চট্টগ্রাম মেট্রো পলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের পরিবেশ আরো সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে তুলতে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। যারা রাজনৈতিক পরিচয়ে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি তাদের বিরুদ্ধে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হযে দুর্ণীতিবাজদের সাথে যোগযোগ রক্ষাকারীর বিরুদ্ধে এ শুদ্ধি অভিযান।
তিনি বলেন, যারা মনে করেছেন সন্ত্রাস করে বড় বড় নেতা হবেন, অনেক টাকার মালিক হবেন তবে ভুল করবেন। আইনশঙ্খলা বাহিনীর কেউ যদি মনে করেন এসব মাদক ব্যবস্যায়ি ও অপরাধীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে অনেক উচু স্থরে যাবেন তারা দয়া করে সে আশা পরিত্যাগ করুন। আগে নিজে কিভাবে বেঁচে থাকবেন সে চিন্তা করুন।
কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে উপলক্ষে শনিবার (২৬ অক্টোবর) নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত আলোচনা সভায় সিএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযান থেকে কেউই মুক্ত নন মন্তব্য করে সিএমপি কমিশনার আরো বলেন, যারা সমাজকে দুষিত করছে তারা কেউই শুদ্ধি অভিযান থেকে মুক্ত নন। ব্যবসায়ি, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি এমনকি আমি মুক্ত নয়। সুতরাং সময় থাকতে সবাই পরিশুদ্ধ হয়ে যান। দেশে থাকলে ভাল করে থাকতে হবে নাহলে দযা করে যেভাবে পারেন দেশ ছাড়েন। আমাদের কলঙ্খিত মুখ এদেশবাসী দেখতে চাই না। এ সরকার দেখতে চাই না।
বক্তব্যের শুরুতে মাহবুবর রহমান বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ যেমন সারা বাংলাদেশকে সুশৃঙ্খল করতে পারে না তেমনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ একার পক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যথেষ্ট নয়। এখানে সমাজের সর্বস্থরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সহযোগীতা দরকার। এ লক্ষ্য নিয়ে ইতিমধ্যে সমাজের বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রমে এবং বিভিন্ন সোসাইটিতে উপস্তিত হযে সচেতনতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।
পুলিশের আমুল পরিবর্তনের যাদুকর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা :
বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান পরিস্থিতি ও ১০ বছরের আগের পুলিশি কার্যক্রমে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে মানুষ ভয়ে হোক, সংকোচে হোক বা লজ্জ্বায় থানামূখী হতো না। এখন আমরা এমন ভাবে পরিচালনা করছি।
সাধারণ মানুষকে থানায় আসতে হয়না। হ্যালো ওসি কার্যক্রমের মাধ্যমে পুলিশই নগরীর প্রতিটি অলিতে গলিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে কেউ ওসির চেহারা দেখতো না সেখানেও পুলিশ ছুটে যায়। অপরাধ প্রবণ এলাকায় বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে তাৎক্ষরিক সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি। অথবা সমস্যা সমাধানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছেন। ১০ বছর আগের পুলিশ এবং বর্তমান পুলিশের আমুল পরিবর্তনের যাদুকর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতিটি থানার ওসিদের বাধ্য করা হচ্ছে প্রতি সপ্তাহের অন্তত একটি দিন শুক্রবার জুম্মার নামাযের পর জঙ্গি বিরোধী, মাদক বিরোধী আলোচনা জনগণের সাতে শেয়ার করতে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। প্রতি মাসের অন্তত একটি দিন সংশ্লিষ্ট থানা এলাকার অপরাধ প্রবণ এলাকায় নিজে উপস্তিত থেকে ওই এলাকার সমস্যা নিয়ে জনগণের সাথে কথা বলছে। আমি চাই পুলিশ জনগণের দৌড়গোরায় যাবে।
সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়িকে জনপ্রতিনিধি বানাবেন না :
মন্দ পুলিশের সাথে নয়, ভাল পুলিশের সাথে থাকার আহবান জানিয়ে সাধারণ জনগণের উদ্দ্যেশে সিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশ যদি ভাল কাজ করে তবে আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন। আর খারাপ কাজ করলে আমাদের বর্জন করবেন।
আমাদের মধ্যে যদি দুষ্ট পুলিশ থাকে খারাপ পুলিশ থাকে এবং রাজনৈতিক কিংবা জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে যদি দুস্কৃতিকারী, দুর্ণীতিবাজ বা অপরাধী থাকে তবে তাদেরকে শনাক্ত করার জন্য সহযোগীতা করুন এবং তাদেরকে বর্জন করুন।
দয়া করে কোন সন্ত্রাসীকে, চাঁদাবাজকে এবং কোন মাদকব্যবসায়িকে জনপ্রতিনিধি বানাবেন না। তাদেরকে কোন অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বানাবেন না। আমি যদি মন্দ হই তবে আমাকেও বর্জন করুন।
কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত আইজি মো. ইকবাল বাহার।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমেদ খান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কলিম সরওয়ার, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, চসিকের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের নেতা এস এম আবু তৈয়ব, চসিক কাউন্সিলর আনজুমান আরা আনজু, কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রাম নগর শাখার সদস্য সচিব অহীদ সিরাজ স্বপন বক্তব্য দেন।
কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে জিইসি মোড় থেকে ওয়াসা মোড় পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। রং-বেরঙের ব্যানার, পোস্টার, বেলুন এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে র্যালিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।