Tag: চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

  • চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আইরিন, সাধারণ সম্পাদক জুয়েল

    চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আইরিন, সাধারণ সম্পাদক জুয়েল

    চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের নতুন নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে।

    কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এম.পি-এর ছোট বোন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ডাক্তার আইরিন সুলতানা এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ এম শাহাদাত হোসাইন জুয়েল।

    চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের নতুন নির্বাহী কমিটি

    গত ২৩ নভেম্বর গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহ-সভাপতি এ বি এম মাসুদ, কোষাধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরহাদ রশীদ, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ক্রীড়া, সমাজসেবা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিজবাহ ইবনে হাকিম ও নির্বাহী সদস্য হয়েছেন কাজী মুশফিকুস সালেহীন।

  • ২০ টাকার স্টেরাইল হ্যান্ড গ্লোভস ৩৫ হাজার টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাব

    ২০ টাকার স্টেরাইল হ্যান্ড গ্লোভস ৩৫ হাজার টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাব

    চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির দামে অস্বাভাবিক প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

    বর্তমানে লাগামছাড়া চলছে দেশে উন্নয়ন খাতে অর্থ ব্যয়। বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ ও প্রস্তাব করছে ইচ্ছেমতো।

    ২০ থেকে ৫০ টাকা দামের একটি স্টেরাইল হ্যান্ড গ্লোভসের দাম ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। ২ হাজার টাকা দামের পিলোর (বালিশ) দর ২৭ হাজার ৭২০ টাকা আর কভার ধরা হয়েছে ২৮ হাজার টাকা। ওই কভারের দাম ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এ ছাড়া ডিসপোজেবল সার্জিক্যাল ক্যাপ ও মাস্ক প্রতিটির মূল্য ধরা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা; যার বাজারদর সরেজমিন যাচাই করে জানা গেছে মান ভেদে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের প্রস্তাবিত খরচ বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

    সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের কাছে পাঠানো হয়। সেখানে মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে এই প্রকল্পের খরচের হিসাব নিয়ে অসন্তোষ ও চরমভাবে আপত্তি জানানো হয়। প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ কোটি ৬২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। একনেকে তা এখনো অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন পেলে তিন বছরে এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন কাজ সমাপ্ত হবে।

    চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এই প্রকল্পটি বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে। আর্থসামজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এই প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক হয়।

    ব্যয় পর্যালোচনা ও সরেজমিন দর যাচাই করে দেখা যায়, বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার জন্য যে দাম প্রস্তাব করা হয়েছে তা অতিরঞ্জিত ও অস্বাভাবিক। সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া এই ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের জন্য ১২টি চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম অতিরঞ্জিত ও যথেচ্ছভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে। সরেজমিন তোপখানা রোডস্থ সার্জিক্যাল মার্কেটে এসব পণ্যমূল্য যাচাই করে দেখা যায় প্রকৃত মূল্যের সাথে প্রস্তাবিত মূল্যের কোনো সম্পর্কই নেই। বিক্রেতারা এসব প্রস্তাবিত পণ্য মূল্য শুনে হতবাক। স্টেরাইল হ্যান্ড গ্লোভস প্রতিটির মূল্য ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা; যা ভ্যাট, ট্যাক্সসহ বাজারমূল্য প্রতিটির ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। ৫ এমএলের টেস্ট টিউব গ্লাস মেডের দাম ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার টাকা। বাজারমূল্য হলো ১৫ থেকে ৫০ টাকা। ডিসপোজেবল সার্জিক্যাল ক্যাপ ও মাস্ক প্রতিটির দাম ৮৪ হাজার টাকা, বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। পিলো (অ্যাজ পার স্পেসিফিকেশন) ২৭ হাজার ৭২০ টাকা। বর্তমান বাজারমূল্য সাড়ে ৭০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা। আর পিলো কভার ২৮ হাজার টাকা। বাজারদর ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকা বলে বিক্রেতারা বলছেন। তিন পিন বা রাউন্ড প্লাগের মাল্টিপ্লাগ উইথ এক্সটেনশন কর্ডের দাম ৬ হাজার ৩০০ টাকা, বাজারমূল্য ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা।

