টাকার বিনিময়ে পান ও ব্যবহার অনুপযোগী পানি সরবরাহ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
তিনি আজ রবিবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় গ্রাহক সমস্যা সমাধান এবং নগরীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম এর সাথে তাঁর দপ্তরে মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন।
এ সময় জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা সুজন বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের ফলে চট্টগ্রামবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ এবং স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। নগরবাসীর পানির চাহিদাকে মাথায় রেখে পানির উৎস বৃদ্ধি এবং সঞ্চালন লাইনের কাজও চলছে পুরোদমে। তবে যত্রতত্র ওয়াসার রাস্তা খুড়াখুড়ি নগরবাসীর যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। বিভিন্ন সড়কে ওয়াসার খুড়াখুড়ি কেন্দ্রিক যানজট নগরবাসীর দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এতো কিছুর পরেও সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত হলে স্বস্তিতে থাকতো নগরবাসী।
তিনি বলেন, কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে ওয়াসার কতিপয় অসাধু-অযোগ্য কর্মকর্তা কর্মচারীর কারণে প্রধানমন্ত্রীর সে উদ্যোগ ভেস্তে যেতে চলেছে। নগরবাসীকে সুপেয় পানির পরিবর্তে এখন নোংরা, আয়রন এবং শ্যাওলাযুক্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। যা পান করা তো দূরে থাকুক গৃহস্থালি কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দিনের পর দিন এ অবস্থা চলতে থাকলেও পরিস্থিতির উন্নয়নে ওয়াসার পক্ষ থেকে কোন প্রকার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি যা অত্যন্ত অমানবিক। অথচ প্রতিনিয়তই ঐসব এলাকার গ্রাহকগণ বিল পরিশোধ করে আসছে।
বিশেষ করে নগরীর বৃহত্তর বাকলিয়া, সুপারিওয়ালা পাড়া, ধনিয়ালা পাড়া, উত্তর কাট্টলী এবং দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকার গ্রাহকগণ অত্যধিক ভোগান্তিতে রয়েছে। সুপেয় পানির অভাবে নগরীর বিভিন্ন এলাকার জনগন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের জনগনের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করছে তারপরও ওয়াসার পানির জন্য হাহাকার সরকারের বিরুদ্ধে কোন সুগভীর চক্রান্ত কি-না তা ভেবে দেখার এখনই সময়। সরকার এবং জনগনের মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি করার প্রয়াসে ওয়াসার ভিতরে লুকিয়ে থাকা বিশেষ কোন গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
করোনা কিংবা অন্য কোন অজুহাতে জনগনের দোর গোড়ায় সুপেয় পানি সরবরাহ বাঁধাগ্রস্ত হলে তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে উদ্ভুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ঐসব এলাকার গ্রাহকগণ ওয়াসা অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হবে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারন করেন। টাকার বিনিময়ে নগরবাসীকে পান ও ব্যবহার অনুপযোগী পানি সরবরাহ করা হলে ওয়াসার চেয়ার দখল করে কারো বসে থাকার কোন অধিকার নেই বলে মনে করেন সুজন।
পরে বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা নোংরা, আয়রন এবং শ্যাওলাযুক্ত পানির নমুনা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলীকে উপহার দেন তিনি। যে সব এলাকায় ওয়াসার উন্নয়ন কাজের জন্য পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে সে সব এলাকায় ভাউচারের মাধ্যমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত পানি পান করে যদি কোন নগরবাসী অসুস্থ হন সেক্ষেত্রে নাগরিক উদ্যোগ জনস্বার্থে ওয়াসার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করবে বলে জানান তিনি।
ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে ওয়াসা ভবনে নাগরিক সমস্যাবলী নিয়ে মতবিনিময় করতে আসায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
তিনি বলেন নাগরিকগন যতই সচেতন হবেন ততই বিভিন্ন সেবাধর্মী প্রতিষ্টানে সুশাসন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। বর্তমানে ১০০ বছরের মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রায় সাড়ে ৬০০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণের কাজ চলমান। বর্তমান সরকারের আমলেই একসাথে ওয়াসার সব উন্নয়ন কর্মকান্ডের শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক আগ্রহে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩টি বৃহৎ প্রকল্পের মধ্যে ২টি প্রকল্প পুরোপুরি সমাপ্ত হয়েছে। তবে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নোংরা, আয়রন এবং শ্যাওলাযুক্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান থাকায় কোথাও পাইপ লিকেজ হয়ে এ ধরণের পানি সরবরাহ হতে পারে বলে নেতৃবৃন্দকে জানান তিনি।
তিনি নগরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে উক্ত সমস্যার সমাধান করা হবে। নগরবাসী যাতে সুপেয় পানি পান করতে পারে সেজন্য ওয়াসার সকল কর্মকর্তা কর্মচারী আন্তরিক। তিনি নগরবাসীকে যে কোন সমস্যা কিংবা অসুবিধায় সরাসরি ওয়াসা অফিসে এসে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র পরিচালক সৈয়দ ছগীর আহমদ, ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রানা দাশ, হাজী মোঃ ইলিয়াছ, সংগঠনের সদস্য সচিব হাজী মোঃ হোসেন, মোরশেদ আলম, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, ওয়াসা সিবিএ সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন, মোঃ শাহজাহান, সালাউদ্দিন জিকু, আশীষ সরকার নয়ন প্রমূখ।
২৪ ঘণ্টা/এম আর