জটিল রোগে আক্রান্ত একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদারকে দেখতে গিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি তাঁর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানান।
শুক্রবার (২১ জুলাই) রাতে রাজধানীর পান্থপথের বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদারকে দেখতে যান তিনি। এ সময় আজাদ তালুকদারের পাশে বেশকিছু সময় কাটান এবং তাঁর চিকিৎসার সার্বিক খোঁজখবর নেন মন্ত্রী।
সাংবাদিক আজাদ তালুকদার বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসা নিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন। এরপর তথ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে বর্তমানে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে অসুস্থ আজাদ তালুকদার ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। নিজ এলাকার সন্তান আজাদ তালুকদারের অসুস্থতার শুরু থেকেই নিয়মিত চিকিৎসার খোঁজখবর রাখেন চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ ড. হাছান মাহমুদ।
সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ আজাদ তালুকদারের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন খুব প্রয়োজন মন্তব্য করে এসময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, যে কোনো প্রয়োজনে অতীতের মতো পাশে থাকবেন এবং তাঁর সুস্থতা কামনা করে সকলের দোয়া কামনা করেন।
এসময় আজাদ তালুকদারের শয্যাপাশে তথ্যমন্ত্রীর সাথে দৈনিক কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা উপস্থিত ছিলেন।
একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদারকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি সামশুদ্দোহা সিকদার প্রকাশ আরজু সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদার।
বাদীপক্ষের আইনজীবী রেহানা বেগম রানু জানান, দণ্ডবিধির ৫০০ ও ৫০৬ (২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরুর পর চট্টগ্রামে জুয়ার আসর নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রশাসনের চোখ খুলে দেয় একুশে পত্রিকা।
এরই ধারাবাহিকতায় যুবলীগের নাম ব্যবহার করে রাঙ্গুনিয়ায় জুয়া, মাদক, সরকারী জায়গা দখল, চাঁদাবাজি করে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন- তাদের ব্যাপারে তথ্য আহ্বান করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদার।
উক্ত পোস্টে কারো নাম না থাকলেও বিষয়টি নিজের ঘাড়ে টেনে নিয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আরজু সিকদার নিজের অপকর্ম ঢাকার জন্য রাঙ্গুনিয়া থানার সামনে রাস্তা ব্লক করে গত ১০ অক্টোবর বিকেলে সমাবেশ করেন।
যেখানে সাংবাদিক আজাদ তালুকদারকে প্রকাশ্যে মেরে ফেলার, হাত-পা ভেঙে ফেলার, জিহ্বা কেটে নেয়ার হুমকি দেন আরজু সিকদার। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে ক্রমাগত হুমকি ধমকি অব্যাহত রেখেছেন আরজু সিকদার।
একুশে পত্রিকার সম্পাদক আজাদ তালুকদারকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবসংগঠনের ব্যানারে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন।
আজ শনিবার এক বিবৃতিতে সিটি মেয়র বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি একটা বিশাল ইতিবাচক ঘটনা। সেই ধারাবাহিকতায় কিছু সাহসী মানুষ সত্য প্রকাশের প্রত্যাশায় কলমকে হাতিয়ার করেছে। নিজের অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করতে কলমকে যখন আরও শক্ত হাতে ধরছে তখনই তাদেরকে হুমকি দিয়ে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা সত্যি নিন্দনীয় ঘটনা।
সিটি মেয়র আরো বলেন, জঙ্গি ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে আছে দেশের মানুষের শতভাগ সর্মথন। আর সে মানুষদের পাশে আছে একুশে পত্রিকা ও পত্রিকাটির সম্পাদক আজাদ তালুকদারের মত সাহসী সাংবাদিকরা।
হুমকি দিয়ে কলমের কালিকে রক্তে পরিণত করার অপচেষ্টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের শিক্ষা নয়, এটা হুমকিদাতাদের ভুলে না গেলেই শ্রেয়।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে একুশে পত্রিকা সম্পাদক ও রাঙ্গুনিয়া জার্নালিস্ট অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক আজাদ তালুকদারকে প্রকাশ্যে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে।
রাউজান উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আরজু সিকদার একুশে পত্রিকা সম্পাদককে আক্রমণ করে প্রায় ৬ মিনিটের বক্তব্য দেন।
পুরো বক্তৃতাজুড়ে ছিল আজাদ তালুকদারকে মেরে ফেলা, কেটে ফেলার হুমকি। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
একুশে পত্রিকা সম্পাদককে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি কাজী আবুল মনসুর, সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির উদ্দিন তোতা, সাধারণ সম্পাদক লতিফা আনসারী রুনা, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সভাপতি শফিক আহামদ সাজীব ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম বাবু।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। দলের নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলীয় ও সরকারী সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমন অবস্থায় একজন সাংবাদিককে হুমকি সরকার ও দলের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়ার মতো। উপজেলা যুবলীগ সভাপতি হওয়ার মতো যোগ্যতা আরজু সিকদারের আছে কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সাংবাদিকবান্ধব সরকার। সাংবাদিককে হুমকি দিয়ে গণমাধ্যমে সরকারের অর্জনকে ধুলিসাৎ করে দিতে চায় আরজু সিকদার। সাংবাদিকের ওপর কোনো ধরনের হুমকি বরদাশত করা হবে না। দ্রুত হুমকিদাতা আরজু সিকদারকে আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস বলেন, আরজু সিকদারের মতো লোকরা বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করছে। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই অভিযান চালানো উচিত। আমরা চাই, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকুক। আরজু সিকদারের মতো যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
হুমকির বিষয়ে একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদার বলেন, সমাবেশ থেকে আমাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর পুরো ভিডিও চিত্র আমার কাছে আছে। আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকেলে একুশে পত্রিকা সম্পাদককে সরাসরি আক্রমণ করে ‘রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগ নিয়ে কটূক্তিকারী’ উল্লেখ করে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগের ব্যানারে স্থানীয় ইছাখালী এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে আরজু সিকদার।