Tag: অনটনে

  • মিরসরাইতে ৬ হাজার পরিবহন শ্রমিকের দিন কাটছে আর্থিক অনটনে

    মিরসরাইতে ৬ হাজার পরিবহন শ্রমিকের দিন কাটছে আর্থিক অনটনে

    ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ। আশরাফ উদ্দিন, মিরসরাই : চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার প্রায় ৬ হাজার পরিবহন শ্রমিক আর্থিক অনটনে দিন পার করছে। কর্মহারা উপজেলার পরিবহন শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরাও অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছে।

    করোনায় প্রাদূর্ভাবে যেসব শ্রমজীবিদের উপর বড় ধরনের আঘাত এসেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো পরিবহন শ্রমিক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সব ধরণের গণপরিবহন এখন প্রায় বন্ধ রয়েছে।

    আপাতত কোনো কাজ নেই তাদের। আরো কতদিন পরিবহন যোগাযোগ বন্ধ থাকতে পারে তার নিশ্চয়তা নেই। ফলে পরিবহন শ্রমিকরা এখন দিশেহারা। ব্যাক্তিগত পরিবহনের সাথে সম্পৃক্ত কিছু শ্রমিক মাসিক বেতনে কাজ করলেও অধিকাংশ শ্রমিক দিন মজুরের মতোই কাজ করেন।

    কাজ করলে টাকা, আর কাজ না থাকলে টাকা নেই। ফলে কাজ না থাকলে ওই শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা না খেয়েই দিন কাটে এমনি আবস্থা বর্তমানে।

    জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন রুটে, বাস, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, লরি, হাইচ, মাইক্রো, সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করতো। কিন্তু করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে অঘোষিত লকডাউনের কারণে গত দেড়মাস ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কষ্টে দিন পার করছে উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার পরিবহন শ্রমিক।

    পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বারইয়ারহাট-চট্টগ্রাম রুটে চয়েস ও উত্তরা বাসে ৪শ ৪০জন শ্রমিক রয়েছেন। দারোগাহাট-বারইয়ারহাট-ফেনী রুটে চলাচল করা আনন্দ পরিবহনে ১শ ৩০জন, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রো, হাইচে রয়েছে ৫শ জন, বারইয়ারহাট-সীতাকুন্ড রুটে চলাচল করা হিউম্যান হলারে রয়েছে ২শ ও মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন রুটে প্রায় ৫ হাজার সিএনজি অটোরিক্সা চালক রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩শ অটোরিক্সা চলাচল করলেও বাকি চালকদের বেকার জীবন কাটছে।

    করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দফায় দফায় বাড়ানো হয় সরকারি সাধারণ ছুটির মেয়াদ। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ৫ মে পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে এ ছুটি। এই সংবাদ লিখা পর্যন্তা ৫ মে বিকাল ৫টার পরও গণপরিবহন চালু করার কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

    ফলে এক প্রকার ঘরবন্দি হয়ে আছেন দেশের মানুষ। এতে সকল পর্যায়ের কর্মহীন মানুষ গুলোর দুর্ভোগও বাড়ছে। সরকার নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের খাদ্য সংকট নিরসনে শুরু থেকেই ত্রাণ কর্মসূচি চালু করলেও চাহিদার অনুপাতে ছিল অপ্রতুল। পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের অভিযোগ, প্রশাসন ছাড়া জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে পরিবহন শ্রমিকরা কোন ত্রাণ পাচ্ছেন না।

    মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার মামুন নামে এক পরিবহন শ্রমিক সীতাকুন্ড-বারইয়ারহাট রুটে হিউম্যান হলার চালান। তিনি বলেন, গত দেড়মাস ধরে বেকার বসে আছি। সামান্য সহযোগীতা পেয়েছি, তা দিয়ে বড়জোর একসপ্তাহ গেছে। আরো কতদিন বেকার থাকতে হয় বুঝতেছিনা। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মরার উপক্রম হয়েছে।

    একাধিক পরিবহন শ্রমিক বলেন, অধিকাংশ শ্রমিকরা দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। তাদের কোনো পুঁজি নেই। দিনে যা আয় করেন দিনেই তা শেষ হয়ে যায়। পরদিন খেতে হলে তাদের কাজে যেতে হয়। অন্যথায় উপোষ থাকতে হয় তাদের।

    উপজেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক মোঃ ইউসুফ বলেন, উপজেলার বিভিন্ন রুটে প্রায় ৫ হাজার সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করতো। গত দেড়মাস ধরে করোনা ভাইরাসের কারণে ২ থেকে ৩শ সিএনজি ছাড়া বাকি সব সিএনজি চলাচল বন্ধ রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি কোন সাহায্য সহযোগীতা সিএনজি চালকরা পায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

    চট্টগ্রাম বাস-মিনিবাস হিউম্যান হলার শ্রমিক ইউনিয়ন বারইয়ারহাট শাখার সাধারণ সম্পাদক আরিফ উদ্দিন মাসুক জানান,অনেক কষ্টে দিন কাটছে পরিবহন শ্রমিকদের।

    তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে ২শ শ্রমিককে ১০ কেজি করে চাল দিয়েছে। জোরারগঞ্জ থানা থেকে ৫০জন শ্রমিককে চাল দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমার পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহযোগীতা করেছি। শ্রমিকদের সহযোগীতার জন্য চট্টগ্রাম শ্রম অধিদপ্তরে আবেদন করেছি।

    বারইয়ারহাট-মাদারবাড়ি রুটে চলাচল করা উত্তরা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল কামাল মিটু বলেন, লকডাউনে শুধু শ্রমিকরা নয়, বাস মালিকদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তবে শ্রমিকদের পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে প্রায় ৩শ পরিবহন শ্রমিককে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছি।

    মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬শ পরিবহন শ্রমিককে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছি। তার মধ্যে বাস-ট্রাক হিউম্যান হলারের শ্রমিক ৫শ ৫০ জন ও সিএনজি অটোরিক্সা চালক ৫০জনকে সহযোগীতা করেছি।

    ২৪ ঘণ্টা/আর এস পি