ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : গভীর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলায় ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
উপজেলার জনসাধারণকে প্রাকৃতিক এই দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে রক্ষায় মানুষ যাতে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য প্রতিষ্ঠান গুলোতে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সায়েদুল আরেফিন ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেছেন, ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় উপজেলার ১৫২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৬টি স্কুল এবং কলেজ ২৫টি মেড়িকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট সহ ঔষুধ মজুদ রাখা হয়েছে।
এদিকে দূর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে উপজেলা পরিষদের জরুরী সভায় স্ব স্ব ইউনিয়নে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে ইউপি চেয়ারম্যাদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশ আঘাত হানতে শুরু করেছে। দুবলার মাঝেরচর থেকে জেলেরা মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ১০/১৫মিনিট ব্যাপী ঝড়োবাতাস বয়ে গেছে।
দুবলা ফিশার মেন গ্রুপের হিসাব রক্ষক ফরিদ আহমেদ জানান, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে সিডর এভাবেই প্রথমে আঘাত হানে এবং বিকাল থেকে তা প্রায় ২০০ কিলোমিটার গতিবেগে দুবলার চরের জেলে পল্লী গুলো তছনছ করে দেয়। সিডরের মতই বুলবুলের গতি প্রকৃতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
দুবলা ফিশার মেন গ্রুপের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ আলোরকোল থেকে মোবাইল ফোনে জানান, শনিবার ভোর থেকে অফিসকিল্লা, মাঝেরচর, আলোরকোল, মরণেরচর প্রভৃতি এলাকার অস্থায়ী জেলে ঘরে অবস্থানরত জেলেদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ কাজে র্যাব, কোস্টগার্ড, বনবিভাগ ও সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা এবং জেলেদের তরুণ সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। এ এলাকার পাঁচটি সাইক্লোন শেল্টার এবং শত শত ট্রলার ও জেলে নৌকায় ছয় হাজারেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
আলোরকোল, মেহেরআলীর খাল, ভেদাখালীর খাল ইত্যাদি খালে এ জেলেরা আশ্রয় নিয়েছে। জেলে পল্লীগুলোর বাসিন্দাদের অনেকটা জোর করে নিরাপদে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে শুকনা খাবার, চাল ভাজা, চিড়া ও খাবার পানি।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) দুবলার চর ভিএইচএফ স্টেশনের অপারেটর মো. কাশেম জানান, তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা জেলেদের সাইক্লোন শেল্টারে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন। দুবলার চর এলাকার আলোরকোল, মেহেরআলীর চর, মাঝেরকেল্লা, অফিসকিল্লা ও শেলারচরে যে পাঁচটি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে তা ২২ বছর আগে নির্মিত হওয়ায় অনেকটা জরাজীর্ণ। সিডরের আঘাতে অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী। তারপরও ঝুঁকির মধ্যে পাঁচ সহস্রাধিক জেলেদের শনিবার দুপুরের মধ্যে সাইক্লোন শেল্টারে সরিয়ে আনা হয়েছে।
রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :গভীর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলায় রাউজান উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
উপজেলার জনসাধারণকে প্রাকৃতিক এই দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে রক্ষায় মানুষ যাতে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেছেন, ইতিমধ্যেই উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন ও পৌরসভার জন্য ১৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট সহ ঔষুধ মজুদ রাখা হয়েছে, ইতিপূর্বে দূর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে উপজেলা পরিষদে সভায় স্ব স্ব ইউনিয়নে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে ইউপি চেয়ারম্যাদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সকল কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কন্ট্রোল রূমের মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকের পক্ষ থেকে দূর্যোগকালীনসহ পরবর্তী সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে সার্বিক প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।
উরকিরচর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল জব্বার সোহেল ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবেলায় রাউজানের সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এবং উপজেলা প্রশাসনের দিক নির্দেশনায় আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।
কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলোতে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। ৩৪ টি রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ্দৌজা (উপসচিব) ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রেডক্রস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দমকল বাহিনীসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। কক্সবাজারের ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সব মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার ভলেন্টিয়ার প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি পাহাড়ে অতি ঝুঁকিপূর্ণদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে শুক্রবার সকালে ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ক্যাম্পের মসজিদে মাইকিং করে সবাইকে সর্তক করা হচ্ছে। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করা রোহিঙ্গা শরনার্থীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এতে এনজিওগুলো তাদের সহযোগিতা করছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, কক্সবাজারে স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তাছাড়া সব আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের ভেতরে মসজিদ, স্কুল ও আশপাশের স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রলোয় অবস্থান নিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া দুর্যোগে অবহেলা না করে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাইকিংসহ নানাভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে।
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :গভীর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উপকূলের সর্বত্র মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্রের (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকরা।
এবিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তাদের জানমাল নিরাপদে রাখতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাইকিং করা হচ্ছে। উপজেলায় ৬০টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অবকাঠামো দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
দুর্যোগে আক্রান্ত হলেও সবগুলো সাইক্লোন শেল্টারে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রাখা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান। ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে জনসাধারণকে অবগত করার জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহে বিশেষ পতাকা টানানো হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম-কুমিরা ঘাট। কুমিরা থেকে সন্দ্বীপে এবং সন্দ্বীপ থেকে যাত্রীবাহী কোন বোট ছেড়ে যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় সকালে কুমিরা-সন্দ্বীপ ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেছেন, দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রগুলো শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ সবধরণের সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
দূর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস,পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে সমন্বয়ক রেখে কাজ করে যাচ্ছেন বলে তিনি ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে জানিয়েছেন।
শনিবার রাতের দিকে দেশের উপকূল অঞ্চলগুলোতে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আঘাত হানতে পারে।
এমন আশঙ্কা মাথায় রেখে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশের দুর্গত ১৫ জেলায় ১ হাজার ৫৭৭টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রেখেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এছাড়াও দুর্গত এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে।
আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুসারে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ১৫টি জেলাতে আঘাত হানতে পারে। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এরইমধ্যেই সেই এলাকাগুলোকে দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এসব জেলায় মোট ৪ হাজার ৫১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য মোট ১ হাজার ৫৭৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে মেডিকেল অফিসার/সহকারী সার্জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স, মিডওয়াইফ উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, স্বাস্থ্য সহকারি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ও অন্যান্য কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
দুর্গত এলাকাগুলোতে গর্ভকালীন ও জরুরি প্রসূতিসেবার প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে জানিয়ে আয়শা আক্তার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে জরুরি প্রস্তুতি কর্মসূচিসহ সার্বিক বিষয় সমন্বয় করছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্গত এলাকার কন্ট্রোল রুমের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
এছাড়াও ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স টিম (এনডিআরটি), ন্যাশনাল ডিজাস্টার ওয়াটসন রেসপন্স টিম (এনডিডাব্লুআরটি), ইউনিট ডিজাস্টার রেসপন্স টিমের (ইউডিআরটি) সদস্যরাসহ সংশ্লিষ্ট জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
১৩ জেলায় তাৎক্ষণিক রেসপন্সের জন্য নগদ ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সদর দপ্তরে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১টি মেডিকেল টিম এবং সাইক্লোন পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুতে ২টি অ্যাসেসমেন্ট টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আজ শনিবার সকালে সোসাইটির কনফারেন্স কক্ষে ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় করণীয় শীর্ষক এক জরুরি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উপ-মহাসচিব মো: রফিকুল ইসলাম।
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহের জন্য খোলা হয়েছে বিডিআরসিএস ‘কন্ট্রোল রুম’। সব ধরণের তথ্যের জন্য ফোন করতে পারেন +০০৮৮-০২-৯৩৫৫৯৯৫ (সরাসরি), পিএবিএক্স-৯৩৩০১৮৮, ৯৩৩০১৮৯, ৯৩৫০৩৯৯-২৮২ এই নম্বরে।
অপরদিকে, চটগ্রাম, বাগেরহাট, খুলনাসহ উপকূলীয় ১৩টি জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট ও সিপিপি পরিচালিত উপকূলীয় জেলাগুলোর সকল আশ্রয় কেন্দ্রকে প্রস্তুত করা হয়েছে।
সোসাইটির ডিজাস্টার রেসপন্স বিভাগ জানায়, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্ভাব্য জেলায় মজুদ রাখা হয়েছে হাইজন কিটস্, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, তারপলিন শীট, জেরি-ক্যান ও কম্বল ।
সোসাইটির উপ মহাসচিব মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। উপকূলবর্তী জেলা ইউনিটসহ অন্যান্য ইউনিটসমূহকে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে। সোসাইটির কর্মকর্তাসহ সকলকে প্রস্তুত থাকাসহ আবহাওয়া বার্তার দিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়াও রেড ক্রিসেন্ট ও সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকরা ৭নং সিগন্যাল ঘোষণার পর থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবেলায় বোয়ালখালীতে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬টি আশ্রয় কেন্দ্র।
উপকূলীয় লোকজনকে সতর্ক ও নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে বোয়ালখালীতে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে।
সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আজ শনিবার মধ্য রাতে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে ৯ নম্বর মহা বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
গতিবেগ বেড়েছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়টি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উপকূলের ৩১০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশ করেছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল।
শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এক প্রেস ব্রিফিং-এ আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সকাল ৯টার সময় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটারের মধ্যে আবস্থান করছে। পায়রা থেকে ৩৩৫, কক্সবাজার থেকে ৪৮০ ও চট্টগ্রাম থেকে ৪৯০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করছে।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে আবহাওয়া অধিদফতরের উপপরিচালক আয়শা খানম জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরের ৭ নম্বর সংকেত নামিয়ে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের ৬ নম্বর সতর্ক সংকেত নামিয়ে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। কক্সবাজারে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সর্তকতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ওইসব এলাকার সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিন তুলে ধরে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আয়শা খানম জানান ঘূর্ণিঝড় বুলবুল শনিবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের নিকট দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে।
২৪ ঘন্টা চট্টগ্রাম ডেস্ক :প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। এর প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ৯ ও কক্সবাজার ৪ নম্বর সংকেত এবং ৭ ফুট পর্যন্ত জলচ্ছ্বাসের আশংকা করা হচ্ছে।
ফলে যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত ও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং। আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে বন্দরের মূল জেটির জাহাজগুলোকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বহির্নোঙরে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয়া হয়েছে। শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল সাতটার মধ্যে জেটি থেকে সব জাহাজ সরিয়ে দিয়ে সাগরের গভীর নোঙ্গরে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ জাহাজ ও ছোট ছোট নৌযানগুলো শাহ আমানত সেতুর উজানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইয়ার্ড ও জেটিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলোকে রশি দিয়ে বেঁধে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে এলার্ট ফোর জারি করা হওয়ায় বহির্নোঙরে অবস্থানরত বড় জাহাজগুলো কুতুবদিয়া ও কক্সবাজার উপকূলে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের সতর্ক সংকেতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বন্দর চ্যানেল নিরাপদ রাখতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের স্বাভাবিক বার্তা না আসা পর্যন্ত বন্দরে কন্টেইনার উঠানামা, খালাস ও ডেলিভারিসহ সব ধরণের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সমুদ্র শান্ত ও স্বাভাবিক হলে বন্দরের কার্যক্রমও পুনরায় স্বাভাবিকভাবে চালু করা হবে। আরো খবর :মোংলা ও পায়রায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রামে ৯
শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল ৯টার আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ শনিবার সকাল পর্যন্ত মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে ঝোড়ো হাওয়ার আকারে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
এর প্রভাবে দেশের সমুদ্র বন্দরগুলো, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শনিবার (৯ নভেম্বর) ভোর থেকে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এছাড়া এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের নিকট দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে।
ঝড়ের সঙ্গে উপকূলীয় জেলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭ ফুট উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। চট্টগ্রামকে ৯ নম্বও বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ অবস্থায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। আরো খবর :জরুরি প্রয়োজনে সরকারি কন্ট্রোল রুমের ফোন নাম্বার
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সারা দেশে নৌযান ও ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। সেন্টমার্টিনে সহ¯্রাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন। উপকূলে সতর্কতা বাড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক।
শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
চট্টগ্রামে দুর্যোগ মোকাবেলায় যেকোন পরিস্থিতিতে বন্দর কর্তৃপক্ষের নৌ বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বর ০৩১-৭২৬৯১৬ এ যোগাযোগ করার জন্য বলেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, যেসব এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব পড়ার সম্ভবনা রয়েছে ওইসব এলাকায় সর্বোচ্চ ১ কি.মি দূরত্বে আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। সুতরাং আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বেশিক্ষণ সময় লাগবে না।নিজের ও পরিবারের জীবন/সম্পদ রক্ষার জন্য সবাইকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া উচিত।
শনিবার (৯ নভেম্বর) বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় দুুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকল্পে পূর্বপ্রস্তুতি, সাড়াদান এবং উদ্ধার কার্যক্রমে করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত সভা শেষ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ।