সিআরবির শিরীষতলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে আয়োজিত অমর একুশে বই মেলার উদ্বোধন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র (প্রতিমন্ত্রী) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
শুক্রবার শুরু হওয়া ২৩ দিনব্যাপী মেলা শেষ হবে ২ মার্চ। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল বলেন, একুশ আমাদের চেতনার উৎস। একুশের চেতনাকে ধারণা করে আমরা এগিয়ে যাব এ হোক আমাদের শপথ।
পাঠকদের বই মেলায় আসার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, পাঠকরা মেলায় আসুন৷ আপনাদের নতুন প্রজন্মকেও নিয়ে আসুন৷ মাদকমুক্ত, সঙ্কীর্ণতামুক্ত সমাজ গড়তে শিশুদের হাতে বই তুলে দিন৷
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, বইমেলার সাথে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য জড়িত৷ বই মেলাকে সফল করতে মেলার নিরাপত্তার জন্য আমরা সচেষ্ট থাকব।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, বই মেলার উপযোগী কোন খাস জমি পাওয়া গেলে সেখানে বই মেলাসহ বিভিন্ন আয়োজনের জন্য স্থায়ীভাবে ইনশাল্লাহ বরাদ্দ পাওয়া যাবে৷
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম মেলার আয়োজন করায় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান৷
অনুষ্ঠানে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহাম্মদ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, চসিকের শিক্ষা স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুসহ কাউন্সিলরবৃন্দ, সচিব খালেদ মাহমুদ, মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেমসহ বিভাগ ও শাখা প্রধানবৃন্দ এবং চসিকের উপ-সচিব আশেকে রসুল টিপু, সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাবু, সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস উপস্থিত ছিলেন৷
এবারের আয়োজনের ২৩ দিনজুড়ে রবীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লোক উৎসব, মরমি উৎসব, বসন্ত উৎসব, তারুণ্যের উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, শিশু উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, নারী উৎসব, চাটগাঁ উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কবিতা আবৃত্তি ও ছড়া উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, কুইজ প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, গুণিজন সংবর্ধনা, সম্মাননা পদক এবং সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান।
মেলায় সংগ্রামে-আন্দোলনে আলোকচিত্র সংকলন
‘গৌরবগাথায় শেখ হাসিনা’’ এবং ‘৬৯ থেকে ৭১’ দুটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়৷
৯২টি প্রকাশনা সংস্থার অংশগ্রহণে চট্টগ্রামে আজ (শুক্রবার) বিকেলে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে এ মেলা শুরু হয়ে চলবে ২ মার্চ পর্যন্ত।
নগরের সিআরবি শিরীষতলায় ৪৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় আয়োজিত এ মেলায় ১৫৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলায় প্রবেশ করা যাবে।
বইমেলা উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। এর মধ্যে রয়েছে ররীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কবিতা উৎসব, মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা, লোক উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণের আয়োজন।
পুলিশ সদর দপ্তর ও অমর একুশে বইমেলায় বোমা হামলার হুমকি দিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। হামলার হুমকি পাওয়ার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানায় এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ।
তিনি বলেন, হামলার হুমকির বিষয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বরাবর একটি উড়ো চিঠি আসে। জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নামে চিঠিটি আসে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। জিডির সূত্র ধরে এ বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমকে (সিটিটিসি) বলা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে তদন্ত করবে।
চিঠিতে হুমকি দিয়ে কী লেখা আছে জানতে চাইলে মো. শহীদুল্লাহ বলেন, চিঠিতে বলা হয়— ‘বাংলা একাডেমি সংশ্লিষ্টদের ওপর ও বইমেলায় বোমা হামলা করা হবে। যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন হোটেলে দেহব্যবসা হয়, অথচ এ বিষয়ে পুলিশ কেন প্রতিবাদ করে না? সে কারণে পুলিশ সদর দপ্তরে হামলা করে পুলিশ হত্যা করা হবে।’
এদিকে শাহবাগ থানার সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মাওলানা মো. সাইফুল ইসলামের সই করা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে অমর একুশে বইমেলায় বোমা হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আতঙ্কের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাজধানীর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যান প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৩’ এর উদ্বোধন করেছেন।