    সার্জিক্যাল ক্যাপ ও মাস্ক ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অন্য যেসব সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাব করেছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- নির্ধারিত সাইজের একটি রেক্সিনের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৪ হাজার টাকা (সম্ভাব্য বাজার মূল্য ৩০০-৫০০ টাকা), স্টেরাইল হ্যান্ড গ্লোভস ৩৫ হাজার টাকা (২০-৫০ টাকা), কটন তাওয়েল ৫ হাজার ৮৮০ টাকা (২৫০-১০০০ টাকা), ৫ এমএল সাইজের টেস্টটিউব-গ্লাস মেডের মূল্য ৫৬ হাজার টাকা (১৫-৫০ টাকা), থ্রিপিন ফ্লাট ও রাউন্ড প্লাগযুক্ত মাল্টিপ্লাগ উইথ এক্সটেনশন কড ৬,৩০০ টাকা (২৫০-৫০০টাকা), রাবার ক্লথ ১০ হাজার টাকা (৫০০-৭০০ টাকা), হোয়াইট গাউন ৪৯ হাজার টাকা (১-২ হাজার টাকা), ডিসপোজাল সু কভার সাড়ে ১৭ হাজার টাকা (২০-৫০ টাকা), বালিশের দাম ২৭ হাজার ৭২০ (৭৫০-২০০০ টাকা) এবং বালিশের কভার ২৮ হাজার টাকা (৫০০-১৫০০ টাক)।

    সরেজমিন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৫৪ ইঞ্চি আকারের একটি সাদা গাউনের দাম ধরা হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা যার বর্তমান বাজারদর সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা। প্রকল্পে ২২ ইঞ্চি বাই ৩৬ ইঞ্চি আকারের কটন টাওয়েলের দাম ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৮০ টাকা, যার বাজারমূল্য হলো মানভেদে ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা। ৫৪ ইঞ্চি আকারের একটি রেক্সিনের দাম ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার টাকা, যার বাজারদর ৩ শ’ থেকে ৫ শ’ টাকা। ৫৪ ইঞ্চি আকারের রাবার ক্লথ ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। বাজারে গিয়ে দাম জানা গেছে ৫ শ’ থেকে ৭ শ’ টাকা।

    প্রকল্পের কিছু কিছু যন্ত্রপাতির ভিন্ন ভিন্ন দাম প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্যাথলোজি বিভাগের জন্য চারটি স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের দাম ডিপিপিতে (পৃষ্ঠা-৬৪) প্রতিটি দেড় লাখ টাকা ধরা হয়েছে। চারটির দাম ৬ লাখ টাকা। ল্যাব. মেডিসিন বিভাগের জন্য চারটি স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ (ডিপিপি-পৃ. ৭০) ৩০ কোটি টাকা।

    এখানে প্রতিটির দাম সাড়ে ৭ কোটি টাকা। ১১৫ পৃষ্ঠায় এ মেশিনের দাম ৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের এই ধরনের অত্যাধুনিক দামি যন্ত্রপাতি চারটি করে ক্রয় করার যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। এই দুই বিভাগের চিকিৎসাসরঞ্জামের তালিকা ১ থেকে ৫২ ক্রমিক নম্বর পর্যালোচনায় দেখা যায়, হুবহু একই ধরনের চিকিৎসাসরঞ্জামের দামে বড় ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে।

