সারাদেশে হাইকোট অর্থের বিনিময়ে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করার পর ফের জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে পুলিশ প্রশাসন।
অনলাইন জুয়া খেলার ওয়েব সাইট বেট থ্রি সিক্সটি ফাইভের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সর্বশেষ গত তিন মাসে এধরণের জুয়া খেলায় দু’শ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এ জুয়া খেলায় কোটি টাকা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেকে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে টানা অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে আটকের পর চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বের হয়ে আসছে।
গতকাল গভীর রাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত তামাকুমিন্ড লেইন থেকে শুরু হয় অন লাইন জুয়ারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের এই অভিযান। দু’টি জুয়ার স্পট থেকে আটক করা হয় ১৬ জনকে।
পুলিশ জানায়, আটককৃতদের মধ্যে ১১ জন সাধারণ জুয়াড়ি হলেও ৩ জন হলো এজেন্ট। যারা দ্বিতীয় একটি পক্ষের হয়ে এসব সাধারণ জুয়াড়িদের কাছ থেকে বাংলাদেশি টাকা নিয়ে তা ডলারে কনভার্ট করে জুয়ায় অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দিতো। মূলত তাদের আন্তজাতিক একাউন্টের মাধ্যমে সাধারণ জুয়াড়িরা টাকা বিনিয়োগের সুযোগ পেয়েছে। আর বাকি দু’জন হলো জুয়ার স্পটের মালিক।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের-সিএমপি দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের কাছে খবর আসছিলো অন লাইনে জুয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। সে অনুযায়ী অনুসন্ধানে নামে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম। প্রথমে তামাকুন্ডি লেইনের জুয়াড়িদের আটক করা হয়।
পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আটক করা হয়েছে দলের বাকি সদস্যদের। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কেউ’ই কিন্তু জুয়ায় টাকা বিনিয়োগ করে জিততে পারেনি। তাতে বুঝা যায় টাকাগুলো বিদেশ চলে যাচ্ছে। আরেকটি বিষয় হলো এই বিট থ্রি সিক্সটি ফাইভ ওয়েব সাইটটি নিয়ন্ত্রন হচ্ছে দেশের বাইর থেকে।’
আটককৃতের তথ্য এবং পুলিশের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসছে, গত এক বছর ধরেই চলছে বিট থ্রি সিক্সটি ফাইভের মাধ্যমে জুয়া খেলা। আর গত ৩ মাসে অন্তত দু’শ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এই সাইটে। বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই জুয়া নিয়ন্ত্রন হলেও চট্টগ্রামের জুয়ারীরা তৃতীয় এবং চতুর্থ পাটি হিসাবেই পরিচিত ছিলো।
আটক ইমান আলী মিঠু জানান, তারা সরাসরি এই জুয়ায় অংশ নিতেন পারেন না। অন্যজনের একাউন্ট দিয়ে তাদের জুয়া খেলতে হয়। তবে এক জুয়াড়ি স্বীকার করেছে, গত এক বছরে তার অন্তত এক কোটি ক্ষতি হয়েছে এই জুয়ায়।
জুয়াড়িদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইলে হিসাব দেখে অনেকটা বিস্মিত পুলিশ প্রশাসন।
কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য রয়েছে এসব একাউন্টে। অধিকাংশ জুয়ারীই এখানে টাকা হারিয়েছে। এমনকি কোটি টাকা হারানোর নজির রয়েছে। গত কয়েকমাস আগে জুয়া হেরে আত্মহত্যা করেছেন হাজারী গলির এক যুবক।
কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘এসব জুয়ারীরা বুঝে না বুঝে এর সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। অন লাইনের এই জুয়া খেলে লাভবান হয়েছে এমন কোনো নজির নেই।’
পুলিশ জানায়, ভারতের আইপিএল, বাংলাদেশের বিপিএলের পাশাপাশি অষ্ট্রেলিয়ার বিগব্যাশ নিয়েও জুয়া খেলেছে তারা। মূলত টেলিভিশনে লাইভ দেখানো ফুটবল এবং ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে চলে এসব জুয়া। নগরীর অন্তত ১০টি পয়েন্ট রয়েছে যেখানে নিয়মিত অন লাইনে এধরণের জুয়া খেলা চলছে। বিভিন্ন চাকরিসহ ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্তরা লোভের বশীভূত হয়ে এই জুয়া খেলা জড়িয়ে পড়ছে।
অভিযানে অংশ নেয়া কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক সঞ্জয় কুমার দাশ জানান, জুয়াড়িরা বিট থ্রি সিক্সটি ফাইভ ওয়েব সাইটের পাশাপাশি টাকা বিনিময়ের জন্য আরো কয়েকটি অ্যাপস এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।