Tag: অর্থ পাচার

  • পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সিঙ্গাপুরের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

    পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সিঙ্গাপুরের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

    বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার এবং বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনের ব্যয় কমাতে সহায়তা করার জন্য সিঙ্গাপুরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ রোববার বাংলাদেশে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রদূত ডেরেক লো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রদূতের প্রতি এ আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশে প্রচুর অর্থ পাচার করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন আমাদের।

    রাষ্ট্রদূত লো এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন।

    অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের খরচ কমানোর জন্য ঢাকার সঙ্গে কাজ করার জন্য সিঙ্গাপুরের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জানান, প্রবাসীরা যেন তাদের পরিবারের কাছে আরও বেশি অর্থ পাঠাতে পারে সে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার অভিবাসনের ব্যয় কমিয়ে আনতে চায়। আমরা সিঙ্গাপুরের সঙ্গে নিয়োগের খরচ কমানোর জন্য একটি মডেল কাঠামো তৈরি করতে পারি।

    রাষ্ট্রদূত সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশকে বৈদেশিক নিয়োগ ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করার পরামর্শ দেন, যেন মানবপাচার ও শ্রমিক শোষণের আশঙ্কা কমে যায়।

    দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা, অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি, শিপিং, শিক্ষা ও নিজ নিজ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও আলোচনা হয়।

    ড. ইউনূস বলেন, স্বৈরাচারী সরকার পতনের মাত্র তিন মাসের মাথায় অর্থনীতি ভালোভাবে পুনরুদ্ধার করে বাংলাদেশ এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত। এখন এদেশে ব্যবসা করার উপযুক্ত সময়।

    সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র ডিরেক্টর ফ্রান্সিস চং বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব করেছিল। প্রস্তাবিত এফটিএ’র ওপর একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং উভয় দেশই এখন কীভাবে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করা যায় তার সুযোগ নির্ধারণ করবে।

    লো বলেন, সিঙ্গাপুর পানি শোধন এবং বর্জ্য শক্তি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তাদের দক্ষতা ভাগাভাগি করতে পারলে খুশি হবে। তিনি উভয় দেশের খাদ্য সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার প্রস্তাব করেন।

    অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তার সরকার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে এবং সার্ককে দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে আরও ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে।

    তিনি আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির জন্য সিঙ্গাপুরের সমর্থন চান। প্রতিক্রিয়ায় ডেরেক লো জানান, তার দেশ এ ব্যাপারে ইতিবাচক রয়েছে।

    অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ঢাকা তার পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মিত্রদের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। তিনি বলেন, আমরা পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে পার্থক্য করি না। আমাদের সর্বত্র সেতু নির্মাণ করতে হবে।

    বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব ও মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং ঢাকায় সিঙ্গাপুরের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স মাইকেল লি।

  • রপ্তানির আড়ালে ৩৮২ কোটি টাকা পাচার

    রপ্তানির আড়ালে ৩৮২ কোটি টাকা পাচার

    জাল নথিপত্রে রপ্তানির আড়ালে ১৭৮০টি চালানের বিপরীতে চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩৮২ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

    প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সাবিহা সাকি ফ্যাশন, এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন, ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন ও ইলহাম। প্রতিষ্ঠানগুলো টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট, হুডি জাতীয় পণ্য ৭টি দেশে রপ্তানি করেছে।

    মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর কাকরাইলে সংস্থাটির কার্যালয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ ফখরুল আলম এ তথ্য জানান।

    শুল্ক গোয়েন্দার ডিজি বলেন, আমরা প্রথমে সাবিহা সাকি ফ্যাশন নামের প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতির বিষযটি উদঘাটন করি। তারই ধারাবাহিকতায় আরও তিন প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের তথ্য পাই। তাদের কোনো এলসি ছিল না, আর রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করেছে। ৪টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিগত সময়ের ১৭৮০টি চালানের বিপরীতে ১৮ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি দেখানো হয়। যার ঘোষিত মূল্য ৩ কোটি ৭৮ লাখ ১৭ হাজার ১০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৮২ কোটি টাকা। আমাদের ধারণা অর্থের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।

    তিনি বলেন, যখন কোনো জালিয়াত চক্র অর্থ পাচারের উদ্দেশ্য রপ্তানি করে, তখন তার উদ্দেশ্যই থাকে রপ্তানি মূল্য কোনোভাবেই দেশে আসবে না। সেক্ষেত্রে তারা পণ্যের মূল্য কোনো না কোনোভাবে কম দেখানোর চেষ্টা করে। তার প্রধান লক্ষ্যই হলো টাকা বিদেশে পাচার করা। সেক্ষেত্রে তারা পণ্য রপ্তানির কথা বললেও উদ্দেশ্য হলো পণ্যের বিপরীতে টাকা আর দেশে আসবে না। বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ পন্থায় দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় মানিলন্ডারিং সংঘটিত হয়েছে।