বাংলা একাডেমি আয়োজিত এ বছরের বইমেলার প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। যার মধ্যে রয়েছে-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদিত শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলি-১, কারাগারের রোজনামচা পাঠ বিশ্লেষণ, অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ বিশ্লেষণ ও আমার দেখা নয়াচীন পাঠ বিশ্লেষণ, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রচিত আমার জীবন নীতি, আমার রাজনীতি এবং জেলা সাহিত্য মেলা ২০২২ (১ম খন্ড)।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর।
বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন।
এছাড়া, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রাপ্ত ১৫ জন কবি, লেখক ও গবেষকের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন-ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত (যৌথভাবে কবিতায়), তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), মাসুদুজ্জামান (প্রবন্ধ/গবেষণায়), আলম খোরশেদ (অনুবাদ), মিলন কান্তি দে এবং ফরিদ আহমদ দুলাল (যৌথভাবে নাটকে), ধ্রুব এষ (কিশোর সাহিত্য), মুহাম্মদ শামসুল হক (মুক্তিযুদ্ধের উপর গবেষণা), সুভাষ সিংহ রায় (বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা), মোকারম হোসেন (বিজ্ঞান/বিজ্ঞান কথাসাহিত্য/পরিবেশ বিজ্ঞান), ইকতিয়ার চৌধুরী (জীবনী/স্মৃতিকার/ভ্রমণকাহিনী) এবং আব্দুল খালেক এবং মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (যৌথভাবে লোককাহিনীতে)।
বাংলা একাডেমি সূত্র মতে, বইমেলা ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে, দর্শক ক্রেতা ও পাঠকরা রাত সাড়ে আটটার পরে মেলা প্রাঙ্গনে ঢুকতে পারবেন না। সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং দুপুরে খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি থাকবে।
এবারের মেলায় ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি মাঠে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া, এ বছর মোট ৩৮টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত বছর ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৪টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৫৩টি স্টল থাকবে, যা ২০২২ সালে ছিল ১২৭টি, ২০২১ সালে ১৪০টি এবং ২০২০ সালে ১৫৫টি। অন্যদিকে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বইমেলা ভেন্যু ও এর আশেপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে এবং মেলার ১১ লাখ বর্গফুট জায়গার প্রতিটি স্থান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
এরআগে জাতীয় সঙ্গীত এবং অমর একুশের সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ সমবেত কন্ঠে পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপরই সকলে অমর একুশের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী স্মারকে স্বাক্ষর করে বইমেলা উদ্বোধনের পর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমাদের নতুন প্রজন্মের সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য তাদেরকে সৃজনশীল বই পড়ার ব্যাপারে উৎসাহী করে তুলতে হবে। কেননা, মানসিকভাবে সুস্থ প্রজন্মই পারে একটি দেশ ও জাতিকে সার্বিকভাবে উন্নত করে তুলতে।
আজ সোমবার বিকেলে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনাসিয়াম হলে চট্টগ্রামে অমর একুশের বইমেলা উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে মেধা, মনন ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাওয়া। আমরা আরো আগেই এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারতাম। গত ১১ বছরে দেশ আরো বহুদূর এগিয়ে যেতে পারতো, যদি দেশে নেতিবাচক ও সংঘাতের রাজনীতি না থাকতো।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে নালিশ জানানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন নির্বাচন নিয়ে তাদের যদি নালিশ থাকলে তারা নির্বাচন কমিশনে যেতে পারতো, আদালতে যেতে পারতো।
ভোটারদের কাছে নালিশ জানাতে পারতো। কিন্তু তা না করে বিদেশিদের কাছে নালিশ দিয়ে বিদেশে বিএনপি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্যের অপচেষ্টা করছে এবং এটা তারা বারবারই করছে। তারা বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দিতে চায়। এটি কখনো আমাদের দেশের জন্য সম্মানজনক নয়।
