গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ডায়রিয়া জনিত কারণে মারা গেছেন নববধূ এবং শিশুসহ পাঁচজন। এছাড়াও তিন শতাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। গত ৫ দিনে মহানগরীর পূর্ব চান্দনা ও কাজীবাড়ি এলাকায় এতো বিপুল সংখ্যক মানুষের ডায়রিয়ায় আক্রান্তের ঘটনা ঘটে।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় চারজনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া ও খাবারের বিষক্রিয়ায় কারণে ডায়রিয়া বাড়ছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তবে হঠাৎ করে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ছয় সদস্যের টিম এলাকায় কাজ করছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এসব রোগীর মধ্যে নারী, শিশুসহ সব বয়েসী মানুষ রয়েছেন।
আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সিটি করপোরেশনের ছোট দেওড়া এলাকার মজিদ, চা বাগান এলাকার ফিরোজ, ছোট দেওড়া এলাকার মোয়াজ্জেম ও সামন্তপুরের নূরুল ইসলামকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর কলেরা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। এ অবস্থায় বিশুদ্ধ পানি পান ও নিয়ম মেনে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
আক্রান্ত রোগীদের অনেকে জানেন না কী কারণে তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তাদের অধিকাংশই মনে করছেন ফুড পয়েজিং এর কারণে তারা এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
এলাকাবাসী জানায়, গত রবিবার গাজীপুর মহানগরের কাজী বাড়ি এলাকার মোস্তফার বাড়ির ভাড়াটিয়া মোজাম্মেল হকের নববধূ (স্ত্রী) কামরুন নাহার (২০) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সোমবার ভোর ৪টায় মারা যান। গত আট মাস আগে তার বিয়ে হয়েছিল। এছাড়াও একই এলাকার আবুল হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ময়মনসিংহ জেলার হোসেনপুর থানার বাঘমারা গ্রামের আঃ জব্বার ওরফে খেজু মিয়া (৭০)। তিনি গত সোমবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। তাকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই তিনি মারা যান।
মহানগরীর পূর্ব চান্দনা এলাকার হাছেন আলী জানান, গত সোমবার তার শ্যালক আলী আকবরের স্ত্রী সুমা (৩০) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। সন্ধ্যায় তাকে ঢাকার কলেরা (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে নেয়ার পথে রাত আটটার দিকে মারা যান। এছাড়াও একইদিন একই এলাকার সাত্তার বাবুর্চির বাড়ির ভাড়াটিয়া আঃ সালাম (৫৫) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু তার অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে ঢাকা কলেরা হাসপাতালে নেয়ার পথে সালাম মারা যান। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। একই এলাকার বাতেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া মঞ্জু মিয়ার দুই ছেলে নাহীন (৪মাস) ও ফাহিম (দেড় বছর) মঙ্গলবার বিকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। তাদেরকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাহীন মারা যায়। বড় ছেলে ফাহিম ঢাকা কলেরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. প্রণয় কুমার ভুষণ দাস বলেন, যারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তাদের অবস্থা স্বাভাবিক। তাদের পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। এখন পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
তিনি আরো বলেন, নগরের ছোট দেওড়া, ছায়াবীথি, চান্দনা এলাকাসহ যেসব এলাকায় প্রকোপটা দেখা বেশি দেখা দিয়েছে, সেসব এলাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি অফিসের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পরিদর্শনে গেছেন। আবহাওয়া পরিবর্তন ও খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এর প্রকোপ বেড়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ খায়রুজ্জামান জানান, গাজীপুরের দু’এলাকায় ডায়রিয়ায় শতাধিক লোকের আক্রান্তের সংবাদের প্রেক্ষিতে বৃহষ্পতিবার ঢাকা রোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডাঃ দেবাশীষ সাহার নেতৃত্বে চিকিৎসকসহ ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা বেশ কয়েকটি স্থান থেকে পানির নমুনা নিয়ে গেছেন। সংগ্রহকৃত পানির নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আইসিডিডিআরবিতে পাঠানো হবে।
তিনি আরো জানান, যে দুটি এলাকায় এ ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়েছে সে এলাকায় স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক লিফলেট, পানি বিশুদ্ধকরণের পাঁচ হাজার পিস ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন পাঠানো হয়েছে। স্যুয়ারেজের লাইন পানির লাইনের সঙ্গে মিশে গিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চারজন মারা গেছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সহকারি প্রকৌশলী (পানি) মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, ৪ দিন ধরে ওই দুটি এলাকায় পানি সরবরাহ লাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পানি সরবরাহ লাইনে ত্রুটি পাওয়া যায়নি। পানির মেইন লাইন থেকে সরবরাহ লাইনের পানিতে ব্লিসিং পাউডার দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে পানি সরবরাহের পাইপগুলো পরিস্কার করা হয়েছে। তবে পানির লাইনে কোন ত্রুটি আছে কি-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত আছে।