Tag: কথিত প্রেমিক

  • পরকিয়ার বলি স্বামী ও শিশু সন্তান! স্ত্রী ও শ্রমিকনেতাসহ আটক ৫

    পরকিয়ার বলি স্বামী ও শিশু সন্তান! স্ত্রী ও শ্রমিকনেতাসহ আটক ৫

    চট্টগ্রাম নগরীর নিমতলায় ৩ তলা ভবনের নিচ তলার একটি কক্ষ থেকে বাবা ও মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের একদিন না পেরুতেই খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। স্ত্রী হাছিনা আক্তারের পরকিয়ার বলি হলেন দিনমজুর স্বামী মো. আবু তাহের ও চার বছরের শিশু কণ্যা বিবি ফাতেমা।

    পুলিশ জানিয়েছে, নিহত আবু তাহেরের স্ত্রী হাছিনা আক্তারের সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের সময় তাহেরের মেয়ে বিবি ফাতেমা সব দেখে ফেলে। এসময় ঘটনাটি তার বাবা বাড়ি ফিরলে তাকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বললে কথিত প্রেমিক মাইনুদ্দিন ও হাছিনা মিলে শিশুটিকে গলায় ছুরি বসিয়ে হত্যা করে।

    কিছুক্ষন পর আবু তাহের বাড়িতে ফিরলে তাকেও দুজনে জোরপূর্বক আটকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে প্রেমিক মাইনুদ্দিন ও স্ত্রী হাছিনা বেগম।

    শনিবার স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নগরীর বন্দর থানার নিমতলা এলাকায় স্থানীয় বুচুইক্যা কলোনীর ওই বাসা থেকে বাবা মেয়ের লাশ উদ্ধারের পর স্ত্রী হাছিনা, শ্যালিকা ও ভায়রাসহ ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

    পুলিশের অভিযানে নাছিমার পরকিয়া প্রেমিক ও শ্রমিক নেতা মাইনুদ্দিন নোয়াখালি থেকে গ্রেফতার

    হাছিনার দেওয়া তথ্যে তার কথিত প্রেমিক মাহিন উদ্দিনের অবস্থান শনাক্ত করে নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতেই তাকে গ্রেফতার করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

    এর আগে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত আবু তাহেরের ভাই নুরুল আলম বাদি হয়ে তাহেরের স্ত্রী হাছিনা আক্তার ও প্রতিবেশী মাইনুদ্দীনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

    প্রেমিকাকে নিয়ে স্বামী সন্তানকে নিজ হাতে হত্যার পর শোকের আহাজারি নাটক স্ত্রী হাছিনা আত্কারের।

    জানা যায়, এলাকাবাসীর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে পরকিয়ার বিষয়টি মাথায় নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। প্রথম থেকেই তাদের ধারণা ছিলো পরকিয়ার কারণে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী হাছিনা আক্তার পরিকল্পিতভাবে স্বামী ও শিশু সন্তানকে হত্যা করেছে।

    শনিবার বিকালে একাধিক প্রতিবেশীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, হত্যাকান্ডটির মাত্র ৩দিন আগেও স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তুলুম ঝগড়া হয়েছে। স্ত্রী হাছিনা আক্তারের পরনে একটি লাল শাড়িকে গিরে স্বামী মো. আবু তাহেরের মনে সন্দেহ জাগে। এই লাল শাড়ি কে দিয়েছে, কেন দিয়েছে? এসব নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হলে স্ত্রী হাছিনার সাথে স্বামী তাহেরের তুমুল ঝগড়া শুরু হয়।

    প্রতিবেশিরা জানিয়েছে, হাছিনা মানুষের বাসায় বুয়ার কাজ করতেন। আর স্বামী আবু তাহের গুদাম শ্রমিকের কাজ করতেন। যে গুদামে তাহের শ্রমিকের কাজ করতেন সেই গুদামের শ্রমিকনেতা ছিলেন নোয়াখালির সুবর্ণচর এলাকার বাসিন্দা মাইনুদ্দিন। তার বাসাও তাহেরের পাশাপাশি হওয়ার সুবাধে মাইনুদ্দিনের সাথে হাছিনার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো।

    গত ১৭ আগস্ট হাছিনাকে একটি লাল রঙের শাড়ি উপহার দেন মাইনুদ্দিন। এ শাড়ির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়দিন ধরে আবু তাহেরের সাথে তার স্ত্রীর ঝগড়া ও পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়।

