২৪ ঘন্টা ডট নিউজ। নেজাম উদ্দিন রানা, রাউজান :
মাত্র ২০ দিন পূর্বেই গ্রামের বাড়ি থেকে কর্মস্থল ঢাকায় ছুটে যান টগবগে যুবক মোঃ সুমন (২৬)। কেন জানতো পরিবারের আদরের ধনটি লাশ হয়ে বাড়ি ফিরবে এক মাসেরও কম সময়ে!
চঞ্চল এই ছেলেটির মৃত্যু সংবাদে যেন শোকাচ্ছন্ন করে রেখেছে রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের উত্তর গুজরা গ্রামের ছমদ আলী সিকদার বাড়ির পরিবেশ। সন্তানহারা মা আর ভাই-বোনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে এই এলাকার পরিবেশ।
নিহত সুমনের পিতা নুরুল হক ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, গত ১ জানুয়ারি সকাল ১১টার দিকে রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে ব্যাংক এশিয়া ভবনের ১০ তলায় একটি বিলবোর্ডের কাজ করার জন্য ভবনটির ছাদে উঠেছিল সুমন। হঠাৎ করে অসাবধানতাবশত হয়ে ছাদ থেকে ছিটকে নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়।
খবর পেয়ে বুধবার রাতেই ঢাকায় ছুটে যান সুমনের পিতা নুরুল হক ও প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে ২ জানুয়ারি বিকেলে সুমনের লাশ নিয়ে রাউজানের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তার পিতা।
স্থানীয় লোকজন জানান, কৃষক নুরুল হকের গ্রামের বাড়ি বরিশাল হলেও কাজের সূত্রে রাউজান এসে বিগত ২০/২৫ বছর ধরেই পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের উত্তর গুজরা গ্রামের ছমদ আলী সিকদার বাড়িতে জায়গা কিনেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
তার তিন মেয়ে ও দুই পুত্র সন্তানের মধ্যে সুমন দুইভাইয়ের মধ্যে কনিষ্টজন। সুমনের বড় ভাই রুবেল পেশায় রাজমিস্ত্রী। বিগত ৬ মাস পূর্বেই প্রেম ঘটিত বিয়ে করেন সুমন। সংসারের নানা ঝুট-ঝামেলায় সুমনের স্ত্রী তার কাছ থেকে কয়েক মাস ধরে আলাদা থাকছেন।
প্রথমে এ্যালুমিনিয়ামের কাজ শিখে কিছুদিন চট্টগ্রাম শহরে কাজ করার পর এক নিকট আত্মীয়ের সূত্র ধরে ঢাকায় ছুটে যান। সেখানে এক সাব কন্ট্রাকটরের অধীনে এ্যালুমিনিয়ামের কাজ করতো সে।
অভাবের সংসারে হাসি ফোটাতে দুই ভাইয়ের চেষ্টার কমতি ছিলনা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, অকালেই প্রাণ হারাতে হলো সুমনকে।
বৃহস্পতিবার লাশবাহী গাড়িটি যখন বাড়ির সীমানায় প্রবেশ করে তখন স্বজনদের কান্নার রোলে ভারী হয়ে উঠে এই এলাকার পরিবেশ। শুধু স্বজন নয়, লাশ দেখতে ছুটে আসা অগণিত নারী-পুরুষও চোখের জল সংবরণ করতে পারেনি।
মাত্র বিশদিন পূর্বেই যার হাসিমুখ দেখেছে স্বজনরা এই কয়েকদিনের মধ্যেই ছেলেটি যে সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দেবে তা কি কম্পিণকালেই ভেবেছিল কেউ?
বৃহস্পতিবার রাত আটটায় স্থানীয় ছমদ আলী সিকদার পাড়া জামে মসজিদ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করার কথা রয়েছে।