহিদা ভালো। প্রতিদিন তিন ভাই মিলে প্রায় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার বেলুন বিক্রি করে।

    প্যাকেট বা কার্টুন হিসেবে হাওয়া বা গ্যাসহীন খালি বেলুন কিনে বেল্লাল বাড়িতে বা সুবিধামতো স্থানে বসে গ্যাস ভর্তি করে তারপর বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে বিক্রি করে।

    হাসপাতাল ছাড়াও দক্ষিণ ও উত্তর তেমুহনী, কোর্ট এলাকা, বিজয় চত্তর, বাজারের কসমেটিক ও শাড়ি পট্টি, স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে বা হেঁটে হেঁটে বেলুন বিক্রি করা হয়। অভিভাবকদের অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাচ্চাদের কান্নাকাটিতে ৫০ টাকা দিয়ে বেলুন কিনতে বাধ্য হয়। দেখা গেছে বেলুন কিনে একটু সামনে যেতেই পলিথিন আবৃত বেলুন লিকেজ হয়ে গ্যাস উদাও। স্বল্প সময়ের জন্য মনোহর বেলুন বিক্রি করে সাত সদস্যের পরিবার বেশ ভালোই চলছে।

    বেলালের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদরের জকসিন বাজার এলাকায়।

  • ডাকাতিয়া নদী তুমি কার? নদী দখল করে মাছের ঘের! প্রশাসন নিরব

    ডাকাতিয়া নদী তুমি কার? নদী দখল করে মাছের ঘের! প্রশাসন নিরব

    অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষীপুরের ঐতিহ্যবাহী ডাকাতিয়া নদী দখল করে মৎস্য ঘের করছে একটি মহল। প্রশাসনের নাকের ডগায় হলেও এই দিকে ভ্রুক্ষেপ করছে না স্থানীয় প্রশাসন। দুপুরে ডাকাতিয়া নদী দখল করে, বাধ দিয়ে একটি মহল মৎস্য ঘের তৈরি করছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে ভয়ঙ্কর চিত্র। পানি উন্নয়ন বোর্ড রায়পুর ও নিয়ন্ত্রণাধীন চাঁদপুর নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিও মিলছে না কোনো সুফল। দায়সারা ভাবে একটি নোটিশ দিয়েই চুপসে থাকেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

    রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের হাজীমারা রেগুলেটর সুইচ গেট হতে ৫ ফিট দূরে ডাকাতিয়া নদীতে বাঁধ দিয়ে নদী দখলের মহোৎসব চলছে।

    নদী গর্ভের কাছাকাছি আড়াআড়িভাবে প্রায় ১কি:মি: জুড়ে মাটি দিয়ে বাঁধ সৃষ্টি করে ৪টি মাছের ঘের তৈরী করা হয়েছে।যার মোট পরিমান প্রায় ১০ একর।একেকটি ঘেরের উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট এবং লম্বায় প্রায় আড়াই একর পরিমান।ঘেরের চারদিকে কলাগাছ রোপন করা হয়েছে।নতুন করে আরো কয়েকটি মাছের ঘের তৈরীর কাজ চলছে।

    অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা পাউবোর অধিগ্রহণকৃত জমি জোড়পূর্বক দখল করে পুকুর,প্রজেক্ট,মাছের ঘেরসহ দোকান-পাট নিমার্ণ করছে।সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে রায়পুরে বিভিন্ন পয়েন্টে দিনের পর দিন ডাকাতিয়া নদী দখল করে যাচ্ছে একটি মহল।কেউ ইজারা নামে দখল করছে কেউবা জোড়পূর্বকভাবে ভোগ দখল করে যাচ্ছে পাউবোর সম্পত্তি।

    অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার নন্দনপুর গ্রামের আয়াত উল্যাহ ভূঁইয়ার ছেলে কামাল হোসেন ভূঁইয়া,রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউপির চরলক্ষ্মী গ্রামের রফিক আঁখন, ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী আঁখন,সাবেক ইউপি সদস্য খালেক আঁখন এবং আব্বাস মাঝিসহ কয়েকজন মিলে জোরপূর্বক হাজীমারা রেগুলেটরের ৪ ফিট দূরে মাঝ নদীতে পাউবোর অধীগ্রহনকৃত জমিতে বাঁধ দিয়ে পুকুর/প্রজেক্ট তৈরী করছে ।