    প্রতিষ্ঠানগুলো টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট, হুডি প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি করে অর্থ পাচার করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হলো লিমেক্স সিপার্স লিমিটেড, এরইমধ্যে তাদের আইডি নম্বর লক করা হয়েছে। ৪টি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্য আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে এধরনের কার্যক্রমের অভিযোগের ভিত্তিতে বর্তমানে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

    শুল্ক গোয়েন্দা জানায়, সাবিহা সাকি ফ্যাশন নামের প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানি দলিল জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে কিন্তু পণ্যের রপ্তানি মূল্য বা বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসেনি। গত ৩১ জানুয়ারি শুল্ক গোয়েন্দার একটি টিম চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গা অভিযান পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটির টি-শার্ট ও লেডিস ড্রেস রপ্তানির কথা থাকলেও বেবি ড্রেস, জিন্স প্যান্ট, লেগিন্স, শার্ট ও শালসহ ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য রপ্তানির প্রমাণ পাওয়া যায়। যা সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও নাইজেরিয়াতে রপ্তানি করা হয়েছে। তদন্তে দেখা যায় সাবিহা সাইকি ফ্যাশন মোট ৮৬টি পণ্যচালানের বিপরীতে ৯৯৭ মেট্রিক টন মেনস ট্রাউজার, টি-শার্ট, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট ও হুডি রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৭ মার্কিন ডলার বা ২১ কোটি টাকা। আর ওই টাকা দেশে আসার সুযোগ নেই।

    অন্যদিকে এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন নামীয় প্রতিষ্ঠান বিগত সময়ে ১৩৮২টি পণ্যচালান রপ্তানি করে। রপ্তানি করা পণ্য চালানগুলোতে এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন ১৪ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য ২ কোটি ৫৮ লাখ ২৬ হাজার ৮৬৬ মার্কিন ডলার বা ২৮২ কোটি টাকা।

    ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন জালিয়াতির মাধ্যমে ২৭৩টি পণ্যচালান রপ্তানি করে। পণ্যচালানগুলোতে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন ২ হাজার ৫২৩ মেট্রিক টন টি-শার্ট, ট্রাউজার, টপস রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য ৬৫ লাখ ৪ হাজার ৯৩২ মার্কিন ডলার বা ৬২ কোটি টাকা।

    আর ইলহাম নামীয় প্রতিষ্ঠানটি বিগত সময়ে রপ্তানি দলিল জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৯টি চালান রপ্তানি করে। রপ্তানি করা পণ্য চালানগুলোতে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান ৬৬০ মেট্রিক টন টি-শার্ট, ট্যাংক টপ, লেডিস ড্রেস প্রভৃতি রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ৪৮৫ মার্কিন ডলার বা ১৭ কোটি টাকা।

  • কাসিকর্ন ব্যাংকে পাপিয়ার চার কোটি টাকার সন্ধান

    কাসিকর্ন ব্যাংকে পাপিয়ার চার কোটি টাকার সন্ধান

    যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া রাজধানীর একাধিক পাঁচতারকা হোটেলে রেখে নারীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করা ও বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে । এছাড়া অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাচার করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে তিনি বিদেশে নিয়ে যান। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের ‘কাসিকর্ন’ ব্যাংকের একটি শাখায় তার অন্তত ৪ কোটি টাকা রয়েছে।

    ২০১৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর তিনি ওই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেন। ব্ল্যাক মেইলিং, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, তদবির, চাঁদাবাজির ভাগ নেয়াসহ অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ড করে ওই টাকা তিনি অর্জন করেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে স্বীকার করেছেন। তবে এ পর্যন্ত দেশের কোন ব্যাংকে রাখা তার বড় অংকের অর্থের কোন তথ্য মিলেনি জিজ্ঞাসাবাদে। টাকা পাচারে মতিঝিলের এক হুন্ডি ব্যবসায়ীর সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া ওই টাকা উদ্ধারের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটকে বিষয়টি অবহিত করেছেন।

    তার বিরুদ্ধে যে মানি লন্ডারিং মামলা রয়েছে সেই মামলার আওতায় ওই টাকা পাচারের বিষয়টি তদন্ত চলছে। প্রত্যেক মাসে পাপিয়া তার দলবল নিয়ে প্রমোদ ভ্রমণে যেতেন ব্যাংককে। ব্যাংককের ‘পাকরেট’এলাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকতেন। গত ২২শে ফেব্রুয়ারি রাতে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে পাপিয়া ও তার স্বামীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১। রাজধানীর দুই থানায় তার নামে ৩ টি মামলা হয়েছে। ওই তিন মামলায় আদালত তাদের ১৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন।

    মামলাটি বর্তমান তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (উত্তর)। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, ‘পাপিয়া র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের ব্যাংকে টাকা পাচার করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। এটা তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছি।’

    তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, পাপিয়া থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইউক্রেন, রাশিয়া, চায়না, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়াসহ অন্তত ১২ টি দেশে ঘুরতে গেছেন। তবে বেশি যাতায়াত করতেন ব্যাংককে। ব্যাংককে গেলে দুই সপ্তাহ ধরে থাকতেন। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের কাছাকাছি থাকা ‘পাকরেট’ এলাকায় চুক্তিভিত্তিক ভাড়া করা বাসায় তিনি থাকতেন। চুক্তিতে ১৫ দিন ওই ফ্ল্যাটে থাকতে হলে তাকে দেয়া লাগতো বাংলাদেশী টাকাই প্রায় আড়াই লাখ টাকা।

    সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার বাংলাদেশের ব্যাংকে কোন টাকা নেই বলে জানিয়েছেন। বিদেশের ব্যাংকে কোন টাকা নেই বলে তিনি দাবি করলেও এক পর্যায়ে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন,‘ তার থাইল্যান্ডের একটি ব্যাংকে টাকা রয়েছে। ওই টাকা তিনি দেশ থেকে পাচার করেছেন।

    সূত্র জানায়, পাপিয়া তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানান যে, তাকে প্রায় সময় থাইল্যান্ডে যেতে হতো। সেখানে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি সহজ করা ও তার অবৈধ অর্থের নিরাপত্তার বিষয়টির চিন্তা থেকেই তিনি ওই দেশের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন।

    হুন্ডির মাধ্যমে পাপিয়ার দেশ থেকে টাকা পাচারের বিষয়টি দেখভাল করতেন তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া সাব্বির খন্দকার। তিনি বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন। পাপিয়া যতোবার থাইল্যান্ডে গেছেন তার সঙ্গি হয়েছিলেন সাব্বির খন্দকার।

    রাশিয়ান মডেলদের মাধ্যমে অর্থপাচার: এদিকে পাপিয়ার অর্থ পাচারের বিস্তর তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অবৈধভাবে কামানো টাকা থেকে পাপিয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে এমন তথ্য এখন সিআইডির বিশেষ তদন্ত ও গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তাদের হাতে। রাশিয়া ও থাই মডেলদের মাধ্যমে পাপিয়া বিদেশে বিপুল পরিমান অর্থ পাচার করেছেন। এর বাইরে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছেন পাপিয়া। প্রাথমিকভাবে তার সত্যতা পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে আরো ব্যাপক তথ্য প্রমান সংগ্রহের কাজ চলছে। আরো কিছু তথ্য প্রমান পেলেই শিগগির মানিলন্ডারিং আইনে সিআইডি বাদী হয়ে পাপিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করবে। সিআইডি ছাড়া পাপিয়ার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। দুদক পাপিয়ার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়ে তদন্তে মাঠে নেমেছে। দুদকের পক্ষ থেকে তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও হোটেল ওয়েস্টিনে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিএফআইইউ পাপিয়ার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা, লেনদেন টাকা হস্তান্তর নিয়ে কাজ করছে।

    সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, পাপিয়া গ্রেপ্তারের পরপরই অর্থ পাচারের বিষয়টি সামনে এসেছে। সতত্য যাচাই করতে সিআইডি খোঁজ-খবর নিতে শুরু করে। তারপর অর্থ পাচারের নানা তথ্য পাওয়া যায়। শুধু পাপিয়া নয় তার সঙ্গে আরো কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। তাদের বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে সিআইডি। অনুসন্ধানে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন পাপিয়া ও তার স্বামী সুমনের দেশের বাইরে ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে। অনৈতিক কাজের জন্য বিভিন্ন সময় দেশের বাইরে থেকে মডেলদের নিয়ে আসতেন। পরে পাপিয়া বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের কাছে বিদেশী মডেল সরবরাহ করে বড় অংকের টাকা নিতো। আবার ওই মডেলদের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। বিদেশী মডেলদের মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়টি যাচাই করার জন্য সিআইডি কর্মকর্তারা হোটেল ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চেয়েছেন। এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাপিয়ার ঘনিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিআইডি।

    সিআইডির বিশেষ তদন্ত ও গোয়েন্দা শাখার ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গত সপ্তাহ থেকে আমরা পাপিয়ার অর্থপাচারের বিষয়টি তদন্ত করছি। ইতিমধ্যে আমরা বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ পেয়েছি। তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব নিকাষ সংগ্রহ করেছি। আরো কিছু তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে তার যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবো। তার পরেই সিআইডি বাদী হয়ে পাপিয়ার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা করবে।

    কোন কোন দেশে অর্থ পাচার করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু দেশের তথ্য আমরা পেয়েছি। এখন তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছি সঠিক কিনা। যদি সঠিক হয় তবে আমরা অ্যাকশনে যাবো। বিদেশী মডেলদের দিয়ে পাপিয়া অর্থ পাচার করেন এমন তথ্যের সত্যতা জানতে চাইলে সিআইডির অগ্রানাইজড ক্রাইমের এই ডিআইজি বলেন, বিষয়টি আমরাও শুনেছি। এখন নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো। এছাড়া পাপিয়ার কাছের মানুষ ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য চেয়েছি।

    ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, পাপিয়ার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন অভিযোগ আমরা যাচাই করে দেখছি।

    প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন ও টাকা পাচারের অভিযোগে পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। বাকিরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। এরপর রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে ও নরসিংদীতে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িসহ তাদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থের খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব।

    অভিযানে ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইনে একটি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়।।এরপর তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়।