তিনি এ ধরণের কর্মের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে আর ছোটো না কার জন্য বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানান।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো সম্মিলিত বইমেলা আয়োজনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. হাছান বলেন, আগে বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্নভাবে বইমেলা হতো। এতে সাধারণ্যের মধ্যে আগ্রহ কম ছিল। গতবছর থেকে সবাইকে নিয়ে মেলা আয়োজনের কারণে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। এবারের মেলা গতবারের চেয়েও গুছানো বলে তিনি মন্তব্য করেন। একটি সময় এটি ঢাকার বইমেলার মতো অনেক বড় আঙ্গিকে আয়োজন হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি চত্বরে চাদর বিছিয়ে বইমেলার যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখন সেখানে ৮ লক্ষ বর্গফুট এলাকজুড়ে মেলা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, চার/পাঁচ হাজার বছর আগেও মানুষ ও অন্য প্রাণীর মধ্যে তেমন পার্থক্য ছিল না। মানুষের সাথে প্রাণীর লড়াই হতো। অনেক প্রাণী আছে যারা মানুষের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। কিন্তু মানুষ তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আস্তে আস্তে অন্যান্য প্রাণী থেকে বহুদূর এগিয়ে গেছে। মানুষ তার আবিষ্কার লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণে রাখে এবং এই সংরক্ষণের বড় মাধ্যম হচ্ছে বই। পরে আবার সেই ডকুমেন্টেড বিষয়গুলোকে চর্চার মাধ্যমে চরম উৎকর্ষ সাধন করেছে। এতেই প্রাণী থেকে মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। যেমন ১৫০ বছর আগে মানুষ গাড়ি বানিয়েছিল। পরে অনেক গবেষণার পর গাড়ি আজকের পর্যায়ে এসেছে। একইভাবে বিমান আবিষ্কারের পরও ক্রমাগত গবেষণার মধ্য দিয়ে বিমান বর্তমান অবস্থানে উঠে এসেছে।
মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এতে অনেকটা প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে মানুষ। আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। এ আত্মকেন্দ্রিকতায় মানুষের স্বাভাবিক মূল্যবোধ লোপ পাচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই মানুষের মানবিক মূল্যবোধকে নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। এ মানবিক মূল্যবোধকে ধরে রাখা ও এর উৎকর্ষ সাধনের জন্য মানুষকে সৃজনশীল বই পড়তে হবে।
ড. হাছান বলেন, আজকাল অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু যিনি এর প্রবক্তা সেই বিল গেটস ১৬ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে তাঁর কোনো সন্তানের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেননি। আমরা স্মার্ট ফ্যামিলিগুলো বুঝতেও পারি না শিশুসন্তানের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিয়ে আমরা তার কতো বড় ক্ষতি করছি। সে এ ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে ঢুকে যা ইচ্ছে তা দেখতে পারছে।
মন্ত্রী নিজের ছাত্রজীবনের কথা স্মরণ করে বলেন, আমার বাসা ছিল হেমসেন লেনে। সেখান থেকে কয়েক বন্ধু মিলে হেঁটে মুসলিম হাইস্কুলে যেতাম। আমাদের কিছু বন্ধু ছিল যারা হাঁটতে হাঁটতে বই পড়তো। আমাদের কাজ ছিল এ চলন্ত অবস্থায় বই পড়তে গিয়ে তারা যেন নালা-নর্দমায় পড়ে না যায় তা দেখা। আজকাল এরকম দৃশ্য দেখাই যায় না।
তিনি বলেন, আমাদের ছোটোবেলায় দস্যু বনহুর মাসুদ রানার মতো কিছু আকর্ষক ধারাবাহিক বই ছিল। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে শিক্ষনীয় তেমন কিছু ছিল না। এসবের পাশাপাশি শিক্ষনীয় এবং নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন বহু বই ছিল। এসব বই পড়েই মানবিক মানুষ হওয়া যায়।
তিনি ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধ থেকে বের হয়ে মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তুলতে শিশুদের বই পড়ার উৎসাহ সৃষ্টির জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, খেয়াল রাখতে হবে শিশুদের হাতে তুলে দেয়া এসব বই যেন মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হতে হবে অর্থনৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের উন্নত একটি রাষ্ট্র, যেটি দেখে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো আমাদের অনুকরণ করবে।
মন্ত্রী আয়োজকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশনেরও অনেক স্কুল কলেজ আছে। এগুলোসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বইমেলায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা এবং বই পড়ার ক্ষেত্রে তাদের পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এতে তারা বই পড়ায় উৎসাহী হয়ে উঠবে।
সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামে এটি দ্বিতীয় সম্মিলিত মেলা। ভবিষ্যতে এ মেলাকে আরো বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের বই পড়তে উৎসাহী করে তুলতে মন্ত্রীর পরামর্শকে সাধুবাদ জানিয়ে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুদ্দোহা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক ও মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম নিপু।
এর আগে, জিমনাসিয়াম প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে ২০ দিনব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ২০২০-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।