    জানা গেছে, যেখানে অধ্যাপকদের জন্য ১২০টি ইউনিট, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের জন্য ৪০টি ইউনিট, সহযোগী অধ্যাপকদের জন্য ২৪০টি ইউনিট, সহকারী অধ্যাপকদের জন্য ৩ শ’টি ইউনিট, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্য ৭০টি ইউনিট, সাব-অ্যাসিসট্যান্টদের জন্য ২৫০টি ইউনিট, সেখানে প্রতিটি আইটেম প্রায় ১০৫০টি করে কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। রিসার্চ সেলের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আবার অন্য রিসার্চ ল্যাবের জন্য যন্ত্রপাতির পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ৯৮ কোটি টাকা। আসবাবপত্র ও ফার্নিচারের ক্ষেত্রেও প্রাক্কলিত দর একেক জায়গায় একেক রকম ধরা হয়েছে। হাস্যকর বিষয় হলো, ২০তলা ভবনের জন্য ধরা হয়েছে ১০তলা ফাউন্ডেশন। ২৫ কোটি টাকার বেশি কোনো বিনিয়োগ প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই বাধ্যতামূলক হলেও এই প্রকল্পে তা করা হয়নি। তাই অতিরঞ্জিত মূল্য ধরা হয়েছে।

    পরিকল্পনা কমিশন বলছে, একটি বিভাগের ১২টি আইটেমেই প্রস্তাবিত মূল্যের সাথে বাজারমূল্যের পার্থক্য আকাশছোঁয়া। এই প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত সব যন্ত্রপাতি বা চিকিৎসাসরঞ্জাম ক্রয় পর্যালোচনা করলে এই অসামঞ্জস্য আরো বেশি হবে। এই ধরনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রাক্কলন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ডিপিপিতে ১২৭ থেকে ১৪৩ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন দফতরের জন্য প্রায় ১০৫০টি ওয়াটার ফিল্টার, ১০৫০টি রিভার্স ওসমোসিস, প্রায় ১০৫০টি ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং ১০৫০টি ল্যাপটপ, ১০৫০টি কালার প্রিন্টার ও ১০৫০টি সাদা-কালো প্রিন্টার ক্রয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ওয়াটার ফিল্টার থাকলে রিভার্স ওসমোসিস, ডেস্কটপ থাকলে ল্যাপটপ এবং কালার প্রিন্টার থাকলে সাদা-কালো প্রিন্টার এত বিপুল সংখ্যায় ক্রয়ের যৌক্তিকতা নেই। একই রকম চিত্র গাইনি বিভাগের জন্য সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রেও।

    এই ব্যয় প্রাক্কলনের ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রাক্কলনের যৌক্তিকতা নিরূপণের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়।

    এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রকল্প রিজেক্ট করা হয়েছে। অনুমোদন পায়নি পিইসিতে। কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ব্যয় প্রাক্কলন অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অতিরঞ্জিত। তিনি বলেন, গত ৩০ মে অনুষ্ঠিত যৌক্তিকতা নিরূপণ কমিটির সভায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের একজন অধ্যাপক, দু’জন সহযোগী অধ্যাপক, ডিপিপি প্রণয়নকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীর সাথে ওই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অফিস সহায়কের স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। সরকারি দফতরের ব্যয় প্রাক্কলনের মতো একটি সংবেদনশীল কাজে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি অনভিপ্রেত।

    তিনি বলেন, যারা এই ডিপিপিতে ব্যয় প্রাক্কলন করেছেন তারা দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অজ্ঞ।

    তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যথাযথ পরীক্ষা ছাড়াই ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ধরনের কাজের পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ডিপিপি প্রস্তুতে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কারা কারা জড়িত ছিল তা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

    অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থ খরচের জন্য সৃষ্টি করা হচ্ছে নতুন নতুন খাত। প্রকল্প মূল্যায়ন কোনোভাবে ম্যানেজও করা হচ্ছে। ফলে ব্যয়ের খাতগুলো নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন উঠছে না। কোনো না কোনোভাবে তা সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে ব্যয় অনুমোদনও নেয়া হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে যে নীতিমালা আছে সেগুলোর তোয়াক্কা করছে না বেশির ভাগ বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও সংস্থা।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমদ এ ব্যাপারে বলেন, বিচারহীনতা থাকলে এমন অবস্থা চলতেই থাকবে।

