২৪ ঘন্টা ডট নিউজ। চট্টগ্রাম ডেস্ক : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর চট্টগ্রাম শিল্প বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশ বিদেশের সবার কাছেই দারুণ আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর এই চট্টগ্রামেই। দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি রপ্তানি ও ৬৫ শতাংশ রাজস্ব আহরিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউসের মাধ্যমে। জ্বালানি তেলের বিশাল তেলাধারসহ চট্টগ্রাম বন্দরের পাশেই দেশের অন্যতম এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন সিইপিজেড, কেইপিজেড অবস্থিত।
কালুরঘাট ও মোহরা ভারী শিল্পাঞ্চল, গ্যাসফিল্ড, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজসহ সম্ভাবনাময় নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান যা চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্বকে বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। এত কিছু সত্বেও চট্টগ্রাম আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং দীর্ঘসূত্রতার কারণে অবহেলিত।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রামের আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান, গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপন এবং নিয়মিত গ্যাসের সঞ্চালন লাইন রক্ষণাবেক্ষণের দাবীতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড এর কার্যালয়ের সামনে এক বিশাল মানব বন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদানই হোক চট্টগ্রামবাসীর জন্য মুজিববর্ষের উপহার বলে অভিমত প্রকাশ করে জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সুজন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদানের জন্য কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট অনুরোধ জানান। নতুবা চট্টগ্রামের গ্যাসের গ্রাহকদের সাথে নিয়ে ঘেরাও কর্মসূচী প্রদান করা হবে।
সুজন বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ২৫০০ আবাসিক এবং ১০০ বানিজ্যিক গ্রাহকের টাকা নিয়ে কাঙ্খিত গ্যাস সংযোগ প্রদান করছে না যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশে এল.এন.জি আমদানি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের উপর দিয়ে যাওয়া এল.এন.জি’র লাইনের মাধ্যমে ৫০০ মিলিয়নের অধিক গ্যাস সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন গ্যাস চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হলে চট্টগ্রামবাসী গ্যাসের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থেই বানিজ্যিক রাজধানীতে রূপান্তর করার নানামূখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর নানামূখী উদ্যোগের সুফল ইতিমধ্যে জনগন ভোগ করতে শুরু করেছে। তারপরও চট্টগ্রাম বিদ্বেষী কিছু সংখ্যক অসাধু কর্মকর্তা চট্টগ্রামের প্রতি আক্রোষমূলক আচরনের মাধ্যমে নতুন সংযোগ প্রদান না করে সরকারের বিরুদ্ধে জনগনকে ক্ষেপিয়ে তোলার অসৎ উদ্দেশ্যে লিপ্ত রয়েছে। চট্টগ্রামের গুরুত্বকে আড়াল করার এহেন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সুজন বলেন চট্টগ্রামবাসীর প্রতি বিমাতাসুলভ আচরন কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি আরো বলেন গ্যাসের গ্রাহকগণ প্রি-পেইড মিটার নিয়ে আশান্বিত। তারপরও নগরীতে গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। প্রি-পেইড মিটারের কারণে গ্রাহকগণ ভোগান্তিতে রয়েছে। তিনি অতিসত্বর প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করার জন্য কেজিডিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। এছাড়া নগর জুড়ে স্থাপিত গ্যাসের সঞ্চালন লাইন সমূহ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও আহবান জানান।
তিনি নগরীর ৩৮নং ওয়ার্ডের গ্যাসের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ডিআরএস মেশিন স্থাপনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য কেজিডিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অনুরোধ করেন।
মানব বন্ধন শেষে সুজনের নেতৃত্বে নাগরিক উদ্যোগের দশ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আনুষ্টানিকভাবে কেজিডিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট উল্লেখিত দাবী সমূহ উপস্থাপন করেন।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়েজ আহম্মদ মজুমদার গুরুত্বের সাথে নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনেন।
তিনি বলেন দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দ গ্যাসের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এ উদ্যোগকে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।
চট্টগ্রামের আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদানের বিষয়টি তাই নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন বক্তব্য মারফত আমি আগে থেকেই অবগত আছি। আমি নিজেও হৃদয় দিয়ে গ্রাহকদের এ অসুবিধা অনুধাবন করতে পেরে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পেশ করেছি। সরকারও চট্টগ্রামের নতুন গ্যাস সংযোগের বিষয়ে খুবই আন্তরিক। মন্ত্রণালয় চট্টগ্রামের গুরুত্ব বিবেচনা করে আবাসিক এবং বানিজ্যিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান করবে বলে আমি আশাবাদী।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে যখনই যেখানে যা প্রয়োজন তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আশা করি প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের ইকনোমিক জোনের গুরুত্ব বিবেচনা করে দিকনির্দেশনামূলক সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে আমরাও তখন গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় গ্যাস সংযোগ প্রদান করতে পারবো। এছাড়া গ্রাহক ভোগান্তি দূর করতে আমরা ইতিপূর্বে প্রি-প্রেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি এবং আমাদের বরাদ্ধকৃত প্রি-পেইড মিটার আমরা স্থাপনও করেছি।
খুব দ্রুততার সাথে যাতে অবশিষ্ট প্রি-পেইড মিটার নগরীতে সরবরাহ করা যায় সেজন্য নীতিমালা অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। নীতিমালা অনুমোদন হয়ে গেলে কেজিডিসিএল এর পাশাপাশি গ্রাহকগণ নিজেরাও প্রি-পেইড মিটার লাগাতে পারবে বলে নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাছাড়া গ্যাসের সঞ্চালন লাইন রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান যে ইতিমধ্যে নিয়মিতভাবে গ্রাহকদের বাসার গ্যাস লাইনের রাইজার পরীক্ষা করণ শুরু হয়েছে এবং আমাদের এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
৩৮নং ওয়ার্ডের গ্যাসের চাপ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিআরএস মেশিন স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট ইতিমধ্যে অনুমোদন হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে রাস্তা কাটার অনুমতি পেলেই ডিআরএস মেশিন স্থাপন কাজ শুরু হবে বলে নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন ইতিমধ্যে ৩৮নং ওয়ার্ডে ওয়াসার সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ঠিক একইভাবে সিটি কর্পোরেশন যদি দ্রুততার সাথে কেজিডিসিএলকে রাস্তা কাটার অনুমতি প্রদান করে তাহলে ৩৮নং ওয়ার্ডের এলাকাবাসী গ্যাসের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে। তিনি দ্রুততার সাথে রাস্তা কাটার অনুমতি দানের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এছাড়া গ্রাহকদের যে কোন অসুবিধায় তার দপ্তরে যোগাযোগ করার আহবান জানান।
মানব বন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ন্যাপ কেন্দ্রীয কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাশ গুপ্ত, রাজনীতিবিদ হাজী মোঃ ইলিয়াছ, আব্দুর রহমান মিয়া, সাইদুর রহমান, নিজাম উদ্দিন, নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব হাজী মোঃ হোসেন, কেজিডিসিএল সিবিএ সভাপতি মাকসুদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসলাম, কেজিডিসিএল ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ ইকরাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন, শেখ মামুনুর রশীদ, সাহেদ বশর, জাহাঙ্গীর আলম, অনির্বাণ দাশ বাবু, হাসান মোঃ মুরাদ, রকিবুল আলম সাজ্জী, মহানগর নগর ছাত্রলীগ সভাপতি এম ইমরান আহমেদ ইমু, মোঃ ওয়াসিম, আব্দুল জাহেদ মনি প্রমূখ।