Tag: একুশে পদক

  • একুশে পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

    একুশে পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

    অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘একুশে পদক ২০২৪’ তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

    ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষার জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে জাতি বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ‘অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করবে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুরস্কারপ্রাপ্তদের দেওয়া টাকার পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ গত ২০২০ সালে তা বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করা হয়েছে।

    এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি সরকার নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ‘একুশে পদক’র জন্য ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের নাম ঘোষণা করে। এ বছর ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে দুজন, শিল্পকলায় ১২ জন, সমাজসেবায় দুজন, ভাষা ও সাহিত্যে চারজন এবং শিক্ষায় একজন বিশিষ্ট নাগরিক এ পুরস্কার পেয়েছেন।

    ভাষা আন্দোলন বিভাগে পুরস্কারের জন্য মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়ার (মরণোত্তর) নাম ঘোষণা করা হয়েছে। শিল্পকলা বিভাগে সংগীত ক্যাটাগরিতে জালাল উদ্দীন খা (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ (মরণোত্তর), বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর), শুভ্রদেব, নৃত্যকলা ক্যাটাগরিতে শিবলী মোহাম্মদ, অভিনয় ক্যাটাগরিতে ডলি জহুর ও এম এ আলমগীর, আবৃত্তি ক্যাটাগরিতে খান মো. মুস্তাফা ওয়ালিদ (শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী, চিত্রকলা ক্যাটাগরিতে শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিং ক্যাটাগরিতে কাওসার চৌধুরী, সমাজসেবা বিভাগে মো. জিয়াউল হক, রফিক আহামদ, ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (মরণোত্তর) এবং শিক্ষা বিভাগে প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু-এ পুরস্কার পেয়েছেন।

    ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ‘একুশে পদক’ প্রবর্তন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বর্ণপদক, সম্মাননা সনদ ও নগদ অর্থ দিয়ে পুরস্কার প্রদান করে। ২০২৩ সালে ১৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানকে মর্যাদাপূর্ণ একুশে পদক দেওয়া হয়।

  • একুশে পদক পাচ্ছেন যারা

    একুশে পদক পাচ্ছেন যারা

    ‘একুশে পদক-২০২৪’-এর জন্য মনোনীতদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। ভাষা আন্দোলন, শিল্পকলা, ভাষা ও সাহিত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২১ বিশিষ্ট নাগরিককে এই পদক দেওয়া হবে। এর মধ্যে ছয় জন মরণোত্তর এই সম্মাননা পাচ্ছেন।

    মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আইরীন ফারজানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

    পদকের জন্য মনোনীত বিশিষ্টজনেরা হলেন, ভাষা আন্দোলনে মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর)। শিল্পকলার সংগীতে জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব। নৃত্যকলায় শিবলী মহম্মদ। অভিনয়ে ডলি জহুর ও এমএ আলমগীর। আবৃতিতে খান মো. মুস্তফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তফা) ও রূপা চক্রবর্তী।

    চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী। সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও আলহাজ রফিক আহামদ। ভাষা ও সাহিত্যে মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর ও রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (মরণোত্তর)। আর শিক্ষায় অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু একুশে পদক পেতে যাচ্ছেন।

    পদকপ্রাপ্তদের ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের তৈরি ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি করে পদক, চার লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে।

     

  • মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলন সূচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু: প্রধানমন্ত্রী

    মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলন সূচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু: প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের জন্য বারবার কারাবরণ করলেও তার অবদান ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে।

    তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান, সেই অবদানটুকু কিন্তু মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। অনেক বিজ্ঞজন, আমি কারো নাম বলতে চাই না, চিনি তো সবাইকে। অনেকে বলেছেন, ওনার আবার কী অবদান ছিল? উনি তো জেলেই ছিলেন।’

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন বলে উনার কোন অবদান নেই? তাহলে উনি জেলে ছিলেন কেন? এই ভাষা আন্দোলন করতে গিয়েই তো তিনি বারবার কারাগারে গিয়েছেন। সেই গুরুত্ব কিন্তু কেউ দিতে চায়নি।’

    সরকার প্রধান আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘একুশে পদক-২০২৩’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও দুটি প্রতিষ্ঠানের মাঝে পদক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভাষা মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলন সূচনা করেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারই উদ্যোগে ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং আমাদের ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয় ১৯৪৮ সাল থেকে। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা অর্জন।

    পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্টে বঙ্গবন্ধুর ভাষা আন্দোলনে অবদানের কথা উল্লেখ আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টগুলো পাওয়ার পরে আমি একটা ভাষণ দিয়েছিলাম। তখন একজন বিদগ্ধ জন আমাকে খুব ক্রিটিসাইজ করে একটা লেখা লিখলেন যে, আমি নাকি সব বানিয়ে বানিয়ে বলছি।

    তিনি বলেন, গোয়েন্দা রিপোর্টগুলো নিয়ে আমি আর আমার বান্ধবী বেবি মওদুদ, এম আর আক্তার মুকুলের কাছে যাই। মুকুল ভাইকে বললাম আপনার কাছে এই যে সমস্ত রিপোর্ট দিলাম, কোন তারিখে কখন কি করেছেন এখানে সব বিস্তারিত আছে। ফাইলটা দিলাম; আপনি এর জবাবটা লিখুন। তিনি সত্যিই লিখেছিলেন। কারণ, ওনারাতো (সমালোচক) অনেক উঁচু মাপের লোক। আমাদের মত ছোট চুনোপুটিরা কিছু লিখলে তো হবে না সে জন্য। পরে অবশ্য সেগুলো ১৪ খন্ডের পুস্তক আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জাতির পিতার লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও তাঁর ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন ভূমিকার উল্লেখ রয়েছে বলেও তিনি জানান।

    ‘বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার একটা প্রবণতা সব সময় ছিল’, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর দেখা গেল আমাদের সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান, যে স্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই জয়বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ। ৭ মার্চের ভাষণ, যে ভাষণে গেরিলা যুদ্ধের সমস্ত নির্দেশনা এবং সে ঐতিহাসিক কথা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, রেডিওতে প্রতিদিন এই বার্তাটা পৌঁছানো হতো। এই ভাষণের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। সেই ভাষণটাও নিষিদ্ধ। আসলে বঙ্গবন্ধুর নামই তো মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল।

    এ বছর ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে তিনজন, মুক্তিযুদ্ধে একজন, শিল্পকলায় আটজন (অভিনয়, সঙ্গীত, আবৃত্তি, চারু ও চিত্রকলা), রাজনীতিতে দুইজন, শিক্ষায় একজন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান, সমাজ সেবায় একজন ও একটি প্রতিষ্ঠান এবং সাংবাদিকতা, গবেষণা এবং ভাষা ও সাহিত্যে একজন করে একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন।

    ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে খালেদা মঞ্জুর-ই খুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম শামসুল হক (মরণোত্তর) এবং হাজী মোহাম্মদ মজিবুর রহমান। শিল্পকলা বিভাগে অভিনয় ক্যাটাগরিতে মাসুদ আলী খান ও শিমুল ইউসুফ এবং সংগীত বিভাগে মনোরঞ্জন ঘোষাল, গাজী আবদুল হাকিম ও ফজল-এ-খোদা (মরণোত্তর), আবৃত্তি বিভাগে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শিল্পকলায় নওয়াজিশ আলী খান এবং চিত্রকলা বিভাগে কনক চাঁপা চাকমা পুরস্কার পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে মমতাজ উদ্দিন (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় মো. শাহ আলমগীর (মরণোত্তর), গবেষণায় ড. মো. আব্দুল মজিদ, শিক্ষায় অধ্যাপক ড. মযহারুল ইসলাম (মরণোত্তর), সমাজসেবায় মো. সাইদুল হক, অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইসলাম (মরণোত্তর) এবং রাজনীতিতে আকতার উদ্দিন মিয়া (মরণোত্তর) এবং ভাষা ও সাহিত্যে ড. মনিরুজ্জামান পুরস্কার পেয়েছেন। শিক্ষা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এবং সমাজসেবায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এ পুরস্কার লাভ করেছে।

    পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে স্বর্ণপদক, সম্মাননা সনদ এবং চার লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয।

    সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন পদক বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা ও পদক বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর স্বাগত বক্তৃতা করেন।

    মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, উর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এবং কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ দেশ বরেণ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বুদ্ধিজীবিগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে আমাদের আসতে হয়েছে, এখনকার প্রজন্ম যার অনেক কিছু জানেও না।

    তিনি বলেন, উর্দ্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রচেষ্টা, রোমান ও আরবি হরফে বাংলা লেখানোর প্রচেষ্টা এমনকি রবীন্দ্র সঙ্গীতও অন্যদের দিয়ে লেখানোর প্রচেষ্টা বাঙালি দেখেছে, কিন্তু আমরা তখন আন্দোলন করেছি সকলে মিলে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রসহ সারা বাংলাদেশে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে এবং এভাবেই আমাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম আরো দানা বেঁধেছে। আর সেই সংগ্রামের মধ্যদিয়েই আমরা জাতির পিতার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতাও অর্জন করেছি।

    ভাষা ও সাহিত্যের ওপর এমন বার বার আঘাত আর কোন দেশে এসেছে বলে তাঁর জানা নেই উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, অনেক দেশে যুদ্ধের মধ্যেও তাদের সাহিত্য সংস্কৃতি চলমান থাকে। ব্রিটিশ এবং ফ্রান্সের মধ্যে সারাজীবন শত্রুতা চললেও তাদের আর্ট, কালচার ও ভাষা-সাহিত্যচর্চা কোনদিনই বন্ধ ছিল না। কিন্তু, আমাদের পাকিস্তান নামের একই দেশে বাঙালিদের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর বার বার আঘাত এসেছে।

    তিনি বলেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি যেন সুন্দরভাবে বিকশিত হয় এবং আমরা বাঙালি এই বাঙালি হিসেবেই বিশ^দরবারে মাথা উঁচু করে চলবো। আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি কাজেই এই দেশকে আমরা আরো এগিয়ে নিয়ে যাব উন্নয়নের পথে।

    জাতির পিতা মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ক্ষমতায় ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে তিনি জাতিসংঘের কাছ থেকে স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলেন। বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য পদ লাভ বাংলাদেশকে একটা উচ্চ মর্যাদায় নিয়ে গিয়েছিল। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর আমাদের সেই মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হয়।

    এরপর একুশ বছর পর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ পুণরায় সরকার গঠন করলে দেশের স্তিমিত উন্নয়ন অগ্রযাত্রা গতি লাভ করে এবং বিগত ৩ মেয়াদে টানা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। কাজেই এই দেশকে এখন আর কেউ পেছনে টানতে পারবেনা, বলেন তিনি।

    তিনি একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জনে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশী সালাম ও রফিক এবং ‘ভালবাসি মাতৃভাষা’ নামক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উল্লেখ করেন। তাঁদের এবং আওয়ামী লীগ সরকারের জোর প্রচেষ্টাতেই ইউনেস্কো অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যায়না, বৃথা যায়নি। যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের সেই অবদান আমরা সবসময় স্মরণ করি।’

    তিনি একুশে পদক প্রাপ্ত গুণিজন সকলকে তাঁর আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আমাদের সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন অনেক গুণিজন রয়েছেন যাদের অনেকে নামটি পর্যন্ত জানে না এই পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে তাদের অবদানকেই সকলের সামনে নিয়ে আসায় তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা। এজন্য সম্মাননা প্রাপ্তদের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

    সরকার প্রধান বলেন, আমি আশাকরি আমাদের নতুন প্রজন্মও এভাবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। কারণ, গুণিজনদের পদাংক অনুসরণ করেই আমাদের দেশকে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

    তিনি বলেন, আমরা আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেব কিন্তু আধুনিক বিশে^র সাথে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব এবং আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ আমরা গড়ে তুলবো।

  • একুশে পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

    একুশে পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

    অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ১৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানের হাতে ‘একুশে পদক ২০২৩’ তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ তুলে দেন সরকারপ্রধান।

    গত ১২ ফেব্রুয়ারি নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ‘একুশে পদক-২০২৩’ এর জন্য ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক এবং দুটি সংস্থার নাম ঘোষণা করে সরকার। এ বছর ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে তিনজন, মুক্তিযুদ্ধে একজন, শিল্পকলায় আটজন (অভিনয়, সঙ্গীত, আবৃত্তি, চারু ও চিত্রকলা), রাজনীতিতে দুজন, শিক্ষায় এক ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান, সমাজসেবায় এক ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান এবং সাংবাদিকতা, গবেষণা এবং ভাষা ও সাহিত্যে একজন করে পুরস্কার পেয়েছেন।

    ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের জন্য খালেদা মঞ্জুর-ই খুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম শামসুল হক (মরণোত্তর) এবং হাজী মোহাম্মদ মজিবুর রহমানও মনোনিত হন।

    শিল্পকলা বিভাগে অভিনয় ক্যাটাগরিতে মাসুদ আলী খান ও শিমুল ইউসুফ এবং সংগীত বিভাগে মনোরঞ্জন ঘোষাল, গাজী আবদুল হাকিম ও ফজল-এ-খোদা (মরণোত্তর), আবৃত্তি বিভাগে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শিল্পকলায় নওয়াজিশ আলী খান এবং চিত্রকলা বিভাগে কনক চাঁপা চাকমা পুরস্কার পাচ্ছেন।

    মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে পুরস্কার পাচ্ছেন মমতাজ উদ্দিন (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় মো. শাহ আলমগীর (মরণোত্তর), গবেষণায় ডা. মো. আবদুল মজিদ, শিক্ষায় অধ্যাপক ডা. মাজহারুল ইসলাম (মরণোত্তর), সমাজসেবায় সাইদুল হক, অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইসলাম (মরণোত্তর), রাজনীতিতে আখতার উদ্দিন মিয়া (মরণোত্তর) এবং ভাষা ও সাহিত্যে ড. মনিরুজ্জামান পুরস্কার পাচ্ছেন।

    শিক্ষা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এবং সমাজসেবায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এ পুরস্কার পাচ্ছে।

    ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে ‘একুশে পদক’ প্রবর্তন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বর্ণপদক, সম্মাননা সনদ ও নগদ অর্থ দিয়ে পুরস্কার প্রদান করে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুরস্কারপ্রাপ্তদের দেওয়া টাকার পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ গত ২০২০ সালে তা বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করা হয়েছে

  • একুশে পদক পাচ্ছেন ২১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান

    একুশে পদক পাচ্ছেন ২১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান

    বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও দুই প্রতিষ্ঠানকে ২০২৩ সালের একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

    এ বছর ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য তিনজন, শিল্পকলায় আটজন, শিক্ষায় এক ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান, সমাজসেবায় এক ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনীতিতে দুজন একুশে পদক পাচ্ছেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে একজন, সাংবাদিকতায় একজন, গবেষণায় একজন এবং ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে একজন মনোনীত হয়েছেন।

    একুশে পদক-২০২৩ পাচ্ছেন যারা‘ভাষা আন্দোলন’ ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পদক পাচ্ছেন খালেদা মনযুর-ই-খুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম শামসুল হক (মরণোত্তর) ও হাজী মো. মজিবর রহমান।

    ‘শিল্পকলা’ ক্ষেত্রে পদক পেয়েছেন- মাসুদ আলী খান (অভিনয়), শিমূল ইউসুফ (অভিনয়), মনোরঞ্জন ঘোষাল (সংগীত), গাজী আব্দুল হাকিম (সংগীত), ফজল-এ-খোদা (সংগীত) (মরণোত্তর), জয়ন্ত চট্টপাধ্যায় (আবৃত্তি), নওয়াজীশ আলী খান, কনক চাঁপা চাকমা (চিত্রকলা)।

    ‘শিক্ষা’ ক্ষেত্রে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন অধ্যাপক ড. মযহারুল ইসলাম (মরণোত্তর)। জাতীয় জাদুঘরকেও এ ক্যটাগারিতে মনোনীত করা হয়েছে।

    সমাজসেবায় পদক পাচ্ছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। ব্যক্তি ক্ষেত্রে মো. সাইদুল হকও সমাজসেবায় একুশে পদক পাচ্ছেন।

    অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইসলাম (মরণোত্তর) এবং আকতার উদ্দিন মিয়া (মরণোত্তর) ‘রাজনীতি’ ক্যটাগরিতে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

    এছাড়া ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে মমতাজ উদ্দীন (মরণোত্তর), ‘সাংবাদিকতা’য় মো. শাহ আলমগীর (মরণোত্তর), ‘গবেষণা’য় ড. মো. আব্দুল মজিদ, ‘ভাষা ও সাহিত্য’ ক্ষেত্রে ড. মনিরুজ্জামান একুশে পদক পাচ্ছেন।

    নীতিমালা অনুযায়ী, নির্বাচিত প্রত্যেককে এককালীন নগদ চার লাখ টাকাসহ ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়। রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদক’। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে চালু করা একুশে পদক সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দিয়ে থাকে।

    বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানকারী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে একুশে পদক দেওয়া হচ্ছে।

  • আত্মমর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী

    আত্মমর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের দেশ। এই বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মানের সঙ্গে চলবে। কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মমর্যাদা ও সম্মান নিয়ে বিশ্বের বুকে চলব।

    আজ শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই অর্জিত হয়েছিল দেশের সব সংগ্রাম ও স্বাধীনতা। তাই আগামী প্রজন্মকে পদকপ্রাপ্ত গুণীদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

    তিনি বলেন, আজকের ভাষা দিবসে আপনারা সমাজের বিভিন্ন স্তরে অবদানের জন্য ভাষার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আপনাদের অভিনন্দন জানাই। আপনাদের কাছ থেকে আগামী প্রজন্ম শিক্ষা নিতে পারবে। এটা শুধু আপনাদের সম্মাননা নয়, জাতির জন্য সম্মাননা, দেশের মানুষের জন্য সম্মাননা।

    শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ভাষা আন্দোলন থেকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে সংগ্রাম করে যান। সেই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা মাকে মা বলে ডাকতে পারি, স্বাধীনতা অর্জন করি।

    সরকারপ্রধান বলেন, করোনা মহামারি চলছে। যদিও ভ্যাকসিন আসছে, ভ্যাকসিন দিচ্ছি। এ বিষয়ে আরও গবেষণা চলছে। সে জন্য সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ করছি। অন্তত মাস্ক পরা ও হাত ধোয়ার বিষয়টি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।

    এ বছর ২১ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক দেয়া হয়। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে একুশে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

    ভাষা আন্দোলনে এ বছর মরণোত্তর একুশে পদক পান তিনজন। তারা হলেন- মোতাহের হোসেন তালুকদার (মোতাহার মাস্টার), শামছুল হক ও আফসার উদ্দীন আহমেদ।

    মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য পদক পান সৈয়দা ইসাবেলা (মরণোত্তর), গোলাম হাসনায়েন ও ফজলুর রহমান খান ফারুক।

    সংগীতে পাপিয়া সারোয়ার, অভিনয়ে রাইসুল ইসলাম আসাদ ও সুজাতা আজিম, নাটকে আহমেদ ইকবাল হায়দার, চলচ্চিত্রে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, আবৃত্তিতে ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবার একুশে পদক পেয়েছেন।

    সাংবাদিকতায় অজয় দাশগুপ্ত, আলোকচিত্রে পাভেল রহমান, গবেষণায় সমীর কুমার সাহা, শিক্ষায় মাহফুজা খানম, অর্থনীতিতে মির্জা আব্দুল জলিল, সমাজসেবায় অধ্যাপক কাজী কামরুজ্জামানকেও পদক দেওয়া হয়েছে।

    এ ছাড়া ভাষা ও সাহিত্যে কবি কাজী রোজী ও লেখক-গবেষক গোলাম মুরশিদের পাশাপাশি বুলবুল চৌধুরীও একুশে পদক পান।

  • একুশে পদক পাচ্ছেন ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক

    একুশে পদক পাচ্ছেন ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক

    বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবার দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে পদকে ভূষিত করছে সরকার।

    বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অসীম কুমার দে স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়।

    দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানস্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে- তিন ভাষাসৈনিক, তিন মুক্তিযোদ্ধা, তিন সাহিত্যিক, সাংবাদিকতা, গবেষণা ও অর্থনীতিতে একজন করে ও শিল্পকলার বিভিন্ন শাখায় সাত জনসহ মোট ২১ জনকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

    ভাষাসৈনিকদের মধ্যে মোতাহার হোসেন তালুকদার (মরণোত্তর), শামছুল হক (মরণোত্তর), অ্যাডভোকেট আফসার উদ্দীন আহমেদ (মরণোত্তর) এ পদক পাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে গোলাম হাসনায়েন, ফজলুর রহমান খান ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা ইসাবেলা (মরণোত্তর) এ পদক পেয়েছেন।

    সাংবাদিকতায় অজয় দাশগুপ্ত, গবেষণায় অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা, শিক্ষায় মাহফুজা খানম, অর্থনীতিতে ড. মির্জা আব্দুল জলিল, সমাজসেবায় প্রফেসর কাজী কামরুজ্জামান, ভাষা ও সাহিত্যে কবি কাজী রোজী, বুলবুল চৌধুরী ও গোলাম মুরশিদ পদক পাচ্ছেন।

    শিল্পকলা ও সংগীতে পাপিয়া সরোয়ার, অভিনয়ে রাইসুল ইসলাম আসাদ, অভিনয়ে সালমা বেগম সুজাতা, নাটকে আহমেদ ইকবাল হায়দার, চলচ্চিত্রে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, আবৃত্তিতে ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যয় (আবৃত্তি) ও আলোকচিত্রে পাভেল রহমান এই পদক পাচ্ছেন।

  • চসিকের ‘একুশে পদক’ পেলেন সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার

    চসিকের ‘একুশে পদক’ পেলেন সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার

    ২৪ ঘন্টা ডট নিউজ। চট্টগ্রাম ডেস্ক : পেশাজীবী নাগরিক সংগঠক ও সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরী পেলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিকে) একুশে পদক-২০২০। চসিকের বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত এবারের বইমেলায় সাংগঠনিক ক্যাটাগরিতে ‘মুজিব বর্ষ একুশে পদক’ পেলেন তিনি। পদক তুলে দেন সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দিন।

    সবচেয়ে কমবয়সেই তিনি পেলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের(চসিকে) এই পদক । এবার একুশে পদক পেলেন ১১জন, সাহিত্য পদক পেলেন ৪ জন। শুধু এবার নয়, এযাবতকালে চসিকের যতবার একুশে ও স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়েছে, তন্মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে প্রাপ্তির স্বীকৃতি জুটল রিয়াজের ।

    বিষয়টিকে চট্টগ্রামের তরুণ সংগঠকরা বেশ ইতিবাচকভাবে দেখছেন । সংগঠক ও তরুণদের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে। পারিবারিক পর্যায় থেকেই আওয়ামী ঘরানার এই সংগঠক চট্টগ্রামে প্রগতিশীল বিভিন্ন রাজনৈতিকদলের নেতৃবৃন্দের কাছেও নানা ভাবে গ্রহনযোগ্য। নেতৃত্বে ও পেশায় সফলতার সিঁড়িতে পা রাখা এই সংগঠক একই সাথে তিনটি সংগঠনের শীর্ষ নেতা ।

    কর্মক্ষেত্রেও একাধারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সফল । রাজনীতি, অর্থনীতি, অপরাধ ও সংস্কৃতি নিয়েই লেখালেখির কারনেও পাঠকপ্রিয় নাম রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। টেলিভিশনের টকশো সঞ্চালনা করেও তৈরি করেছেন নিজস্ব বলয়।

    রাজনীতি-সংস্কৃতির মাঠে সক্রিয় প্রতিবাদি এই সংগঠক শিক্ষক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সংগ্রামে ব্যাপক সম্পৃক্ত। জীবনের পদাঘাত তাকে করেছে সমকালীন অন্য অনেকের চেয়ে আলাদা, সফল এবং আত্মপ্রত্যয়ী।

    বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছাড়াও চট্টগ্রামের নাগরিক উদ্যোগের তিনি আহবায়ক। এছাড়া প্রগতিশীল পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সমন্বিত মোর্চা ‘পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদে’র সাধারণ সম্পাদকও এই সাংবাদিক নেতা। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য তিনি। বাংলাদেশের সবচে বেশি প্রচারিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশেষ প্রতিনিধি ও চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ।

    দায়িত্বশীল সাংগঠনিক ঘনিষ্ঠরা জানান, শুধু এবারের একুশে পদক প্রাপ্তিই নয়, সব সাংগঠনিক অর্জনই সবচেয়ে কম বয়সেই করেছেন তিনি।‌ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে এই পেশাজীবী সংগঠক বারেবারে ঝুঁকি নিয়েছেন, হামলারও শিকার হয়েছেন।

    প্রায় তিন দশক ধরেই টানা সাংগঠনিক চর্চায় যুক্ত রিয়াজ। ২০বছর ধরেই নির্বাচন করেছেন সাংবাদিকদের অঙ্গনে। সাংবাদিকদের মধ্যে একমাত্র রিয়াজই গত ১৮বছর ধরে প্রগতিশীল পেশাজীবী মোর্চার নেতৃত্বে রয়েছেন। এই সংগঠক চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সবচেয়ে কম বয়সেই দফায় দফায় সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত সভাপতি (২০১৬-২০১৮), দু’দফায় সাধারণ সম্পাদক (২০০৬-২০০৮, ২০১২-২০১৪) ও দু’দফায় সাংগঠনিক সম্পাদক (২০০২-২০০৩, ২০০৩-২০০৪) ।

    ওয়ান-ইলেভেনে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলে তাঁর মুক্তি দাবি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যা চেষ্টার প্রতিবাদ , ১৭ আগস্ট দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলন-গণজাগরণ ও বিএনপি-জামায়াত শিবিরের হরতাল অবরোধ নৈরাজ্য, পেট্রোল -বোমা জ্বালাও-পোড়াও আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও জাতীয় নানা ইস্যুতে বরাবরই মাঠে থেকেছেন এই পেশাজীবী নাগরিক সংগঠক।

    বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশের কোথাও যখন জাতির বিবেক খ্যাত সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো হতো না তখনই সাহসী কাজটা করেন সাংবাদিক নেতা ও পেশাজীবী নাগরিক সংগঠক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। শুধু তাই নয়, জাতির একটি ক্রান্তিকালে বঙ্গবন্ধুকন্যার নামে তিনি উদ্ভাবন করেন এক নতুন স্লোগানও।

    ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে যখন দেশের রাজনৈতিক দলগুলো দু’ভাগে বিভক্ত তখন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় পেশাজীবী সম্মেলনে চট্টগ্রাম থেকে অংশ নেয়া পেশাজীবী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বদানকারী রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’র সাথে ‘জয় শেখ হাসিনা’ যুক্ত করে একটি নতুন শ্লোগানের উদ্ভাবন করেন ।

    সেসময়ে দেশের এক পক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে, অন্যপক্ষ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে অনড়। বহির্বিশ্বের চোখ ছিল এদেশের নাগরিক পেশাজীবী শক্তির দিকেও। এমনি সময়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় পেশাজীবী সম্মেলন ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

    ঠিক এমন অবস্থায় জাতীয় পেশাজীবী সম্মেলনটিতে রিয়াজ প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ও সারা দেশের পেশাজীবী নেতাদের সামনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন। শুধু তাই নয় সরকারের সে সময় চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া ও দেশের কালিমামুক্ত করার মতো যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখায় পেশাজীবীদের পক্ষে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে কৃতজ্ঞতাও জানান ।

    চট্টগ্রামের তিনিই প্রথম সাংবাদিক নেতা, যিনি বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজের জন্য অসামান্য অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে কৃতজ্ঞতা ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।

    ২০১৮ এর একাদশ জাতীয় সংসদ জাতীয় নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযান উপলক্ষে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা; নৌকা পারে, নৌকাই পারবে’ শীর্ষক প্রচারপত্রটিও রচনা করেন তিনি।

    ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় নাগরিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক রিয়াজ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে ২০০৫ , ২০১০ সালে সক্রিয় ছিলেন।

    ২০১৫ সালে সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটিরও আহ্বায়ক ছিলেন। নির্বাচনটিতে চট্টল মেয়রের যেন ছায়াসঙ্গীই ছিলেন।

    ২০১৮ এর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম সদর আসনে পেশাজীবী-নাগরিক প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের এই মনোনয়ন প্রত্যাশীর মনোনয়ন না মিললেও সেই আসনে মনোনয়ন পাওয়া জননেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ব্যারিস্টার চৌধুরী মহিবুল হাসান নওফেল সহ চট্টগ্রাম শহর ও শহরযুক্ত ৬টি আসনের প্রার্থীদের জন্য প্রচারণায় তিনি ‘পেশাজীবী-নাগরিক স্কোয়ার্ড’ গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নৌকা প্রতিকের প্রার্থীদের পক্ষে টানা প্রায় সপ্তাহব্যাপী প্রচারণা শেষে চট্টগ্রাম শহীদ মিনার চত্বরে মহাসমাবেশ করেন।

