তুরস্কের ইস্তানবুল ইয়ালোভার আর মোদিস হোটেলে, আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সূফীস স্কলারের আয়োজনে ৯ম আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব থেকে যাওয়া শতাধিক সূফি ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণে ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে শুরু হয়েছে।
এতে বাংলাদেশ থেকে বিশেষ অতিথি ও আলোচক হিসেবে বর্তমান সময়ে মুসলমানদের তাসাউফের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন সূফি ব্যক্তিত্ব, ওয়ার্ল্ড সূফি ফোরাম বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের বর্তমান ইমাম শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী (মা.জি.আ.)।
তিনি বলেন, ইসলামের ফলিত দর্শন ও মূল নির্যাসই হচ্ছে সূফিবাদ। যুগে যুগে ইসলামী সূফিবাদের দাওয়াত প্রসারিত করেছেন ওলী-মনীষী আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বগণ। ইসলামের সাম্য, শান্তি ও মানববাদি রূপরেখাই সূফিবাদি দর্শনে উজ্জলভাবে বিদ্যমান।
সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী বলেন, ইসলামের সূফিবাদি শান্তি ও মানববাদী দর্শন চর্চা প্রত্যাশিতভাবে তেমন বিকশিত ও প্রসারিত নয় বলেই সারা বিশ্বে আজ ইসলামের অনুসারীদেরকে অনেকেই ভুল বুঝছে। তাছাড়া এর পেছনে কারণও রয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র ছাড়াও ইসলামের নামে এক শ্রেণীর লোকের উগ্রবাদিতা ও হঠকারিতার কারণে মুসলমানরা বিভিন্নভাবে বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত। তাই, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের নামে উগ্রবাদি ও হঠকারীদের থামাতে হবে। আর বিশ্ববাসীকে বুঝাতে হবে ইসলামে উগ্রবাদ, হঠকারিতা ও জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই।
তিনি বলেন, এসব থেকে মুক্তি পেতে সূফিবাদি মানবিক ইসলাম চর্চাকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। সমগ্র বস্তুবাদি দর্শন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সূফিবাদি গণমুখী দর্শনকে দেশে দেশে সামনে নিয়ে আসতে হবে। সূফিবাদি দর্শনকে ছড়িয়ে দিতে সূফিবাদি চিন্তাধারার বোদ্ধা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে সম্প্রীতি ও আন্ত:যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরো বলেন, ইরাক ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ বহু দেশে আজ রক্তপাত ও হানাহানি-সহিংসতা চলছে। মুসলিম বিশ্বে সংঘাত সহিংসতার জন্য শাসকদের গণবিমুখতা ও স্বেচ্ছাচারিতাই বড় দায়ী। শাসকরা দায়িত্বশীল ও গণমুখী হলেই চলমান বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী সারা বিশ্বে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বিশ্ব নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং বাংলাদেশে গণহত্যা ও নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারে পূর্ণ নিরাপত্তা ও নাগরিক মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে নিতে সেদেশকে আন্তর্জাতিক চাপ দিতে বিশ্ব সংস্থাগুলেকে আহ্বান জানান। সারা বিশ্বে শান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে সূফিবাদি জনতাই নিয়ামক শক্তি হতে পারে বলে তিনি মতব্যক্ত করেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মো: আল হোসাইনী (তুর্কী)। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ড. মো: উজ্জান আল হাদীদ আমিন।
আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সূফি ব্যক্তিত্বদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন প্রফেসর ড. হাসান বাশিশ (তুর্কি), ড. মাজেন শরীফ (তিউনিসিয়া), শেখ আহমদ তিজানী বিন ওমর (ঘানা), সালমান চিশতী (ইন্ডিয়া), শেখ বাজু (লেবানন), আব্দুল্লাহ শরীফ আল-উজানী (মরক্কো), ড. সোলাইমান তিজানী (নাইজেরিয়া), শায়খ ড. আব্দুল বারী (সোমালিয়া), ড. মাসউদ আহমদ রেযা (বৃটেন), ড. মো: মতিউল্লাহ নহর কারীজি (আফগানিস্তান), ড. সাইয়েদী আলী মাউন আইনাইনসহ (মরক্কো), সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, বাহরাইন, কাতার, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিগণ। ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার পর্যন্ত চলবে এ আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলন।