২৪ ঘন্টা স্পেশাল : পটিয়ার মেহেরআটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অ্যানি বড়ুয়া (৩৮)। পিএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করতে বাসা থেকে বের হয়ে পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের সামনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন সহকর্মীর জন্য।
তার এ অপেক্ষার পালা হয়তো শেষ তবে তিনি আর কখনো শিক্ষার্থীদের পড়াবেন না, চিরতরে হারিয়ে গেছেন ঘুমের রাজ্যে। সকাল ৯টার সময় হঠাৎ একটি বিকট শব্দ আর তার গায়ের উপর ধ্বসে পড়া দেয়াল তাকে নিয়ে গেছে অচেনা রাজ্যে।
ঘটনাস্থলেই দেয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয় তার। চিরতরে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। রবিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা ব্রিক ফিল্ড রোডে বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের নিচতলায় গ্যাস লাইনে লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ৭ জনের একজন হলেন অ্যানি বড়ুয়া।
নিহত অ্যানি পটিয়া উপজেলার উনাইনপুরার পলাশ বড়ুয়ার স্ত্রী। তার স্বামী ও দুই ছেলে অভিষেক-অভিজিৎকে নিয়ে পাথরঘাটার দুর্ঘটনা কবলিত ভবনের পাশের একটি বিল্ডিংয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন অ্যানি। স্বামী পলাশ বড়ুয়া শিকলবাহা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্র প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। বড় ছেলে অভিষেক চলতি বছরে জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এবং ছোট ছেলে অভিজিৎ ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশুনা করছেন বলে নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যানির ছোট ভাই অনিক বড়ুয়া জানিয়েছেন তার দিদি অ্যানি বড়ুয়া রবিবার সকালে পাথরঘাটার একটি বাসায় বিস্ফোরণের পর সড়কের পাশের দেয়াল ধ্বসে চাপা পড়ে মারা গেছেন। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার দুই ছোট ছোট ভাগ্নের কি হবে? তাদের যে আমি কোন ভাবেই বোঝাতে পারছিনা, কে থামাবে তাদের কান্না?
অ্যানির স্বামী পলাশ হাসপাতালে স্বজনদের জড়িয়ে ধরে বিলাপ করতে করতে সংবাদ কর্মীদের বলছেন, আমার স্ত্রী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করতে সকাল থেকেই ব্যস্থতায় ছিলেন। আজ প্রথম পরীক্ষা তাই তার পড়নের শাড়িটিও আমি পছন্দ করে দিয়েছি। কিন্তু তখনও যদি জানতাম পড়নের এ শাড়িটি পড়েই আমাদের ফাঁকি দেবে তবে আমি পছন্দ করতাম না, স্কুলে পাঠাতাম না।![](http://www.24ghonta.news/wp-content/uploads/2019/11/অ্যনি-বড়ুয়া-1-300x204.jpg)
পলাশ বড়ুয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরো বলেন, অন্যান্য দিনের চাইতেও আরো আগে আজ দ্রুত বাসার কাজ শেষ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার উদ্দ্যেশে ঘর থেকে বের হয়েছেন অ্যনি। পাশের ভবন বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের সামনে সহকর্মীর জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। আমিও একটু পরে বের হচ্ছিলাম। এরমধ্যে শুনি স্কুলে পৌঁছানোর আগেই গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণে বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের দেয়াল ধ্বসে সেখানেই চাপা পড়েছেন অ্যানি। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সব শেষ!
তিনি স্বজনদের জড়িয়ে ধরে বলছেন, কে দেখবে এখন আমাদের মানিক জোরদের। কি সান্তনা দিবো আমি তাদের? এতো তাড়াতাড়ি তো তোমার চলে যাওয়ার কথা ছিলো না অ্যনি, তবে কেন কিসের এতো তাড়া ছিলো তোমার?
উল্লেখ্য : আজ ১৭ নভেম্বর রবিবার সকাল ৯টার দিকে পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের বড়ুয়া ভবনে গ্যাস লাইন লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের পর দু’টি ভবনের দেয়ালের একাংশ ধসে পড়ে। এ ঘটনায় ৪ জন পুরুষ ২ জন মহিলাসহ ৭ জন নিহত হয়। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন আছে আরো ১০ জন। এরমধ্যে তিন জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।
হতাহতের ঘটনার পর চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও সিএমপির উদ্ধতন কর্মকর্তা, সিডিএ কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন।
এ ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত টিমের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া নিহতদের প্রত্যেককে ২০ হাজার এবং আহতদের চিকিৎসা সেবার ভার নিয়েছেন চসিক ও জেলা প্রশাসন।