    তৃণমূল থেকে উঠে আসা এ সংগঠক ২০০১এর জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি মানিকছড়ি বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মাঠে ছিলেন। এছাড়াও রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা-অগ্নিসংযোগ, পাথরকাটা, ফতেয়াবাদস্থ বিভিন্ন স্থানে সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর হামলা-নির্যাতনের উপর হামলা নির্যাতনের প্রতিবাদ আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

    প্রায় ৬০ বছরের পুরনো সংগঠন সিইউজে’র ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হন। অংশ নেন দুশতাধিক দেশের প্রতিনিধিত্বে ইরানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ন্যাম সম্মেলনে(২০১২)।

    সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষক হিসেবেও সমাদৃত এই সাংবাদিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, মালয়েশিয়ার ট্যুরিজম বোর্ডসহ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সনদ স্বীকৃতি লাভ করেন। একাধিক গ্রন্থ প্রণেতা এই সাংবাদিক ইউরোপ ও এশিয়ার দেশ ঘুরে রাজনীতি-পর্যটন নিয়েও দারুণ লিখেছেন। তাঁর ‘ইউরোপের পথে পথে’ শীর্ষক প্রতিবেদন দেশের সবচে বেশি প্রচারিত কাগজ ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনে’ ধারাবাহিক প্রকাশ হলে পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়।

    তিনি দুইবার জাপান সফরসহ পেশাগত ও সাংগঠনিক সফর করেন জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ন্যাদারল্যান্ডস, ইরান, তুরস্ক, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও ভারতসহ ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্র। নেতৃত্ব, সাংবাদিকতা, গবেষণা, গদ্য পদ্যে যেন যুথবদ্ধ পথ চলেছেন রিয়াজ হায়দার চৌধুরী।

    বর্ণাঢ্য পেশাগত জীবনের সিংহ ভাগ সময়েই তিনি একাধারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কাজ করেন। কখনো পূর্বকোণে কাজ করলেও পাশাপাশি করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক বাংলা স্যাটেলাইট টিভি এসটিভিইউএস,(STVus), একুশে টেলিভিশন কিংবা যমুনা টেলিভিশনে , আবার কখনো বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাজ করলেও যুক্ত হন স্যাটেলাইট টেলিভিশন নিউজ টুয়েন্টিফোরে(NEWS24)।

    টেলিভিশনে চট্টগ্রাম থেকে ব্যাপক জনপ্রিয় এই মুখ রোজ সকালে চট্টগ্রামের সংবাদপত্রগুলোর সংবাদ বিশ্লেষণ লাইভের যাত্রা শুরু করেও গড়ে তুলেন নিজস্ব ভক্তবলয়। গণমাধ্যমে যেন নতুন পালক যুক্ত করে এ সংবাদ বিশ্লেষণ।

    চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল পরিচালনা কমিটি, কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াজ । চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)’র নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিষয়ক নাগরিক পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং চসিকের উদ্যোগে চট্টগ্রামের প্রথম সর্বজনীন অমর একুশে বইমেলা ২০১৯, মুজিববর্ষ চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলা ২০২০ এর উপদেষ্টা, চট্টগ্রামের সর্বজনীন মুজিব জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন পরিষদের কো-চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তন ছাত্রলীগ পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি।

    সংবাদত্রসেবী ঐক্য পরিষদের সচিব (২০০৬-২০০৮)ছিলেন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি, মা- শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের স্থায়ী সদস্য, জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন চাঁদের হাট, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, পূর্বাশার আলো, পরিবর্তন উপদেষ্টা সহ শতাধিক সংগঠনে নানাভাবে যুক্ত ।

    বিশেষ প্রতিনিধি ও ব্যুরো প্রধান হিসেবে এক দশক ধরে কাজ করছেন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে। সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণে। এতে কাজ করেন প্রায় এক যুগ। দৈনিক রূপালী, দৈনিক খবর ও দৈনিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়েও কাজ করেন । দৈনিক সংবাদ, দৈনিক প্রথম আলো , আজকের কাগজ , দৈনিক আজাদী, দৈনিক নয়াবাংলা,দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ, দৈনিক পূর্বদেশ, খবরের কাগজ, দেশচিন্তা সহ অসংখ্য কাগজে লেখা ছাপা হয় এই কবি সাংবাদিক ও গবেষকের।

    ১৯৯৫ সালেই তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দেশ চেতনার কাগজ ‘বঙ্গজ’।কৈশোরে আবৃত্তি চর্চায় যুক্ত রিয়াজ বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র চালু হলে সেখানে একুশের প্রথম কবিতার প্রথম একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন। কেন্দ্রের প্রথম শ্রেণির তালিকাভুক্ত এই উপস্থাপক গ্রন্থনায়ও পারদর্শী। কেন্দ্রটি চালুর আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন রিয়াজ।

    সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ আদায় ও বাস্তবায়ন ছাড়াও হকার্স এবং কম্পিউটার অপারেটরদের অধিকারের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

    চট্টগ্রামের জ্ঞানজ্যোতি ভিক্ষু হত্যা ও অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা, শিক্ষাবিদ ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা, সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবল, হুমায়ূন কবির বালু, সাগর-রুনি-শিমুল হত্যার প্রতিবাদ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। সিলেটে মৌলবাদিদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল অনশন-ধর্মঘটের ডাক দিলে সেখানেও ছুটে যান ।

    যশোরে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আক্রান্ত হলে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ছুটে যান সেখানেও। বিডিআর বিদ্রোহ’র নামে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের হত্যা করা হলে প্রতিবাদে মাঠে ছিলেন । এ নিয়ে লিখেছেনও প্রচুর। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু এবং চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমস নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন।

    এছাড়া একুশের প্রথম কবিতার জনক চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান ‘সীমান্ত’ সম্পাদক মাহবুব উল আলম চৌধুরীর প্রয়াণের খবর শুনে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছুটে যান তিনি। চট্টগ্রামের সংগঠক হিসেবে একমাত্র পূস্পার্ঘ্য দেন।

    একইভাবে নাট্যগুরু সেলিম আল দীনের প্রয়াণেও ছুটে গিয়ে যেন বনপোড়া হরিণের মত আর্তনাদ করেন এই সংগঠক। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক লিখেনও।

    এই অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক বহু রাজনৈতিক প্রতিবেদনের জন্য আলোচিত। শুধু রিপোর্টিং নয় প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও কাব্য প্রচেষ্টায়ও তিনি সমধিক পরিচিত।

    ১৯৯৪ সালে ঘাতক গোলাম আযমের লালদীঘি মাঠের জনসভা প্রতিরোধ প্রচেষ্টার পূর্বাপর সময়ে মুক্তিযোদ্ধা ছাত্রকমান্ডের এই সাহসী কর্মী শৈশব থেকেই বেড়ে উঠেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাশ্রিত পরিবেশে।

    ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের পুলিশের বেধড়ক হামলার প্রতিবাদে ন্যায্য বিচার চেয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে পেশাজীবী সাংবাদিকদের সফল আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন । সেসময় ঘটনার জন্য তিন মন্ত্রণালয় বৈঠকে ডেকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর।
    ২০০১ সাল।

    তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী বেগম জিয়ার প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় তুলে ধরে রাজনৈতিক-সামাজিক ও গণমাধ্যম অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেন অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। বেগম জিয়া মহান জাতীয় সংসদে ৬ মাসের সন্ত্রাস বিরোধী কর্মসূচি ঘোষণা দেন সে বার। কিন্তু সেদিনই টপটেরর শিবির ক্যাডার নাছির কুমিল্লা কারাগার থেকে চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে পুলিশি পাহারায় চকবাজারে গোপন বৈঠক করে সহযোগী সন্ত্রাসীদের সাথে। সরকারের এই স্ববিরোধীতা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই সুনিপুণ অনুসন্ধানে সংবাদপত্রের পাতায় তুলে ধরেন একমাত্র রিয়াজই।

    সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আর প্রগতির ব্যানারে ছদ্মবেশে থাকা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর হামলা-মামলার টার্গেট এই সাংবাদিক পথ চলেন মৃত্যু হুমকি উপেক্ষা করে। হামলায় আক্রান্ত হয়ে দুই বার মরতে মরতে বেঁচেও যান। যুদ্ধাপরাধি কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবির মধ্য দিয়ে সৃষ্ট গণজাগরণে চট্টগ্রামের প্রধানতম এই সংগঠক হামলার শিকার হন।

    অল্পের জন্যই প্রাণে বেঁচে যান। ২০১৮’র নভেম্বরে ফের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলে সে ঘটনাকে ঘিরে পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলন গড়ে তোলেন। গোপন আততায়ীরা চট্টগ্রামের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. অনুপম সেন ও পেশাজীবী সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরীসহ পাঁচ বিশিষ্টজনকে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেও উড়ো চিঠি দেয়।

    ‘মহিউদ্দিনের আইয়ের’ : ওয়ান ইলেভেনের আগের কথা। ‘মহিউদ্দিনের আইয়ের’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদনে তীব্র আলোড়ন তোলেন তিনি। প্রতিবেদনটিতে সে সময়ের মেয়র জননেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর তুমুল তুখোড় সাহসী অবস্থান তুলে ধরেন।-এমন অসংখ্য আলোচিত প্রতিবেদনের জনক এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পেশাজীবী নেতা।

    জীবনের বৈভব : মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিয়াজের জন্ম ঢাকাই হলেও ব্যাংকার পিতার বদলী সুত্রে শৈশব থেকেই বসতি চট্টগ্রামে। অবশ্য উত্তর চট্টগ্রামের হালদা পাড়ের হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা গ্রামের চৌধুরী বাড়িই পৈতৃক নিবাস। শহর ও গ্রামের জল হাওয়া, সমুদ্রের ঢেউ আর পাহাড়ের মৌনতা তাকে দিয়েছে জীবনের বৈভব।

    কৈশোর থেকে লেখালেখির প্রবল নেশা তার। আর এই নেশা তাকে সহসা পেশাদারও করে তোলে। স্নাতককালীন সময়ে যুক্ত হন পেশাদার সাংবাদিকতায়, পরবর্তীতে স্নাতকোত্তর সময়ে গতি পায় নৈমিত্তিক চাকুরীজীবন, সমানে চলে বিদ্যার্জন ও লেখার নেশা।

    ভাষার লড়াই-শেখের বেটি: ভাষা সংগ্রাম ও এতে বঙ্গবন্ধুর অবদানের পথ ধরে বাংলার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার অবদানকে এক মলাটে সংযুক্ত করে ২০১১ সালে কবি সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর প্রকাশিত প্রথম গবেষণাগ্রন্থ ‘ভাষার লড়াই’।

    ২০২০ এ প্রকাশিত তাঁর কাব্য গ্রন্থ ‘শেখের বেটি’ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলা ছাড়িয়ে বিশ্ব জয়ের অদম্য অগ্রযাত্রায় দেশের রাজনীতি, সমাজ মননের বদলে যাওয়া, অথচ শংকাময় জনগোষ্ঠীর হৃদয়ের উথালপাতাল ঢেউয়েরই সমাহার।

    এতে বাঙালি মানসের আবেগ আশাবাদ ফুটে উঠেছে। তারুণ্যের দেশচেতনা, প্রেম, স্বপ্ন ও স্বপ্ন ভঙ্গের কাব্যিক শব্দসুর সংযুক্ত হয়েছে। রাজনীতি, প্রকৃতি ও প্রেমের এক অনন্য মিশেলের চেষ্টা করেছেন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার আলোচিত মুখ রিয়াজ হায়দার চৌধুরী।

    কবি সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ‘শেখের বেটি’ গ্রন্থে শেখ হাসিনাকে সামনে রেখে তুলে এনে পুরো বাংলাদেশ, তার ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে ধারণ করেছেন কাব্য ছন্দে। রিয়াজ দেখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যার মুখে দুঃখিনী বর্ণমালার পোড়াচিহ্ন। লক্ষ স্বজন হারার আর্তনাদ। তিনি ভাবেন, শেখের বেটি শেখ হাসিনা মানেই শোষকের রক্ত চক্ষু ডিঙ্গিয়ে যাওয়া গণমুক্তির নাম।

    শব্দ শ্রমিক : সব ছাপিয়ে শব্দ শ্রমিক হিসেবেই রিয়াজের এগিয়ে চলা। মঞ্চ মাঠে ময়দানে সক্রিয়তা আর সাংবাদিকতা- কার্যত শব্দেরই কাজ। কারো কারো দৃষ্টিতে হয়তো এমন সব্যসাচী অবস্থান বেঢপ। ঈর্ষার কারণও । তবুও প্রগতি পথের এই সারথির অগ্রযাত্রা রয়েছে অদম্য।

  • একুশের গৌরবের ইতিহাস সব প্রজন্মকে জানতে হবে:প্রধানমন্ত্রী

    একুশের গৌরবের ইতিহাস সব প্রজন্মকে জানতে হবে:প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একুশের গৌরবের ইতিহাস সব প্রজন্মকে জানতে হবে।অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘একুশে পদক-২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজন আছে, তবে মাতৃভাষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়ে তিনি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখে গেছেন। কিন্তু বার বার তার নাম ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দেশের ইতিহাস বারবার বিকৃত করেও সত্য ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না।

    বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই সম্মাননা ও পদক বিতরণ করেন তিনি।

    এর আগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের ২০ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘একুশে পদক-২০২০’ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    একুশে পদক ২০২০ প্রাপ্তরা হলেন- ভাষা আন্দোলনে প্রয়াত আমিনুল ইসলাম বাদশা (মরণোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) বেগম ডালিয়া নওশিন, শঙ্কর রায় ও মিতা হক, শিল্পকলায় (নৃত্য) মো. গোলাম মোস্তফা খান, শিল্পকলায় (অভিনয়) এম এম মহসীন, শিল্পকলায় (চারুকলা) অধ্যাপক শিল্পী ড. ফরিদা জামান, মুক্তিযুদ্ধে প্রয়াত হাজি আক্তার সরদার (মরণোত্তর), প্রয়াত আব্দুল জব্বার (মরণোত্তর), প্রয়াত ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় জাফর ওয়াজেদ (আলী ওয়াজেদ জাফর), গবেষণায় ড. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ কারী আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ, শিক্ষায় অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, অর্থনীতিতে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, সমাজসেবায় সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ভাষা ও সাহিত্যে ড. নুরুন নবী, প্রয়াত সিকদার আমিনুল হক (মরণোত্তর) ও বেগম নাজমুন নেসা পিয়ারি এবং চিকিৎসায় অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার। পাশাপাশি ‘গবেষণা’য় একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।

    অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসালাম। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

