Tag: খেজুরের রস

  • খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবেনা: আইইডিসিআর

    খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবেনা: আইইডিসিআর

    বাদুড়ের মুখের নিঃসৃত লালা এমনকি তাদের মলমূত্র খেজুরের রসের সঙ্গে মিশে যায়। এ রস কাঁচা খেয়ে নিপাহ ভাইরাস সরাসরি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত করে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই এখনই সংক্রমণ ঠেকানো না গেলে এ রোগ মহামারি রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। তাই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া নিষেধ করল সংস্থাটি।

    রোববার (১০) ডিসেম্বর রাজধানীর মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) অডিটোরিয়াম ‘নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকিবিষয়ক অবহিতকরণ’ শীর্ষক আলোচনাসভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

    সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআর জানিয়েছে, গত এক বছরে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি মানুষ। মৃত্যুর হার ৭১ শতাংশ। গত ৭ বছরে দেশে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৩৩৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ২৪০ জন। এ ছাড়া গত এক বছরে আক্রান্ত ১৪ জনের মধ্যে প্রাণ গেছে ১০ জনের।

    আইইডিসিআরের তথ্য বলছে, ২০০৪ সালে দেশে প্রথম শনাক্ত হয় নিপাহ ভাইরাস। এরপর থেকেই শীতকালে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।

    আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন জানিয়েছেন, মানুষ যাতে কাঁচা রস না খায়- এই ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা প্রয়োজন। রসের জন্য নিরাপত্তা দিলেও (বিক্রেতারা) আসলে কিন্তু রিয়েল নিরাপত্তা হয় না। বিশেষ করে অনলাইনে কাঁচা রস ক্রয় বন্ধসহ উৎসাহ কমাতে হবে।

    ওয়ান হেলথের ড. নীতিশ দেবনাথ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সবাইকে সচেতন করার কাজ করছি; কিন্তু সচেতনতা তৈরি হয়নি। নিপাহ ভাইরাস সাধারণত বাদুড় থেকে ছড়ায়; কিন্তু কমপ্লেক্স প্রক্রিয়াতেও সেটি ঘটতে পারে। যেমনটা প্রথম সংক্রমণের ক্ষেত্রে দেখেছি। বাদুড়ের খাওয়া ফল থেকে শূকর, আর শূকর থেকে মানুষে ছড়িয়েছে।

    নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তাই দ্রুত শনাক্ত হলে বেঁচে যাবেন তা বলা কঠিন। আবার যারা বেঁচে যান, তারা পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। প্রতিরোধ ছাড়া নিপাহ থেকে মুক্তির সুযোগ নেই। শীতে রস উৎসব বা বন্ধুবান্ধবদের খেজুরের রস খাচ্ছি। এটি বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, নিপাহ রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করতে চায় না। কারণ সেবাদানকারীরও আক্রান্ত্রের ঝুঁকিতে থাকেন। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোর উচিত একটি ওয়ার্ড ডেডিকেটেড করা, যাতে রোগীকে আইসোলেটেড করা যায়।

    আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. শাহদাত হোসেন, পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা) ডা. আবুল হোসেন, মঈনুল হোসেন প্রমুখ।

    প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে দেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় মেহেরপুর জেলায়। এরপর ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৬ সাল ছাড়া প্রতিবছরই রোগী শনাক্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ২০০৪ সালে। ওই বছর ৬৭ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

  • পীরগঞ্জে খেজুরের রসে তৈরি হচ্ছে বিষমুক্ত গুড়

    পীরগঞ্জে খেজুরের রসে তৈরি হচ্ছে বিষমুক্ত গুড়

    গৌতম চন্দ্র বর্মন,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার গাছিরা।

    গুড় তৈরিকে কেন্দ্র করে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে উপজেলার বৈরচুনা গ্রাম। এতে কাজও জুটেছে এলাকার কিছু মানুষের। এদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে তাল-খেজুর চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

    ভোরের কুয়াশা ভেদ করেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছে গাছিরা। এর পর পাটালি গুড় তৈরি শুরু করেন তারা। এমন দৃশ্য পীরগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী বৈরচুনা গ্রামে। প্রতিদিন ৫০-৬০ কেজি গুড় উৎপাদন হয় এই গ্রামে। রাস্তার শোভা বর্ধনের জন্য খেজুর গাছ রোপন করেছিলেন গ্রামের মোকসেদ ও সলেমান নামে এই দুই ভাই। তাদের দেখে গ্রামে অনেকেই বাড়ির পতিত জমিতে খেঁজুর গাছ লাগান। এসব গাছের রস থেকে তৈরি হচ্ছে গুড়।

    ঐ গ্রামের আব্দুল লতিফ ঠাকুরগাঁও প্রতিদিনকে জানান, রাজশাহী থেকে কয়েক জন লোক প্রতিবছর শীতের সময় এখানে এসে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করে থাকে। গোটা শীত মৌসুম তারা এখানে অবস্থান করে গুড় তৈরী করে বিক্রি করে থাকেন। তারা ১৫/১৬ বছর ধরেই এ কাজ করে আসছেন। প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে অনেক মানুষ রস ও গুড় নিতে ভীড় জমায় এই গ্রামে। অন্যের খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য তাদের কোন টাকা লাগে না। গাছ মালিককে মাঝে মধ্যে গুড় খাওয়ায় তারা। স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসি জানান, রসনা বিলাস খেজুর গুড়ের জুড়ি মেলানো ভার। খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে পিঠা, পায়েস, মিস্টান্ন সহ নানা মুখরোচক খাবার। তাই এর চাহিদার প্রচুর।

    গুড় তৈরী সাথে জড়িতরা জানান, কোন প্রকার ক্যামিকেল ছাড়াই এ গুড় তৈরী করা হয়। এজন্য এর চাহিদা বেশি। প্রতিদিন তারা ৫০ থেকে ৬০ কেজি গুড় তৈরী করে থাকেন। প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেন তারা। বাজারে নিতে পারেন না। তৈরীর সাথে সাথেই সেখানেই শেষ হয়ে যায়। এতে মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয় তাদের। রাজশাহীর ৪ জন ছাড়াও তাদের সাথে স্থানীয় কিছু লোকের কাজ জুটেছে বলেও জানান তারা।

    এদিকে খেজুর গুড়ের সম্ভাবনা নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও মিস্টি জাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষি বিভাগ তাল-খেজুর চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে বলে ঠাকুরগাঁও প্রতিদিনকে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম গোলাম সারওয়ার। তার মতে জেলায় ১০ থেকে ১৫ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। তবে একমাত্র পীরগঞ্জ উপজেলায় রস দিয়ে গুড় তৈরি হচ্ছে। এটার গুনগত মান ভাল। স্থানীয় ভাবে খেজুর এবং তাল গাছ রোপণে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।