    এনিয়ে অভিযুক্তদের মধ্যে কামাল হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন-‘আড়াই একর জমি জেলা পরিষদ থেকে বছর প্রতি ৩০ হাজার টাকা লীজ নিয়েছি। এটা কোন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্পত্তি নয়।আমার কাছে ডকুমেন্ট আছে।’ কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে পারবেন কিনা? এমন প্রশ্নের সুদুত্তরে তিনি বলেন,’আমাকে দুইদিন সময় দেন। আমি আপনার অফিসে আসবো। কাগজপত্র আপনাকে দেখাবো।’ তবে নানান নাটকীয়তায় পরও অভিযুক্ত কামাল হোসেন ভূঁইয়া কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে পারেননি।

    স্থানীয়রা জানান,নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারনে একদিকে যেমন নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে,পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।পাশাপাশি,অত্রাঞ্চলের বন্যা জনিত সৃষ্ট পানি অপসারণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।এছাড়াও যেসব জেলেরা মাছ শিকার করে নিজেদের জীবিকা আহরণ করত,তারা তাদের অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে ।পরিশেষে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার আহবান জানান স্থানীয়রা।

    এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর কর্তৃপক্ষের রায়পুর পওর শাখা- ৩ (হাজীমারা) উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাকিল মাহমুদ এর স্বাক্ষরিত গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ইং অভিযুক্ত কামাল হোসেন ভূঁইয়ার বরাবর নোটিশ জারি করে।যার স্মারক নং-উ.স.প্র/রায়/শা-৩/২০২০/১১২।নোটিশে বাধঁ অপসারণের জন্যে ৩ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হলেও নোটিশের ১২ দিন হতিবাহিত হওয়ার পরও বাঁধটি অপসারণ করা হয়নি।

    রায়পুর পওর শাখা-৩ (হাজীমারা) উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাকিল মাহমুদ জানান, রায়পুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। উল্টো অভিযুক্ত কামাল হোসেন ভূঁইয়া আমাকে উকিল নোটিশ দিয়ে হয়রানি করছে।তিনি নাকি জেলা পরিষদ থেকে লীজ নিয়েছে।

    এবিষয়ে রায়পুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার সাবরীন চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

  • পারকী সৈকতে পর্যটকদের আকর্ষনের মূলে ক্রেন ‘তিয়ান-ই’ ও ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ জাহাজ

    পারকী সৈকতে পর্যটকদের আকর্ষনের মূলে ক্রেন ‘তিয়ান-ই’ ও ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ জাহাজ

    আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগামের ভ্রমণ পিপাসুদের নতুন আকর্ষণ এখন ক্রেন তিয়ান-ই ও ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ জাহাজ। প্রকৃতির রূপসী কন্যা নামে পরিচিতি চট্টগ্রাম আনোয়ারা উপজেলার পারকী সমুদ্র সৈকত, আর এই সৈকতের তীরে এসে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের কোটি মানুষের মাঝে স্বপ্ন দেখানো পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধারণক্ষমতার ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই।

    অপর দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাত থেকে রক্ষা পেতে কূলে এসে আটকা পড়েছে ক্রিস্টাল গোল্ড’ জাহাজ। এছাড়াও পারকী সৈকত কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হোটেল রেস্তুরা। পর্যটকদের কাছে টানতে সরকার পর্যটন উন্নয়নে হচ্ছে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ।

    সাম্প্রতিক সময়ে পারকি সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের কৌতূহল শেষ নেই, ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই এবং ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ জাহাজ নিয়ে। ভ্রমন পিপাসুদের ধারুণ ভাবে কাছে নিয়েছে ক্রেন তিয়ান-ই। অপর দিকে ক্রিস্টাল গোল্ড বাড়িয়ে দিয়েছে পর্যটকদের কৌতুহুল। পর্যটকদের ছবির কবিতা যেন ক্রেন তিয়ান-ই ও ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ জাহাজ।