  • একুশে পদক পাচ্ছেন সুফি মিজানুর রহমান

    একুশে পদক পাচ্ছেন সুফি মিজানুর রহমান

    সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিসরূপ এ বছর একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছেন পিএইচপি ফ্যামিলির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

    চলতি বছর ২০ জন বিশিষ্ট ব্যাক্তি ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পাচ্ছে একুশে পদক।

    বুধবার সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এবারের পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম প্রকাশ করেছে।

    চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সহজ-সরল, বিনয়ী ও মিষ্টভাষী একজন সফল মানুষ। এক কথায় ভীষণ মিশুক। কথা বলতে গেলেই কখনও উদাহরণ টানেন পাশ্চাত্যের জ্ঞানগুরুদের, কখনও ইসলামের কালজয়ীদের, কখনও বা মানবধর্মের মহামানবদের। জন্ম নারায়ণগঞ্জে হলেও বেড়ে ওঠা তার চট্টগ্রামেই। স্থায়ীভাবে বসবাসও করেন তিনি বন্দরনগরীতেই।

    নিজেও জীবনযাপন করেন সৎ ও সত্যতার নিরেট এক প্লাটফর্মে। খুঁজে বেড়ান জীবনের মানে।

    মানুষটিকে কেউ ডাকেন সুফি সাহেব, কেউ বা মিজান সাহেব। পুরো নাম সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। ‘পিএইচপি ফ্যামিলি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি। ব্যবসার জগতে সফল এক কিংবদন্তি। শিল্পপতি হয়েও অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত সুফি মিজান। বিলাসিতা একেবারেই টানে না তাকে। ঘুরেফিরে এক পোশাকই পরেন তিনি। সাত ছেলে, এক মেয়ে রয়েছে তার। সবসময় নিজেকে সমাজের কল্যাণেই নিয়োজিত রাখেন তিনি।

    অন্যসব বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মতো পিএইচপি কোনও গ্রুপ নয়, ফ্যামিলি। যা সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গর্ব করে বলেন। ফ্যামিলির মতোই এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। যেখানে সবাই আপন মনে হাসিমুখে কাজ করতে পারে। সুইপার, পিয়ন কিংবা প্রেসিডেন্ট সবাই এখানে এক। বিভিন্ন ধরনের স্টিল, গ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম, শিপ রিসাইক্লিং, টেক্সটাইল, পেট্রলিয়াম প্রোডাক্টস, বিদ্যুৎ উৎপাদন, কৃষিজাত পণ্য, লেদার, ফিশারিজ, রিয়েল এস্টেটসহ বর্তমানে বিভিন্ন সেক্টরে ব্যবসা রয়েছে সুফি মিজানুর রহমানের।

    পিএইচপি ফ্যামিলির আওতায় দেশে-বিদেশে অন্তত ৩০টি আলাদা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই বিশিষ্ট শিল্পপতির।

    বাংলাদেশ নিয়ে এবং নিজের পিএইচপি ফ্যামিলি নিয়ে এখনও অনেক স্বপ্ন দেখেন এই স্বপ্নদ্রষ্টা।

    তিনি প্রায়ই বলেন আমি চাই বাংলাদেশের কোনও মা-বোন যেন ক্ষুধার তাড়নায় কষ্ট না পায়। প্রতিটি কোমলমতি সন্তান যেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়। যেন চিকিৎসার অভাবে কোনও মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ না করে। প্রতিটি মানুষের যেন থাকার মতো একটি ছোট্ট কুটির আর চলার মতো একটি ছোট্ট ট্রান্সপোর্ট থাকে। পিএইচপি ফ্যামিলি নিয়েও একই স্বপ্ন দেখেন তিনি।

    দাদা ছিলেন ব্যবসায়ী। পাটের ব্যবসা করতেন। তার বাবাও ব্যবসা করতেন। কিছু ক্ষেত-খামারও ছিল। সেখানে ধান-পাট চাষ হতো। সুফি মিজানের ইচ্ছা ছিল শিক্ষক হবেন। কিন্তু তার বাবা চেয়েছেন তিনি ব্যবসা করবেন। তারপরও মাত্র ১০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেছিলেন সুফি মিজান। এখনকার হিসাবে মাত্র ১ ডলার ২০ সেন্টস।

    ইন্টারমিডিয়েট পাসের পরপরই ১৯৬৫ সালে সর্বপ্রথম তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে (বর্তমানে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড) চাকরি নিয়ে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন তিনি।

    বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এরপর ১৯৬৭ সালেই আরেকটি ব্যাংকে যোগ দেন। তবে স্বাধীনতার পরপরই চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন। তখন ব্যবসার জন্য তার মূলধন ছিল মাত্র ১ হাজার ৪৮৩ টাকা। এই টাকা দিয়েই ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি।

    সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সহকর্মীদের কাছে অন্য রকম এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। ছেলেবেলায় মাকে হারিয়েছেন সুফি মিজান। জন্ম থেকেই শান্তশিষ্ট স্বভাবের মানুষ তিনি। বাবার কঠিন অনুশাসনে বড় হয়েছেন। অল্প বয়সে মাকে হারিয়ে বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন দ্বিগুণ স্নেহ-ভালোবাসা। স্কুল জীবন মোটামুটি শেষ হলেও কলেজ জীবনেই অনেকটা কষ্টের শুরু সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের। কলেজ জীবনে আর দশ জনের মতো বন্ধুদের সঙ্গে খুব একটা আড্ডাবাজির সুযোগ পাননি তিনি।

    ইন্টারমিডিয়েট পাস করেই চাকরি শুরু করেছিলেন। সারা দিন কাজ করতেন। সন্ধ্যা ৬টায় নাইট কলেজে গিয়ে বসতেন। সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর রাত ১১টা পর্যন্ত ক্লাস করতেন।

    কেবল তাই নয়, ৪ মাইল হেঁটে বাড়ি ফিরতেন গভীর রাতে। এরপর নিজের হাতেই রান্নাবান্না করে খেতেন। আবার সকাল ৮টা থেকে অফিস।

    কাজের ফাঁকে ফাঁকেই টিউশনি ও নিজের লেখাপড়া করেছেন। অর্থনৈতিক দূরাবস্থার কারণে সাংসারিক প্রয়োজনেই ছাত্র জীবন থেকে এমন কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রিও অর্জন করেছেন সুফি মিজানুর রহমান।

  • একুশে পদক পাচ্ছেন ২০ বিশিষ্ট নাগরিক ও এক প্রতিষ্ঠান

    একুশে পদক পাচ্ছেন ২০ বিশিষ্ট নাগরিক ও এক প্রতিষ্ঠান

    বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ দেশের ২০ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০২০ সালের একুশে পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার ।

    আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২০ সালের একুশে পদক প্রদান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

    বুধবার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পদকপ্রাপ্তদের এ তালিকা প্রকাশ করেছে।

    স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম হচ্ছে-  ভাষা আন্দোলনে মরহুম আমিনুল ইসলাম বাদশা (মরণোত্তর)। শিল্পকলায় (সংগীত) বেগম ডালিয়া নওশিন, শঙ্কর রায় ও বেগম মিতা হক। শিল্পকলায় (নৃত্য) মো. গোলাম মোস্তফা খান। শিল্পকলায় (অভিনয়) এস এম মহসীন। শিল্পকলায় (চারুকলা) অধ্যাপক শিল্পী ড. ফরিদা জামান। মুক্তিযুদ্ধে (মরণোত্তর) মরহুম হাজী আক্তার সরদার, মরহুম আব্দুল জব্বার ও মরহুম ডা. আ. আ .ম. মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার)।

