Tag: ঐতিহ্যবাহী

  • ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা ও ডোলা এখন বিলুপ্তপ্রায়

    ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা ও ডোলা এখন বিলুপ্তপ্রায়

    চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ এক সময় গ্রামীণ ঐতিহ্যে ভরপুর ছিল। কালের বিবর্তণে সে ঐতিহ্য সমূহ আজ কেবলী বইয়ের পাতায় অতীত স্বৃতি হিসেবে আমাদের কাছে ধরা দেয়। তেমনি এক ঐতিহ্য ধানের গোলা ও ডোলা।

    গ্রামবাংলার সমৃদ্ধির প্রতীক ধানের গোলা এখন বিলুপ্ত প্রায়। প্রকৃতির নৈসর্গিক তৃণভূমি সবুজের সমারোহে মাঠ ভরা সোনালি ফসলের ক্ষেত, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ ও কৃষকের গোলা ভরা ধান এখন প্রবাদ বাক্যে পরিণত হতে চলেছে। হারিয়ে যাচ্ছে কৃষিক্ষেত ও কৃষকের ঐতিহ্যবাহী গোলা শিল্প। মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেত থাকলেও অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতে নেই ধান মজুদ করে রাখার বাঁশ বেত ও কাতা দিয়ে তৈরি গোলাঘর।

    অথচ এক সময় সমাজের নেতৃত্ব নির্ভর করত কার ক’টি ধানের গোলা আছে এই হিসেব কষে। কন্যা পাত্রস্থ করতেও বর পক্ষের বাড়ী ধানের গোলার খবর নিতো কনে পক্ষের লোকজন। যা এখন শুধু কল্পকাহিনী। গ্রাম অঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির তৈরী করা ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। গোলার মাথায় থাকত টিনের তৈরী মিশরের পিরামিড আকৃতির টাওয়ার। যা দেখা যেত অনেক দুর থেকে।

    বর্ষার পানি আর ইঁদুর তা স্পর্শ করতে পারত না। মই বেয়ে গেলায় উঠে তাতে ফসল রাখতে হতো। এই সুদৃশ্য গোলা ছিল সম্ভ্রান্ত কৃষক পরিবারের ঐতিহ্য। সে সময় ভাদ্র মাসে কাদা পানিতে ধান শুকাতে না পেরে কৃষকরা ভেজা আউশ ধান রেখে দিতো গোলা ভর্তি করে। গোলায় শুকানো ভেজা ধানের চাল হত শক্ত। কিন্তু সম্প্রতি রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আধুনিক কলের লাঙ্গল যেন উল্টে পাল্টে দিয়েছে গ্রাম অঞ্চলের চালচিত্র।
    গোলায় তোলার মত ধান আর তাদের থাকে না। গোলার পরিবর্তে কৃষকরা ধান রাখা শুরম্ন করে বাঁশের তৈরী ক্ষুদ্রাকৃতি ডোলায়। ধান আবাদের উপকরন কিনতেই কৃষকের বিস্তর টাকা ফুরায়। কৃষকের ধানের গোলা ও ডোলা এখন শহরের বিত্তশালীদের গুদাম ঘরে পরিণত হয়েছে।
    কৃষকের ধান চলে যাচ্ছে একশ্রেণীর অসাধু মুনাফালোভী ফড়িয়া ও আড়ত ব্যবসায়ির দখলে। ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে পাকা ইমারত গুদাম ঘরে মজুদ করে রাখা হচ্ছে শহস্রাধিকটন ধান চাল। অনেক ক্ষুদ্র কৃষক বস্তা ও বেরেল ভর্তি করে রাখছে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান চাল। এখন আর দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে আসা গোলা নির্মাণ শ্রমিকদের দেখা মেলে না। গোলা শিল্পের শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন।

    তবে গ্রাম এলাকায় এখনো বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী গোলা রক্ষায় ধনী শ্রেণীর কৃষকরা বাঁশের তৈরি গোলা ধরে রেখেছেন। রঙ-বে রঙের কারুকার্য খচিত গোল গোলা, চারকোণা গোলা ও ঝুপি গোলার ছিল প্রত্যেক কৃষকের ধান-চাল রাখার এক নিরাপদ মূল্যবান সম্পদ। ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেওয়া হতো কৃষি পরিবারে গোলাঘর দেখে। মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত ও ধনাঢ্য চাষিদের বাসাবাড়ির সামনে থাকতো একাধিক গোলাঘর।

    এই সুদৃশ্য গোলা ছিল সম্ভ্রান্ত কৃষক পরিবারের ঐতিহ্য। সে সময় ভাদ্র মাসে কাদা পানিতে ধান শুকাতে না পেরে কৃষকরা ভেজা আউশ ধান রেখে দিতো গোলা ভর্তি করে। গোলায় শুকানো ভেজা ধানের চাল হত শক্ত।

