বাপ্পা মৈত্র সিলেট প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মূলহোতা মেম্বার শহিদুল ইসলাম স্বাধীন ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ‘ছন উল্ল্যা গোছাখাই জলমহাল’ অবৈধভাবে ভোগ দখল করে আসছেন। বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, এই বিলের টাকার ভাগ পাচ্ছেন কে বি ওয়াকফ এস্টেটের ম্যানেজার আব্দুর রহমান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায় ও পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমদ। এছাড়াও নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার পর স্বাধীন মেম্বার গ্রেপ্তারের আগের রাতে স্বাধীনের বাড়িতে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে মোশাররফ মিয়া ও রঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে।
আর তাদের কারণেই এলাকায় বেপরোয়া ছিলেন স্বাধীন। এই বিলটির কারণেই শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটিয়েছে স্বাধীন মেম্বার বলে দাবি এলাকাবাসীর।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় কে.বি ওয়াকফ এস্টেটের স্বত্ব দখলীয় ছন উল্ল্যা গোছাখাই জলমহালটি ২০০৯ সালের পর থেকে প্রকাশ্যে নিলাম করা হয়নি। অথচ এ জলমহালটি প্রকাশ্যে নিলামের দাবিতে বিভাগীয় কমিশনার ও কে বি ওয়াকফ এস্টেটের মেতাওয়াল্লি বরাবরে বার বার আবেদন করে গেছেন উপজেলার নোয়াগাঁও, সন্তোষপুর, চন্দ্রপুর ও নাচনিসহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দা ও মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যরা। তারা সরকারকে বেশি পরিমাণ রাজস্ব দেওয়ার কথাও আবেদনে উল্লেখ করেন। কিন্তু ঘুরে ফিরে বার বার পেয়ে গেছেন স্বাধীন মেম্বার। তাই এখন এ জলমহালটি দ্রুত প্রকাশ্যে নিলাম করার দাবি করছেন এলাকাবাসী।
এলাকার লোকজন জানান, সরকারি জলমহাল নীতি মালা উপেক্ষা করে কে বি ওয়াকফ এস্টেটের আব্দুর রহমান নিজে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে এত বছর ধরে এটি করে আসছেন। সে নিজেও অনেক বার শাল্লায় এসেছে। এই আব্দুর রহমানের কারণেই এত বছর ধরে বিলটির বৈধ্য নিলাম হচ্ছে না। আব্দুর রহমানের টাকা পেয়ে ৩ বছরের জায়গায় বিলটি ৫ বছর করে দিয়েছে ২০১৮ সালে। এখন এলাকাবাসী দাবি করছেন, এ জলমহালটির তদারকির দায়িত্ব সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে দিতে। কারণ এ জলমহাল নিয়ে আশেপাশের পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীন মেম্বারের বিরোধ চলছিল। স্বাধীন মেম্বার প্রতি বছর বিলটি শুকিয়ে মাছ শিকার করত, যার কারণে আশপাশের ৫ টি গ্রামের মানুষকে জমি চাষের জন্য পানির সংকটে পড়তে হত। বিগত কয়েক বছর ধরেই বিল সেচা নিয়ে কোনো না কোনো গ্রামের মানুষের সাথে স্বাধীন মেম্বারের বিরোধ তৈরী হত। তারই ধারাবাহিকতায় নোয়াগাঁও গ্রাম বাসীর সাথে গত শুকনো মৌসুমে ঝামেলা হয় স্বাধীন মেম্বারের। দিতে হয়েছিল জরিমানা তাকে। তবে আশপাশ গ্রামের অনেকেই মনে করছেন স্বাধীন মেম্বার গ্রামবাসীকে ভয় দেখাতেই নোয়াগাঁওয়ে হামালা, ভাংচুর ও লুটপাত করিয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যবলীগের দুই নেতাও এ বিল থেকে টাকার ভাগ পান। সেই সাথে কে বি ওয়াকফ এস্টেটের ম্যানেজারও পান, তিনি আনেক বার এসেছেনও বিলে জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছন উল্ল্যা গোছাখাই জলমহালটি বৈধ ভাবে নিলামে পান সাবেক বিএমপি নেতা ও মেম্বার শহিদুল ইসলাম স্বাধীনের পিতা কেরামত আলী। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর প্রকাশ্যে নিলাম হওয়ার কথা থাকলেও ২০০৯ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত এ জলমহালটি প্রকাশ্যে নিলাম হয়নি।
এলাকাবাসির দাবি- মূলত স্বাধীন মেম্বারের সাথে এ জলমহাল নিয়েই আশেপাশের ৫ থেকে ৬ গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক পরিবারের সাথে দ্বন্দ চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। সে একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল, আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে হেফাজত ইসলামের নেতা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে এক যুবকের দেয়া স্ট্যাটাসের জেরে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাত চালিয়ে।এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, কে বি ওয়াকফ এস্টেটের ম্যানেজার মো. আব্দুর রহমান ও শহিদুল ইসলাম স্বাধীন মিলে এ জলমহালটি অবৈধভাবে ভোগ করে চলছেন। এ জলমহাল থেকে কে বি ওয়াকফ এস্টেটে ম্যানেজার মো. আব্দুর রহমান প্রতি বছর মোটা অঙ্কের টাকা পেয়ে যেতেন সিলেটে বসেই। আমরা প্রতি বার স্বাধীন মেম্বারের থেকে দ্বিগুণ টাকা রাজস্ব দিয়ে বিল ইজারা নিতে বিভাগীয় কমিশনার ও কে বি ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি বরাবরে আবেদন করেও কোন সমাধান পাইনি। প্রতি বছর ধান চাষের সময় এলেই পানির অভাব দেখা দিত, কারণ স্বাধীন মেম্বার বিলটি মেশিন লাগিয়ে শুকিয়ে মাছ শিকার করত। শুকিয়ে মাছ শিকারের কারণে তাকে জরিমানাও দিতে হয়েছে।
এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা শাল্লা উপজেলার মানুষ হয়েও জলমহালটি বৈধভাবে ভোগদখল করতে পারিনি। কিন্তু শহিদুল ইসলাম স্বাধীন দিরাই উপজেলার বাসিন্দা হয়েও কি ভাবে এত বছর ধরে অবৈধ ভাবে বিলটি ভোগদখল করছে। এই স্বাধীনের কারণে প্রতি বছর আমাদের জমি চাষের সময় পানির সংকটে পড়তে হয়। আমরা এ জলমহালটি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের অধীনে ইজারা দিতে দাবি জানাচ্ছি।
তাহলে আমাদের ধান চাষের সময়ে পানির অভাব হবে না।এলাকার প্রবীণ মুরব্বী ও বর্তমান মেম্বার আবু বক্কর মেম্বার বলেন, এ জলমহালটি প্রকাশ্যে নিলামের দাবিতে বিভাগীয় কমিশনার ও কে বি ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি বরাবরে বার বার আবেদন করে গেছেন উপজেলার নোয়াগাঁও, সন্তোষপুর, চন্দ্রপুর ও নাচনিসহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দা ও মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যরা। আমরা সরকারকে বেশি পরিমাণ রাজস্ব দেওয়ার কথাও আবেদনে উল্লেখ করেন। কিন্তু ঘুরে ফিরে বার বার পেয়ে গেছেন স্বাধীন মেম্বার। জলমহালটি দ্রুত প্রকাশ্য নিলাম করার দাবি করছেন এলাকাবাসী।দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান যুগ্ম আহবায়ক প্রদীপ রায় বলেন, মূলত এই বিলটির কারণেই শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটিয়েছে স্বাধীন মেম্বার। এ বিল নিয়ে আশপাশের ৫ গ্রামের সাথে তার বিরোধ দীর্ঘদিনের, সে সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। আমরা দ্রুত ছন উল্ল্যা গোছাখাই জলমহালটির প্রকাশ্য নিলাম চাই। জলমহালটি প্রকাশ্যে নিলামের দাবিতে বিভাগীয় কমিশনার ও কে বি ওয়াকফ এস্টেটের মেতাওয়াল্লি বরাবরে বার বার আবেদন করে কোন সুফল পাওয়া যায় নি।
কে বি ওয়াকফ এস্টেটের ম্যানেজার আব্দুর রহমান এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে, এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমি সিলেটে নতুন এসেছি। শাল্লার জলমহালের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখব।
২৪ঘণ্টা/রানা /বাপ্পা