    সাংবাদিকতায় জাফর ওয়াজেদ (আলী ওয়াজেদ জাফর)। গবেষণায় ড. জাহাঙ্গীর আলম ও হাফেজ ক্বারী আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ। শিক্ষায় অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া। অর্থনীতিতে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। সমাজসেবায় সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। ভাষা ও সাহিত্যে ড. নুরুন নবী, মরহুম সিকদার আমিনুল হক (মরণোত্তর) ও বেগম নাজমুন নেসা পিয়ারি। চিকিৎসায় অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার।

    এদিকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে গবেষণায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট একুশে পদক পাচ্ছে।

  • রাজাকারের তালিকায় একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপু

    রাজাকারের তালিকায় একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপু

    একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, এ দেশের সকল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রমুখ, রাজশাহীতে দেশের প্রথম শহীদ মিনারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ভুবন মোহন পার্কের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্বোধক, রাজশাহীর সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতা, বর্ষিয়ান আইনজীবী, মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুর নাম রাজাকারের তালিকায় দেখে সবমহল বিস্মিত, তিনি নিজেও হতবাক বিস্মিত।

    রাজাকারের তালিকায় নাম আসার বিষয়ে গোলাম আরিফ টিপু বলেন, ‘আমি এটা শুনে বিস্মিত হয়েছি। এটা কি করে সম্ভব? আমি জীবনে কখনো ওদের লাইনে যাইনি। রাজাকারের তালিকায় আমার নাম আসবে এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি এটার শক্ত প্রতিবাদ করবো।’

    এক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, অন্যভাবে সমাধান না হলে, আদালতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নেব। সারা জীবন বাঙালি, দেশের জন্য লড়াই করেছি। এভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অধিকার রাষ্ট্রের নেই।

    গোলাম আরিফ টিপু বলেন, ‘সারা জীবন দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাটিয়ে দিলাম। আর আজ এই অভিযোগ পেলাম। আমি ব্যথিত, মর্মাহত। আমি বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিচ্ছি এবং কোনোভাবেই প্রশ্রয় দিতে চাই না। আমি কোনো দুর্বলতা দেখাতে চাই না।’

    তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় যে ধরনের কাজ করার কথা, তা যথাযথভাবে করতে পারছে না। আমি অন্তত তাই মনে করছি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী যদি গোলাম আরিফ টিপু, সালাম ভাই, মহসিন ভাইকে রাজাকার বানায়, তাহলে কার কাছে কী বলব! অথচ আমরাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মূল শক্তি। ছাত্র ইউনিয়ন করতাম। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি। আর আজকে আমাকে রাজাকার বানালো হলো?’

    কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন,‘চিন্তা করছি। অন্যভাবে সমাধান হলে ভালো। নইলে আদালতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নেব। পাক বাহিনীর তালিকা হতে পারে বলে মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে দায় এড়াতে পারবেন না। এই প্রশ্নে আমরা রাষ্ট্রের অবস্থান দেখব।’

    মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে রাজশাহী বিভাগের ৮৯ নম্বর তালিকায় (ক্রমিক নম্বর ৬০৬) নাম রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপুসহ পাঁচজনের নাম।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই পাঁচজন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ। আবার তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাডভোকেট মহসিন আলীর নামও রয়েছে তালিকায়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের নামও রয়েছে তালিকায়। তার পরিবারের পাঁচজন সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত হন। ওই সময় আব্দুস সালাম পাকিস্তানি হানাদারদের ভয়ে ভারত পালিয়েছিলেন।

    রাজশাহী বিভাগে স্বাধীনতাবিরোধীদের এক থেকে ১৫৪টি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এসব তালিকায় কয়েক শ ব্যক্তির নাম রয়েছে। যাদের কয়েকজনের নাম দ্বিতীয়বারও রয়েছে।
    ৮৯ নম্বর তালিকায় থাকা পাঁচজনের মধ্যে অপর দুজন হলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব। যদিও এই ৮৯ নম্বর তালিকার মন্তব্যের ঘরে লেখা আছে তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিল। এর বাইরে কোনো তথ্য নেই। সেই হিসেবে ধরে নেওয়া যায়, এই পাঁচ ব্যক্তি রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না বলেই তাদের অব্যাহতি দিতে আবেদন করা হয়েছিল।

    তালিকায় এসব ব্যক্তির নাম যেভাবেই আসুক না কেন সেটি লজ্জাজনক বলে দাবি করেছেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের পরিবারের সদস্য আরিফুল হক কুমার।

    তিনি বলেন, ‘এই তালিকায় কেন আসবে এসব ব্যক্তির নাম। যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, আবার যিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর—তার নাম কেন আসবে। হয়তো রাজাকাররা এই তালিকা তৈরিতে কাজ করেছেন।’

    রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ওয়ালিউর রহমান বাবু বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন তাদের নামও যদি তালিকায় থাকে, সেটিও হবে চরম লজ্জাজনক। কেন তাদের নাম এ তালিকায় উঠে এলো, কোন প্রসঙ্গে এলে তা বিস্তারিত উল্লেখ নাই।’

    তবে তালিকায় অনেক প্রকৃত স্বাধীনতাবিরোধীর নাম স্থান পেয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন ডিন আহম্মেদ মোহাম্মদ প্যাটেল (তিনি কানাডায় রয়েছেন), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন, ড. মোহাম্মদ ওয়াসিম, জিল্লুর রহমান, রাজশাহী নগরীর খোরশেদ আলম, আব্দুস সোবহান, খন্দকার আব্দুল বাকি প্রমুখ।

    নাম আছে কিন্তু ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি—এমনও রয়েছে তালিকায়। এঁদের মধ্যে ৩৮ নম্বর তালিকায় নজির আহমেদ, ৪৮ নম্বরে দলিলুর রহমান প্রমুখের শুধু নামই রয়েছে।

    ৪১ নম্বর তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে রাজশাহী জেলার সিংড়া থানার অন্তর্গত ভুল বাড়িয়া গ্রামের আব্দুল আজিজ কর্তৃক রাজাকার ও দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। কিন্তু কাদের নামে অভিযোগ করা হয়েছিল তাঁদের নাম উল্লেখ নেই তালিকায়।একই রকম অবস্থা আরো কয়েকটি ক্রমিক নম্বরে।

    ৪৪ নম্বর তালিকায় রাজশাহীর রাজাকার খোরশেদ আলম কর্তৃক দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলা হলেও বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি।

    মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক আহম্মেদ শফিউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারী মনে করতেন রাজাকাররা। তাহলে রাজাকার খোরশেদের করা অভিযোগ কি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে এটি হাস্যকর। যদিও আমি তালিকাটা দেখিনি।’

    রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের দাবি, এ তালিকা সম্পূর্ণ নয়। এটি ওই সময়ের তালিকার একটি খসড়া হতে পারে। আবার কপি পেস্টও হতে পারে। কোনো অনুসন্ধান ছাড়ায় যাচ্ছে, তাই সেভাবেই নামগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যেহেতু সরকার এটিকে রাজাকারের তালিকা বলছে, কাজেই এখানে কোনোভাবেই মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন এ রকম ব্যক্তির নাম উঠে আসা বাঞ্ছনীয় নয়। এটি মেনে নেওয়া যায় না।