    কিন্তু বর্তমানে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আধুনিক কলের লাঙ্গল যেন উল্টে পাল্টে দিয়েছে গ্রাম অঞ্চলের চালচিত্র। গোলায় তোলার মত ধান আর তাদের থাকে না। গোলার পরিবর্তে কৃষকরা ধান রাখা শুরু করে বাঁশের তৈরী ক্ষুদ্রাকৃতি ডোলায়। ধান আবাদের উপকরন কিনতেই কৃষকের বিস্তর টাকা ফুরায়। কৃষকের ধানের গোলা ও ডোলা এখন শহরের বিত্তশালীদের গুদাম ঘরে পরিনত হয়েছে।

    কৃষকরা জানান, তাদের পূর্ব পুরুষদের গোলাভরা ধান চালে চলতো এলাকার ১০-১৫টি গ্রামের মানুষের জীবন জীবিকা। গোলাভরা ধান ও পুকুর ভরা মাছই ছিল জমিদারি প্রথা ও উচ্চ চাষি পরিবারের ঐতিহ্য। পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া গোলাঘরে ধান চাল ওঠানো-নামানো হতো গরুগাড়িতে করে। এটা এখন কল্পকাহিনীতে পরিণত হয়েছে। একটা গোলা ঘরে গরুগাড়ি প্রবেশ করতে পারে বিশ্বাস করতে নারাজ এই প্রজন্মের মানুষ।

    বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। আগামী প্রজন্মের কাছে গোলা ঘর একটি স্মৃতিতে পরিণত হবে। আধুনিক গুদাম ঘর ধানচাল রাখার জাগা দখল করছে। ফলে গোলা ঘরের ঐতিহ্য হারাচ্ছে।

    এম.আর/এম.টি

  • সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথে ঐতিহ্যবাহী শিব চতুদর্শী মেলা ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু

    সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথে ঐতিহ্যবাহী শিব চতুদর্শী মেলা ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু

    ২৪ ঘন্টা ডট নিউজ। কামরুল দুলু,সীতাকুণ্ড : কলি যুগের মহাতীর্থ হিসাবে খ্যাত হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় তীর্থস্থান সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দিরে ঐতিহ্যবাহী শিব চতুদর্শী মেলা শুরু হচ্ছে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে।

    তিনদিন ব্যাপী এ মেলায় পূর্ণার্থীদের নিরাপত্তা ও তীর্থস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় বিশেষ উদ্দ্যেগ নিয়েছে মেলা আয়োজন কমিটি।

    বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনদিন ব্যাপী শিব চতুদর্শী মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।

    মেলা কমিটির পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিশ্বের সনাতন ধর্মীয় জনসাধারনের ঐতিহ্যবাহী সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ তীর্থ একটি অতি পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ পূণ্যস্থান। মেলা হিসেবে পরিচিত হলেও এটি মুলত ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ মন্দির

    প্রাচীন এ তীর্থস্থানে দেশ বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ পূর্ণার্থীর সমাগম ঘটে বিধায় কালক্রমে এটি বিশাল মিলন মেলায় রূপান্তরিত হয়েছে।

    তিনি বলেন, শিবচতুদর্শী মেলা সুন্দর, সুশৃঙ্খল, সমন্বয় ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রতিবছরের ন্যায় এবারও প্রথমে স্থানীয়ভাবে, পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মেলা কার্যনির্বানী কমিটির এবং সর্বশেষ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও মেলা কেন্দ্রীয় কমিটি সভায় চুড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ মন্দির মেলা কমিটির সংবাদ সম্মেলন

    আগামী ২০ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি শিব চতুদর্শী এবং ৮-৯ ফেব্রুয়ারি দোল পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত হবে। সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটির পক্ষ থেকে পুরী লজিং এ্যাক্ট অনুযায়ী শিবরাত্রী পূজা অনুষ্ঠানে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। স্রাইন কমিটির পক্ষ থেকে বৈদিক সম্মেলন আয়োজন করা হবে।

    তিনি আরো বলেন, মেলায় সার্বিক আইন-শৃংঙ্খলা রক্ষার জন্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীতাকুণ্ড সার্কেল শম্পা রাণী সাহা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফিরোজ আলম মোল্লা’র নেতৃত্বে প্রায় ৫শ ৫০ জন পুলিশ এবং বিশেষ করে এবার মহিলা পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া ৩০-৪০ জন মহিলা আনসার-ভিডিপি সদস্য মেলা চলাকালীন সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত থাকবে।

    মেলা উপলক্ষে তীর্থ যাত্রীদের আগমনের সুবিধার্থে তুর্ণা নিশিতা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতীসহ অন্যান্য আন্তঃনগর ট্রেন সমুহের যাত্রার ক্ষেত্রে সীতাকুণ্ডে ৩ মিনিট যাত্রা বিরতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ মন্দির মেলা