    জানা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ তিয়ান-ই পদ্মা সেতুর প্রকল্পের স্প্যান বসানোর কাজে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে আনা হয়েছিল। সে বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম স্প্যান থেকে চলতি বছরের গত ১০ ডিসেম্বর সেতুর ৪২টি পিয়ারে ৪১টি স্প্যান বসানোর কাজ করে ক্রেনটি।

    চীনে তৈরি ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার বিশেষ ধরনের এই ভাসমান ক্রেনটির দাম আড়াই হাজার কোটি টাকা। কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্রেনটি পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা ছেড়ে চট্রগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। ১৩ ডিসেম্বর রবিবার সকাল ১০ টায় চট্টগ্রাম বন্দরের থেকে পারকি সমুদ্রসৈকতের কাছাকাছি আবস্থান করেন। এখানে ১ মাস অবস্থান করে চট্টগ্রাম বন্দরে থেকে সেটি হংকং হয়ে চীনে পাড়ি জমাবে।

    পারকি থেকে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স শেষে বড় মাদার ভেসেলে সেটি হংকংয়ের উদ্দেশে রওনা হবে। এটি চীন পৌঁছাতে এক মাসেরও অধিক সময় লাগবে।

    ক্রিস্টাল গোল্ডের অজানা তথ্য বেরিয়ে আসে তার করুণ কাহিনী। সৈকতে নেমেই একটি বিশাল দৈত্যাকার জাহাজ স্বাগতম জানাবে আপনাকে। পারকি সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের আরেক আকর্ষণ দানবাকার ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজ। পর্যটকরা জাহাজকে ঘিরে সেলফিতে তোলতে ব্যস্ত থাকে সারাক্ষণ।

    জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানায়, এই বিশাল দৈত্যাকার জাহাজ গতবছর ভারতের কলকাতা থেকে আটলান্টিকের উদ্দেশ্য ছেড়েছিল। ২০১৭ সালের ৩০ মে দুপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে নাবিক ধরে রাখতে না পারায় বাতাসের বেগ পারকি উপকূলে তুলে দিয়েছিল জাহাজটিকে। সেই হতে জাহাজটি আটকে আছে বিচের বালুকায়। একটা সময় প্রশান্ত, আটলান্টিক, ভারত মহাসাগর চষে বেড়ানো সেই ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ আজ পারকি সৈকতে আসা প্রতিটা পর্যটককে হাসিমুখে স্বাগতম জানায়।

    ‘ত্রুিস্টাল গোন্ড’ জাহাজটি সৌন্দর্যের রূপ দেখে আশিকুর রহমানের পরিচালিত বাংলা ছবি ‘সুপার হিরো’ ছবি শুটিং ২৭ মার্চ ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম আনোয়ারা উপজেলায় পারকী সমুদ্র সৈকতের জাহাজটি নিয়ে ঘিরে ছবি বিভিন্ন শুটিং ধারন করেন।

     

    পারকি বিচের ১৩ একর জায়গায় আধুনিক পর্যটকের কমপ্লেক্স বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (বিপিসি)। ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হওয়ার পর পারকি বিচ হবে দেশের অন্যতম একটি আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র।

    বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, পারকি বিচকে আধুনিক বিচ ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পর্যটন করপোরেশন তিন বছর মেয়াদি ‘পারকি বিচে পর্যটন সুবিধাদি প্রবর্তন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে।

    প্রকল্পটির মধ্যে রয়েছে ১৪টি বহুতলবিশিষ্ট আধুনিক কটেজ, একটি মানসম্মত বার, দুটি পিকনিক শেড, দুটি কিডস কর্নার জোন, আধুনিক রেস্তোরাঁ, কনভেনশন হল নির্মাণ, চেঞ্জিং ক্লসেট ও ওয়েটিং রুম এবং কার পার্কিং জোন সুবিধাও রাখা হয়েছে।

