রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জ উপজেলার চুনকুটিয়া এলাকায় ‘প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরও আটজনের মৃত্য হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৯ শ্রমিকের মৃত্যু হলো।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার দিনগত রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত তাদের মৃত্যু হয়।
ঢামেক বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন (আরএস) ডা. আরিফুল ইসলাম নবীন জানান, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- ইমরান, বাবুল, রায়হান, খালেক, সালাউদ্দিন, সুজন, জিনারুল ইসলাম, আলম ও জাকির হোসেন।
এর আগে বুধবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকার ‘প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় আগুন লাগে। ঘটনার সময় শ্রমিকরা কাজ করছিলেন। তখন হঠাৎই গ্যাস রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
এ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১০ হাজার স্কয়ার ফিট কারখানাটির ভেতরের সব মালামাল ও যন্ত্রাংশ পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জাকির হোসেন (২২) নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় প্রায় ৩৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে আহতদের মধ্য থেকে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আট জনের মৃত্যু হয়।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন জানান, কিভাবে সেখানে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অগ্নিকাণ্ডের কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
তবে ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক কাজী নাজমুজ্জামান জানান, প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন, প্লাস্টিক গলানোর যে মেশিন (বয়লার মেশিন) সেটি বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন জানান, দগ্ধদের সব ধরনের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। দগ্ধদের মধ্যে ৩৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
‘প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’র কারখানার গত দুই বছরে তিনবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার দুটোই ঘটেছে চলতি বছরে। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ড ছিল ভয়াবহ।
২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর কারখানাটিতে প্রথম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো আগুন লাগে। তবে ওই দুটি অগ্নিকাণ্ডে কারখানার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সর্বশেষ গতকাল বুধবার (১১ ডিসেম্বর) তৃতীয়বারের মতো আগুন লাগে কারখানাটিতে।