    তীর্থে মন্দিরসহ মেলায় স্থাপিত দোকান, স্টল, বিনোদন কেন্দ্র সমূহকে অগ্নিকান্ডের হাত থেকে রক্ষা করা ও অসুস্থ তীর্থ যাত্রীদের জরুরী ভিত্তিতে সেবা দেয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ডসহ ফায়ার সার্ভিস বিভাগ সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত থাকবে।

    এছাড়া সীতাকুন্ড মেলা কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুবিধাজনক স্থানে পানীয় জলসহ ৩০ টি স্থায়ী-অস্থায়ী টয়লেট ব্যবস্থাপনার চেষ্টা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সীতাকুণ্ড বটতলী কালি মন্দির থেকে ইকো পার্ক হয়ে চন্দ্রনাথ মন্দির, বাড়বকুণ্ড ও লবণাক্ষে যাতায়াতের জন্য বিশেষ যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

    দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতা স্বাভাবিক থাকায় এবার মেলায় দেশে-বিদেশের লক্ষ লক্ষ পূর্ণাথীর আগমন ঘটবে বলে আশা করছে মেলা কমিটি।

    সংবাদ সন্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সীতাকু্ণ্ড পৌর ব্যাবসায়ী কমিটির সাধারন সম্পাদক মো. বেলাল উদ্দিন, মুুুুক্তিযুদ্ধা আবুল কাসেম ওয়াহিদী, মেলা কমিটির অতিরিক্ত সম্পাদক সমীর কান্তি শর্মা, বাবুল কান্তি শর্মা, কানু কুমার বনিক, বুলবুল লালা, অধ্যাপক রনজিত সাহা প্রমূখ।

  • সীতাকুণ্ডের ঐতিহ্যবাহী বহরদার বাড়ীর মিলনমেলায় আবেগ-উচ্ছাসের প্রাণ স্পন্দন

    সীতাকুণ্ডের ঐতিহ্যবাহী বহরদার বাড়ীর মিলনমেলায় আবেগ-উচ্ছাসের প্রাণ স্পন্দন

    কামরুল ইসলাম দুলু : পারিবারিক বন্ধন আমাদের গর্ব, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পারিবারিক শিক্ষার শক্ত ভিক্তির উপর দাঁড়িয়ে ছিল আমাদের এই সমাজ, পরিবারের মঙ্গলের জন্য জীবনের সবটা সময় নিবেদিত করেছিলেন মা-বাবা।

    কালের পরিক্রমায় এই বন্ধন আজ হুমকির সন্মুখীন, ভেঙ্গে যাচ্ছে পরিবারের আদর্শ, মূল্যবোধ, ধুঁকছে সমাজ। আধুনিক ব্যস্ত জীবনে ফিরে আসুক পুরানো সেই পারিবারিক সম্প্রীতির বন্ধন।

    সেই লক্ষ্যে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও অনুষ্ঠিত হল সীতাকুণ্ড উপজেলার, ১০ নং ছলিমপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বহরদার বাড়ীর পারিবারিক মিলন মেলা।

    বহরদার বাড়ী কল্যাণ ষ্ট্রাস্ট কৃর্তক আয়োজিত শুক্রবার সমুদ্র উপকুলে অনুষ্টিত হয় দিনব্যাপী উক্ত মিলন মেলায় প্রায় ১০০ টি পরিবারের ৭০০ শত জন মানুষ অংশ নেন। ঐতিহ্যবাহী বহরদার বাড়ী কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যেগে ৭ বছর ধরে আয়োজন করে আসছে এই মিলন মেলা।

    শুক্রবার সকালে কেক কাটার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপী নানা আয়োজন। গুণীজন সন্মাননা, মহিলাদের জন্য মিউজিক্যাল পিলো, পুরুষদের জন্য হাড়িভাঙ্গা, বাচ্চাদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিস্কুট দৌড়, যেমন খুশি তেমন সাজো, স্কুল শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরন, রক্তের গ্রুপ পরিক্ষা,চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান, জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং র‍্যাফেল ড্র।

    সকল দুঃখ-কষ্ট ভুল দিনব্যাপী আনন্দ-আড্ডা, সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি ও গান-কৌতুকে মুখরিত হয়ে উঠে পারিবারিক মিলনমেলা।

    সাংস্কৃতিক আয়োজনে নৃত্য-তালের মূর্ছনায় আত্মীয়-স্বজনের আবেগ-উচ্ছাসের প্রাণ স্পন্দন আরো বাড়িয়ে দেয়।

    বহরদার বাড়ী কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা কুতুব উদ্দীন আহমদ এফ সি এ বলেন, মানুষে মানুষে ভ্রাক্তিত্বের বন্ধন আরো মজবুদ করতে, সকল হিংসা-বিবাদ দুর করতে প্রতিবছরই আমরা এই মিলন মেলার আয়োজন করে আসছি। এছাড়া বহরদারবাড়ী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা সমাজের বিভিন্ন কল্যাণমূখী কাজগুলো করে থাকি।