    প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সম্পাদনা: পারকী সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার পথে দেখা মিলে অন্যরকম এক দৃশ্য। আঁকা বাকা পথ ধরে ছোট ছোট পাহাড়ের দেখা মিলে। চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিঃ (সিউএফল) এবং কাফকোর দৃশ্যও পর্যটকদের প্রাণ জুড়ায়। পারকি বীচে ঢুকার পথে সরু রাস্তার দুপাশে সারি সারি গাছ, সবুজ প্রান্তর আর মাছের ঘের দেখা যায়। বীচে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো অসংখ্য ঝাউ গাছ আর ঝাউবন রয়েছে। সৈকতে রয়েছে ঘোড়া চড়া, রাইডিং বোট, বসার জন্য বড় ছাতা সহ হেলানো চেয়ারের মতো বেশ কিছু ব্যবস্থা।

    যেভাবে যাবেন: চট্টগ্রাম শহর থেকে “পারকি বীচের” দূরত্ব প্রায় ২৫ কিঃমিঃ। যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টা। এটা মূলত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এবং পূর্ব-দক্ষিণ তীরে পারকী সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম সার কারখানা ও কাফকো যাওয়ার পথ ধরে এই সৈকতে যেতে হয়।

  • ৩৪ বছরেও অজানা রামগড়ের পাতাছড়া গণহত্যার কথা

    ৩৪ বছরেও অজানা রামগড়ের পাতাছড়া গণহত্যার কথা

    খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : ১৯৮৬ সালের ১৩ জুলাই। সেদিনের বিভীষিকাময় স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেনি খাগড়াছড়ির রামগড়ের পাতাছড়া ডাকবাংলা পাড়ার বাসিন্দারা। তৎকালীন শান্তিবাহিনীর একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসীর এলোপাতাড়ি গুলি ও অগ্নিসংযোগে সেদিন নিহত হয়েছিল ৫ শিশু সহ ৭ জন। কয়েকদিন পর ঘটনাস্থলের খুব কাছ থেকে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছিল স্থানীয়রা। একই বছরের ১৩ আগস্ট আরও এক নিরহ গ্রামবাসীকে গুম করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

    প্রথমদিনের ঘটনায় নিহতদের গণকবরে ঠাঁই হলেও পরবর্তীতে নিহতদের কপালে তাও জুটেনি। নিরহ গ্রামবাসীর ওপর পরপর এমন হামলায় ভয়ে পালিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল ২ শতাধিক পরিবার। কয়েক বছর পর নিজেদের বাস্তুভিটায় ফেরার চেষ্টা করলেও তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশাসন ফিরতে দেয়নি। আর ৩৪ বছরেও ফেরা হয়নি।

    গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি, ১৯৮৬ সালের ১৩ জুলাই নিহতদের গণকবর সংরক্ষণের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ববর্তী সময়ে তিন পার্বত্য জেলায় সংগঠিত বিভিন্ন গণহত্যার নথিপত্রে রামগড়ের পাতাছড়া গণহত্যার ঘটনা প্রকাশ করা। এছাড়া বাস্তুভিটাহীন পরিবার গুলোকে নিজ ভূমি ফেরত পাঠানোসহ প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

    প্রত্যক্ষদর্শীদের চোখে ১৯৮৬ সালের ১৩ জুলাইঃ
    মো. নাসির উদ্দিন নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার দিন মাগরিবের কিছু সময় আগে হঠাৎ করে একদল অস্ত্রধারী শান্তিবাহিনীর সদস্য বাড়িতে ঢুকে পড়ে। কিছু বুঝে উঠার আগে এলোপাঁতাড়ি গুলি ছুঁড়ে। এ সময় গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় কেউ কাউকে উদ্ধারে এগিয়ে আসতে পারেনি। সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আমার (নাসির) ছোট ভাই আবুল কাশেমকে আগুনে নিক্ষেপ করে। এ সময় আমাকেসহ নিয়ে মা বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করে। মায়ের কোলে একবছর বয়সী ছোট বোন আনোয়ারা থাকলেও ভুলে আরেক বোন মনোয়ারাকে বাড়ির ভেতর রেখে আসেন। মনোয়ারাকে আনতে মা বাড়ির ভেতর গেলে সন্ত্রাসীরা মাকে গুলি করে এবং ছোট বোন আনোয়ারাকে মায়ের কুল থেকে কেড়ে নিয়ে আগুনে নিক্ষেপ করে। আর মনোয়ারাকে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে খুন করে। পরেরদিন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সহ গিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করে রাস্তার পাশে গণকবরে দাফন করি।

    ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলাম জানান, ১৩ জুলাই সকালে পাতাছড়ার ডাকবাংলা গ্রামে বাইরে থেকে কিছু অপরিচিত লোকজন আসে। স্থানীয় এক পাহাড়ীর বাড়িতে তারা কাজে এসেছেন বলে জানান। আসরের পরপর যখন হামলা শুরু হয় তখন তাদেরকেও সন্ত্রাসীদের সাথে দেখার কথা জানান নজরুল। বাড়িতে ঢুকে মা ছবুরী খাতুনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে এবং বোন রেহানা আক্তারকে আগুনে নিক্ষেপ করে হত্যার কথা ভুলতে পারেনি এখনও।

    রামগড় পাতাছড়ার বাসিন্দা ও তৎকালীন আনসার সদস্য মো. মমতাজ মিয়া জানান, ৩৪ বছর অতিবাহিত হলেও নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত গণহত্যার কোন নথিতে উল্লেখ নেই। স্বজন হারানোর কষ্ট বুকে চেপে জীবন রক্ষায় সেদিন কোন মতে একটি কবরে স্বজনদের রেখে চলে যেতে হয়েছিল নিরহ গ্রামবাসীদের।

    রামগড় পাতাছড়া ডাকবাংলা পাড়া গণহত্যায় নিহতদের নামের তালিকাঃ
    আবুল খায়েরের স্ত্রী হালিমা বেগম(৫৫), মেয়ে মনোয়ারা বেগম(৬), ছেলে আবুল কাশেম(৫), আনোয়ারা বেগম(১), ছায়েদুল হকের স্ত্রী ছবুরী খাতুন ও মেয়ে রেহানা রেহানা আক্তার। লাল মিয়ার মেয়ে মফিজা খাতুন। ১৯৮৬ সালের ১৩ জুলাই নিহতদের সবাইকে পাতাছড়া এলাকায় গণকবর দেওয়া হয়। পরেরদিন ১৪ জুলাই মো. সাত্তার নামে একজনের গলাকেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। একই বছরের ১৩ আগস্ট মো. আদম ছফি উল্লাহ নামে একজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে গুম করা হয়।

    ২৪ ঘণ্টা/প্রদীপ চৌধুরী

  • বোয়ালখালীতে কপির আবাদে লাভবান ৪০ কৃষক

    বোয়ালখালীতে কপির আবাদে লাভবান ৪০ কৃষক

    পূজন সেন, বোয়ালখালী : চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ফুলকপি ও বাধাকপির আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এবার ৪০ জন কৃষক প্রায় ১৬ একর জমিতে শীতকালীন সবজি ফুলকপি ও বাধাকপির চাষ করেছেন। আগাম চাষ করায় তারা ভালো দাম পাচ্ছেন।

    উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ, আমুচিয়া ও কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নে ৪০ জন কৃষক আগাম ফুলকপি ও বাধাকপির চাষ করেছেন। ১২ একর জমিতে ফুলকপি ও ৪ একর জমিতে বাধাকপির চাষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি একরে ১২ হাজার ৫শত চারা রোপণ করা হয়। প্রতিটি চারা রোপণে খরচ পড়ে ৯টাকা করে। যা ১২ হাজার ৫শত চারা রোপণে খরচ দাঁড়ায় ১ লাখ ১২ হাজার ৫শত টাকা। প্রতিটি চারা কপিতে পরিণত হতে সময় লাগে প্রায় দুইমাস। প্রতি কপির গড় ওজন ১ কেজি হলে তার পাইকারি বাজার মূল্য দাঁড়ায় ২০টাকায়। ফলে ১২হাজার ৫শত কপির মূল্য পাওয়া যাবে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আগাম চাষ করায় ফুলকপি ও বাধাকপির পাইকারি বাজার মূল্য পেয়েছেন ৫০ টাকার ওপরে। বর্তমান বাজার মূল্যেও কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

    শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের কৃষক সুবল দে জানান, নিজস্ব ১ একর জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। গত অক্টোবর মাসে স্নোবল জাতের কপির চারা রোপণ করে দুই মাসের মধ্যে ফলন বাজার জাত করতে শুরু করেন। আগাম জাতের এ কপি এখন তারা প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকা করে বিক্রি করছেন তিনি। একই এলাকার কৃষক মো. ইব্রাহিম, আব্দুল খালেক, রূপক দে, ঝুন্টু দে ও বিপ্লব দে। তারা জানিয়েছেন, এবার কপির ফলন ভাল হয়েছে। বাজারে ভালো দামও পাচ্ছেন।

    উপ- সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র দে জানান, আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় এবার উৎপাদন খরচ অন্যান্যবারের চেয়ে একটু বেশি ছিল। তবে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক খুশি। বাজারে কপির দামও এবার বেশ ভালোই রয়েছে। বাজারে মৌসুমি ফুলকপি ও বাধাকপির চাহিদা থাকায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা এসে পাইকারি ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন।

    উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষবিদ মো. আতিক উল্লাহ বলেন, বোয়ালখালীতে ৪০জন কৃষক ১৬ একর জমিতে স্নোবল, স্নোহোয়াইট ও স্নোবক্স জাতের ফুলকপি এবং বাধাকপির চাষ করেছেন। গত অক্টোবর মাসে চারা রোপণ করেছেন তারা। যা দুই মাসে এক থেকে দেড় কেজি ওজনে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ফলন সংগ্রহ করা যাবে। কপি চাষে প্রতি একরে কীটনাশক, সার, সেচ ও মজুরী মিলিয়ে খরচ পড়ে ১ লাখ টাকার ওপরে। দুই মাসের মধ্যে খরচ বাদ দিয়ে তারা প্রতি একরে প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন।

  • খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচন: চ্যালেঞ্জের মুখে ‘আলম পরিবার’

    খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচন: চ্যালেঞ্জের মুখে ‘আলম পরিবার’

    খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ি শহরে প্রায় দুই দশক ধরেই চলে আসছে, প্রভাবশালী ‘আলম পরিবার’-এর নানামুখী কর্তৃত্ব। রাজনীতি থেকে পরিবহন খাত, টেন্ডার-টোল নিয়ন্ত্রণ থেকে নিলাম আবার আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সকল পর্যায়ের কমিটি গঠনের প্রভাব বলয়। এর বাইরে জেলাশহর ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ের যেকোন লাভজনক সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনেও এই পরিবারের ঈশারা প্রতিফলিত হতো।

    এই প্রভাবের সূচনা হয় এই পরিবারের অন্যতম সদস্য মো: জাহেদুল আলম; জেলা আওয়ামীলীগের সা: সম্পাদক নির্বাচিত হবার সূত্র ধরেই। একই সাথে জাহেদুল আলম, খাগড়াছড়ি পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং ১৯৯১ সালে আওয়ামীলীগের কল্পরঞ্জন চাকমা এমপি নির্বাচিত হলে ‘আলম পরিবার’-এর প্রতিপত্তি তড়তড় করে বাড়তে থাকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হলে খাগড়াছড়ি জেলায় এই পরিবারের প্রাধান্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে।