    প্রতিবেশী বিলকিস বেগম জানিয়েছে, গত ১৭ অক্টোবর ওই লাল শাড়িটি পড়ে হাছিনা বাইরে বের হতে চাইলে স্ত্রীর পড়নে নতুন লাল শাড়ি দেখে মাথা খারাপ হয়ে যায় আবু তাহেরের।

    তাহেরের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে হাছিনা এক পর্যায়ে বলেন সে যে বাসায় বুয়ার কাজ করে ওই বাসার মালিকের বউ তাকে ভালবেসে কাপড়টি উপহার দিয়েছে। কিন্তু আরিফ কথাটি বিশ্বস করতে নারাজ, সে হাছিনাকে বলে তার কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধু শাড়িটি দিয়েছে। এধরনের কথাবার্তায় দুজনের তুমুল ঝগড়া হয়। হাছিনাকে মারধরও করে তাহের।

    অপর প্রতিবেশীরা জানিয়েছে, গুদাম শ্রমিক নেতা মাইনুদ্দিন মাঝে মাঝে হাছিনার ঘরে আসতো। মাইনুদ্দিনের সাথে অনৈতিক কিছু দেখে ফেলার কারণে তাহের ও তার শিশু কন্যা খুনের শিকার হয়েছে বলে তাদের ধারণা।

    এদিকে ঘটনার পর থেকে গুদাম শ্রমিক নেতা মাইনুদ্দিন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও থানায় নিয়ে স্ত্রী হাছিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে পুলিশ মাহিনউদ্দিনের অবস্থান নিশ্চিত হয়। নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

    সিএমপির বন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. কামরুল ইসলাম শনিবার রাতে জানিয়েছেন, লাশ উদ্ধারের পর গলায় ছুরিকাঘাতের দাগ ও রক্তমাখা ছুরি উদ্ধারে প্রথম থেকেই এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ধরে নিয়েই পুলিশ এ হত্যাকান্ডের তদন্ত শুরু করে। তাই স্ত্রী হাছিনা আক্তারসহ চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।

    আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী হাছিনা আক্তার একেক সময় একেরকম তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এতে পুলিশের আরো সন্দেহ হলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পরকিয়াকে কেন্দ্র করে অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। এছাড়া স্ত্রী হাছিনা আক্তারের মোবাইল ফোনে খুনের দিন এবং এর দুইদিন আগে পর্যন্ত কাদের সাথে বেশি কথা হয়েছে তা চিহ্ণিত করে খুনের কারণ এবং খুনের অবস্থান অনেকটা নিশ্চিত হয় পুলিশ।

    বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী রবিবার সকালে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত হাছিনা আক্তারের কথিত প্রেমিক মাহিনুদ্দিনকে নোয়াখালি থেকে আটক করার তথ্যটি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রাথমিকভাকে পরকিয়ার জেরে হত্যাকান্ডটি ঘটেছে বললেও দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানায়।

    জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানা নিমতলা এলাকায় বুচুইক্যা কলোনির জনৈক শাহআলমের মালিকানাধীন ৩ তলা ভবনের নিচতলার একটি ঘরে স্ত্রী হাছিনা আক্তার ও মেয়ে বিবি ফাতেমাকে নিয়ে ভাড়ায় থাকতেন আবু তাহের। তিনি দিন মজুরের কাজ করতেন। নোয়াখালী জেলার চরপার্বতী এলাকার মো মোস্তফার ছেলে তাহেরের স্ত্রী হাছিনা আক্তার বুয়ার কাজ করতেন।

    শনিবার (১৯ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বন্দর থানাা পুলিশ ওই ভাড়া বাসা থেকে দিনমজুর আবু তাহের ও মেয়ে বিবি ফাতেমার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। দুজনের গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পায় পুলিশ। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ধারালো রক্তমাখা একটি ছুরিও উদ্ধার করে।

    এসময় স্ত্রী হাছিনা আক্তার দাবি করেন, ঘটনার দিন সকাল ৮ টার দিকে কাজে গিয়ে ৯টার দিকে এসে মেয়ে ফাতেমার লাশ খাটের উপর এবং স্বামী আবু তাহেরের লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের মাধ্যমে সে পুলিশকে খবর দেন। ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধারের পরপর হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের সাথে সিআইডির ফরেনসিক টিম, ডিবি ও পিবিআই যৌথভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করে।