ডেস্ক নিউজ : করোনা মহামারী বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করার সুযোগ দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ভারতে উৎপাদিত কোভিড ভ্যাকসিনের সবচেয়ে বড় গ্রহীতা বাংলাদেশ।
এছাড়াও বন্ধুদের মধ্যে আমাদের ভ্যাকসিনের সবচেয়ে বড় উপহারটিও (২ মিলিয়ন) ছিল বাংলাদেশের জন্য। ভারত নির্ভরযোগ্য বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলেও তিনি জানান।
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা গণমাধ্যমে তুলে ধরেন।
বেলা ১২ টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় শুরু হওয়া বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর নিজ নিজ দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকে প্রায় দেড় বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অত্যন্ত আনন্দিত বলেও মত প্রকাশ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের তাৎপর্য আমাদের ‘প্রতিবেশী প্রথমে’ এবং ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির জন্য ক্রমবর্ধমান প্রাসঙ্গিকতার মধ্যে নিহিত রয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে কেবল দক্ষিণ এশিয়াতেই নয়, বিস্তৃত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও একটি মূল প্রতিবেশী এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি। আমাদের সম্পর্কের প্রতিটি অর্জন সমগ্র অঞ্চলকে প্রভাবিত করে।
এ কারণেই আমরা নিরাপত্তা, বাণিজ্য, পরিবহণ ও সংযোগ, সংস্কৃতি, মানুষে-মানুষে সম্পর্ক থেকে শুরু করে জ্বালানি ও আমাদের অভিন্ন সম্পদ এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্কের যৌথ বিকাশসহ সকল ক্ষেত্রে আমাদের অংশীদারিত্বকে সম্প্রসারিত করার জন্য কাজ করছি।
নিজ সফরের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পিত সফরের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছেন। এই সফর খুবই স্মরণীয় হবে, কারণ এটি করোনা ভাইরাস মহামারীর পরে ভারতের বাইরে তাঁর প্রথম এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সফর।
তিনি বলেন, খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি বছর ছিল এটি, কারণ উভয় দেশ মুজিববর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পালন করছে।
উল্লিখিত তিনটি বার্ষিকীর প্রতি আমরা যে গুরুত্ব আরোপ করেছি এবং সেইসাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের প্রতি আমাদের যে অপরিসীম সম্মান তা এতে প্রতিফলিত হয়।
আমাদের সম্পর্ক গৎবাঁধা অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে এবং আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের বন্ধন শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং প্রগতিশীল দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কেন্দ্রবিন্দু। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে উভয় পক্ষই এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে, বিশেষত ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে।
পানিবণ্টন ইস্যুতে ভারতীয় মন্ত্রী বলেন, ভারতের অবস্থান সম্পর্কে সকলেই জানেন এবং সেই অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। সীমান্ত হত্যা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘নো ক্রাইম নো ডেথ’। তবে সীমান্তে হত্যা দুঃখজনক।
তিনি বলেন, “আমাদের যৌথ উদ্দেশ সীমান্তে কোনো অপরাধ, মৃত্যু না হওয়া। আমি নিশ্চিত যে আমরা যদি এটি সঠিকভাবে অর্জন করতে পারি-তবে কোনো মৃত্যু হবে না- আমরা একসাথে এই সমস্যাটিকে কার্যকরভাবে সমাধান করতে পারি।”
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে জয়শঙ্কর ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে দিল্লি থেকে ঢাকায় পৌঁছান। ঢাকায় বিএএফ বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিতে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। দু’দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে জয়শঙ্কর ঢাকায় আসেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে একমত ঢাকা-দিল্লি। বাণিজ্য, অভিন্ন নদীর পানিরবন্টনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
২৪ ঘণ্টা/রাজীব প্রিন্স