    এমনকি ‘২০০১ টু ২০০৬’ সালে বিএনপি-জামাত শাসনামলে এই পরিবার এলাকার বাইরে থেকেও যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করেছে সবকিছু। এরমধ্যে ‘ওয়ান-ইলেভেন’ সরকারের সময়ে পরিবারটির তিন সহোদর জেল-জুলুমও খাটেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিএনপি’র হাতে তাঁরা নিমর্ম নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের কর্তৃত্ব থেকে তাঁদেরকে খুব বেশি টলাতে পারেনি কেউই।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সংসদ সদস্য প্রার্থী যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হন ‘আলম পরিবার’-এর প্রধানতম ব্যক্তি ও জেলা আওয়ামীলীগের সা: সম্পাদক মো: জাহেদুল আলম। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি ‘জাতির জনক’ এবং ‘আওয়ামীলীগ ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা’ সর্ম্পকে নানা বিরুপ মন্তব্য করে সমালোচিত হন। দলের শৃঙ্খলা এবং নীতি-আদর্শ পরিপন্থী ভূমিকার দায়ে তিনি প্রথমবার দল থেকে বহিস্কৃত হন। পরে আবার নানা বাস্তবতায় তিনি স্বপদে বহাল হলে আবারও আগের মতোই পরিবারটির প্রভাব উদ্যম নিয়ে প্রকাশিত হতে থাকে। কিন্তু ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান না নেয়ার দায়ে তিনি এবং তাঁর ছোট ভাই দিদারুল আলমসহ দল থেকে দ্বিতীয়বারের মতো বহিস্কৃত হন। এরপর জেলাশহর এবং বেশ কয়েকটি উপজেলায় সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সাথে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। টানা প্রায় তিন বছরের রক্তক্ষয়ী হামলা-মামলায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন।

    ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
    খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ২০১৮ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ‘আলম পরিবার’-এর দিক থেকে আস্তে আস্তে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে। ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামীলীগ সম্মেলনে সা: সম্পাদকের পদ হারান মো: জাহেদুল আলম। সর্বশেষ গত ১৪ ডিসেম্বর পুর্নগঠিত ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’-এর ১৪ সদস্যের মধ্যেও ওই পরিবারের কারো স্থান মেলেনি। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে ‘আলম পরিবার’-এর সদস্য এবং দুইবারের নির্বাচিত পৌর মেয়র রফিকুল আলম আওয়ামীলীগের মনোয়নবঞ্চিত হন।

    দুইবারের মেয়র এবং ‘আলম পরিবার’-এর সর্বশেষ ক্ষমতাধর ব্যক্তি মো: রফিকুল আলম আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হবার খবর জানাজানি হলে সামাজিত যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠে। খাগড়াছড়ি শহরের সর্বস্তরের মানুষের মাঝেও এই খবরের নানামুখী প্রতিক্রিয়া চাউর হয়।

    সবার ধারণা ছিল, ‘আলম পরিবার’ অতীতের মতো আর মূল দলের বিপরীতে আর অবস্থান নেবেন না। এমন বদ্ধমূল বিশ্বাস ছিল জেলা আওয়ামীলীগের হাইকমান্ডেরও।

    তাঁর কারণ হিশেবে জেলা আওয়ামীলীগের অন্যতম সহ-সভাপতি মনির হোসেন খান জানান, জেলা সভাপতি এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র নির্দেশনায় কেন্দ্রে প্রস্তাবিত তিন প্রার্থীর তালিকায় মেয়র রফিকের নাম এব নম্বরে দেয়া হয়েছিল। রফিকুল আলম কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন ফরমও কিনেছেন। কিন্তু মনোনয়ন না পেয়ে অতীতের মতো দলের নীতি-আদর্শের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যা তাঁদের দীর্ঘদিনের পারিবারিক ঐতিহ্য।

    আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদটি কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চান না ‘আলম পরিবার’। ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা জানান, জেলা আওয়ামীলীগ থেকে জেলা পরিষদ; সবখানে নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব সীমিত হয়ে এসেছে। এখন যদি পৌর মেয়রের পদটিও হাতছাড়া হয় তাহলে পরিবারটি নানামুখী চাপে পড়তে পারে। সে আশংকা থেকেই রফিকুল আলম সরকারি দলের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে প্রার্থী হয়েছেন।

    মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আওয়ামীলীগ প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী নিজের জয়ের ক্ষেত্রে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পৌর এলাকার ‘পাহাড়ি-বাঙালি’ সকল সম্প্রদায়ের মধ্যকার শান্তি ও সহাবস্থানকে আরো সুদৃঢ় এবং আধুনিক পৌরশহর বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন।

    বর্তমান মেয়র মো: রফিকুল আলমের বিদ্রোহী প্রার্থী হিশেবে মনোনয়ন দাখিলের প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, যিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তার দায়, তাঁর নিজেরই; দল কোন বিদ্রোহী প্রার্থীর দায় বহন করবে না।

    বিএনপি প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে ভোটারদের অনাস্থা রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ‘লেভেল প্লেয়িং’ ফিল্ড প্রয়োজন। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে তিনি জয়ী হবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

    সকালে আওয়ামীলীগের মনোয়ন জমা দেয়ার সময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর খন্ড খন্ড মিছিলে পুরো শহর লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। স্বতস্ফুর্ত মিছিল আর শ্লোগানে নেতাকর্মীরা দৃঢ়তার সাথে জানান, স্বেচ্ছাচারিতা ও নীরব লুঠপাটের বিপরীতে এবারের নির্বাচনে খাগড়াছড়ি পৌরবাসী নির্মলেন্দু চৌধুরী’র মতো সজ্জন নেতাকেই জয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ।

    ২৪ ঘণ্টা/প্রদীপ চৌধুরী

  • চট্টগ্রামে মাছ, মাংস ও সবজিতে স্বস্থি, বেড়েছে আলু ও পেঁয়াজের দাম

    চট্টগ্রামে মাছ, মাংস ও সবজিতে স্বস্থি, বেড়েছে আলু ও পেঁয়াজের দাম

    নিজস্ব প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে সবজি-মাছ ও মাংসের দাম। তবে কিছুটা দাম কমার পরে সপ্তাহের ব্যবধানে ফের বেড়েছে আলু ও পেঁয়াজের দাম।

    শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার, রিয়াজউদ্দিন ও কাজীর দেউড়ী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা কমেছে।

    সবজির মধ্যে নতুন আলু ৫৫-৬০ টাকা, পুরনো আলু ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহেও পুরনো আলু ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা এবং নতুন আলু ৫০ টাকার মধ্যে কেজিপ্রতি কিনতে পেরেছে ক্রেতারা।

    এদিন ফুলকপি ২৮-৩২ টাকা, বাঁধাকপি ২৫-৩০ টাকা, মুলা ২৮-৩০ টাকা, টমেটো ৬০-৮০ টাকা, বেগুন ৩০-৩৫ টাকা, শিম ৫৫-৬৫ টাকা, শসা ৪০ টাকা, বরবটি ৪৫-৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩৫ টাকা, ঢেঁড়স ৪৫ টাকা, গাজর ৬৫ টাকা, কাঁচা পেপে ৩০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫৫ টাকা, শিমের বিচি ১৮০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

    এদিকে শীতকালীন সবজির পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছের সরবরাহও বেড়েছে। ফলে গত সপ্তাহের তুলনায় চট্টগ্রামে মাছের বাজারেও দাম কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা কমেছে।

    বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছের দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় ৫ টাকা কেজিতে কমে এখন (আকারভেদে) ২৩৫ থেকে ৩২০ টাকা, মৃগেল ১৬৫ থেকে ২৩০ টাকা, পাঙাস ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, ইলিশ প্রতি কেজি (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা, কাতল ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা, পোয়া মাছ ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা, পাবদা মাছ ৩৫০, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, ফার্মের কৈ মাছ ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, মলা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়।

    অপরিবর্তিত রয়েছে মাংসের দাম। বাজারগুলোতে শুক্রবার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছে ১২০ টাকা দরে। তাছাড়া ১৯০-২০০ টাকা কেজি দরে সোনালী মুরগী এবং দেশি মুরগী বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে।

    ৯০-৯৫ টাকায় এক ডজন ফার্মের মুরগীর ডিম বিক্রি হচ্ছে শুক্রবারের বাজারে। গরুর মাংস ৭০০ টাকা ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে।

    দাম বেড়েছে নতুন আলু ও পেয়াজের। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, পুরানো দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

    বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, আটাশ চাল ৫০ থেকে ৫৪ টাকা, পায়জাম ৪৮ থেকে ৫২ টাকা, মিনিকেট প্রকারভেদে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, নাজিরাইশ ৬০ থেকে ৬২ টাকা, পোলাওয়ের চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, খোলা ভোজ্যতেল লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

    ২৪ ঘণ্টা/রাজীব