    তিনি বলেন, এই ধরনের প্রস্তাবনা এলে তা ফেরত না পাঠিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের উচিত হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। এভাবে ফেরত পাঠানো কোনো সমাধান নয়। অনেক ঘটনাই তো ঘটছে। শাস্তি না হওয়ার কারণে এসবের মাত্রা আরো বেড়ে যাচ্ছে। শাস্তি দৃশ্যমান হওয়া উচিত।

    সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি তহবিলের অর্থে এটি বাস্তবায়ন করার কথা স্বাস্থ্য অধিদফতরের।

    প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

    প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে ২ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানেই বিভিন্ন সরঞ্জামের দামে অস্বাভাবিক প্রস্তাবের বিষয়টি চিহ্নিত হয়।

    প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ধরনের অসামঞ্জস্য ব্যয় ধরা পড়ায় প্রকল্পটি অনুমোদন প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে বেশকিছু সুপারিশ দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

    এজন্য পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান স্যারের সঙ্গে পরামর্শ করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ২৫ কোটি টাকার বেশি প্রকল্প সম্ভাব্যতা যাচাই বাধ্যতামূলক। সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া এত বড় প্রকল্প নেয়ার কোনো নিয়ম নেই। তাছাড়া যেভাবে দাম প্রাক্কলন করা হয়েছে এটা মেনে নেয়া যায় না।

    সূত্র জানায়, এছাড়া প্রকল্পের প্রস্তাবে আরও বিভিন্ন বিষয়ে কেনাকাটায় দামে অসামঞ্জস্যতা খুঁজে পেয়েছে কমিশন। এগুলো হচ্ছে, আসবাবপত্রের ব্যয় প্রাক্কলনে একেক জায়গায় একেক রকম ধরা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অত্যধিক ধরা হয়েছে। কোথাও ফার্নিচারের পরিমাণ নির্ধারণে রয়েছে অসঙ্গতি।

    এছাড়া নির্মাণ ও পূর্ত কাজের ক্ষেত্রে ২০ তলা ভবনের জন্য ভুল করে ১০ তলা ফাউন্ডেশন ধরা হয়েছে। ফাউন্ডেশন নির্মাণের রেট, বিভিন্ন ভবনের ফ্লোরের রেট, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভবনের এক্সট্রা হাইটস, স্যালাইন জোন ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যয় প্রাক্কলন অসামঞ্জস্য হয়েছে।

    বইপত্রের দাম প্রাক্কলনের ক্ষেত্রেও নানা অসামঞ্জস্যতা পেয়েছে কমিশন। এক্ষেত্রে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বইপত্র ক্রয়ের জন্য ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। বইয়ের যে তালিকা দেয়া হয়েছে সেটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ব্যয় প্রাক্কলন বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি ধরা হয়েছে।

    তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে হাল সংস্করণের বই থাকা সত্ত্বেও পুরনো সংস্করণের বই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তালিকায়।

    প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরে সাপোর্ট স্টাফদের অবিশ্বাস্য বেতন প্রস্তাব করেছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। সেখানে ক্লিনারের বেতন মাসে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, অফিস সহায়কের বেতন প্রতি মাসে ৮৩ হাজার ৯৫০ টাকা এবং ক্যাড অপারেটরের বেতন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রস্তাব দেয়া হয়।

    শুধু তাই নয়, বিদেশি পরামর্শকের মাসিক বেতন ধরা হয় ২৫ লাখ টাকা, যা গড়ে ১৬ লাখ টাকা। রেলওয়ের একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে সাপোর্ট স্টাফদের জন্য এ রকম ব্যয় ধরা হয়। বিষয়টি নজরে আসে পরিকল্পনা কমিশনের। ফলে পিইসি সভা স্থগিত করে সেটিও ফেরত পাঠানো হয়েছিল।