২৪ ঘন্টা ডট নিউজ। চট্টগ্রাম ডেস্ক : চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলনে আবু সুফিয়ান সরকার নির্বাচন কমিশনকে ভোটাধিকার হরণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে মন্তব্য করেন।
এ আসনের উপ-নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছে ঘোষণা করলেও বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান দাবি করেছেন, মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে পেরেছেন। বাকি ভোট ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে দেখানো হয়েছে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারী) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দলীয় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ‘জালিয়াতির চিত্র’ তুলে ধরেন আবু সুফিয়ান। উপ-নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, বিভিন্ন অনিয়ম এবং ইভিএমে ভোট কারচুপি জাতির সামনে উপস্থাপনের জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে আবু সুফিয়ান বলেন, উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, প্রশাসন ও দলীয় সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে তথাকথিত ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে জনগণের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এই নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে, ইভিএমের মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করা যায়। এটি মধ্যরাতের নির্বাচনের মতো আরেকটি কৌশল।
ইভিএম এখন মহাপ্রতারণার নতুন পদ্ধতি। এতে ডিজিটাল ডাকাতির পর অভিযোগ করারও সুযোগ নেই। একজন ভোটার কোথায় ভোট দিলেন তা নিজে জানারও সুযোগ নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে সুফিয়ান বলেন, ‘মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু দেখানো হয়েছে ২২ শতাংশ। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সহায়তায় ইভিএম মেশিনের পাসওয়ার্ড নিয়ে প্রতি বুথে ৭০ থেকে ৮০টি জাল ভোট দিয়েছে। এভাবে ২২ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে।
আবু সুফিয়ান বলেন, উপ-নির্বাচন ছাড়াও বিগত এক বছর আগে অনুষ্ঠিত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমি এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলাম। বিশ্বের ইতিহাসে কলঙ্ক জনক এই নির্বাচনে আমি ধানের শীষ প্রতিকে ভোট পেয়েছিলাম প্রায় ৬০ হাজার। কিন্তু ইভিএম মেশিনে জালিয়াতির মাধ্যমে আমাকে ভোট দেখানো হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার।
একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ’২২ শতাংশ ভোটের মধ্যে আসলে ভোট পড়েছে ৫ শতাংশ। ১০ শতাংশ ভোট দিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসার নিজে। বাকি ভোট কেন্দ্র দখল করে পাসওয়ার্ড নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্র দখল করে ইভিএমের পাসওয়ার্ড নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগও তুলে ধরেন আবু সুফিয়ান। তিনি জানান, নগরীর হামজারবাগ রহমানিয়া স্কুল কেন্দ্রে বেলা ১২টার সময় ২ নম্বর কক্ষে কয়েকজন বহিরাগত সন্ত্রাসী প্রবেশ করেন।
তারা নির্বাচন কমিশনের আইটি বিশেষজ্ঞ ও প্রিজাইডিং অফিসার ছোটন চৌধুরীকে নিয়েই সেখানে যান। তার মোবাইল থেকে নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে ডিভাইস নম্বর দিয়ে কোড অথবা পাসওয়ার্ড চাইলে +৮৫৮৪৭৭৬৭+ নম্বরটি দেওয়া হয়। তারা এসময় বলতে থাকেন, ১০ শতাংশ ম্যাচিং কোড দিয়ে তাড়াতাড়ি ভোট নিয়ে নেন।
তখন অন্যজনের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। অবৈধভাবে শুরু করা ভোটার নম্বর- ৪২২, ৫০২, ৪৯৯ ও ৫৮০। মৃত ব্যক্তি এবং প্রবাসীদের নামেও ভোট দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর জানান, ভোটগ্রহণের সময়ই অনিয়মের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামানকে অভিযোগ করা হলেও তিনি নীরব থাকেন এবং অস্বীকার করেন। এভাবে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন পূর্ব নির্ধারিত ফলাফল ঘোষণা করেছে।
ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়ে সুফিয়ান বলেন, ‘জনগণের করের টাকা খরচ করে সরকার ও নির্বাচন কমিশন তামাশা করেছে। তামাশার নির্বাচন জনগণ মেনে নেয়নি।
পরপর তিনবারের সাংসদ জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনে গত ১৩ জানুয়ারী উপ-নির্বাচন হয়েছে। এতে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ৮৭ হাজার ৩৪৬ ভোট পেয়ে জয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আবু সুফিয়ান পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৩৫ ভোট।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিষ্টার মীর মো. হেলাল উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলী আব্বাস, সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ খান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহসভাপতি মাহবুবুল আলম, নাজিম উদ্দিন আহমদ, সি. যুগ্ম সম্পাদক এস এম সাইফুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক কাজী বেলাল উদ্দিন, ইসকান্দর মীর্জা, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আনোয়ার হোসেন লিপু, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামরুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য বোয়ালখালীর পৌর মেয়র আবুল কালাম আবু, এস এম মামুন মিয়া, হুমায়ুন কবীর আনসার, এডভোকেট আবু তাহের, আবুল কালাম আবু চেয়ারম্যান, মহানগর বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী, সহশ্রম সম্পাদক আবু মুসা, বায়েজিদ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের জসিম প্রমুখ।