২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ। চট্টগ্রাম ডেস্ক || মরণঘাতী করোনা ভয়াবহতার মধ্যে সাম্পান মাঝিদের ঘাট থেকে বিতাড়িত করছে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা।
করোনার কারণে লকডাউনে গত ১৬ দিন ধরে ঘাটে সাম্পান রেখে বেকার দিন কাটাচ্ছিল সাম্পান মাঝিরা। এর মাঝেও আজ সোমবার সকালে লাইটার জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি হাজী সফির মালিকানাধীন বোট যাত্রী নিয়ে পারাপার করছে দেখে মাঝিরা হতভম্ব হয়ে যায়।
যাত্রী নিয়ে বড় বোট ইছানগর ঘাটে গেলে সেটি আটক করে কর্ণফুলী থানায় অবহিত করে সাম্পান মাঝিরা। পরে মুসলেকা নিয়ে বোটটি ছেড়ে দেয়া হয়।
সাম্পান মাঝিরা অভিযোগ করে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে লাইটার জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতিকে ঐতিহ্যবাহী বাংলাবাজর ঘাট হস্তান্তর করা হয়েছে।
তারা জানিয়েছে বাংলাবাজার ঘাটে বর্তমানে তিন শতাধিক সাম্পান মাঝি আছে। তারা পালা করে যাত্রী পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।
এখন ইজারাদার সাম্পানের পরিবর্তে দুইটা বোট দিয়ে যাত্রী পারাপার করলে ঘাট থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে তিনশতাধিক সাম্পান। পেশা হারাবে মাঝিরা।
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি আলীউর রহমান বলেন, সাম্পান ও সাম্পানমাঝি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের প্রতীক।
মাঝিদের পেশা টিকিয়ে রাখতে আমরা ব্যর্থ হলে সাম্পান ও মাঝিরা চিরতরে হারিয়ে যাবে। আমরা কিছুতেই তা হতে দেবোনা।
তিনি বলেন, ২০০৩ সালে প্রদত্ত পাটনিজীবি আইনে উল্লেখ আছে, আগ্রহী জন্মগত পেশাদার পাটনীগণকে (সাম্পানমাঝি) ফেরীঘাট ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হইবে।
পেশাদার পাটনীমাত্র একজন থাকিলে তাহার অনুকূলে সম্ভাব্য মূল্যে ফেরীঘাট ইজারা প্রদান করিতে হইবে।
ফেরীঘাট ইজারা (পাটনিজীবি) নীতিমালার ১(চ)৩ ধারায় উল্লেখ আছে ” ফেরীঘাটের একটি পাড় ইউনিয়নের সীমার মধ্যে এবং অপর পাড়টি পৌরসভা / সিটি কর্পোরেশনের এলাকায় অবস্থিত হইলে সেই ফেরীঘাট নিম্নবর্ণিত কমিটির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সহকারী কমিশনার ভূমিকে সদস্য করে ঘাট ইজারা দিবেন।
চট্টগ্রাম ইছানগর বাংলাবাজার ঘাটটি একপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অপরপারে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা।
গত ৩১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখ ঘাট ইজারা ঘোষণার পূর্বে চরপাথরঘাটা চেয়ারম্যান ও কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী ভূমিকে ইজারা কমিটির সদস্য করা হয়নি।
এই ব্যাপারে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাবের আহমেদ বলেন, সিটি কর্পোরেশন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে আমাদের সদস্য করে কমিটি গঠন ছাড়াই ঘাট ইজারা দিয়েছে। যা অবৈধ।
এই বিষয়ে রিটকারী এডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন। করোনার কারণে কোর্ট বন্ধ থাকার বিষয়টি সিটিকর্পোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তাকে আমি লিখিতভাবে অবহিত করেছি।
ইছানগর বাংলাবাজার সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ লোকমান বলেন, আমরা সাম্পান মাঝি। সাম্পান চালিয়ে জীবন নির্বাহ করা ছাড়া অন্য কাজ জানা নাই। সিটি কর্পোরেশনের এই অনৈতিক কাজে এখন আমরা দিশেহারা। আমাদের পেশা রক্ষায় আমরা প্রয়োজনে আমরন অনশন করবো।
২৪ ঘণ্টা/ আর এস পি