জয়পুরহাট শহরে চিরকুট লিখে প্রেমিকার আত্মহত্যার পর প্রেমিকও আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। মৃত্যুর আগে প্রেমিক তার বাম হাতে কলম দিয়ে লিখে গেছেন– ‘আমার জন্য যে চলে গেল, আমিও গেলাম।’
বুধবার সকাল ৮টায় জয়পুরহাট শহরের ট্রাক টার্মিনাল এলাকার চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসাকেন্দ্রের স্টাফ কক্ষ থেকে প্রেমিক ইনজামামুল হক ইমরানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাদকাসক্ত চিকিৎসাকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে বিছানার চাদর গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন ইমরান।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে আত্মহত্যা করে তাজনুবা নাভিলা চৌধুরী নীড়, যার সঙ্গে ইমরানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে স্থানীয়রা জানান।
আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া তাজনুবা নাভিলা চৌধুরী নীড় তুলা উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত আবদুস সামাদের মেয়ে। সে জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ইমরান হোসেন জয়পুরহাট পৌর এলাকার মাদারগঞ্জ মৌজার ফরিদ উদ্দিনের ছেলে। তিনি শহরের জয়পুরহাট শহীদ জিয়া ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে জয়পুরহাট শহরের আরাফাত নগরের ইয়ুথ প্লাজার ভাড়াটে বাসা থেকে নাভিলা চৌধুরী নীড়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় লাশের পাশে সাদা কাগজে একটি চিরকুটে লেখা ছিল– ‘I am sorry. মাফ করে দিও আমাকে, আমি তোমাদের ভালো মেয়ে হতে পারলাম না। মাফ করে দিও। খোদা হাফেজ।’ রাতেই তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নাভিলার মৃত্যুর পর দিন বুধবার সকাল ৮টায় জয়পুরহাট শহরের ট্রাক টার্মিনাল এলাকার চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসাকেন্দ্রের স্টাফ কক্ষ থেকে ইমরান নামের এক তরুণের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে বিছানার চাদর গলায় পেঁচিয়ে ইমরান আত্মহত্যা করেন।
ইমরান মৃত্যুর আগে তার বাম হাতে কলমের কালি দিয়ে লিখে যান– ‘IMRAN+NABILA. আমার জন্য যে চলে গেল, আমিও গেলাম’।
স্থানীয়রা বলছেন, দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেম কেন্দ্র করে প্রথমে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় নাবিলা। প্রেমিকার মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে পর দিন একই পথ বেছে নেন ইমরান।
ইমরানের পরিবারের সদস্যরা জানান, নাভিলার সঙ্গে ইমরানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর মধ্যে ইমরান মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তাকে জয়পুরহাট ট্রাক ট্রার্মিনাল এলাকায় চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসাকেন্দ্রে তিন মাস চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়। তিন ভাইয়ের মধ্যে ইমরান সবার ছোট।
ইমরানের বাবা ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে নাভিলার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমরা গরিব। ছেলেকে অনেক নিষেধ করেছি কিন্তু কিছুতেই শোনেনি। নাভিলার আত্মহত্যার খবর পাওয়ার পর থেকে ছেলেটি যেন পাগলের মতো আচরণ শুরু করে।
মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আত্মহত্যারও চেষ্টা করে। অনেক বোঝানোর পর বায়না ধরে মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্রে যাওয়ার। বুঝতে পারিনি আমাদের ফাঁকি দিয়ে আত্মহত্যার জন্যই ছেলেটি মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছিল।
এ বিষয়ে নাভিলার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য বারবার যোগাযোগ করা হলেও পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসাকেন্দ্রের সিনিয়র স্টাফ এসএ জাহাঙ্গীর তুহিন বলেন, রাত ১০টার দিকে ইমরানকে তার বাবা ফরিদ উদ্দিন চিকিৎসাকেন্দ্রে রেখে যান। পরের দিন সকাল ৮টার দিকে আমাদের স্টাফ রুমে ইমরানের মরদেহ ঝুলতে দেখে আমরা পুলিশকে খবর দিই। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
জয়পুরহাট সদর থানার ওসি শাহরিয়ার খান বলেন, এ ঘটনায় দুটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, নাভিলা ও ইমরানের আত্মহত্যার বিষয়টি প্রেমের কারণেই ঘটেছে।